ঈদ মোবারক
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ১৯ আগস্ট, ২০১৩, ০৯:৪৪:১৪ সকাল
মা ঢাকাতেই ছিল। কথা ছিল বড় বোন,মা আর আমি যাব বাড়িতে ঈদ করতে। ওখানে ছাড়া ঈদ আসলে জমে না। কিন্তু বোনের গাড়ির রেজিস্টেশন ডেট ফেল হয়েছে বেশ আগে। ঈদের সময় দূরপাল্লার ভ্রমনে পুলিশ ঝামেলা করতে পারে ভেবে তারা গেলনা। ভাবছিলাম বাড়ি গিয়ে আর কি হবে, কিন্তু শেষবেলায় আমার বড় ভায়ের চাপাচাপিতে আমার বাড়ি যাবার সিদ্ধান্ত হল। ঈদ মাত্র দুদিন পর। গ্রিণলাইন পরিবহন তাদের বিশেষ রিজার্ভড টিকেট থেকে একটি আমাকে দেওয়াতে ঈদের পূর্বদিন সহি সালামতে পৌছালাম যশোর।
আমিও বাস থেকে নামলাম আর বৃষ্টিও শুরু হল। এদিকে সচরাচর এমন মুষলধারে বৃষ্টি হয়না। এক বারান্দায় দাড়ালাম কিন্তু বৃষ্টির তীব্রতা আমাকে দংশন করতে থাকল। এক ভ্যানওয়ালাকে অনুরোধ করাতেও ভিজতে রাজি হলনা। খানিকপর এক তরুন ভ্যান চালককে ম্যানেজ করলাম এবং বৃষ্টির মধ্যে খোলা ভ্যানে ভিজতে ভিজতে বাড়ির পথ ধরলাম। বেশ মজা লাগল।
এবার পুলাপাইনরা একটা খারাপ কাজ করেছে। প্রতিবারের মত এবারও ঈদের বিশেষ আকর্ষণ র্যাফেল ড্রর আয়োজন করা রয়েছে কিন্তু ওরা লটারীর টিকেট ছাপিয়ে তা এলাকায় বিক্রি করেছে। যদিও এতে ওদের তেমন লাভ হবেনা কিন্তু এটা ওরা করে ফেলেছে। এটা হারাম তা বহু পূর্ব থেকেই ওদেরকে বলেছি কিন্তু তারপরও ওরা এটা করল। ফলে আমি রাগান্বিত হয়ে ওদেরকে এক পয়সাও দেয়নি। আবারও শ্মরণ করিয়ে দিলাম এটা স্পষ্ট হারাম। ওরা বুঝল এবং ওয়াদা করল আর কখনও এটা করবে না।
সন্ধ্যায় পরবর্তী দিনের জন্যে অনেক কিছু কেনা-কাটা করা হল। বেশ কয়েকজনকে দাওয়াত দিলাম। এবার ঈদ একেবারে নিরামিষ। ইসলামিক কারনে আমার ভাবির সাথে কথা বলিনা। বাড়ি গেলে ভাল-মন্দ জিজ্ঞেস করা ছাড়া আর কোনো কথা হয়নি জীবনেও। ভাবী নামটা পছন্দ হয়না তাই এই নামে কখনই কাওকে ডাকিনি। এ কারনে প্রচুর অভিযোগ করেছে মানুষ,গুলি মারো মানুষের ! আমার সম্পর্কে ভায়ের স্ত্রীর তেমন জানা-শোনা নেই। আমি থাকি আমার মত,তিনি তার মত। তার রান্না বেশ ভাল। ঈদে খিচুড়ী আর বিভিন্ন মাংস রান্না করতে বললাম। বেছে বেছে গরিব ছোটভাইদেরকে দাওয়াত করলাম।
এবারও বরাবরের মত বাজি-পটকা ফুটছে। কিন্তু কেন যেন মনে হল এবার একটু বেশী ফুটছে। বাজারে কালিপটকা,চকলেট বোম্ব এবং এর চাইতে আরও বড় এক ধরনের বাজি বা বোম্ব এসেছে। বড়টা প্রচন্ড শব্দ করে। এছাড়া একটা দামী রকেট রয়েছে,যেটা দ্রুত আকাশে উঠে বিস্ফোরিত হয়ে তারার মত ছড়িয়ে পড়ে। এলাকার শিশু এবং কিশোররা হাজারে হাজারে বিভিন্ন বাজি ফুটিয়েছে। এগুলোর ওপর অনেক পূর্র্ব থেকে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও এরা জীবনেও তার পরোয়া করেনা। যারা শব্দে ভয় পায়,এরা তাদের কাছাকাছি বেশী ফোটায়,ঠিক আমার ছোটবেলার মত। এরা আমাকে খুবই পছন্দ করে।
ঈদের পূর্বদিন এবং ঈদের দিন বৃষ্টির কারনে খোলা ময়দানে নামাজ হলনা। আমি মাত্র কয়েকবার মসজিদে ঈদের নামাজ পড়েছি। খোলা ময়দানে না পড়লে ঈদের নামাজের কোনো মজা নেই। এবার ঈদ হল শুক্রবারে। রসূল(সাঃ) শুক্রবারের ঈদ সম্পর্কে বলেছেন,এটি ডাবল ঈদ। আর ঈদের কারনে এদিনের ঈদের নামাজের ক্ষুতবা শোনা ও জুম্মা নামাজ ঐহ্যিক(বাধ্যতামূলক নয়) করা হয়েছে। তবে আমার মতে জামাতে নামাজ না পড়ে বাড়িতে পড়লে যোহরের ওয়াক্তের বেশী রাকাত আদায় করা লাগে,ফলে আমার জন্যে জামাতই ভাল। জুম্মা জামাতেই পড়েছি।
সকালে ঈদের নামাজ আদায় করে আসার পর এক ফুপু ডেকে নিয়ে গেল। ইনি সাংঘাতিক ভাল রান্না করেন। গরুর মাংস কালো করে রান্না করা হয়েছে। এটা আমার কাছে সুপার। সেদিন পত্রিকায় দেখলাম উচ্চ তাপে মাংস বেশী রান্না করলে বা ভাজি করলে সেখানে এমন একটি উপাদান তৈরী হয়,যা ক্যানসার সৃষ্টির জন্যে দায়ী কিন্তু হলুদ এবং আদার ব্যবহারের কারনে সে সম্ভাবনা ৬০% থেকে ৮০% কমে যায়। যাক বাবা বাচা গেল ! অবশ্য সারাজীবন এভাবেই রান্না খেয়ে এসেছি। সাদা ভাতের সাথে গরুর বেশী কষানো মাংস,আহ ! এর কোনো তুলনা নেই। টানলাম ধুমছে।
ঈদের দিনে অনেকে অতিরিক্ত খাওয়ার কারনে ঘুমায়,কারণ রক্তে গ্লুকোজ বেড়ে যায়। আমি জীবনেও এ দলে নই যদিও আমি প্রচুর খাই। এদিক ওদিক আত্মীয়,প্রতিবেশীর বাড়িতে গেলাম,খেলাম। একমাস রোজা রাখার পর খাবার ক্ষেত্রে সাবধানী হতে হয় কিন্তু আমি মোটেও হলাম না। দুপুরে প্রচুর খেলাম। সামনে যা পাচ্ছি তাই খাচ্ছি অবস্থা। ৩ বোতল ফান্টাও খেলাম। বিকেলে এক আত্মীয়ের বাড়িতে গেলাম ভাই,ভাতিজাসহ। এখানে এক আত্মীয়া নতুন আর্মী অফিসার হিসেবে চাকুরীতে যোগদান করেছে,তার কাছে মজাদার সব কাহিনী শুনলাম। মেয়েটা সাংঘাতিক সুন্দরী ছিল কিন্তু এক মাসের চরম ধকলে তাকে প্রায় কাকের মত দেখাচ্ছে। এখানে বহু রকমের খাবার খেলাম। পিচ্চি বাহিনীকে নিয়ে গেলাম আইসক্রীম খেতে। মিস্টিও খেয়েছি প্রচুর। ওরা টেনে নিয়ে যাচ্ছির আরেক আত্মীয়ের বাড়িতে,আমি যাইনি। কারণ এত ভাল ভালনা। রাতে থাকতে জোর জবরদস্তী করলেও টেনে হিচড়ে চলে আসলাম।
রাত দশটায় র্যাফেল ড্র শুরু হল। বাচ্চারা দারুন আনন্দ উপভোগ করল। আমাদের পুরোনো বৈঠকখানার সামনের অংশে ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এলাকা ভরে উঠল। ছেলে বুড়ো-বুড়ি সবাই আসল। বাচ্চারা ভুভুজেলা জোগাড় করে কান ফাটাচ্ছে। রসিকরা আসর মাতালো। কেউ কেউ মিছিল করতে লাগল। এক ছোটভায়ের ম্লোগানে হাসতে হাসতে পেটে খিল লেগে রইল। সে অনেক কিছু বলার মধ্যে ছন্দ কেটে বলল-“জোরে বল/ শুয়োরের পাল। ” প্রতিবারের মত এবারও পুরষ্কারের মধ্যে সাংসারিককাজে ব্যবহৃত জিনিসপত্রই বেশী ছিল। পুরষ্কার পেয়ে মানুষ আনন্দে লাফালাফি করতে লাগল। যদিও তেমন দামী পুরষ্কার নয়,তবুও আনন্দ করাই নিয়ম। কিছু সময় কাটল আনন্দে।
এবার এক ছোটভাইকে পার্শ্ববর্তী গ্রামের বা মফস্বলের কিছু ছেলে মেরে হাতের ক্বজী ভেঙ্গে দিয়েছে। সেদিন সে তার এক বন্ধুর সাথে এক রাস্তা ধরে আসার সময় তার বন্ধুর ওপর পূর্ব রাগের ভিত্তিতে তার ওপর আক্রমন করে চারজন। আর তখন সে বাধা দিলে তারা তার ওপরও আক্রমন করে লাঠিসোটা নিয়ে। আমাদের পাশাপাশি দুই গ্রাম আওয়ামী লীগ-বিএনপির ঘাটি হওয়ার কারনে বহুকাল পূর্ব থেকেই মারামারি একটি সাধারন ঘটনা। যেকোনো ঘটনাই রাজনৈতিক মারামারিতে রূপান্তরিত হওয়া একটা নিয়মের মধ্যে পড়ে। কিন্তু নতুন প্রজন্ম পূর্বের চাইতে বেশী শিক্ষিত হওয়ায়, তারা মারামারি বেশ খানিকটা এড়িয়ে চলে। এবং পূর্বের চাইতে এখন ঊভয় গ্রামের মানুষের মধ্যে সম্পর্ক ভাল। যাইহোক ঘটনার পর আমার ভাইসহ এলাকার ছোট-বড় ভায়েরা সেই মহা-রথীদের সন্ধানে বের হল। সারা বাজার খুঁজে না পেয়ে এক স্কুলের পাশে একজনকে পেয়ে পেটাতে পেটাতে নিয়ে আসা হল। কয়েক প্রস্ত পেটানোর পর আহত অবস্থায় তাকে একস্থানে ফেলে দেওয়া হল।
আমি আমার পেটের পারফর্মেন্স দেখে অবাক ! অতিরিক্ত এবং যা-তা খাওয়ার পরও কোনো সমস্যা হয়নি। তাই ঈদের পরদিন সকালেই এক আত্মীয়ের বাড়িতে গেলাম,খেলাম। ওখান থেকে আমার মেঝো বোনের বাড়িতে গেলাম। এদের বাড়িতে এসে ‘চলে যাব’ বললে মাইন্ড করে। তাই একদিন অন্তত থাকতে হয়। আর এ সময়ে যা খাওয়াবে তা অবশ্যই খেতে হবে। আমার পছন্দ ছিটে রুটি এবং দেশী মুরগীর ঝোল ঝোল মাংস। চালের গুড়ো পাতলা করে গুলিয়ে তা হাত দিয়ে উত্তপ্ত কড়াইতে ছিটিয়ে দেওয়া হয়,খানিক পর পাতলা অনেকগুলো ফুটো সমৃদ্ধ এক ধরনের রুটি তৈরী হয়। এই রুটি মাংসের ঝোলে ডুবিয়ে খেতে যার খারাপ লাগে তার সাথে কোনো কথা নেই। আমি ইনশাআল্লাহ জান্নাতেও এটি খেতে চাইব(অবশ্য সেখানে এসব উপদেয় খাদ্য পচা-বাসী মনে হওয়া স্বাভাবিক)। ছিটে রুটি এবং মাংস খেলাম। কতটুকু খেলাম তা না জানালেও আমি নিশ্চিত আপনারা আন্দাজ করতে পারছেন। আরেক আত্মীয়ের বাড়িতে গেলাম। এখানে আমার এক বছরের ছোট এক ফুফাত ভাই আছে যার সাথে আমার শৈশবের বহু স্মৃতি জড়িত। একেই একবার শীতের রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় দুজনে ধরে কড়কড়ে এক ভয়ঙ্কর বাগানে রেখে আসতে যাচ্ছিলাম কিন্তু পুকুরঘাট পার হবার পর ওর ঘুম ভেঙ্গে যায়,ও বলে ওঠে-“এই তোরা আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছিস ?” আমরা হিহিহিহি করতে করতে ওকে ওখানে ফেলে রেখে অন্ধকার বাগানে হারিয়ে গেলাম। যেসব বাগানে মানুষ দিনে যেতেও ইতস্তত করত,সেখানে রাতে আমরা অনেক সময় গাছে উঠে বসে থাকতাম। যাইহোক এখন সে নিরাপদ।
আমরা প্রচুর গল্প করলাম। সেখানে আরও বেশ কিছু ফুফাত ভাইবোন,তাদের ছেলে মেয়ে ছিল। ইদানিং গল্পসব ঘুরে ফিরে ইসলাম,রাজনীতি,বিশ্ব পরিস্থিতি ইত্যাদীর দিকে মোড় নেয়। আমারও ভাল লাগে,তাদেরও। জুনিয়ররা সর্বত্রই আমাকে অত্যধিক পছন্দ করে। আসলে আমি তাদেরকে ভাল বুঝতে পারি। আর এমনসব বিষয় নিয়ে কথা বলি,যা তাদের অন্তরের কথা এবং তাদের যেসব কথা তারা বলতে চায় এবং সমাধান চায়,তা আমি সম্ভবত ভালভাবে বলতে ও উপদেশ দিতে পারি। ভাল ও মন্দ দুটোই বেশ খানিকটা জানা থাকার কারনে তাদেরকে বেশী তথ্য,উপদেশ দিতে পারি। আমার এক সিনিয়র ফুফাত ভায়ের তরুন ছেলের সাথে কথা হল। সে খানিক কথা বলার পরই স্পষ্ট অনুমানে বুঝতে পারলাম সে ইসলামী ছাত্র শিবিরে যোগ দিয়েছে । সে আমাকে ছাড়তে নারাজ। আমার পরিকল্পনা ছিল সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরা কিন্তু সে আমাকে এমনভাবে অনুরোধ করল যে, আমি সিদ্ধান্ত বদলাতে বাধ্য হলাম।
সন্ধ্যায় আমি আর ফুফাত ভাই মিলে পুরোনো স্মৃতি বিজড়িত কিছু এলাকায় হাটাহাটি করলাম। এককালে এসব এলাকার মানুষ আমাকে এক নামে চিনত-“শয়তান ! ” এলাকায় দারুন মসজিদ আছে। এখানে একটা লাভ হয়েছে,সেটা হল জামাতে নামাজ আদায় করা। এরা প্রতি ওয়াক্ত নামাজ জামাতে আদায় করে,ফলে এদের সাথে থাকা অবস্থায় আমার অলসতা প্রকাশ মোটেও ভাল দেখাবে না। আমি সাধারনত বাসায় নামাজ পড়ি।
এখানে বোনের বাড়ি আর ফুফুর বাড়ি ৫০০মিটারের ব্যবধান। রাতে দুজন বোনের বাড়ি খেতে আসলাম। এদের কিছু দোষ আছে। আত্মীয়দেরকে জোর করে না খাওয়ালে নাকি এদের মান থাকেনা। আর আত্মীয়রা খাবার সময় লজ্জা করে কম খায়,এমনটা তারা বিশ্বাস করে। আমার মত বেহায়ার সাথে চাপাচাপি বেমানান তা জেনেও এরা চাপাচাপি করে। জোর করে খাওয়ানোটা একটা গ্রাম্য অকৃত্তিম আদর। আমি জর্জরিত কিন্তু এখনও পর্যন্ত পেট বাবাজি আমার সাথে অসহযোগ আন্দোলন শুরু করেনি,তবে পচা ঢেকুর উঠতে লাগল। পণ করলাম আর কিছু খাব না। এসব পণ ভাঙতে অবশ্য সময় লাগেনা।
রাতে ফুফুদের বাড়িতে গেলাম। তারা খাবার জন্যে জোরাজোরি করাতে হাতে পায়ে ধরে ক্ষমা পেলাম, সেখানে রুটি আর মাংস ছাড়া আর কিছুই খাইনি। এবার সেই ফুফাত ভায়ের ছেলে আসল এবং আমাকে ছাদে নিয়ে গেল। অন্ধকার রাতে আমরা চেয়ারে বসে অনেক গল্প করলাম। সে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করল। আমি আমার সাধ্যমত জানালাম। জানলাম সে এখন শিবিরের সাথী।
সে জিজ্ঞেস করল,ইসলামী দলে এত বিভক্তি কেন বা এতগুলো দল কেন ? এত দল থাকা কি সমস্যা নয় ? বললাম উদ্দেশ্য যদি হয়,আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠা করা তাহলে দলের সংখ্যা আরও বাড়লে ভাল হয়। আর অধিক ইসলামী দল খারাপ এ তথ্য কে তোমাকে প্রতিনিয়ত জানায় ? নিশ্চয়ই মিডিয়া বা সুশীল সমাজ। কোনো আলিম তোমাকে কখনও বলেছে যে, ইসলাম প্রতিষ্ঠিত করতে চাওয়া মানুষ বা দলের সংখ্যা বেশী হওয়া সমস্যাজনক ? মনে কর,এলাকায় একটা খাল খনন করতে হবে বা ব্রিজ তৈরী করতে হবে,আর লোকেরা যদি বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে খনন কাজ বা ব্রিজ তৈরীর কাজ করতে লেগে যায়,তাহলে কি কাজটা আরও দ্রুত হবে না ? এতে কি সমস্যা আছে ? তবে হ্যা একের সাথে অপরের কিছু বিষয়ে মতপার্থক্য রয়েছে। তবে এখানেও সেই একই ব্যাপার। কে তোমাকে জানায় যে ,মতপার্থক্য মানেই মত-বিরোধ এবং মারামারি-গন্ডগোল ? হযরত আবু বকর(রাঃ) এবং ওমর(রাঃ)এর মতামত বা বিশ্লেষণ একই ধরনের ছিলনা। তার মানে কি এই যে,তারা ভুল সিদ্ধান্ত নিত বা তাদের মধ্যে শত্র“তা ছিল ? মূলত: ইসলামের শত্র“রা এবং দালালচক্র আমাদেরকে একে অপরের থেকে বিভক্ত করে রেখেছে। একে অপরের সাথে মারামারিতে লিপ্ত হলে তাদের লাভ।
কোনো রাজনৈতিক দলের আলেম শ্রেণী অন্য সুন্নাহভিত্তিক দলের আলেমদেরকে শত্র“ মনে করেনা এবং তারা একে অপরের কল্যাণকামী। সুন্নাহ অনুসরনেই এটা করতে হয়। গন্ডগোল যদি কিছু কখনও লেগে থাকে তবে তা সাধারণ কর্মী বা সমর্থকদের মাধ্যমে হয়ে থাকে,যাদের ইসলাম সম্পর্কে ধারণা সীমিত এবং যাদের রক্ত গরম,মেধা কম। কোনো স্ন্নুাহ ভিত্তিক দলের লোকেরা অন্য একটি ইসলামী দলের কর্মীদের অকল্যাণ কামনা করলে আল্লাহ তার কাছ থেকে কঠোর কৈফিয়ৎ নিবেন। কিয়ামত পর্যন্ত কিছু বিষয়ে কিছু মত পার্থক্য থাকবেই,তবে মজার ব্যাপার হল ,এসব মতপার্থক্য শাখা-প্রশাখাগত। আর মৌলিক ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। তুমি কি জান, এই কারনে শয়তানের মনে কত আফসোস ??
ইসলাম যদি সত্যিই তার স্বরূপে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়,যদি খুলাফায়ে রাশেদার আদর্শ অনুসৃত হয়,তাহলে দলমত নির্বিশেষে তাকে সমর্থন করা সকল মুসলিমের জন্যে অবশ্য কর্তব্য হয়ে দাড়ায়। আর তখন দেখবে,মুসলিমের ঐক্য আসলেই বিশাল ,শক্তিশালী এবং অকৃত্তিম। যদি কেউ জানে - সে যে বিষয়ে বিতর্ক করছে তা একটি মাকরুহ অথবা মুস্তাহাব অথবা নফল সংক্রান্ত বিষয়,কিন্তু এটা নিয়ে ঝগড়া বা মতবিরোধে জড়ান সুস্পষ্ট হারাম,আর মুসলিমের সাথে এমন আচরনে তার জন্যে জাহান্নাম ওয়াজিব হয়ে যেতে পারে। তাহলে কোন মুসলিম এই ঝুঁকি নিতে যাবে ?
সে কথা প্রসঙ্গে যুদ্ধাপরাধীর বিষয়টা তুলল এবং আল্লামা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর বিষয় আসল। আসলে এই লোকটার রাজনৈতিক পরিচয়ের চাইতে অনেক বড় পরিচয় একজন আলেম হিসেবে। তাকে মনে প্রানে ঘৃণা করে এমন লোকও তার ওয়াজ মাহফিলে অংশ নেয়। কোনো কোনো মানুষের মধ্যে কারিশমাটিক লিডারশিপ থাকে,যা চর্চা করে পাওয়া যায়না বরং আল্লাহ এটি কাওকে কাওকে প্রদান করেন। উনার মধ্যে এটি রয়েছে। ফলে তাকে ভালবাসে,তার কথা পছন্দ করে এমন লোকের সংখ্যা প্রচুর। তাকে এভাবে ফাসানোতে বহু লোক বিশেষ ট্রাইব্যুনাল/সরকারের প্রতি বিতশ্রদ্ধ।
আমি রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নই তারপরও রাজনীতি নিয়ে ব্যপক প্যাচাল পাড়লাম। নীচ থেকে কেউ কেউ ডাকাডাকি করছে কিন্তু সে আমাকে আটকে রাখল। আমি ফুফাত ভাইকে বললাম ঘুমিয়ে পড়তে,আমরা গল্প চালালাম। কোনো এক সময় ১৪ই ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ড নিয়ে কথা উঠল। আমি আমার একটা সাধারন চিন্তা শেয়ার করলাম। সত্য-মিথ্যা আল্লাহই ভাল জানেন। ১৬ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হল। ডিসেম্বরের শুরুতেই পাকিস্থানী মিলিটারী বুঝতে পারছিল যে,তাদের সময় ফুরিয়ে আসছে এবং তারা টিকতে পারছে না। শেষ সপ্তাহে তো বিজয় অনেকটা কাছাকাছি। এর পূর্বেই রাজাকাররা শঙ্কিত হয়ে পড়েছিল এবং অনেক স্থানে তাদেরকে ধরে হত্যা বা নির্যাতন করা হচ্ছিল। অনেকে পালিয়েছিল এবং অনেকে লেবাস বদলেছিল। এই যখন অবস্থা ,তখন স্বাধীনতার মাত্র দুই দিন পূর্বে সম্পূর্ণ ঠান্ডা মাথায়, প্রশান্ত চিত্তের পরিকল্পনায় নিখুঁতভাবে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা রাজাকারদের পক্ষে কিভাবে সম্ভব ? নাকি কোনো সুবিধাবাদী গোষ্ঠী এটা করল ? এটা আমার প্রশ্ন,তবে সঠিক বিষয় আল্লাহ’ই জানেন। আমার এত গবেষণা না করলেও চলবে।
আমরা ঘুমাতে গেলাম। কিন্তু ঘুম কপালে নেই। এই ছেলেটা অসাধারণ মেধাবী। মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংএ পড়ে এবং এমন সব প্রশ্ন করে নিজের চিন্তা শেয়ার না করে উপায় নেই। গল্প চলল রাত তিনটা পর্যন্ত। বলল-মানুষ তাকে বলে,ইসলামের কথা বল কিন্তু মুখে দাড়ি নেই কেন ? সুন্নতি পোষাক নেই কেন ? টাখনুর ওপরে কাপড় নেই কেন ? বললাম, কিছু মানুষ নিজেরা ইসলাম ব্যক্তিগতভাবে পালন করুক না করুক,অন্যকে পেছনে টানার একটা মুদ্রাদোষ রয়েছে। সমাজের মেয়েরা উলঙ্গ হয়ে ঘুরে বেড়ালোও ওদের চোখে পড়েনা বা চোখে পড়লেও বেশ আরাম বোধ করে কিন্তু যখনই কোনো লোক ইসলাম প্রচার করবে,তখনই তার দাড়ি-টুপি ধরতে হবে। আর এসব লেবাস ধারন করলে সেই’ই হয়ত বলবে “এই লোকটি জঙ্গী।” রসূল(সাঃ) হযরত আবু বকর(রাঃ)কে টাখনুর নীচে কাপড় পরার অনুমতি দিয়েছিলেন ,কারণ তিনি যে অহংকারবশত এটি করেন না, তা তিনি জানতেন। আর সম্ভবত হযরত যায়েদ বিন সাবিতকেও(রাঃ) একই অনুমতি দিয়েছিলেন,কারণ তার পায়ের গোড়ালী বেশী চেকন হওয়াতে তা দেখতে খারাপ লাগত। যতটুকু মনে পড়ছে হাদীসটি বুখারী অথবা মুসলিম শরীফের। তবে দাড়ি রাখা অবশ্য পালনীয় সুন্নাহ বা সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ। কোনো কোনো ঈমাম এবং আলিম এটাকে ওয়াজিব বলেছেন। ফলে দাড়ী রাখতে হবে ,এ ব্যাপারে কারো দ্বীমত নেই। টাখনুর নীচে কাপড় পরা সুন্নাহ,এটা পালন করতে হবে। তবে ইসলামী লেবাস বলে কোনো লেবাস নেই। রসূল(সাঃ) সতরের কথা বলেছেন কিন্তু আরবের পোষাক পরা বাধ্যতামূলক করেননি। কেউ আল্লাহর রসূলের প্রতি ভালবাসার কারনে তার মত পোষাক পরলে সেটা সুন্নাহ হবে এবং সওয়াবও হবে। কিন্তু এটা উটে চড়া,হালুয়া-খেজুর খাওয়া সুন্নতের মত।
রসূল(সাঃ) এর সাথে আবু লাহাবের চেহারা,পোষাক এবং অবয়বের দারুন মিল ছিল। পেছন থেকে একজনকে আরেকজন ভেবে ভুল করত মানুষ। কিন্তু উভয়ের মধ্যে পার্থক্য অবশ্যই পোষাকে নয়। যারা সমালোচনা করছে,তাদের ভাবা উচিৎ তারা জেনে হোক আর না জেনে হোক ইসলাম প্রতিষ্ঠার মত একটি ফরজ কাজকে থামিয়ে দিচ্ছে বা চেষ্টা করছে। এটি ফরজে কিফায়া হলেও যদি যথেষ্ট লোক এটি পালন না করে বা কেউ পালন না করে,তাহলে সমাজের অন্য মুসলিমদের ওপর এটি ফরজে আইন হয়ে যেতে পারে। কাজেই যেসকল লোক এ ব্যাপারে নিরৎসাহিত করে,তারা সমস্ত দায় নিজের মাথায় চাপিয়ে নেয়। এটা যে কতটা ভয়াবহ বিষয়,তা তারা বুঝতে পারেনা।
রাতে মাত্র একঘন্টা ঘুমানোর পর সে আমাকে ডেকে তুলল,মসজিদে গিয়ে ফজরের নামাজ আদায় করার জন্যে। আমি এত বোকা নই যে,এই কাজে বিরক্ত হব ,যদিও মন চাচ্ছিল আরেকটু পরে উঠতে। এদের পারিবারিক সাংষ্কৃতি খুব ভাল। দ্বিতীয় ইনিংসের ঘুম দিয়ে জম্পেস নাস্তা করার পর বুঝলাম পেটে কিঞ্চিত গড়বড় হো-রাহাহে। কাহাতক আর সহ্য হয় ! কিন্তু লোহা খেয়ে হজম করা পেট আমাকে নিরাশ করল না। শিঘ্রই সে আবার পূর্ণ সার্ভিস দেওয়া শুরু করল।
পরের পর্বে শেষ
বিষয়: বিবিধ
২৪৬৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন