সিডনীর দিনগুলো
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ২২ আগস্ট, ২০১৩, ০৮:২৬:৪৫ সকাল
আমার ভাগনী ‘রেড পি’(প্রাথমিক মানের) ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার পর আমরা গাড়ি কিনতে বের হলাম। বহু স্টোরে দৌড় ঝাপ শুরু হল। এসময় আমি দেখেছি একেক স্টোরে হাজার হাজার বা শতশত গাড়ি রয়েছে। রাস্তার পাশ ধরে কোথাও সযতনে আর কোথাও অযতনে দামী দামী গাড়ী ফেলে রাখা হয়েছে। বিশ্বের বিখ্যাত সব ব্রান্ডের গাড়ী এমনভাবে ফেলে রাখা হয়েছে যেন এটি পুরোনো লোহালক্কড়ের দোকান।
এখানে বেশী দামী গাড়ী বা বেশী ফুয়েল পুড়ে এমন গাড়ীর দাম বেশ সস্তা দেখলাম। কারণ বেশীরভাগ মানুষ কম ব্যয়বহুল গাড়ি কিনতে চায়। ফলে ছোট গাড়ির চাহিদা বেশী। আর টয়োটার কদর খুব বেশী দেখলাম। এর কারণ হল এ গাড়ী সস্তার মধ্যে এক নাম্বার এবং সার্ভিস অতি চমৎকার। এর ওপর নির্ভর করা যায়। আর এর সার্ভিসও তুলনামূলক সস্তা। বাংলাদেশে বি.এম.ডব্লিউ ,মার্সিডিজ বেঞ্জ বা লেক্সাসের যেসব গাড়ী কোটি টাকার ওপরে,এখানে সেটা ত্রিশ/চল্লিশ লাখে পাওয়া যায়। আর যদি সেটি ব্যবহৃত হয়ে থাকে তাহলে প্রায় দশ লাখ বাংলা টাকার সমপরিমান ডলারে সেটা অহরহ পাওয়া যায়। অস্ট্রেলিয়ার নিজস্ব একটি বিখ্যাত ব্রান্ড আছে,সেটাও বেশ ভাল কিন্তু সর্বত্র টয়োটার জয়গান।
আমরা একটি ছোট গাড়ির সন্ধানে বের হলাম এবং বহু যাচাই বাছাই করে এবং অনেকবার চালিয়ে টয়োটাই কিনলাম। আমি আর ভাগনী মাঝে মাঝে শপিংয়ে যেতাম। সে খুব ভাল চালায় এবং প্রচন্ড হুশিয়ার। যাদের সন্তান রয়েছে তারা অবশ্যই তাদের সন্তানদেরকে তাদের জন্যে নির্ধারিত সীটে তাদেরকে বসাবে। নইলে বিরাট অংকের জরিমানা গুনতে হবে এবং একাধিকবার এমন হলে তারা সন্তানকে রাষ্ট্রের দায়িত্বে নিয়ে নিতে পারে। কারণ তিনি তার সন্তান লালন পালনে ব্যর্থ হয়েছেন। সন্তানের পেছনে সরকার অনেক টাকা খরচ করে থাকে। সন্তান জন্মের সময় এক কালীন পাচ হাজার ডলার প্রদান করা হয় সন্তানের আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র কেনার জন্যে এরপর প্রতিদিন এক’শ ডলার ভাতা প্রদান করা হয় এবং তাদের জন্যে বিভিন্ন জিনিসপত্র কেনাটাকায় পঞ্চাশ শতাংশ মূল্যহ্রাস সুবিধা প্রদান করা হয়। রাষ্ট্র সন্তানের সার্বিক সুবিধা,নিরাপত্তা প্রদানে সর্বোচ্চ সহযোগীতা করে ফলে এ ব্যাপারে তারা তাদের অধিকার ফলায়।
আমি যে বেশ ভাল রান্না করতে পারি তা আমি নিজেও জানতাম না। প্রায়শই আমি রান্নাবান্না করতাম। এখানে একটা চায়নিজ দোকানে হালাল মুরগীর মাংস বিক্রী করত। সেখান থেকেই মুরগী কিনতাম আর লাল মাংস কিনতাম একটি বাঙ্গালী দোকান থেকে। এ দোকানে বাংলাদেশের অনেক পণ্য পাওয়া যেত। ফ্রোজেন কাঁচা মরিচ পাওয়া যেত,এটার মান খুব ভাল দেখেছি। মাঝে মাঝে বিকেলে মুড়ি চানাচুর মাখাতাম মরিচ,পেয়াজ,সরিষার তেল দিয়ে।
আমি একটা জিনিস এখানে রান্না করতাম প্রতিনিয়ত,সেটা হল টমেটো দিয়ে ডাল। ডাল আমার প্রিয় জিনিস আর সাথে আলুভর্তা থাকলে তো কথাই নেই। আমি পূর্বে কখনই টমেটো দিয়ে ডাল না রাধলেও এখানে প্রথমবারেই তা খুব ভাল হল। উৎসাহিত হয়ে আমি রান্না করতে শুরু করলাম। আমার ভাগনীও খারাপ রাধে না,তবে আমার নিজের রান্না ডাল না হলে আমার যেন চলত না। অবশ্য আমার ইচ্ছা না হলে আমি রান্না করিনা। প্রতিনিয়ত এদের বন্ধু-বান্ধব,আত্মীয় স্বজনরা দাওয়াত করত। অনেকের বাড়ি এখান থেকে খুব কাছে। তাদের বাড়িতে যেতে হত,তাদের বিশেষ বিশেষ খাবার খাওয়ার জন্যে। খাবার জিনিসটি ছোটবেলা থেকেই প্রিয় হওয়ার কারনে খাবার তৈরী করা এবং খাওয়ার বিষয়ে আমার খানিক ঝোক রয়েছে। বিভিন্ন মানুষের বিভিন্ন ধরনের রান্নার স্বাদ নিতে আমার ভাল লাগে। আর এ ব্যাপারটি গত এক বছরে যা না ঘটেছে,তা সিডনীতে ঘটেছে মাত্র দু-মাসে।
বিষয়: বিবিধ
১৭৬৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন