ছোট খুকীর বিয়ে
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ১৩ জানুয়ারি, ২০১৪, ১০:২১:৩২ রাত
আজ এক ব্লগার বলল জম্পেস একখান বিয়ের গল্প লিখে ফেলুন তো । কিন্তু এখন চিন্তায় আছি কি লেখা যায়। তবে যা থাকে কপালে লেখা শুরু করলাম। ওদিকে ব্লগে শুনলাম বিয়ের লেখা চলছে। আমার এক বিবাহিত বন্ধু বিয়ের এক বছর পর তার ফেসবুক পেজে স্টাটাস হিসেবে মুরগীর ছবি আপলোড করেছে,যেখানে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে শুভ বিবাহের পর চমৎকার লোমাবৃত মোরগের গায়ে পশম যা আছে তা না থাকারই মত। বেচারা এমনিতেই একটু চৌকাঠ সমস্যায় ছিল, স্টাটাসের পর আর কিছু জিজ্ঞেস করিনি। সে আমার সবথেকে প্রিয় বন্ধুদের একজন অথচ ক্ষোভে,দু:খে আমার সাথেও শেয়ার করেনি। বিবাহ বড়ই পরিতাপের !
না ভুল বুঝবেন না। এক মুরগী মার্কা স্টাটাস দেখে পুরো নারী জাতির উপর কলঙ্ক দেওয়ার লোক আমি না। তাতে আমার চারখানা বোনসহ,শতাধীক আত্মীয় পরিজনকে উপহাস করা হবে। অন্তত তাদের দিকে তাকিয়ে বলতে পারি ইহা জিন্দাবাদ। আসলে সর্বদা কিছু অন্ধকারসদৃশ বাতি হেথা সেথা জ্বলতে থাকে,এটা অস্বাভাবিক নয়। সমস্যা হল সূর্যের পাশে হারিকেন দেখেও কেউ কেউ হারিকেনের পেছনে ছুটে চলে। নইলে সে কি আর পচা শামুকে পা কাটে ! পই পই করে বলেছিলাম, এ জিনিস নিস না, সবুর কর, এই এই বিষয়কে প্রাধান্য দে,নইলে মরবি। কে শোনে কার কথা....এখন ঠেলা বোঝ !
তার থেকে আমিই ভাল আছি। কাওকে ডাক দেইনি,কেউ আসেওনি,তাই একলা চলো রে....আসলেই কি ভাল আছি ? নারে ভাই.... ভাল নেই, এ দিল্লিকা লাড্ডু ,পস্তালেও খেতে হয়। এটাই নিয়ম। দেখা যাক সামনে কি আসে। চৌকাঠ(স্ত্রী...হযরত ইবরাহিম(আ: ) এই শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন ) ছাড়া ঘর অচল,তবে উত্তম অধমের তফাৎ জানা জরুরী।
নতুন এবং ধাবমান,খরস্রোতা সাং®কৃতি অনেক কিছু লন্ডভন্ড করে দিচ্ছে। অর্থ দিয়ে সবকিছু হিসেব করতে শেখাচ্ছে। ফলে তরুন-যুবক সকলে টাকার পেছনে চলেছে। ওদিকে বয়স গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেলেও খবর নেই। প্রতিষ্ঠিত হবার আগে বিয়ে অবান্তর। বিষয়টা একতরফা নয়,তাই ব্যাটে বলে হতে সময় লাগে। ইদানিং মেয়েরা শুনেছি হিসেব কষে দর হাকে,আর এর ফান্দে পড়ে অনেকের বিয়ে সিঁকেয় উঠেছে। আরব দেশে তো সর্বনাশা অবস্থা চলছে। আর এখানেও বিষয়টা স্পষ্ট। গত কয়েকমাসে যে কটা বিয়েতে গমন করেছি,সেখানে মোহরানার অংক ছিল বলার মত। আসলে বলার জন্যেই মোহরানা, এরা জীবনে এটা পরিশোধ করে তাও শুনিনি। ইহাতে উহাদের কি সুবিধা আল্লাহই মালুম।
বিয়ে নিয়ে ঘটনা লিখতে বসে তাত্ত্বিক প্যাচাল পাড়ছি। ইদানিং কেউ তাত্ত্বিক প্যাচাল পছন্দ করেনা। সম্ভবত: তা টেলিভিশন টকশোর কারনে। অধিকাংশ লোকই সহজ পাচ্য সুখাদ্য পছন্দ করে। তবে ব্যাপারটা সোজা শোনালেও এত সহজ নয়। সহজ জিনিস অনেক সময়ই সুখাদ্য হয় না। বিয়ের কিছু ঘটনা বলতে চেয়ে এতদূর আসলাম। কিন্তু মনে করতে পারছি না কোন ঘটনা বলব। কোন সময়ের ঘটনা বলব,ছোটবেলার নাকি বড় বেলার ? কোনটা দিয়ে শুরু করব ? ভারি সমস্যায় পড়া গেল। আচ্ছা ছোট বেলার ছোট খুকীর সেই কাহিনীটা কি বলেছি ?
সে সময় বিয়ে মানেই ছিল উৎসব। কার বিয়ে,কার সাথে বিয়ে এসব কোনো ব্যাপার ছিলনা। কারো বিয়ে হলে আনন্দ ফুর্তি করা যেত,এটাই ছিল ব্যাপার। আর বিয়েতে আমার সবথেকে বেশী ভাল লাগত কাদা-পানি খেলা। বর অথবা বৌকে গায়ে হলুদের দিনে উঠানের মাঝে সবার সামনে গোসল করানো হত। তার গোসলের সাথে সাথে শুরু হত ব্যপক রং খেলা এবং কাদাপানি করা। বিয়ের এই অংশটি ছাড়া অন্য কিছু তেমন একটা ভাল লাগত না। কারণ এটাই শয়তানির শ্রেষ্ঠ সময়। আমি সেই ছোটবেলায়ই বিজ্ঞানী(!) ছিলাম। বাঁশের চোং ,কাপড় জড়ানো একটি হ্যান্ডেল দিয়ে পিচকিরী তৈরী করতাম এবং গোপনে কারো গায়ে রং দেওয়ার অধিকাংশ টেকনিক ছিল আমার পয়দা করা। হুটোপুটির মধ্যে চলত নানান রকম কলা কৌশল প্রয়োগকরণ। সাহেব বাবু সেজে বসে থাকাগুলো এসব থেকে দূরে থাকত,আর তাদের পরিচ্ছন্ন কাপড়ে শুধু রং মাখিয়ে খ্যান্ত হতাম না, গরুর টাটকা অথবা বাসি গোবর লেপন করে দিতাম। তারপর দুজনে মিলে তার পাত-পা ধরে কাদা-পানির মধ্যে ডলাডলি করতাম। মুখে রং মাখিয়ে ভুত বানাতাম। পুরো উঠানে প্রচুর পানি ঢেলে তা কর্দমাক্ত করে ফেলতাম। এরপর নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলে কাদা-রং মাখত। আমি মেয়েদেরকে সাধারণত রং মারতাম না। তবে সিনিয়রদের অনেকে আমাকে সুযোগ পেলে রং মাখিয়ে দিত কিন্তু আমি পালানো ছাড়া আর কিছু করতাম না। প্রতিশোধ নিতাম না।
আমার মজা লাগত সেসব ছেলেদেরকে রং মাখাতে,যারা এটা পছন্দ করত না। আমার ফুফাত বোনের বিয়ের সময় আমার ফুফাত ভাই তার ফিটফাট হয়ে রাস্তা দিয়ে চলতে থাকা এক বন্ধুকে ধাওয়া করল। আমিও দৌড়ালাম রং নিয়ে কিন্তু সে দিল ঝেড়ে দৌড়। পেছনে আমরা এক পাল দৌড়াতে থাকলাম তাকে ধরে রং ও কাদা মাখাব বলে। রাস্তার এক স্থানে ছিল কাদা-পানি। সে ছেলেটি পা পিছলে গিয়ে পড়ল সেই পানির মধ্যে। তার কালো প্যান্ট এবং চমৎকার সাদা শার্ট কাদায় মাখামাখি,এরপর আমরা সকলে মিলে আরও কাদা ও রং মাখালাম তাকে। শেষে সে বাধ্য হলে রং কিনে আনল ,উৎসবে মাতার জন্যে। মনে পড়ছে এলাকার এক বড় ভাই বি.এনপির এক যুবক নেতার বিয়ের সময় সকলে আমাদের এলাকা থেকে শুরু করে ১৫কি:মি: দূরবর্তী স্থান পর্যন্ত রং মাখামাখি করেছিল। অর্থাৎ বরের বাড়ি খেকে বৌয়ের বাড়ি পর্যন্ত। এটাই আমার জীবনে দেখা সবথেকে বড় অপদার্থ রং খেলা। তারা সিনিয়র হওয়াতে আমি অংশ নেয়নি। রং খেলার সময় আমি সাধারণত অন্যের হাতে ধরা পড়তামনা। কারো মুখে রং মাখাতে পারলে কিছু একটা করা হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হত। আমার মুখ কল্পনায় পরিচ্ছন্ন দেখছি,তবে একবার ফাঁদে পড়েছিলাম।
আরেকভাবে রং দেওয়া হত। সেটা হল গুড়ো রং। এটা দেওয়া হত বিয়ের দিন। বরযাত্রীরা এর শিকার হত। আমি বহু লোকের মাথায় গোপনে এটা ছিটিয়ে দিয়েছি। যখন তারা গোসল করত তখন বুঝত,অথবা ঘুমালে বালিশের ওপর রঙের ছাপ পড়ত। যাইহোক....বিস্তারিত বলব না। একটা ঘটনা বলি।
