দাদা যা খেলুম না !
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ২৪ আগস্ট, ২০১৩, ০১:৩৬:০০ দুপুর
ফ্রেন্ডের বিয়ে। আসাদকে ফোন করলাম,সে জানালো বিকেলের দিকে বরযাত্রীরা যাবে। আমি যুম্মার নামাজের আগে নাস্তা+লাঞ্চ একসাথে করে ফেললাম। নামাজ থেকে আসার পর মা খেতে বলল। আমি বললাম, বিকেলেই তো দাওয়াত আছে,খাব বেশ । একটু ক্ষুধা ক্ষুধা লাগলেও আমি খাইনি। কারন বিকেলেই তো বিশাল কিছু খাব। যদিও আমি আগের মত হাভাতে নই তারপরও একটা রেশ তো থেকে গেছে। নিশ্চয় বহু রকমের খাবার খাব,আহ কি মজা। দুনিয়াতে খাবারের ওপর জিনিস নেই। হযরত আলী(রাঃ) বলেছিলেন, ক্ষুধা খাবারের স্বাদকে বর্ধিত করে দেয়।
আমি সেই নিয়ম মেনে ক্ষুধা বাড়িয়ে চলছি। বিকেলে মা সেমাই রান্না করল এবং আমাকে তা মুড়ি দিয়ে খেতে বলল। বললাম, খানিক পরই তো যাব। এখন খেলে ক্ষুধা মরে যাবে। তারপরও একটু খেলাম। তবে ক্ষুধা তাজা।
সন্ধ্যার সময় ফোন করলাম। বলল, এই তো আর কিছুক্ষন। রাত ৮টায় ফোন করলাম,উত্তর দিল,এই তো আর কিছুক্ষন। রাত ৯টায় বলল-তুমি বের হয়ে পড়। আমি অরেকজন বন্ধুকে ফোন দিয়ে আসতে বললাম। রওনা হলাম আমি। আমি কমিউনিটি সেন্টারে গিয়ে দেখলাম,কেউ এসেছে,কেউ আসেনি। যারা আসেনি তাদেরকে নিয়ে একত্রে প্রবেশ করাই নিয়ম। ওরে নিয়ম ! তুই আমার দিকটা একবারও দেখলি না !
এবার আসল তারা। কিন্তু তকদীর তো মানতেই হবে ! এরা এসেছে একটা স্যুটকেস ফেলে,সেখানে বৌ-এর উপহার সামগ্রী ছিল। আবার তারা রওনা হল। এখনও কেউ কেউ আসতে বাকী আর তারা হল ছেলের ভাই,ভাবী,বোন। অর্থাৎ এদের ছাড়া প্রবেশ করা অর্থহীন।
এক পরিচিত লোকের সাথে দেখা হল। জানলাম তিনি মেয়ের চাচা। লোকটা খুব ভাল। মামুনের চাচা শ্বসুর। তাকে কথাটা বলতেই সে বলল, এই চাচা ভাল ? সেই তো ১৫লক্ষ টাকা কাবিন করিয়েছে। হুমম, বুঝলাম। সে তার ভাতিজির নিরাপত্তা চেয়েছে। কিন্তু এভাবেই কি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব ? মোহরানার টাকা নগদে দিয়ে দেওয়াই নিয়ম। কিন্তু সামাজিক মর্যাদার কথা ভেবে আমরা এসব কাজ করে থাকি। এটা স্রেফ সামাজিকতা। ইসলাম নির্বাসিত।
আমি পাইলাম,আমি উহারে পাইলাম !!! রবী ঠাকুরের এক গল্পের উক্তী হলেও আমি এখানে বুঝাতে চেয়েছি ,,, তারা সকলে আসল! আমি খাবার সম্ভাবনাও দেখলাম। ইতিমধ্যেই গেট ধরা হয়েছে,সময় মাত্র রাত সাড়ে ১১টা। বললাম এসব নাটক ফাটক ভাল লাগছে না। চারটে খেতে পারলেই আমার চলে। মনেহয় ২০ হাজার টাকা গেটে দিল। এটা একটা বাড়াবাড়ি। তবে টাকার ব্যাপারে পূর্বেই চুক্তি হয়েছে। মামুনকে তিন রকমের পানীয় খাওয়ানো হল মজা করে। কিসব পটকা ফুটানো হল। আমরা ভেতরে প্রবেশ করলাম। প্রচুর লোকজন। একজন বরের জুতা খুলে নিয়ে যেভাবে দৌড় দিল এবং অন্যরা তার পেছনে সিড়ি ভেঙ্গে দৌড়াতে লাগল তাতে দূর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা ছিল। এমনটা ঘটে তা আমি আগে দেখিনি। খালি পায়ে মামুন সিংহাসনে বসে থাকল। বিশেষ এমাউন্টের বিনিময়ে জুতা ফেরত দেওয়া হবে। মামুনকে বললাম আগে জানলে আমি তো প্রয়োজনে জুতার ওপর বসে থাকতাম। সে বলল, সমস্যা নাই, ব্যাগে আমার আরেক জোড়া জুতো আছে। হেহেহে চালাক পাবলিক ! অবশ্য এটা হয়ত সে করবে না।
আমি এদিক ওদিক ছোটাছুটি করছি,ফটোসেশন করছি কিন্তু মন আমার মানে না,মানে না,মানে না,,,,,,দিল বদতমিজ কিনা জানিনা,তবে খাওয়া ছাড়া আর কিছু মাথায় ঢুকছে না। চারিদিকে সাজগোজ করা নারী-পুরুষের ছড়াছড়ি। অনেকে অনেক রকম মজা মাস্তি,গল্প গুজব করছে।আমার মাথায়,পেটে খাওয়ার চিন্তা।
কয়েকজন মিলে এক টেবিলে বসলাম। খানিকপর দেখলাম অন্য টেবিলে খাবার দেওয়া হচ্ছে। রাত তখন ১২টা বেজে ১৫। উঠে সেই টেবিলে গেলাম। তারা বলল আপনারা পূর্বোক্ত টেবিলে বসুন, আমরা ওখানেই খাবার দিচ্ছি। বসলাম। সত্যিই খাবার আসল
কিন্তু না। খাওয়া যাবেনা। আমাদেরকে বর-বৌয়ের সাথে একত্রে মিলে খেতে হবে। তারা আসছেন,,,,,কিন্তু একজন এসেছেন,আরেকজন বাকী। ভাবলাম এখানেও ছুটকেস ভুলে যাওয়ার মত কোনো ঘটনা ঘটবে নাতো ! বিষয়টা ফজরের ওয়াক্তে গড়াবে নাতো ! না, তারা সকলে আসল। বিশেষ বিশেষ ধরনের খাবার আসল। রাক্ষসের মত খেলাম। আশপাশে তাকানোর টাইম নাই। আমার খাওয়া দেখে খানিক দূরে বসা আসাদের বৌ আরেকটি মুরগীর রোস্ট,কাবাব আমার সামনে এগিয়ে দিলে সজিব বলল,সে দোকান বন্ধ করে ফেলেছে,আরেকটু আগে হলে খেয়ে ফেলত। (উল্লেখ্য আমি আমার বন্ধুদের স্ত্রীদের সাথে কথা বলিনা,যদি অতি জরুরী না হয়। তাদের সাথে দেখাও হয়না,সুযোগও নেই)
এবার পেটে শান্তি লাগল। বাহ বেশ শান্তি ! আসার সময় ওদের থেকে বিদায় নেইনি। মামুনের জুতার পরিনতি সম্পর্কেও অবহিত নই। চুলোয় যাক ওর জুতো। আজ আবার বৌ-ভাত !!!
বিষয়: বিবিধ
২৫১৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন