ফ্রগ জাম্প !!!
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ০৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ১২:০০:০৪ দুপুর
পরদিন গেলাম কাবরাম্যাটা। এখানে যাওয়ার একটা কারণ আছে। সিডনীর এক আত্মীয়ের কাছে শুনেছিলাম এখানে প্রচুর সব্জী পাওয়া যায় এবং পরিবেশ অনেকটা গ্রামীণ টাইপের। অনেকে নাকি রাস্তার পাশে বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী বিক্রি করে। এটা দেখার শখ হল ভিষণ।
আমি চলে গেলাম। এটা মূলত ভিয়েতনামের লোকদের আবাসস্থল। এখানকার বেশীরভাগ লোক ভিয়েতনামিজ। কিন্তু অনেক হাটাহাটির পরও আমি আমার মাথার মধ্যে সৃষ্টি হওয়া দৃশ্যের সাথে মিল পেলাম না বরং অন্যান্য স্থানের মতই মনে হল। হয়ত তিনি এই এলাকার অন্য কোনো স্থানের কথা বলেছিলেন। আমি বিভিন্ন জিনিসপত্র দেখার সময় অনেকে আমাকে আহবান করছিল সেগুলো কেনার জন্যে। কিন্তু আমি এসেছি দেখতে। তবে এখানকার স্টোরগুলোতে প্রচুর সব্জী এবং ফলমূল দেখতে পেলাম। দাম মোটামুটি একই রকম। তবে খুবই তরতাজা সব্জী ও ফল দেখলাম। আমি এখান থেকে বিভিন্ন রকমের কাচা আম কিনলাম। এর একেকটি এক কেজী করে হবে। এখানে চায়নিজ এবং ভিয়েতনামিক বিভিন্ন পণ্য দেখলাম,প্রচুর খেলনাও ছিল যা অন্যান্য স্থানের তুলনায় সস্তা। তবে সস্তা মানে ততটা সস্তা নয়। নাতির জন্যে একটা হেলিকপ্টার কেনার ইচ্ছা ছিল কিন্তু মানিব্যাগ আমাকে নিরাশ করল। আমি আম কিনে চলে আসলাম। ইঙ্গেলবার্ন এসে এক বাঙালী দোকান থেকে বাঘা জাতের তেতুল কিনলাম। বিকেলে তেতুলের সাথে ঝাল-মশলা দিয়ে আম মাখালাম। এ আম তেমন টক নয়,তবে অসাধারণ স্বাদের। আমি বলতে পারি অস্ট্রেলিয়া সফরে আমি এই আমের পরশে ধন্য হয়েছি।
পরের দিন একটা মজার ঘটনা ঘটল। আমি সাধারনত ট্রেনের মাল্টি টিকেট কাটতাম,কারণ প্রচুর যাতায়াত করতে হত এবং বিভিন্ন ধরনের বাহনে চড়তে হত। একদিন আমি সিটির উদ্দেশ্যে রওনা হলাম কিন্তু আমি টিকেট কাটতে ভুলে গিয়েছিলাম। যখন সিটির কাছাকাছি আসলাম তখন হঠাৎ আমার টিকেটের কথা মনে পড়ল। মাথায় আমার আকাশ ভেঙ্গে পড়ার দশা হল। যদি পুলিশ ধরে তাহলে তো সর্বনাশ হবে,আর স্টেশন থেকে বের হব কিভাবে ? চিন্তা করে দেখলাম সার্কুলার কী তে নামতে হবে কারণ ওখানে নামার পর দেখী দুপাশের গেট খোলা থাকে। ফলে টিকেট ছাড়াই কেউ কেউ ওই গেটদুটি দিয়ে বের হয়ে যায় দেখেছি।
আমি ট্রেন থেকে নামলাম। চলন্ত সিড়ি দিয়ে নীচে নেমে দেখী গেটদুটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অথচ গতকালও গেটদুটি খোলা ছিল এবং গত একমাস ধরে আমি এই গেটদুটি খোলাই দেখেছি। আমি প্রমাদ গুনতে লাগলাম। ইজ্জত আজ আর থাকবে না। আমি আবার স্টেশনে উঠে আসলাম। তারপর চিন্তা করলাম এটা ছোট স্টেশন তাই ওরা আমাকে দেখে বুঝে ফেলবে। কারো পেছনে পেছনে গিয়ে সতর্কতার সাথে নির্দিষ্ট সময়ের ভেতর পার হয়ে যাওয়া যায় তবে এটিতে আমি কখনই অভ্যস্ত নই। তাছাড়া মানুষিকভাবে বাধা থাকার কারনে আমার পক্ষে এটি করা সম্বব হবেনা। আমি পরবর্তী স্টেশন উইনইয়ার্ডে যাওয়া সঙ্গত মনে করলাম,কারণ সেটা অনেক বড় স্টেশন,একটা ব্যবস্থা হবে নিশ্চয়।
সকল ট্রেন উইনইয়ার্ডে যায়; তাই পরবর্তী ট্রেনে চেপে উইনইয়ার্ডে নামলাম। এখানে ট্রেন আবার পাতালে চলে। তাই ভয়ে ভয়ে দুই তলা ওপরে উঠে আসলাম। মাটির লেভেল অবশ্য তিনতলায়। আমি দেখলাম দুজন কর্মী বসে আছে। তাদের সামনে দিয়ে কোথায় যাব ,তা বুঝতে না পেরে আবারও নীচে নেমে গেলাম। এবার নীচের একটা লিফট দিয়ে ওপরে উঠে আসলাম। ভাবলাম অনেক স্থানে দেখেছি লিফট একেবারে রাস্তা রবাবর চলে গেছে,এই লিফট হয়ত আমাকে বাইরে কোথাও নিয়ে যাবে। কিন্তু না। আমি লিফট থেকে বের হয়েই দেখলাম দুজন কর্মী গেটের সামনে বসে আছে। এবার তাদের সামনে দিয়েই হেটে গিয়ে সিড়ি দিয়ে একধাপ নীচে নামলাম। খানিক পর একপাশের গেটে কোনো লোক দেখতে না পেয়ে উঠে আসলাম এবং দুটি গেটের ওপর হাত রেখে এক লাফে গেট পার হয়ে ভাল মানুষের মত হেটে চলে গেলাম। আমার মনে হচ্ছিল ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ল। এমন ভুল আর হয়নি।
বিষয়: বিবিধ
২৬৮৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন