নাতির জন্যে বাইক

লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ২১ আগস্ট, ২০১৩, ১২:৪৯:০৮ দুপুর



অস্ট্রেলিয়ার বাজার মাত্র কয়েকটি বহুজাতিক কোম্পানী দখল করে রেখেছে। তাদের সাথে প্রতিযোগীতায় টেকা অন্যদের পক্ষে প্রায় অসম্ভব। তারা বিশাল খুচরা বিক্রী করে এবং দামে বেশ সস্তা। এতে সাধারণ জনতার বেশীরভাগই এসমস্ত স্থান থেকে কেনাকাটা করে। অস্ট্রেলিয়া বহু বছর ব্রিটিশ কলোনী ছিল। উপনিবেশিক শাসন থেকে প্রত্যক্ষ্যভাবে মুক্ত হলেও পরোক্ষভাবে এখনও এটি কলোনীর মতই রয়েছে। এখানকার ব্যবসা বানিজ্য,রাজনীতিতে ব্রিটিশের প্রভাব অনেক। এমনকি দু বছর পূর্বেও ব্রিটিশ রানী এলিজাবেথ কাগজে কলমে এখানকারও রানী ছিলেন। একটি স্বাধীন দেশের জন্যে ব্যাপারটি খানিক দৃষ্টিকটু হওয়াতে বোধহয় এখন নিয়মটি উঠিয়ে ফেলা হয়েছে। দুটি বিশাল ব্রিটিশ তেল কোম্পানী শেল এবং ব্রিটিশ পেট্রোলিয়াম(বি.পি)এদেশের অধিকাংশ তেল সরবরাহ করে। এরা শুধু তেল উৎপাদনই করেনা ,বরং এরা হাজার হাজার নিজস্ব পেট্রোল পাম্পের মাধ্যমে খুচরা তেল বিক্রি করে থাকে। মানুষ এবং পোষা প্রাণীর সকল রকমের খাদ্যদ্রব্য,নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের খুচরা বিক্রেতা হিসেবে সারা অস্ট্রেলিয়াাতে ছড়িয়ে রয়েছে শেলের কোল্স এবং বি.পির উলওর্থ নামক প্রতিষ্ঠান।

সকল ধরনের পোষাক এরা তৈরী করে থাকে এবং তা নিজস্ব ব্রান্ডে হাজার হাজার স্টোরের মাধ্যমে বিক্রী করে থাকে। এছাড়া কে-মার্ট নামক একটি খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানও ব্যপক ব্যবসা করে থাকে। আমি এসব স্টোরে গিয়ে অবাক হয়েছি। এরা এমন কোনো জিনিস নেই যা বিক্রী করেনা। সকল পণ্যই তুলনামূলক কম দামে এখানে পাওয়া যায়। প্রথম সারির এসব প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের মধ্যে চরম প্রতিযোগীতায় লিপ্ত। আর এদের সার্ভিস সত্যিই খুব ভাল।

আমি একবার আমার নাতির জন্যে কে-মার্ট থেকে একটা বড় গাড়ি কিনলাম। কিনে বাইরে এসে মনে হল এর চাইতে একটা রি-চার্জেবল মোটর বাইক কেনা ভাল ছিল। এটি দামে তুলনামূলক সস্তাও বটে। আমি তখন একটি কাউন্টার দেখলাম যে কাউন্টারের একমাত্র কাজ হল,বিক্রিত মাল ফেরৎ নেওয়া। ভাবলাম অনুরোধ করব এটি ফেরত নেওয়ার জন্যে। দেশে এভাবে সহজে কোনোকিছু ফেরৎ দেওয়া যায়না। আমি লক্ষ্য করলাম অনেকে এখানে স্বাভাবিকভাবে পূর্বে কেনা জিনিসপত্র ফেরৎ দিয়ে টাকা নিয়ে যাচ্ছে। যিনি ফেরৎ নিচ্ছেন তিনি বেশ হাসি মুখেই নিচ্ছেন,হয়ত ভেতরে ভেতরে তার ভাল লাগছে না কিন্তু এরা ভদ্র। আমি সেটা ফেরত দিলাম,টাকা নিলাম এবং আবার স্টোরে ঢুকে এক স্থান থেকে একটি মোটর বাইকের কার্টুন নিলাম। চলে আসলাম। দুদিন পর কার্টুন খুলে দেখলাম মোটর বাইকের হ্যান্ডেলটিই নেই। আমরা স্টোরে গেলাম এবং তাদেরকে বললাম এ কার্টুনের ভেতর বাইকের হ্যান্ডেল ছিল না। তখন একজন এসে জানালো যে, আপনি এমন একটি কার্টুন সেদিন নিয়েছেন যেটি স¤পূর্ণ ছিলনা এবং আমরা দুঃখিত আপনাকে কষ্ট দেওয়ার জন্যে। তিনি নতুন আরেককি বাইক আনলেন কিন্তু সে বাইকটি সুবিধার ছিলনা,কারণ বাইকটি একজন দীর্ঘ ৬ মাস ব্যবহার করে ফেরৎ দিয়ে গেছে এই বলে যে,এটি ব্যবহার করে তিনি সন্তুষ্ট নন। তিনি পুরো টাকা ফেরৎ নিয়ে গেছেন। তিনি অবশ্য ৩৬৪দিন ব্যবহার করেও ফেরৎ দিতে পারতেন,কারণ ওয়ারেন্টী এক বছর। ওয়ারেন্টী শেষ হবার পূর্ব পর্যন্ত ইলেকট্রনিক পণ্য ফেরত দেওয়া যায়। এদের ক্যাশ মেমোর নীচেও লেখা থাকে যে,আপনি সন্তুষ্ট না হলে ফেরৎ দিতে পারবেন।

আপনাদের কাছে মনে হতে পারে যে,সবাই যদি এভাবে কিনে ফেরৎ দিয়ে যায় তাহলে কোম্পানী তো লাটে উঠবে। আসলে এরা এজাতীয় সার্ভিস দেওয়ার পূর্বে বহু বছর গবেষণা করেছে এবং তারপর এসব সার্ভিস প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কারণ তারা তাদে জনগনের মানুষিকতা খুব ভালভাবে বুঝেছে। এখানে হাতে গোনা কিছু লোক আছে যারা একাজগুলি করে থাকে। কিন্তু বেশীরভাগ লোকই এসব করেনা। আর যে কজন লোক ব্যবহার করে ভাল পেলেও ফেরৎ দিয়ে যায় তাদের বিষয়টি এদেরকে খুব একটা লোকসানের সম্মুখীন করেনা। এরা ওই লোকসানটুকু হিসেব করেই ব্যবসা পরিচালনা করে। আর এভাবে সার্ভিস দেওয়ার কারনে কোম্পানীর যে সুনাম হল,তাদে কোম্পানীর লাভের পরিমান উক্ত খাত থেকে লোকসানের চাইতে অনেক বেশী। আসলেই এটি কোনো লোকসান নয়। আমি বুঝলাম বাঙ্গালীর ব্যবসায়িক চিন্তা আর এদের চিন্তা এক নয়, আর এরা কেন এত বিশাল ব্যবসা করতে পারে বা করে চলেছে যুগের পর যুগ তা বুঝলাম। ক্রেতার বিশ্বাস,আস্থাকে এরা সাংঘাতিক মূল্যায়ন করে। এভাবে একজন ক্রেতার কাছে এরা বহু পণ্য বিক্রি করতে পারে। এবং বংশ পরম্পরায় এরা তাদেরকে ধরে রাখার চেষ্টা করে নিজেদের উন্নত সার্ভিসের সাধ্যমে।

যাইহোক,আমি বাইকটা কিনতে বদ্ধ পরিকর তা জানার জন্যে তারা অনেক স্টোরে খোঁজ নিয়ে দেখলেন এটির স্টক শেষ হয়ে গেছে। তারা আমাকে তখন একটি রশিদ ধরিয়ে দিলেন এবং কয়েকদিন পরে যে কোনো স্টোর থেকে সংগ্রহ করতে বললেন। আমি খুশী হলাম।

বিষয়: বিবিধ

১৯৬৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File