ড্রোন-একটি সামরিক সক্ষমতা
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ২৭ নভেম্বর, ২০১৩, ১২:২১:০৩ রাত
আন্তর্জাতিক রাজনীতির নীতিই হচ্ছে আন্তর্জাতিকভাবে কেউ কারো বন্ধু নয়। এখানে যত রকমের বন্ধুত্ব দেখা যায়,তার সবটাই হল স্বার্থগত। এটি ২০১৩ সালের নভেম্বর মাস,এ মাসের শুরুতে আমরা কিছু চরম খবর শুনেছি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্নোডেন নামক একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা ,যিনি কিনা রাশিয়ার আশ্রয়ে রয়েছেন, তিনি কিছু গুপ্ত তথ্য ফাঁস করেছেন। সেখানে দেখা যাচ্ছে আন্তর্জাতিকভাবে যেসব দেশ দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধু ছিল,তাদের প্রত্যেকটা দেশে যুক্তরাষ্ট্র তাদের গোপন মিশন পরিচালনা করেছে,তাদের রাজনৈতিক ও সরকার প্রধানদের টেলিফোনে আড়ি পেতেছে এবং দেশের জন্যে স্পর্শকাতর এমন তথ্য নিয়ে গেছে বা চুরী করেছে। কয়েকদিন পূর্বে ইন্দোনেশিয়ায় বিক্ষোভ হল অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে,কারণ ইন্দোনেশিয়ার সরকার প্রধানের টেলিফোনে তাদের গোয়েন্দারা আড়ি পেতেছিল,যদিও এ দেশ দুটির মধ্যে বেশ দহরম মহরম সম্পর্ক,এমনকি কিছুদিন পর এদের মধ্যে যৌথ সামরিক মহড়া হতে যাচ্ছে। কিন্তু ইন্দোনেশিয়ার সাবেক গোয়েন্দা প্রধান বলেছেন,এতে এত বিক্ষোভের কিছু নেই,আমি দায়িত্বে থাকা অবস্থায়ও আমাদের গোয়েন্দারা একই কাজ করেছে। একেবারে সঠিক কথা। এটাই নিয়ম,কারণ প্রত্যেকে নিজেদের নিরাপত্তার জন্যে অপর দেশে গোয়েন্দাগিরী করে।
আসলেই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কেউ কাওকে প্রানের দোস্ত বানালে তার সর্বনাশ আছে। কারণ এটি তখন একতরফা হয়ে যাবে। শক্তিশালী অথবা মোটামুটি শক্তিশালী কোনো রাষ্ট্র নি:স্বার্থ বন্ধুত্ব দেখায় না। তবে বাংলাদেশ ব্যতিক্রম। এটি একটি উদার দেশ। “এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি...”এটা বহু কবি সাহিত্যিক,গায়ক অনেক আগেই গেয়ে গেছেন। তাই উদারতাবাদের নীতি অনুসরনে আমরা আমাদের পররাষ্ট্র নীতির মূল ভিত্তি করেছি-‘কারো সাথে শত্র“তা নয়,সবার সাথেই বন্ধুত্ব।’...সুপার !!! পৃথিবীতে আমাদের কোনো শত্র“ নেই এবং আমরাও কারো শত্র“ নই। পৃথিবীর সকলেই অতি উত্তম,অধমের কোনো অস্তিত্ব নেই। অথবা বঙ্কিম চন্দ্রের নীতি-‘তুমি অধম তাই বলিয়া আমি উত্তম না হইব কেন ? ’ নীতিতেও আমরা বিশ্বাসী। আমাদের ব্যক্তিগত উদারতা পর রাষ্ট্রীয় বিষয়ের সাথে মিলে মিশে একাকার। পৃথিবীতে সাংবিধানিকভাবে এমন দূর্বলতা আর কোনো দেশ প্রকাশ করেছে বলে আমার জানা নেই। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে যেখানে কোনো দেশ অন্য দেশকে কোনোভাবে ছাড় দেয়না,সেখানে আমরা আমাদেরকে পুরোপুরি উদারতায় উম্মুক্ত করেছি। কারো জন্যে আমরা বাধা নই। আমাদের আইন,শাসক,মাটি সব একযোগে বিদেশীদেরকে চরম উদারতায় আহবান করে। তারপর আমরা উদারতার সূত্র মেনে কাতারে কাতারে ধর্ষিত হই। তারপরও আমাদের একই নীতি। বিদগ্ধজনরা বলে বাংলাদেশ হল গরিবের সুন্দরী বৌ,তাই নিরাপত্তা বিঘিœত হয়,আর আমি বলি- এটি গরীবের দুশ্চরিত্রবান সুন্দরী বৌ,যে স্বেচ্ছায় অন্যের বাহুবন্ধনে আবদ্ধ হতে উদগ্রীব।
পৃথিবীর কোনো দেশ কখনই নিজেকে শত্র“মুক্ত ভেবেছে বলে আমার জানা নেই। যে দেশ নিজেকে শত্র“মুক্ত ভাবে সে জীবনেউ উন্নতি লাভ করেনা। তার নিশ্চিন্ততা তাকে সামনে ধাবমান করেনা বরং আয়েশে জীবন কাটাতে উদ্বুদ্ধ করে। তার নব নব আবিষ্কারের রাস্তা,পন্থা সবকিছুই বন্ধ হয়ে যায়। এবং পৃথিবীর সামনে এটি একটি অথর্ব জাতি হিসেবে চিহ্নিত হয়। যারা নিজেদেরকে অনিরাপদ ভাবে তাদের জন্যেই উন্নতি,কারণ তারা মরিয়া হয়ে ওঠে আবিষ্কারে,উপায় উপকরণ অšে¦ষণনে। মুসলিমদের পতন তখন হয়নি,যখন তারা পৃথিবীর দিকে দিকে ইসলামের বিজয় পতাকা উড়াচ্ছিল,শত্র“ বাহিনীর সাথে প্রকাশ্য শক্তি প্রয়োগে লিপ্ত ছিল। তাদের পতন তখন থেকে শুরু হয়েছে,যখন তারা নিজেদেরকে নিশ্চিন্ত মনে করেছে এবং নিজেদের কাজে সন্তোষ প্রকাশ করেছে।
পৃথিবীতে একটা দেশও নেই,যে দেশ সকলের সাথে বন্ধুত্ব করার নীতিতে উদ্বুদ্ধ হয়েছে এবং উন্নতি লাভ করেছে। না অর্থনীতিতে,না সমর নীতিতে তারা সফলকাম হয়েছে। যেসব দেশকে আমরা নিরপেক্ষ এবং উন্নত বা ধনী হিসেবে চিনি,তাদের নীতি আদর্শ এতটা দূর্বল নয় এবং তারাও সকলের সাথে বন্ধুত্বকে বিশ্বাস করেনা।
আজকের লেখার উদ্দেশ্য ছিল ভিন্ন। যুক্তরাষ্ট্র কয়েক বছর ধরে ইরানকে আক্রমন করবে বলে আসছে,ইরানও জানে তাদের সুস্পষ্ট কিছু শত্র“ আছে। তারা মরিয়া হয়ে আবিষ্কারের পেছনে ছুটে এবং তারা সক্ষমতা তৈরী করেছে। একইভাবে উত্তর কোরিয়াও সামরিক ক্ষেত্রে যথেষ্ট সক্ষমতা তৈরী করে ফেলেছে,যা তাদের শত্র“দেরকে চিন্তায় ফেলে দিতে পারে। এটাই আসল পররাষ্ট্র নীতি,যা অন্যরা স্পষ্ট বোঝে। এ উপমহাদেশে ভারত-পাকিস্থানের শত্র“তা সকলের জানা। ভারত পারমানবিক বোমা তৈরীর চেষ্টায় গবেষনা শুরু করার সাথে সাথে পাকিস্থানও সে পথ ধরে,আর ভারত পারমানবিক বোমা তৈরী করার সাথে সাথে পাকিস্থানও মরিয়া হয়ে ওঠে এবং এক বছরের কম সময়ের মধ্যে তারাও বোমা তৈরী করে ফেলে। এর নাম প্রতিযোগীতা।
গত কয়েক বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্র আফগান-পাকিস্থান সীমান্ত এলাকা ওয়াজিরিস্থানে মানববিহীন বিশেষ কম্পিউটার চালিত বোমা বহনকারী বিমান বা ড্রোন এর সাহায্যে বোমা হামলা চালিয়ে সাধারন জনগনকে হতাহত করেছে। ফলে পাকিস্থান ভেতরে ভেতরে এই বিষয়ে তার সামরিক সক্ষমতা তৈরী চেষ্টা চালায় নিজেদের নিরাপত্তার কথা ভেবে। এ মাসের শুরুর দিকে ভারত যখন মঙ্গল গ্রহের উদ্দেশ্যে তাদের প্রথম রকেট উৎক্ষেপন করে বিশ্বের সামনে নিজের সক্ষমতা জানান দিল, তার পরদিন পাকিস্থান একটি নতুন মিসাইল উৎক্ষেপন করল বটে কিন্তু সেটি ভারতের বিশাল কর্মযজ্ঞের তুলনায় আলোচিত কিছু হলনা। আর তাই তারা প্রতিশোধ নিয়ে নিল নিজস্ব প্রযুক্তিতে প্রথম ড্রোন তৈরী করে। এটি অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ড্রোন যা বহু উপর থেকে নিরাপদে কোনো এলাকায় নিখুত বোমা হামলা করতে পারে। হয়ত শুনব ভারত আরও বিশাল কিছু তৈরী করেছে। এটাই স্বাভাবিক এবং এভাবেই জগত চলছে।
কিন্তু দূর্ভাগ্য এই যে, এসব অত্যাধুনিক সাজ সরঞ্জাম মজলুমকে জালিমের কবল থেকে উদ্ধারে ব্যবহৃত হবেনা,হয়না। এটা পুজিপতিদের হীন স্বার্থকে চরিতার্থ করার হাতিয়ার। মজলুমের খাবার কেড়ে খাওয়ার প্রতিযোগীতায় বিজয়ী হওয়ার উপকরণ। অবশ্য জাতি হিসেবে এই অযোগ্যতাটুকুও আমরা অর্জন করতে পারিনি। তবে আমাদের নেতারা রয়েছেন,তারা তাদের বক্তব্যে আমাদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠিত করে রেখেছেন বহূকাল পূর্ব থেকেই। ভজঘট বিধানে নিজেরা চলছেন,আমাদেরকেও নাচাচ্ছেন। সকল যালিমের প্রতিষ্ঠিত আসন ধবংশ হবার প্রতিক্ষায় রইলাম।
বিষয়: বিবিধ
২০৪৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন