বে-ব্রীজ

লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ২৮ জুলাই, ২০১৩, ১০:০৪:২৬ সকাল







আমরা আসলাম গ্রান্ড প্যাসিফিক ড্রাইভে। এটি একটি বে-ব্রীজ। প্রশান্ত মহাসাগরের তীর ঘেষে এটি তৈরী হয়েছে। ব্রিজের ওপর আমরা নামলাম। একপাশে দীগন্ত বিস্তৃত সাগর,অন্যপাশে পাথরের পাহাড়। খুবই চমৎকার জায়গা। ব্রীজের পাশে সুন্দর হাটার জায়গা রয়েছে,যা বেশ উঁচু রেলিংএ ঘেরা। এখানে দাড়িয়ে সাগরের সৌন্দর্য্য দেখা যায়। কপাল ভাল থাকলে কিছু ডলফিনও এখানে দেখা যায়। এখান থেকে নিকটবর্তী স্থানে নীল তিমি দেখা যায়। সিডনীতে পর্যটকদেরকে তিমি দেখানোর জন্যে অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে যাদের উপযুক্ত জাহাজ রয়েছে। পর্যটকরা সাগরের ভেতরের নির্দিষ্ট এলাকায় গিয়ে নীল তিমি দেখতে পারে। তাদের সাথে গিয়ে কেউ ব্যর্থ হয়েছে এমনটা শুনিনি।

ব্রীজটা দূরের এক পাহাড় থেকে এসে সর্পীল গতিতে সাগরের তীর ধরে অরেক পাহাড়ে মিশেছে। বেশ মজবুত করে এটা তৈরী করা হয়েছে। এখানে দাড়িয়ে অনেকগুলো পাহাড় দেখা যায়। এই ব্রীজকে অনেকে তাদের ‘ইলাহ’ বানিয়ে ফেলেছে। ব্রীজের গায়ে বহু সংখ্যক তালা ঝোলানো দেখলাম। তালাগুলোতে বিভিন্ন নাম খোদাই করা। এরা এভাবে তালা ঝুলিয়ে ব্রীজের কাছে কল্যাণ কামনা করে। সমুদ্র,ব্রীজ,পাহাড় সবগুলোই শক্তিশালী তাই তাদের কাছে আশা করলে তারা হয়ত আশা পূরণ করবে,বলে কেউ কেউ মনে করে। অবশ্য একটা ছোট পাথর আর হিমালয় পর্বতের মধ্যে আকৃতিগত বিষয় ছাড়া কোনো পার্থক্য নেই। এক গ্লাস পানি আর এক সাগর পানির বেশিষ্ট্যও এক। জড়বস্তুর পূজা শুধু হিন্দুরাই করেনা,আরো অনেকে আছে যারা বিভিন্ন ভঙ্গীতে প্রকৃতি পূজা করে থাকে। বিশ্বাস বড় মারাত্মক ব্যাপার। ব্রীজে তালা না ঝুলানোর জন্যে পাশেই একটি নোটিশ ঝুলছে ,তারপরও প্রচুর তালা ঝুলছে। এই ব্রীজের ওপর এক পারিবারিক বন্ধুর পরিবারের সাথে দেখা হল। তারাও আজ ঘুরতে এসেছে। আমরা একসাথেই থাকলাম। তাদের ছোট মেয়ে মাইশা আমাকে নানা বলে ডাকে। বয়সে না হলেও সম্পর্কে আমি বুড়ো ভাম।

আমরা স্টানওয়েল পার্কে আসলাম। এটাও অসাধারন সুন্দর। যখন যেখানে যাচ্ছি সেটাকেই সুন্দর মনে হচ্ছে। বল্ড হিলে আসলাম। এখান থেকে সমুদ্র না দেখলে ঠকতে হবে। এ হিল থেকে সাগরের দিকে সবুজ ঘাসযুক্ত সমতল ভূমী সাগরের দিকে বেশ কিছুদূর নেমে গিয়ে খাড়া পাথরের ঢালে গিয়ে শেষ হয়েছে। শেষের অংশে ঘাস লাতাপাতা এমন আকার ধারন করেছে যেন এটি একটি সবুজ বেষ্টনী।

আমি হাটতে লাগলাম সে সবুজ ঘাসের ওপর। আর দূরের পাহাড় দেখলাম ধুম্রজালে ভরা। মনে হচ্ছে আগ্নেয়গীরির অগ্নুৎপাত হচ্ছে। আসলে মেঘেদের কারসাজি ওগুলো। এখান থেকে নীচের দিকে একটি ছোট্ট শহর দেখা যায়। সাগরের নীলের সাথে বাড়িগুলোর লাল টালি দেখতে অসাধারন লাগে। এখান থেকে হ্যাং গ্লাইডার নিয়ে অনেকে আকাশে উড়ে বেড়ান। পাহাড়ের মাথা থেকে সবুজ ঘাসের ওপর খানিক দৌড়ে তারা বিশেষ উড়ন্ত যানে চেপে দূরে উড়ে যায়। ওভাবে প্রকৃতি দর্শন সবচেয়ে বেশী মজার। স্টানওয়েল পাহাড়ী অঞ্চল অতি চমৎকার জায়গা। পাহাড়ের ভেতর উঁচু নীঁচু সুন্দর রাস্তা ধরে চলতে ভাল লাগে। এটা এমন পেচালো রাস্তা নয় যেখানে চললে বমি হতে পারে। বমির কথা ওঠালাম এ কারনে যে,এক কালে আমি একাজে বিশাল পটু ছিলাম। এমনকি ২০১১ সালেও একবার এ কাজ করেছি ভারতের উটীতে। ড্রাইভার যদি প্রচন্ড দ্রুত গতিতে গাড়ি চালিয়ে হঠাৎ হঠাৎ ব্রেক করে বাক পরিবর্তন করে,তাহলে পাকস্থলি সংকোচন প্রসারণ এবং ক্রমাগত চোখ এবং কান মস্তিষ্কে বিপরীতমুখী সংকেত পাঠানোর ফলে কারো কারো বমি হতে পারে। এমন স্থান এটি নয়। এরা পাথর কেটে রাস্তা তৈরী করলে তা এমনভাবে করে যাতে খুব ভালভাবে গাড়ি চলাচল করতে পারে। আজকের ভ্রমনটা সার্থক হল।

বিষয়: বিবিধ

৩০৮৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File