এলাকার রেডক্রিসেন্টের দারোয়ান সারুর মেয়ে ছোট খুকীর বিয়ে সন্ধ্যায়। পরিকল্পনা মাফিক সন্ধ্যায় পড়ব না। সে সময় টিপু সুলতান নামক বিশাল সাইজের মারমুখী এক গৃহ শিক্ষক ছিল। আমরা তাকে ভয় পেতাম। কিন্তু এই ভয়কে জয় করে সন্ধ্যা থেকে ছোট খুকীদের বাড়িতে থকতে লাগলাম। ঘটনাটি বিস্তারিত লিখেছি বাচ্চা শয়তান পর্বে। এখন লিখছি যতটুকু মনে পড়ছে তার ভিত্তিতে। আমার ৪ বছরের বড় বোন পান্না সন্ধ্যায় একবার এসেছিল তারপর ও পড়তে চলে যায়। বোধহয় মা ওকে ডেকে নিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু আমি যায়নি। অনেক বাচ্চার সাথে আমিও আনন্দ ফুর্তিতে মেতে ছিলাম। সম্ভবত পলাপলিও খেলছিলাম। এটা ছিল আমার প্রিয় খেলা। খানিক পর পান্না এসে আমাকে বলল, স্যার তোকে খানিক ক্ষনের জন্যে ডাকছে। বললাম-যাব না। সে বলল-পড়ার জন্যে নয়,অন্য কারনে,মাত্র এক মিনিটের জন্যে। আমি বিশ্বাস করলাম। স্যারের সামনে গেলাম। স্যার বলল-বসো ! বসলাম। বই খুলো ! খুললাম। পড়ো ! আমি পড়লাম না। আমার গা জ্বালা করছিল। নিজের মুখে থুথু দিলাম বোকামীর জন্যে। পান্নার দিকে কটমট করে তাকালাম। চোখ দিয়ে ক্রোধের অস্ত্র“ বেয়ে পড়ল।
স্যার বলল-এই প্যারাটা মুখস্ত কর,তারপর ছুটি। আমি দ্রুত মুখস্ত করলাম। স্যার আবার পড়া দিল,সেটাও সম্পন্ন করলাম কিন্তু আমার ছুটি মিললো না। শেষে রাত দশ’টায় আমাকে ছুটি দিল। আমি বাড়িতে খেতে না গিয়ে বৈঠকখানা বা পড়ার রুমের রাস্তার পাশের দরজা দিয়ে এক দৌড়ে ছোট খুকীদের বাড়িতে গেলাম। কিন্তু হায় ! বিয়ে শেষ হয়ে গেছে। শীতকালে রাত দশটা মানে অনেক রাত,বিশেষ করে গ্রামে। আমার মাথায় কিডনী উঠে গেল। রাগে ক্ষোভে বাড়ি ফিরলাম। পান্নার উপর মেজাজ খারাপ হল। রাতে স্যারকে নিত্যদিনের মত খাবার পৌছে দিতে গেলাম....হেহেহে স্যার....এবার প্রতিশোধের পালা। উঠানের শেষ প্রান্তে থামলাম। হাতে করে বেশ কিছু মাটি নিলাম এবং পানিতে মেশালাম। খাবারের প্রতিটা আইটেমে একাধীকবার থুথু দিলাম,পান্নাও দিল। এবার সবগুলো আইটেমে বাম হাত দিয়ে একটু চটকে আবার সুন্দর করে রাখলাম। এবার আবারও পচা মাটি পানিতে দিতে গেলে পান্না বলল,আর না। স্যার বুঝতে পারবে,পানির রং বদলে যাবে।....তারপরও দিলাম। স্যার যখন খাচ্ছিল,আমরা দূর থেকে জানালা দিয়ে দেখছিলাম আর হেসে গড়াগড়ি খাচ্ছিাম। আহা কি যে...শান্তি....উপযুক্ত বদলা....।
বিষয়: বিবিধ
৬৯৮৯ বার পঠিত, ৭৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সাদিয়া মুকিম আপু সহ উপস্থিত সবাইকে আমার সালাম জানাবেন। হাতুড়ি আপু ও রোদেলাপু অনুপস্থিত হলেও পরে জানিয়ে দিবেন, প্লীজ।
সমস্যা হল সূর্যের পাশে হারিকেন দেখেও কেউ কেউ হারিকেনের পেছনে ছুটে চলে। নইলে সে কি আর পচা শামুকে পা কাটে ! এ পর্যন্ত পড়ছি মাত্র। আমার ভয় হচ্ছে সামনেরদিকে যাবার
ইনশাআল্লাহ সবাইকে আপনার সালাম পৌছে দেবো। দোয়া করবেন আমাদের সবার জন্য।
পুরো লিখাটা অন্নেক মজ্জা বাট স্যারের সাথে বেয়াদবি??
আমি যোগ করে দিলাম-
গৃহ শিক্ষকের স্পেশাল খাবারের বিষয়টি শুনে উল্টি আসার উপক্রম হলো...
আগেরটা মুল বিষয় লিখার জন্য এত কথা বাডাঈলেন কেন?
তবে লেখাটা ভালো লেগেছে-
আপনি এখণো ছোট বেলার মতো দুষ্ট?
যদি দুষ্ট হন, তাহলে আমার বিয়াতে আপনার দাওয়াত-
পরের অংশটা খুবই মজা পেলাম।স্যার কিছু ধরতে পারে নাই
মন্তব্য করতে লগইন করুন