কায়ামাহ
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ২৭ জুলাই, ২০১৩, ১০:৩৬:০২ সকাল
আমরা এখান থেকে চলে আসলাম। পরবর্তী গন্তব্য ‘কায়ামাহ’। এটা সিডনী থেকে ১২০কি:মি: দূর। এখান থেকে তেমন দূরে নয়। কায়ামাহ ভ্যালী অতি অসাধারন জায়গা। এখানকার ছোট্ট শহরকে খুব ভাল লাগল। সগারের পাশের সুন্দর রাস্তা ধরে চললাম। দেখলাম তীরের আগ্নেয় শীলার ওপর বসে বড় ঠোটওয়ালা সারসের দল মাছ তপস্যায় লিপ্ত। নিশ্চিন্তে তাদের বসে থাকা দেখে ভাল লাগল। এদের ঠোটের নীচের অশ রাবারের মত। বড় কোনো মাছ গলদ্ধকরনের পূর্বে এই স্থানটি ঝুলে থাকে। মুখের মধ্যে বড় বড় মাছ ঢুকিয়ে ফেলা এদের কাছে কোনো ব্যাপার না।
আমরা এসেছি কায়ামার মূল আকর্ষণ ব্লো-হোল দেখতে। এ অঞ্চলটা আগ্নেয়শীলার তৈরী। বহু পূর্বে আগ্নেয়গীরীর অগ্নুৎপাতে যে লাভা বের হয়ে এসে নিক্ষিপ্ত হয়েছিল তার ফলশ্র“তিতে এখানে এ শীলা আজও বিদ্যমান। এই শীলাগুলো কালো রঙের হয় এবং সবথেকে শক্ত। আমরা একটি উঁচু স্থানে গেলাম। এখানে সুদীর্ঘ সময়ে পাথরের ওপর মাটির আস্তরনে দারুন একটি স্থান তৈরী হয়েছে। আর এরা সৌন্দর্য্য চর্চা বোঝে তাই বর্তমানে এটার রূপ গুন দুটোই চড়া। সবুজ ঘাসপূর্ণ উচুনীচু ভূমি এবং তার মাঝে চমৎকার রাস্তা,সাথে আছে নীল সাগর। এখানে পাথরের মাঝে প্রাকৃতিকভাবে তৈরী হওয়া একটি গর্ত আছে,যার তলদেশ সাগরের সাথে সংযুক্ত। সে অংশটা একটি গেটের মত। প্রবল ঢেউ যখন সেই গেট দিয়ে প্রবেশ করে তখন ভীষন বেগে পানি উক্ত গর্ত দিয়ে ওপরে ছিটকে ওঠে। পানি ২৫মিটারেরও বেশী ওপরে ছিটকে আসে।
আমরা এ দৃশ্য দেখতে পেলাম না,কারণ এখন ভাটার সময়। আরও সকালে আসলে দেখা যেত। তবে ঢেউ গর্তের কাছাকাছি আসছিল। গর্তের ভেতর তাকিয়ে দেখলাম নীল জলরাশি দেখা যায়। আমি আগ্নেয় শীলার ওপর দিয়ে অনেকদূর পর্যন্ত হেটে গেলাম এবং সাগরের পানির কাছাকাছি গেলাম। সত্যিই ব্যাপারটা ভাল লাগার মত। বহু পর্যটক এখানে এটা দেখতে আসে।
পুরো এলাকাটাই সুন্দর। সাগরের পাশ ধরে মনোরম রাস্তা। রাস্তার পাশে হাটার জন্যে লাল ইটের তৈরী প্রশস্ত ফুটপাথ। আর ফুটপাথের ওপরই বিশাল বিশাল বৃক্ষ। এর ওপাশে রয়েছে চমৎকার পার্ক,সেখানেও রয়েছে নানান ধরনের বৃক্ষরাজি। সেখানে মানুষেরা নানান কির্তী কলাপে মগ্ন। শিশূদের জন্যে খেলার ব্যবস্থা রয়েছে। পুরো এলাকা জুড়ে ফাস্টফুডের দোকান,রেস্টুরেন্টের ছড়াছড়ি। সাবওয়ে নামক ফাস্ফুডের দোকানে কিছু কিনে কোমল পানীয় কিনলে যতবার খুশী মেশিন থেকে গ্লাসে পানীয় ভরে নেওয়া যায়। এমনকি উক্ত গ্লাসটি সংরক্ষন করে রাখলে পরবর্তীতে যতবার খুশী ফ্রি কোমল পানীয় খাওয়া যায়। গ্লাসটি নষ্ট না হওয়া পর্যন্ত সেটাতে তাদের যেকোনো শাখা থেকে পানীয় ভরে নেওয়া যায়,যতবার খুশী। তবে এদেশে খুব কমসংখ্যক মানুষই এমনটা করে। তারা এ সুবিধাটি দেওয়ার পূর্বে বহু চিন্তা গবেষণা করে দেখেছে। আমাদের দেশে এমন সুবিধা কোনো কোম্পানী দিলে মাস খানেকের মধ্যে তাদের ব্যবসা লাটে উঠত। এক গ্লাস কোক কিনে চৌদ্দগুষ্টিসহ পালাক্রমে পান করত। এখানে বহু পরিবার এসেছে আনন্দ উজ্জাপন করতে। আনন্দ উপভোগের জায়গা বটে।
এখানে সাগরের পাশ ধরে যেসকল বাড়ি রয়েছে,তা দেখার মত। এগুলো অনেক দামে বিক্রী হয়। এখানে ধনীরা বা শৌখিন মানুষেরা সমুদ্রের ধারে একটি মনোরম বাড়ির জন্যে মুখিয়ে থাকে। হলিউড অভিনেতা রাসেল ক্রো একটি অতি দামী এপার্টমেন্ট কিনেছেন সিডনী অপেরা হাউসের পাশে। কিছু কিছু স্থান আছে সেখানে দাম একটু বেশী দিতে হয়। এখানকার বেশীরভাগ বাড়িই কাঠ এবং কংক্রিটের তৈরী। ভেতরের অংশে কাঠ দিয়ে তৈরী আর বাইরে ইট,কংক্রিট। এগুলো দেখতে খুবই চমৎকার।
আমরা এবার ছোট ব্লো-হোলে আসলাম। এ স্থানটি একটি আবাসিক এলাকায় অবস্থিত। এখানে সাগরের তীর ধরে সুন্দর সুন্দর বাড়ি রয়েছে। ভেতরের অংশেও অনেক বাড়ি,তবে তীরবর্তী বাড়ীগুলির আবেদন বেশী,দামও। আমরা নীচের দিকে নামলাম। এখানকার হোলটার বিশেষত্ব হল এটি বেশ ভেতরের দিকে। একটি সমতল আগ্নেয় শিলা স্তরের ওপর একটি ছোট গর্ত। আমি একটু এগিয়ে গেলাম দেখতে আর তখনই ফোস ফোস শব্দে পানি অন্তত ২০ মিটার ওপরে নিক্ষিপ্ত হল। এই হোলটি ছোট হওয়ার কারনে ভাটার সময়ও পানির উদগীরন হতে পারে। মনে হল,সাগর আমাদের মুখে পানি কুলি করে মারল। কেউ কেউ আকশ্মিক পানির তোড়ে খানিক ভিজে গেল। এভাবে প্রথমবার ভেজার পর একজন জাপানি পর্যটক তার ক্যামেরা নিয়ে একপাশে সরে গেল,যাতে বের হয়ে আসা পানি তার গায়ে না লাগে। কিন্তু ভাগ্য মন্দ। পানি বের হয়ে তার গায়েই পড়ল,কারণ তিনি বাতাসের গতিবেগ না বুঝেই দাড়িয়েছিলেন। জোয়ারের সময় এই হোল থেকে পানি ছিটকে আরও ওপরে উঠে আসে। এখানে পাথরের তৈরী একটি গেট আছে,যা নীচ থেকে ক্রমান্বয়ে ওপরে উঠেছে। আমি আর আমার ভাইগনা সেটাতে হেটে উঠলাম। উঠে মনে হল হঠাৎ করে পুলা-পাইন হয়ে গেছি। প্রকৃতির সান্নিধ্যে মানুষ অনেক সময় তালকানা রোগে আক্রান্ত হয়।
বিষয়: বিবিধ
১৫০৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন