আজ আমি পাম বীচে
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ০৩ আগস্ট, ২০১৩, ১১:৩৬:৩০ সকাল
আমি বাসস্টপে আসলাম এবং কার্ড পাঞ্চ করে সিটে গিয়ে বসলাম। আমার কাছে আজ যে কার্ডটি আছে তাতে দশবার বাসে ওঠা যায়। প্রত্যেকবার স্ক্যান করলে কার্ডের গায়ে প্রিন্ট হয়ে যায় আমার বাসের নাম,সময়,গন্তব্যের নাম ইত্যাদী। বাসগুলি বেশ লম্বা এবং দুভাগে বিভক্ত। বাস কোথাও বাঁক নেওয়ার সময় মাঝের অংশটি বেকে যায়। বাসগুলো বিশ্বের অনেক নামিদামী কোম্পানীর তৈরী। ভেতর থেকে বাইরের দৃশ্যগুলো খুব ভালভাবে দেখা যায়।
সিডনী ব্রীজ পার হয়ে সুন্দর রাস্তা ধরে বাস এগিয়ে চলল। অনেকক্ষণ পর রাস্তার ডানে একটা অতিরিক্ত সুন্দর লেক দেখলাম। আমি সেটা আরও ভালভাবে দেখার জন্যে দাড়িয়ে থাকলাম। ঠিক আমার কল্পনার মত চমৎকার লেকটি। মসৃন রাস্তার পাশ ধরে সুশৃঙ্খলভাবে দাড়িয়ে আছে বড় বড় গাছেরা। তার ওপাশে সবুজ ঘাসেপূর্ণ খানিকটা জায়গা আর তার সমান্তরালে পানিপূর্ণ লেকটি। লেকটি পানিতে টইটুম্বুর কিন্তু বাতাসের গতিবেগ একেবারে কম থাকায় পানি একেবারে শান্ত। লেকের ওপারে কয়েকটি সুন্দর বাড়ি দেখলাম। লেখটি বেশ প্রশস্ত তবে আমাকে আকর্ষণ করল এর পরিপাটি দিকটি। মনে হচ্ছে এটা কেউ তার বিশেষ শৈল্পিক হাতে সাজিয়েছে। স্বচ্ছ পানির লেকটি খানিক সোজা চলে ডানে বেকে গেছে। এর দুপাড়ে কোনো অবাঞ্চিত বস্তুর অবস্থান নেই। রাস্তার লেভেল থেকে এটি সম্ভবত মাত্র দু-ফুট নীচে হবে। লেকটি পার হয়ে গেলাম কিন্তু মনের মধ্যে সেটি স্থায়ীভাবে গেথে গেল।
এদিকে জনবসতি ফাকা ফাকা মনে হচ্ছে। একটু উচু নীচু পাহাড়ী রাস্তায় চলে আসলাম। এসব টিলাগুলি খুবই চমৎকার। বাসভর্তী মানুষ। বহু পর্যটক পাম বীচ দেখতে আসে। বেশ কিছুক্ষন পর চলে আসলাম পাহাড়ী ছোট ছোট টিলা সমৃদ্ধ একটি সমতল উপত্যকায়। এখানে বেশ লম্বা বীচ রয়েছে। আজ প্রচন্ড রোদ। বীচে দেখার কিছু নেই। মানুষেরা সাতার কাটছে। অনেকে সার্ফিং করছে। অস্ট্রেলিয়ার প্রত্যেক সি-বীচ নিরাপত্তায় ঘেরা। প্রত্যেক বীচে কর্তৃপক্ষ বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে থাকে যাতে সাতরানো অবস্থায় মানুষ সমস্যাগ্রস্থ না হয়। এদের বিশেষ হেলিকপ্টারও আছে উদ্ধার কাজের জন্যে। তবে এখানে সমস্যায় পড়তে হয়না বলেই শুনেছি।
এখানে রাস্তার সমান্তরালে সি-বীচটি। দূর থেকে দেখতে চমৎকার। রাস্তার পাশেই বড় বড় গাছ। একদিকে আছে সবুজ পাহাড়ী টিলা। রাস্তাগুলো খুব সুন্দর করে তৈরী করা। এখানে কয়েকটি রেস্টুরেন্ট এবং সুভেন্যিরের দোকানও আছে। বীচের পাশেই মানুষের বসার স্থান তৈরী করা হয়েছে। অনেকে পরিবারের সাথে এসে সেখানে বিশ্রাম নিচ্ছে। আমি রাস্তার পাশের একটি বিরাট বৃক্ষের নীচে দাড়িয়ে সাগরের সৌন্দর্য্য উপভোগে মত্ত। কারণ বীচের বালু বেশ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে এবং আমি সিডনীতে একবারের জন্যেও পানিতে নামিনি। তবে কয়েকবার ট্রাউজার গুটিয়ে ভেজা বালুতে হেটেছি এবং ঢেউয়ের ভেতর হেটেছি। এতে তেমন একটা ভাল লাগেনি। দূর থেকে দেখতেই আমার ভাল লাগে। আর সাতার কাটতে ভাল লাগলেও ত্ত্বক কালো হয়ে যাবার ভয়ে সেটা করা হয়না। নোনা জলে মাত্র কয়েক মিনিটের গোসলে আমাদের চামড়া পুড়ে কালো রং ধারণ করতে পারে। আমি ছায়াঢাকা একটি স্থানে দাড়িয়ে সাগর দেখতে লাগলাম। এখানে বেশ কয়েকটি বীচ রয়েছে কিন্তু একটু দূরে দূরে হওয়াতে আমি এখানেই অবস্থান করলাম। তাছাড়া আজ প্রচন্ড গরম।
আমি সামনে হাটতে থাকলাম এবং এপাশে একটি সুইমিং পুল রয়েছে। সেটা পার হলেই পাথুরে এলাকা। এর ডানে রয়েছে উচু টিলা। সেটা খুবই চমৎকার। পাহাড়ের ওপর থেকে গাছের শেকড় এবং নানান রকমের লতাপাতা ঝুলে পড়েছে খাড়া ঢাল বেয়ে। আমি সেদিকে তাকিয়ে থাকলাম। আমি জনমানুষের থেকে দূরত্ব রাখতে এদিকটাতে এসেছি। তীরের বড় বড় পাথরের চাকের ওপর দিয়ে দ্রুত এগিয়ে চললাম সামনের দিকে। এখানে হঠাৎই দেখলাম এক মেয়ে প্রশস্চত একখন্লেড পাথরের ওপর নিদ্রামগ্ন। তার পোষাকের দিকে একবার নজর চলে গেল। নফস ধোকা দিল কিন্তু ঘাড় ফিক্সড হয়ে রইল অন্যদিকে এবং অভিশপ্ত,গজবে পতিত ভূমির ওপর দিয়ে চলার নিয়ম মেনে দ্রুত ধাবমান হলাম। গেলাম একেবারে সাগরের ভেতর পর্যন্ত। শেষ পাথরখন্ডের ওপর উঠে দাড়ালাম। অদ্ভূত সুন্দর।
বিশাল বিশাল ঢেউ আছড়ে পড়ছে পাথরের ওপর। এক স্থানে দেখলাম চারিদিকে প্রাকৃতিক আগ্নেয় শীলার চাক দিয়ে ঘেরা কিন্তু ভেতরে একটি ফাকা স্থান। পাথরের ফাটল দিয়ে ঢেউয়ের তোড়ে পানি প্রবেশ করছে সেখানে। পাথরের ফাটল দিয়ে পানির দ্রুত গমন অসাধারন। বিশাল হুঙ্কার দিয়ে কিছুক্ষণ পরপর ঢেউগুলি আছড়ে পড়ছে। কোনো কোনোটা সুবিশাল। আমি আরও কাছে গেলাম। এখানে প্রাকৃতিক পাথরের ভেতর ঘরের মত একটি স্থান তৈরী হয়েছে। আমি সেখানে দাড়ালাম। উচ্চতায় এটি আমার মাথা বরাবর। এখানে সূর্যের আলো থেকে নিজেকে নিরাপদ রেখে সাগরের দিকে মুখ করে দাড়িয়ে থাকলাম। পাথরের ওপর শ্যাওলা জমেছে। ঢেউয়ের তোড়ে সেগুলো আন্দোলিত হতে দেখে ভাল লাগল। অনেকক্ষণ বসে থাকলাম একটি উঁচু পাথরের ছায়ায়। সামনে সাগরের বুকে কয়েকটি পাহাড় দাড়িয়ে আছে নিরাপদে। সেদিকে তাকিয়ে থাকলাম। খানিকপর কারো কণ্ঠস্বর শুনে উঠে দাড়ালাম। দেখলাম দুটি মেয়ে পাথরের খাড়া অংশ থেকে পানিতে লাফিয়ে পড়ছে। এখানে আর থাকলাম না। তাদের পোষাক সুবিধার নয়। দ্রুত চলে আসলাম সুভেন্যিরের দোকানে। এটা ওটা দেখলাম,তবে কেনার মত মনে হলনা কোনোটাকেই। মনে হলেও কিনতাম না। দেখলাম একটা বাস কেবল ছেড়ে যাচ্ছে। দৌড়ে উঠে পড়লাম। ভেতরের লোক সংখ্যা আমিসহ দুই। আসার পথে সেই লেকটিকে আবারও দেখলাম। আবারও মুগ্ধ হলাম।
বিষয়: বিবিধ
১৭৫৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন