আমি নেশাখোর
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ০৪ আগস্ট, ২০১৩, ১১:১৫:৩৩ সকাল
উইনইয়ার্ডে এসে ট্রেনে উঠলাম। এক ঘন্টা পর ইঙ্গেলবার্ন পৌঁছলাম। চায়নিজ ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে ঢুকে চমৎকার সেই কাচাআম পেলাম। এ আমটি সম্পর্কে না লিখলেই নয়। আমি একেবারে ছোটবেলা থেকেই চক ফলের প্রতি আসক্ত। কাচা আম,তেতুল,জলপাই,বরই এসব দেখলে সহ্য করতে পারতাম না। না খাওয়া পর্যন্ত আমার মাথা কাজ করত না। এমনকি যেসময়ে বাই-সাইকেলের প্যাডেল ভালভাবে নাগাল পেতাম না,সেসময়ে একটু একটু করে সাইকেল চালিয়ে সাত কিলোমিটার দূরের গ্রামে গিয়ে বিকেল পর্যন্ত বিভিন্ন গাছে ঢিল ছুড়ে কয়েকটি আম পেড়ে বাড়ির পথ ধরেছি। বয়স বাড়ার সাথে সাথে আসক্তি খানিক কমেছে। তবে মাঝে মাঝে অতিরিক্ত লোভ লাগে। এই তো সেদিন (মার্চ,২০১৩)যখন সালাহউদ্দীন ভায়ের সাথে কথা বলছিলাম তার বাসায়। কিন্তু সে কি বলছে তা যেন কানে ভাল ঢুকছে না। কারণ সকাল থেকেই আজ টক খেতে ইচ্ছা করছে। বেশ কয়েকবার জানতে চাইলাম এখানে তেতুল পাব কোথায়, কারণ এটা,তেতুলের সময়। কথার মধ্যে তাকে থাকিয়ে দিয়ে তার স্যান্ডেল পায়ে দিয়ে দৌড় দিলাম। এক কাচা বাজারে গিয়ে তেতুল পেলাম না। মন খারাপ হল। তারপর লোকজনের কাছে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম এক মহিলা বিক্রী করছে। দৌড় দিলাম। গিয়ে দেখি মাত্র কয়েকটি তেতুল অবশিষ্ট আছে। কিনে দৌড় দিলাম। পূর্বের সিস্টেমে খেলে দাত টক হবে ভেবে এটা একটু পানি দিয়ে চটকালাম এবং এরসাথে শুকনো মরিচ পোড়া,একটু রসুন,লবন মিশিয়ে ধীরে ধীরে খেলাম। নেশা কেটে গেল।
সিডনীতে আমি যেদিন প্রথম এই চায়নিজ স্টোরে কাচা আম দেখলাম,আমি কিনতে মোটেও বিলম্ব করিনি। দু-রকমের আম ছিল। একটা ছিল মিস্টি আরেকটা টক। আমি টকটাই কিনলাম। যদিও প্রতি কেজী বাংলা টাকায় প্রায় আট’শ টাকার কাছাকাছি তারপরও এটা কিনতাম। বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে সেখানকার স্টোরগুলোতে আমি কাচা আম খোঁজ করতাম। এভাবে অনেক এলাকা থেকে একই আম কিনেছি। এক বাংলা স্টোর থেকে তেতুল কিনতাম। এখানে থাইল্যান্ডের মিস্টি তেতুল পাওয়া যায়,এসব আমি খাইনা। আমার দরকার বুনো বাঘা তেতুল।
আমগুলোর ভেতরে বিচি একেবারে পাতলা। এগুলো ছোট ছোট করে কেটে শরিষা এবং কাচা মরিচ দিয়ে মাখানোর নিয়ম থাকলেও সরিষা বাটার যন্ত্র না থাকায় সেটা ছাড়াই বিট লবন,সাধারন লবন,মরিচ এবং আমার ভাগনীর রোপন করা একটা সুপার খুশবুদার লেবু গাছের পাতা দিয়ে মাখানোর পর সেই আমের স্বাদ হত অতিরিক্ত চমৎকার,ভয়াবহ,অসহ্য। আমি এক নিঃশ্বাসে উপভোগ করতে ভালবাসতাম। কখনও কখনও এর সাথে একটু তেতুলও মেশাতাম। কখনও কখনও তেতুলের টক শরবত তৈরী করতাম,এটাকে স্যুপও বলা যায়।
বিকেলে আমি দুধের সাথে ম্যাংগো পাল্প মিশিয়ে খেতাম এবং অন্যদেরকে খাওয়াতাম। এখানে টিনবদ্ধ পাল্প পাওয়া যায়। কোল্স নামক একটি বিখ্যাত চেইন শপ থেকে মাত্র তিন ডলারে তিন লিটারের একেটি দুধের কন্টেইনার কিনতাম। অন্য ব্রান্ডের দুখের দাম এর প্রায় দ্বিগুন। এদের দুখ ঢাকার দুধের চাইতে বেশী ঘন দেখলাম এবং স্বাদে উৎকৃষ্টতর মনে হল। এটা যে বেশী ঘন তার প্রমান হাতে নাতে পেয়েছি। আমরা মাঝে মাঝে মিস্টি তৈরী করতাম। তখন ঢাকায় যে পরিমান দুধে যতটুকু ছানা পেতাম তার চাইতে পরিমানে এখানে বেশী পেয়েছি। মিস্টি তৈরী করা আমার শখ,অবশ্য এটা শিখেছি বেশীদিন হয়নি। আর এখনও তেমন ভাল মিস্টি তৈরী করতে সক্ষম হয়নি তবে খেতে বেশ হয়েছে। সেদিন মা ঢাকাতে আসলে অমি রসগোল্লা তৈরী করেছিলাম কিন্তু মিস্টি তৈরীর সময় খাবার সোডা দিতে ভুলে যাওয়াতে মিস্টি ফুলে বড় হয়নি তবে এতে জিনিসটার স্বাদ খারাপ হয়নি।
বিষয়: বিবিধ
২৭৮১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন