দৈনিক ফুটপাথ
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ২৩ আগস্ট, ২০১৩, ১২:১০:৩৩ রাত
বেশ বিস্তৃত কলার দোকান। একটা পাখি ক্ষুধার্তভাবে একটি কলায় ঠোকর কাটছে,চারিদিতে তার খেয়াল নেই। চারিদিকে মানুষের যে খাইখাই তাতে মানুষই বাচেনা আর পশু-পাখি !
এটা পচনশীল দ্রব্য। লোকটার স্বার্থের কথা চিন্তা করেই বেশী পেকে যাওয়া কলা খেতে শুরু করলাম। বেশ মজা লাগল। খানিক পর এক বৃদ্ধ ভিক্ষুক আসল। সে নিজের পকেটের থেকে পয়সা বের করতে থাকল।ভাবলাম সে কলা কিনতে চায়। তাকে একটা কলা দিলাম। দোকানদারকে কলার দাম মেটাতে গিয়ে বুঝলাম ,তিনি খুশী। কারন কলার দাম একটু কম রাখল আর ভিক্ষুককে প্রদত্ত কলার দামটি রাখল না। আমি অনুরোধ করার পরও রাখল না। খুব ভাল লাগল,তার হৃদয়খানা। বেশ বড়সড় মনে হল।
হাটতে থাকলাম। একজন ঝালমুড়ি বিক্রী করছে। এসব আবার আমার বেশ প্রিয়। বললাম বেশী ঝাল দিয়ে একটা তৈরী করেন। খেতে খেতে হাটতে থাকলাম। আশপাশের মানুষ তাকাচ্ছিল,গুলি মারো। কিন্তু মাঝপথে হঠাৎ ঝালমুড়ির প্যাকেটটা হাত থেকে পড়ে যাওয়ায় আমার দুঃখের সীমা রইল না। সদ্য বৃষ্টি হওয়া কাদামাটির ওপর না পড়লে,একবার চেষ্টা করতাম প্যাকেটটা উঠিয়ে থাওয়ার। ব্যর্থ মনোরথে হাটতে লাগলাম।
এক লোকের সাথে দেখা করলাম। সে অনেক কিছু খাওয়াল। গল্প করতে থাকল। কথা প্রসঙ্গে তিন কার্ডের এক ধরনের তাশ খেলার কথা উঠল। ছোটবেলায় একবার এই জিনিস দেখে আসক্ত হয়ে ৪০টাকা বাজি ধরে হেরেছিলাম। কৈশোরে এসব লোকের ওপর ক্রোধ জন্মেছিল। তাই একবার জাতীয় স্টেডিয়ামের একপাশের ফুটপাথে এমনই একজন কার্ড জুয়া খেলোয়ারকে পেটালাম। সঙ্গে সঙ্গে তার দুজন সাঙ্গ-পাঙ্গ চলে আসল। প্রস্তুত হলাম সব-কটাকে পেটানোর। সে সময় ফাইটিং ম্যাটে আমি বেশ নামকরা। কিন্তু অন্য সদস্যরা এপথে আসল না। তারা উক্ত ব্যক্তির পক্ষে দালালী না করে,তাকে আরেক থাপ্পড় মেরে বলল,ভাই আপনি শান্ত হন,ও আর এখানে খেলবে না। আমি রাস্তা মাপলাম।
সেও তার এমন এক অভিজ্ঞতার কথা বলল। এবং জুয়ার আরও ভয়ঙ্কর কথা শুনলাম। টঙ্গীর কোনো একটি স্থানে নাকি তার এক পরিচিত লোক নিজের বউকে বাজি ধরেছিল এবং হেরে গিয়ে তাকে তালাক দিল। অন্যজন বৌ জিতে নিয়ে এক লক্ষ টাকা কাবিনে বিয়ে করল। বৌ প্রথমে রাজি না হওয়াতে তাকে হত্যার হুমকি দিয়ে রাজি করিয়েছিল তার স্বামী।
এক ব্যাচেলর বন্ধুর বাসায় আসলাম। আজ সন্ধ্যায় একটা দাওয়াত আছে কিন্তু সে তো ঢের দেরী। তাই এখানে খাওয়ার চিন্তা করলাম। তরকারীর চেহারা দেখে চৌদ্দগুষ্টি তুলে গালি দিয়ে নাক শিটকে খানিক খেলাম। একজনকে এসএমএস করলাম আমার বার্থ ডে উপলক্ষে গিফট দিতে। গত ৮ই আগস্ট ছিল আমার বার্থ ডে কিন্তু সেসময় তাকে তা জানাতে মনে ছিলনা। আমি নিজে এটা পালন না করলেও যারা গিফট করত,তাদের কোনো রক্ষা নেই।
সন্ধ্যা পর্যন্ত গল্প চলল। তারপর ধীরে সুস্থে অনুষ্ঠান স্থালে আসলাম। এটা গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান। এই শয়তানের টাকা পয়সা বেশ। তবে নিজের ইনকাম না। সড়ক দূর্ঘটনায় পিতার মৃত্যু হলে দু-ভাই যথেষ্ট পেয়েছিল। চারিদিকে মেয়েদেরকে দেখলাম চকচকে পোষাক,মুখে শিরিষ কাগজসহ সবকিছু ঘষে পেইন্ট করে এসেছে।থরে থরে বিভিন্ন জিনিসপত্র সাজানো। এখানকার কয়েকটা রাস্তা জুড়ে লাইটং এবং প্যান্ডেল। ছেলেটা ইসলাম ঘেষা হওয়ায় গান বাজনার আয়োজনে আপত্তি করলে তা ধোপে টিকেনি। ব্যান্ড মিউজিক চিল্লাচ্ছে। একটু রোবটিক স্টাইলে দাড়িয়ে থেকে দেখলাম,অনেকে আমাকে দেখছে,আমিও অনেককে দেখছি। খানিক পর মনে হল এসব নাটক আমার দেখে কাজ নেই। চোখের হেফাজত করে বন্ধুর অনুরোধে দাড়িয়ে থাকলাম। ব্যান্ডের গান শুনে মনে হচ্ছে গলায় পা দিয়ে ধরি। তবে বিশ্বাস করুন আর নাই করুন আমি কিন্তু ব্যান্ডে গান গেয়েছি এক কালে। তবে নিয়মিত নয়। মানুষ বেশ পছন্দও করেছে। ....তারপর লাথি মারলাম এসব জগতকে।....
এখানে দাড়ালে সমস্যা তৈরী হবে। দুজনকে নিয়ে মসজিদে চলে গেলাম। জামাতে ঈশার নামাজ আদায় করলাম। আমার ধান্দা চারটে খেয়ে কেটে পড়া। কিন্তু এরা যেসব টালবাহানা শুরু করেছে তাতে তা হবার জো নেই। এদিকে পেটে ছুচো ধৌড়াচ্ছে। একসময় বৌ-পক্ষ আসল বিশাল পণ্য সামগ্রি নিয়ে। আমি তাদের মধ্যে ঢুকে এক ফাকে খেয়ে নিলাম। তারপর একজনকে বলে চুপি চুপি চলে আসলাম।
শেষের দিকে দেখলাম লিড ভোকাল লোকটা সুন্দরী মেয়েদের কাছাকাছি যাচ্ছে। এদের আচরন অসহ্য লাগে। এদের অনেকেই মেরুদন্ডহীন ফাউল। আমার চিন্তা ঠিক হল। সে উশখুশ করছে কারো কারো সাথে কথা বলার জন্যে। আর মেয়েগুলোও সরেশ টাইপ। খানিকক্ষন কথা বলে সে পকেট থেকে মোবাইল ফোন বের করল। বুঝলাম কৌশলে সে ওদের কারো কারো নাম্বার নিবে। একজনকে বললাম, ওখানে যাও। চোখে চোখে রাখ,যাতে চান্স না পায়। আমি চলে আসলাম। অনেক সময় ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও পারিপার্শ্বিক চাপে অনেক কিছু করা সম্ভব হয়না। আর বহু মুরব্বীরা এমন সব ছাড় দিয়ে থাকে যার পরিনতী ভাল নয়।
আমার বিয়েতে যে অযাচিত অনুষ্ঠান করতে চাইবে, সে আমার বাপ হলেও ছাড় নেই। অনুষ্ঠান হবে একটি এবং সেটি অবশ্যই শরিয়তের নিয়ম মেনে। আখিরাতে আমার কাছে আল্লাহ কৈফিয়ত নিলে, কেউ কি আমাকে ঠেকাতে আসবে ???
বিষয়: বিবিধ
১২৭৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন