স্রষ্টার অস্তিত্ব ১২
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ২৩ জুলাই, ২০১৩, ০৯:৩৮:০০ সকাল
এছাড়া যুগে যুগে বিভিন্ন মনীষী আল-কুরআন অধ্যায়ন করে এর স্বপক্ষে রায় দিয়েছেন। এখানে তার খুব সামান্য বিবৃত হলঃ
মাইকেল এইচ হার্ট ঃ
আমেরিকা থেকে প্রকাশিত যে পুস্তকটি সর্বত্র সর্বাধিক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে তার নাম হল, “দি হান্ড্রেড”। এই পুস্তকটিকে “শীর্ষস্থানীয় শত ব্যক্তি” বা ‘ইতিহাসের শতজন শ্রেষ্ট ব্যক্তি” নামেও অভিহিত করা যেতে পারে। মাইকেল এইচ.হার্ট নামক জনৈক মার্কিন ঐতিহাসিক,অঙ্কশাস্ত্রবিদ ও জ্যোতির্বিজ্ঞানী এই সাড়া জাগানো পুস্তকটির রচয়িতা। তিঁনি ইসলামের নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)কে স্থান দিয়েছেন সকলের উপরে। অর্থাৎ হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম হচ্ছেন বিশ্বের শতজন শ্রেষ্ঠতম প্রভাবশালী ব্যক্তির মধ্যে প্রথম। তিঁনি লিখেছেন-
পৃথিবীর সবচাইতে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের তালিকায় যাঁর নাম সর্বাগ্রে স্থান পেতে পারে তিনি হচ্ছেন- হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তিঁনিই হচ্ছেন ইতিহাসের সেই অনন্য ব্যক্তিত্ব, যিনি ধর্মীয় ও পার্থিব উভয় ক্ষেত্রেই অতুলনীয় সাফল্য অর্জন করেন। অতি সাধারণ অবস্থায় জীবন শুরু করে তিঁনি পৃথিবীর একটি শ্রেষ্ঠ ধর্ম বিশ্বাসের প্রবর্তণ করেন এবং অত্যন্ত সফল একজন রাজনৈতিক নেতা হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। আজকে তাঁর মৃত্যুর তের’শ বছর পরেও তাঁর প্রভাব পৃথিবীতে ব্যাপক ও প্রবল।
প্রফেসর জুলেস ম্যাসারম্যান ঃ
ম্যাসারম্যান একজন মনস্তত্ত্ববিজ্ঞানী, শিকাগো ইউনিভার্সিটির একজন অধ্যাপক (মার্কিন ইহুদী)। প্রফেসর ম্যাসারম্যান বলেন, কোন লোকের মাথায় শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা পরানোর আগে বিচার বিবেচনার জন্য আমাদের অবশ্যই কিছু সংখ্যক নিরপেক্ষ মাপকাঠি বা মানদন্ড নির্ধারণ করে নিতে হবে। এ বিষয়ে তাঁর বক্তব্য হল, নেতাকে অবশ্যই তিনটি ভূমিকা সাফল্যজনকভাবে পালন করতে হবে। যথা-
(১) নেতাকে অবশ্যই তার অনুসারীদের কল্যাণ ও মঙ্গল সুনিশ্চিত করতে হবে। অর্থাৎ যিনি নেতা হবেন তাঁকে অবশ্য অবশ্যই তাঁর অনুসারীদের মঙ্গলামঙ্গলের ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে। (তাকে গাইয়েনার জেম্সটাউনের কুখ্যাত সুইসাইড কাল্টের প্রতিষ্ঠাতা রেভারেন্ড জোন্স-এর মত স্বীয় ব্যক্তিগত লালসা চরিতার্থ করার মানসিকতাসম্পন্ন হলে চলবে না।)
(২) নেতাকে বা নেতৃত্বে আগ্রহী ব্যক্তিকে তাঁর অধীনস্থ-অনুসারীদের জন্য এমন একটি সামাজিক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করতে হবে, যার আওতায় তাঁর অনুসারীবৃন্দ তুলনামূলক ভাবে নিজেদের নিরাপদ ভাবতে পারে।
(৩) যিনি নেতা হবেন, তিনি তার অনুসারীদের একটি পরিপূর্ণ বিধান প্রদান করবেন।
যাহোক, বর্ণিত ৩টি মাপকাঠি বা মানদন্ড সহযোগে প্রফেসর ম্যাসারম্যান তন্ন তন্ন করে ইতিহাস ঘেঁটেছেন এবং লুই পা¯ু—র, স্যালক, গান্ধী, কনফুসিয়াস, আলেকজান্ডার, সিজার, বুদ্ধ, যিশুখ্রিষ্ট এবং আরো অনেকের জীবনী চুলচেরাভাবে বিচার-বিশ্লষণ করে দেখেছেন। পরিশেষে, তিনি এই সিদ্ধান্তে বা উপসংহারে পৌঁছেছেন যে,
“সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ নেতা হচ্ছেন মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম - যিনি একই সঙ্গে সমভাবে একাই এই তিনটি ভূমিকা সাফল্যজনকভাবে পালন করে গেছেন। মুসা (আঃ) এর দ্বারাও একইভাবে অনুরুপ ভূমিকা পালিত হয়েছে বটে; কিন্ত মাত্রার দিক থেকে তা অনেক কম।”
অধ্যাপক কে.এস. রামকৃষ্ণ রাও (প্রখ্যাত হিন্দু দার্শনিক)ঃ
“একজন শ্রেষ্ঠ তাত্ত্বিক কদাচিৎ শ্রেষ্ঠ নেতা হয়ে থাকেন। একজন তুখোড় আন্দোলনকারীর পক্ষে শ্রেষ্ঠ নেতৃত্বের গুনাবলীর অধিকারী হওয়াটা অনেক ক্ষেত্রেই সুদূর পরাহত হয়ে থাকে। আন্দোলনকারী অবশ্য সবসময়ই একজন উত্তম নেতা হন, কারণ নেতৃত্বের অর্থই হল জনতাকে পরিচালিত করা। তবে, নেতৃত্বের যে গুণাবলী তাঁর সাথে কোন আদর্শ কিংবা কোন সত্যের উদ্ভাবনী শক্তির সাধারণ কোন সম্পর্ক নাও থাকতে পারে।
একই মানুষের মধ্যে তাত্ত্বিক, সাংগঠনিক আর নেতৃত্বের গুণাবলীর সমাহার বিশ্বের বুকে এক বিরলতম ঘটনা; অথচ এই তিনগুণাবলীকে ধারণ করেই নেতৃত্বের শ্রেষ্টত্ব। ইসলামের যিনি পয়গম্বর, তাঁর গোটা জীবনটাই বিশ্বের বুকে এই তিন বিরলতম গুণাবলীর মূর্তিমান প্রকাশ। শুধু তাই নয়, রক্তমাংসের সেই মানুষটির জীবনে বিশ্ব প্রত্যক্ষ করেছে উপযুক্ত তিন গুণের জীবন্ত পরিক্রম।”
জর্জ বার্নার্ড শ’ ঃ
“ আমি মুহাম্মদকে(সাঃ) পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিচার-বিশ্লেষণ করে দেখেছি।......এক আশ্চর্য মানুষ। .......আমার মতে, এন্টি-ক্রাইস্ট হওয়ার তো প্রশ্নই ওঠে না, তাঁকে বরং মানবতার ত্রাণকারী হিসাবেই অভিহিত করতে হবে” (জর্জ বার্নার্ড শ’ রচিত জেনুইন ইসলাম’’ ১ম খন্ড-নং ৮১৯৩০)
চমকপ্রদ জীবনী শক্তির জন্য মুহাম্মদ (সাঃ) কর্তক প্রচারিত ধর্ম আমার মনে সবচেয়ে বেশী শ্রদ্ধার উদ্রেক করেছে। আমার মতে ইসলামই একমাত্র ধর্ম যা সকল যুগের সকল মানুষের ধর্ম অর্থাৎ বিশ্বজনীন ধর্ম রূপে গণ্য হতে পারে।
এনসাইক্লোপেডিয়া ঃ “সকল ধর্মীয় নেতা ও ব্যক্তিত্বের মধ্যে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন সর্বাধিক সফলতা অর্জনকারী।” (এনসাইক্লোপেডিয়া, ব্রিটেনিকা, ১১ সংস্করণ)
টমাস কার্লাইল (প্রখ্যাত মনীষী) ঃ
“নীরবতার অনুসারী মহান আত্মার অধিকারী সেই মানুষটির (মুহাম্মদ) পক্ষে আন্তরিক না হয়ে উপায় কি ? প্রকৃতিই তাঁকে নিষ্ঠাবান, অকৃত্রিম ও আন্তরিক করে তৈরী করেছে। তাই অন্যেরা যখন নানান প্রক্রিয়া পদ্ধতিতে এমনকি নানান দ্রোহে বিচরণ করেন, তখন তিনি নিজ শান্ত সমাহিত ভাবের মধ্যে তৃপ্তি খুঁজে নেন। কোন প্রক্রিয়া পদ্ধতির অনুসরণ করে কিংবা কোন ধরনের বিদ্রোহ ঘটায়ে তিনি অন্যের নজরে পড়তে বা অন্যের নজর কাড়তে চান না। তিনি নিঃসঙ্গ ভাবে নিজ অন্তরেই সমাহিত থাকেন, বিচরণ করেন বাস্তবতায়। একেই আমরা নিষ্ঠা বা আন্তরিকতা বলি। এই নিষ্ঠা এই আন্তরিকতার মধ্যে যে সত্য সেটাই পারমার্থিক। তাই এই মানুষটি যখন কোন কিছু বলেন, তখন তা উচ্চারিত হয় প্রকৃতির হৃদয় কন্দর হতে। অন্য কিছুতে নয় বরং তখন তাঁর সেই কথায় মানুষ কর্ণপাত না করে পারে না। পারে না তাঁর সেই কথা অনুসারে কাজ না করেও। .... এর তুলনায় আর সবকিছুই হাওয়ায় মিলিয়ে যেতে বাধ্য।...কোমলে ও কঠোরে মিশানো দ্বিবিধ স্বভাব ছিল তাঁর (মুহাম্মদ সাঃ)। তবে অন্যের মন ভুলাবার জন্যে কায়দা করে মিঠা কথা বলার লোক ছিলেন না তিঁনি। আবার প্রয়োজনে অকপটে কঠোরতা প্রদর্শনেও পরামুখ হতেন না। কোন বিষয়ে কোন রকম অতিরিক্ত তাঁর স্বভাবে ছিল না... (হিরোজ এ্যান্ড হিরো ওয়ারশিপ, পৃষ্টা ৭১)
মহাতœা গান্ধী ঃ(প্রখ্যাত রাজনৈতিক নেতা , ভারত) ঃ “ সমৃদ্ধির যুগেও ইসলাম পরধর্মের প্রতি সহনশীল। ইসলাম মিথ্যায় পরিপুর্ণ ধর্মমত নয়। হিন্দুরা ভক্তি ও শ্রদ্ধার সাথে ইসলাম সম্পর্কে গভেষণা করুক। তা হলে তারা আমারই মত ইসলামকে ভালবাসবে। বিশ্ব নবী মুহাম্মদ(সাঃ) এর অতুলনীয় সারল্য, আতœবিস্মৃতি, প্রতিশ্র“তি রক্ষা, অবিচলিত নিষ্ঠা, শিষ্য ও অনুবর্তীদের জন্য অফুরুন্ত প্রীতি; নির্ভীকতার, জীবনের ব্রত ও
খোদার প্রতি একান্ত নির্ভরশীলতা পৃথিবীতে ইসলামের স্থান সৃজন করেছে। (শরিয়তে ইসলাম মাসিক পত্রিকা, প্রাগুক্তঃ ১৪৯ পৃষ্টা)।
“ প্রতীচ্য যখন অন্ধকারে নিমজ্জিত প্রাচ্যের আকাশে তখন উদিত হলো এক উজ্জল নক্ষত্র এবং আর্ত পৃথিবীকে তা দিলো আলো ও স্বস্তি। অনুচরদের জীবনি থেকে আমি খোদ নবীর জীবনে উপনীত হলাম। দ্বিতীয় খন্ড বন্ধ করলাম যখন, তখন দুঃখিত হলাম এই জন্য যে, সেই মহৎ জীবন সম্পর্কে আর কিছু পড়ার রইলনা আমার। আমার দৃঢ় বিশ্বাস জন্মাল যে, তরবারী নয়, নীতির কঠোরতা ,সারল্য, সম্পূর্ণ অহংকার বিলোপ, চুক্তির প্রতি সযতœ সম্মান, বন্ধু এবং অনুসারীদের প্রতি তাঁর গভীর অনুরাগ এবং তার নির্ভীকতাই ইসলামের আসন অর্জণ করেছে। (মহানবী স্মরণীকা, ৯৮ হিজরী, ৬৩ পৃষ্ঠা)
“ ইসলাম তার গৌরবময় দিনগুলোতে অসহিষ্ণু ছিল না। তা অর্জন করতে সমর্থ হয়েছিল দুনিয়ার শ্রদ্ধা। পুরোহিত প্রথা আর নয়। নবী মুহাম্মদ(সাঃ)অনতিবিলম্বে ভেঙ্গে দিলেন পুরোহিত প্রথার যাদু। আল্লাহ ও মানুষের মাঝখানে কোন মধ্যস্থ ব্যক্তির প্রয়োজন ছিল না ইসলামে। স্রষ্টা ও সৃষ্টির মাঝে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়নি কোন প্রথা। কুরআন পাঠের মাধ্যমে প্রত্যেকেরই প্রবেশ অধিকার ছিল। ঐশী বাণীতে যা ব্যাখ্যায়িত হল মুক্তভাবে, ধর্ম সভায় স্বেচ্ছাসীমিতকরণ ব্যতিরেকেই। এই দিক থেকে ইসলাম খ্রীষ্ট ধর্মের অনুরূপ কোন সংস্কারের প্রয়োজন অনুভব করেনি। “ আমার দৃঢ় বিশ্বাস জন্মেছে যে, পুরাকালে জীবন সংগ্রামে তরবারী ইসলামকে এই বিশ্ব জগতে স্থান প্রদান করেনি। নবীর যাবতীয় সৎ গুণাবলী এবং আল্লাহর প্রতি ও স্বীয় জীবন ব্রতে তাঁর ঐকান্তিক নির্ভরতা এ সকল গুণরাজী, তরবারী নহে, সমস্ত বাধা বিঘœ অতিক্রম করে তাঁকে সাফল্যমন্ডিত করেছে।
(জগৎগুরু মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, ৮৬ পৃষ্টা,প্রাগুক্ত, ১৫ পৃঃ)
জওহর লাল নেহেরু (১৮৮৯-১৯৬৪)প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী,ভারত)ঃ হযরত মুহাম্মদ(সাঃ)এর প্রচারিত ধর্মের সততা, সরলতা, ন্যায়নিষ্ঠতা এবং এর বৈপ্লবিক ব্যবস্থা, সমতা, ন্যায় নীতি, পার্শ্ববর্তী রাজ্যের লোকদের অনুপ্রাণিত করে, কারণ ঐ সমস্ত রাজ্যের জন সাধারণ দীর্ঘ দিন যাবৎ একদিকে শাসক গোষ্ঠী কর্তৃক নিপীড়িত, শোষিত ও নির্যাতিত হচ্ছিল, অপরদিকে ধর্মীয় ব্যাপারে নির্যাতিত নিস্পেষিত হচ্ছিল পোপদের হাতে। তাদের কাছে এ নতুন ব্যবস্থা ছিল মুক্তির দিশারী। (জগৎ গুরু হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম- পৃঃ ৮৬, প্রাগুক্ত- পৃঃ ১৫৩)
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (বিশ্ব কবি, ভারত) ঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৬১-১৯৪১ খৃঃ) তাঁর বিশাল রচনায় অন্তত চারটি স্থানে মহানবী হযরত মুহাম্মদ(সাঃ)এর পবিত্র নাম শ্রদ্ধার সঙ্গে উচ্চারণ করেছেন। তাঁর ‘পুর্ব ও পশ্চিম’ প্রবন্ধে আর ‘সঞ্চয়’ গ্রন্থের ‘ধর্মের অনুরাগ’ গল্পের মাঝে সে পবিত্র নাম রয়েছে। বিশ্ব কবি জীবনে অনুরোধক্রমে ১২৩ টি গ্রন্থের ভূমিকা বা সমালোচনা লিখে দিয়েছেন। সেক্ষেত্রে দু’টি সমালোচনাতে তিঁনি সর্বশেষ নবীর পবিত্র নাম উল্লেখ করেছেন। শেষ নবীকে তিঁনি ‘মহাপুরুষ’ ও ‘প্রচন্ড সূর্য’ বলে মন্তব্য করেছেন। সমালোচনাকৃত গ্রন্থ দু’টি হলো আব্দুল করিম বি,এ প্রণিত “মুসলমান রাজত্বের ইতিহাস” এবং শ্রী যতীন্দ্র মোহন সিংহ বি, এ প্রনীত “আকার ও নিরাকার তত্ত্ব”। ‘ধর্মের অনুরাগ’ গ্রন্থে তিনি বলেন-“মানুষের ধর্মবুদ্ধি খন্ড খন্ড হয়ে বাহিরে ছড়িয়ে পড়েছিল, তাকে তিনি (মুহাম্মদ সাঃ) অন্তরের দিকে, অখন্ডের দিকে নিয়ে গিয়েছেন। বিশ্বের পরম দেবতাকে একটি বিশেষ রূপে, একটি কোন, বিশেষ স্থানে আবদ্ধ করে না রেখে তিনি সেই মহাপূণ্যের দ্বারকে সমস্ত মানুষের কাছে উম্মুক্ত করে দিয়েছেন”। এ ছাড়া “পয়গম্বর দিবস” পালন উপলক্ষে কবিগুরু ১৯৩৩,১৯৩৪ এবং ১৯৩৬ সালে তিনটি বাণী দিয়েছিলেন, সেখানেও তিনি নবীজীর নামে অন্তরের গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন।
মিসেস ইন্দিরা গান্ধীঃ (১৯১৭-১৯৮৪ খৃঃ, সাবেক প্রধানমন্ত্রী, ভারত) ঃ এক বাণীতে বলেন - ইসলামের নবী হযরত মুহাম্মদ(সাঃ)এর জন্ম ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। ইসলামের প্রচারে সাম্য, ভ্রাতৃত্বের এক
নবতর ধারণার উন্মেষ ঘটেছে। (দৈনিক জং করাচী, ২৬ এপ্রিল, ১৯৮৩) তিনি অন্য এক বাণীতে বলেন - “বিস্ময়কর দীনতা প্রকাশ করে মহান নবী নিজেকে অজ্ঞানী বলে বর্ণনা করেছেন। কিন্ত যে মানুষটি বলেছিলেন জ্ঞানই উচিত অনুচিতের পার্থক্য বুঝবার ক্ষমতা প্রদান করে, জ্ঞানই স্বর্গের পথ আলোকিত করে, মরুভূমিতে জ্ঞান আমাদের মিত্র, নির্জনতায় আমাদের স্বজন, বন্ধুহারা জীবনে সাথী, শত্র“র বিরুদ্ধে বমর্ - তাঁর চেয়ে জ্ঞানী আর কে হতে পারে?” ( কোলকাতার মাসিক দামাল, ঈদ সংখ্যা ১৯৮২)
জে. এইচ. ক্রেমার্স ও এইচ. এ. আর. গীব ঃ জে. এইচ. ক্রেমার্স ও এইচ. এ. আর. গীব যুক্তভাবে “ এনসাইক্লোপিডিয়া অব ইসলাম” গ্রন্থে বলেন - সকল দিক থেকেই সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ হয়েও তিনি (মুহাম্মদ সাঃ) তাঁর দৈনন্দিন জীবনে একজন সাধারণ মানুষের মতই ছিলেন। তিনি তাঁর নিজের এবং অন্যদের ওপর যেসব বিধি-বিধান জারি করেছিলেন তা খুবই সহজ ও অনেক কম ছিল। মানুষকে এক আল্লাহতে বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে, সকল পাপের জন্য তাঁর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। সহকর্মী ও সতীর্থদের প্রয়োজনে সাহায্য করতে হবে। সম্পদের মোহ হতে মুক্ত থাকতে হবে। ধোঁকা ও প্রতারণার কাজ বর্জন করতে হবে। পুরনো দিনের বর্বর পদ্ধতিতে জ্যান্ত কন্যা সন্তানকে কবর দেয়ার রীতি বাতিল করে ছেলে সন্তানের মত লালন পালন করতে হবে। এসব বিধিবিধান হচ্ছে সত্যিকার একজন পুণ্যবান ব্যক্তির কর্তব্য; যাকে মুসলমান বলা হয়।
স্বামী বিবেকানন্দ (১৮৬৩-১৯০২ খৃঃ)বিখ্যাত লেখক ও ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব ভারত ঃ “মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন সমস্ত মানুষের পয়গম্বও - সাম্যে, মানুষের ভ্রাতৃত্বের, সমস্ত মুসলমানের ভ্রাতৃত্বের।” (দি গ্রেট লিডার অব দি ওয়ার্ল্ড)
প্রসিদ্ধ বৌদ্ধ নেতা ফুন চী ঃ “আরবের নবী যেসব শিক্ষা বিশ্বমানবের সামনে উপস্থাপন করেছেন, সেগুলো আধ্যাতিœক ও বৈষয়িক-উভয় দিকের আচার অনুশীলনকে যথাস্থানে স্থাপন করেছে এবং উভয়ের মাঝে সর্বোত্তম ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করেছে। ”
প্যারাডাইজ লস্টের কবি জন মিল্টন ঃ কনষ্ট্যান্টাইনের কালের বহু আগে অধিকাংশ খ্রীষ্টান তাদের মতবাদ ও আচরণ উভয়েরই আদিম শুচিতা ও ন্যায়পরায়নতা অনেক খানি হারিয়ে ফেলেছিল। পরবর্তী কালে যখন চার্চের সমৃদ্ধি সাধন হয়েছে তারা তখন সম্মান আর অরাজকীয় ক্ষমতার প্রেমে প্রোথিত এবং খ্রীষ্ট ধর্ম ভরাডুবির প্রান্তে উপনীত। মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম আর্বিভুত হলেন ৬ষ্ঠ শতাব্দীতে এবং পৌত্তলিকতাকে নিশ্চিহ্ন করলেন এশিয়া আফ্রিকা ও মিশরের অনেকাংশ থেকে, যার সর্বাংশেই আজ পর্যন্ত এক পবিত্র আল্লাহর উপাসনা প্রতিষ্ঠিত। প্রবক্তাদের মনের উপর মুহাম্মদ(সাঃ) এর ধর্মশক্তির সবচেয়ে সন্দেহাতীত প্রমান পাওয়া যাবে, অতীতে যে অন্যান্য সকল বিশ্বাসের জরাজীর্ণ অবস্থার ও সৃষ্টিকে স্রষ্টার আসনে স্থাপন করার অভিজ্ঞতা লাভে ইসলাম যদিও যথেষ্ট প্রাচীন, তবুও তাঁর(সাঃ) অনুসারীরা শেষ পর্যন্ত তাদের বিশ্বাস ও শ্রদ্ধার লক্ষ্যকে মানুষের ইন্দ্রিয় ও কল্পনার স্তরে নামিয়ে আনাকে ঠেকিয়েছে এবং কোনো দৃষ্টিগোচর মূর্তি দ্বারা উপাস্যের জ্ঞানালোকিত ভাবরূপকে কলঙ্কিত না করেই তারা গোঁড়ামী ও কুসংস্কার থেকে মুক্ত থেকেছে। আমি বিশ্বাস করি এক আল্লাহকে এবং আল্লাহর প্রেরিত মুহাম্মদ (সাঃ)কে। এই হল ইসলামিত্বের সহজ অপরিবর্তনীয় ঘোষণা। (জগৎ গুরু মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামঃ ৮৫-৮৬ পৃঃ)
ঐতিহাসিক স্ট্যানলি লেনপুল ঃ
মুহাম্মদ(সাঃ) ছিলেন চরম উদ্যমী; আর তাঁর সেই উদ্যম ছিল মহৎ লক্ষ্যের অভিসারী। এই ধরনের মহৎ উদ্যমশীল ব্যক্তিরা হলেন ধরণীর প্রাণবীজ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সন্তান। এঁরাই ‘সল্ট অব দি আর্থ’ এরাই জীবন্ত
মানুষকে পঁচনের হাত থেকে রক্ষা করেন। মুহাম্মদ(সাঃ) উদ্যমশীলতার পরিচয় প্রদান করেছেন যখন গোটা বিশ্বকে প্রদীপ্ত করার প্রয়োজনীয়তা একান্ত জরুরী হয়ে দেখা দিয়েছিল। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল সৎ আর তাই তাঁর উদ্যমশীলতাও ছিল মহৎ লক্ষ্যের অভিসারী। মুহাম্মদ(সাঃ) এ বিষয়ে চুড়ান্ত সফলতা অর্জন করেছিলেন । তিঁনি ছিলেন এক আল্লাহর প্রেরিত পুরুষ। তিঁনি তাঁর উপর আল্লাহ প্রদত্ত গুরু দায়িত্ব পূর্ণ মর্যাদার সাথেই সুসম্পন্ন করে গেছেন। একই সঙ্গে এই দায়িত্ব পালনের বেলায় তিঁনি প্রদর্শন করে গেছেন পরিপূর্ণ নম্রতা-চারিত্রিক মাধুর্যের পরম পরাকাষ্ঠা। সাধারণ একজন মানুষ হয়েও আসমানী এই গুরু দায়িত্ব তাঁর উপরে অর্পিত হয়েছে-সেটাই ছিল তাঁর সেই নম্রতার মূল কারণ। মুহাম্মদ(সাঃ)কল্পনার অ™ূ¢ত শক্তিতে, হৃদয়ের উচ্চতায়, অপূর্ব মাধুর্যতা ও বিশুদ্ধতায় ছিলেন বৈশিষ্টমন্ডিত। জীবনে কখনো তিঁনি কাউকে অন্যায়ভাবে আঘাত করেন নি। কোন একজনকে অভিশাপ দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানালে তিঁনি উত্তর দিয়েছিলেন-অভিশাপ দেওয়ার জন্য আমি প্রেরিত হইনি, প্রেরিত হয়েছি মানব জাতির কল্যাণরুপে। অসুস্থদের তিঁনি দেখতে যেতেন। তাঁর গোলামেরও খানার দাওয়াত গ্রহন করতেন। নিজের সেবা নিজেই করতেন। সংক্ষেপে বর্ণনা করতেন হাদীস। অন্য কারও হাত থেকে কখনো নিজের হাত টেনে নেন নি এবং লোকটি ঘুরে দাঁড়াবার আগে নিজে ঘুরে দাঁড়াতেন না। (সত্য সমাগতঃ পৃ-৯৪-৯৫ ,জগৎ গুরু মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামঃ পৃ- ৯৪)
“মুহাম্মদ(সাঃ) এর উপর দেবদূত (ফেরেশতা) দ্বারা ঈশ্বরীয় বাণী (ওহী) অবতীর্ণ হত এতে কোন সন্দেহ নেই।”
(শান্ত ভট্রাচার্য- বেদপুরানে আল্লাহ ও মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম, ৭৮ পৃঃ)
স্যার আর্নর্ল্ড টোয়েনবি ঃ
“সিভিলাইজেশন অন ট্রায়াল” শীর্ষক গ্রন্থে বলেন-মুহাম্মদ(সাঃ) ইসলামের মাধ্যমে মানুষের বর্ণ, বংশ ও শ্রেণীমত বিশিষ্টতা সম্পূর্ণরূপে খতম করে দিয়েছেন। কোন ধর্মই এর চেয়ে বড় সাফল্য লাভ করতে পারেনি, যে সাফল্য মুহাম্মদ(সাঃ) এর ভাগ্যে জুটেছে।
বিখ্যাত ফরাসী কবি ও ঐতিহাসিক প্রফেসর লেসার টাইন ঃ যদি উদ্দেশ্যের মহত্ত্ব, ক্ষুদ্র শক্তি এবং আশাতীত ফল লাভ করার মধ্যে মানবীয় প্রতিভা বিদ্যমান থাকে, তবে আমরা বর্তমান বিশ্বের ইতিহাসের যে কোন মহাপুরুষের সাথে মুহাম্মদ(সাঃ) এর তুলনা করতে পারি কি ? সেই প্রসিদ্ধ ব্যক্তি সামরিক আইন এবং সাম্রাজ্যসমূহ গঠন করেছিলেন। এ ব্যক্তি শুধু সৈন্য পরিচালনা করেন নি, তিঁনি আইন প্রনয়ন ও সম্রাজ্য গঠন করেছেন। জাতি এবং বংশ গঠন করেছেন এবং দেব দেবীসমূহ, ধর্ম ও ধারনাসমূহ, বিশ্বাস এবং আত্মা সব কিছুই পাল্টিয়েছেন। একটি গ্রন্থের মাধ্যমে তিঁনি উহা সাধন করেন,যার প্রতিটি বর্ণ আইনে পরিণত হয়েছে। তিঁনি এমন একটি মহাজাতি গঠন করেন যেখানে নানা প্রজাতির লোক এবং বিভিন্ন ভাষাভাষীকে একত্রিত করেন। তাঁর আদর্শের এই বিজয় অলৌকিক ঘটনার মত। (ইসলাম রশ্মি, ১০৮-১০৫ পৃঃ) এর সীমিত উপায় উপকরণ নিয়ে মুহাম্মদ(সাঃ)এর মত কোন ব্যক্তি কখনো মানবিক ক্ষমতার এত অধিক কোন স্থায়ী কোনো বিপ্লব সম্পন্ন করতে পারেন নি, যা দিয়ে মানবীয় মহত্ত্বের পরিমাপ করলে তার সকল মানের বিচারেই আমরা যথাযর্থ বলতে পারি। মুহাম্মদ(সাঃ) বিনম্র তবুও নির্ভীক, শিষ্ট তবু সাহসী, ছেলে মেয়েদের মহান প্রেমিক তবু বিজ্ঞজন পরিবৃত। তিঁনি সবচেয়ে সম্মানিত, সব øেহময় স্বামী। এক হিতৈষী পিতা, এক বাধ্য ও কৃতজ্ঞ পুত্র। বুন্ধুত্বে অপরিবর্তনীয় এবং সহায়তায় ভ্রাতৃসুলভ। প্রতিকূল ঘটনায় বা সম্পদের সমৃদ্ধিতে অথবা দারিদ্র্যে শান্তিকালে বা যুদ্ধে অবিচলিত। দয়ার্দ্র, অতিথিপরায়ন এবং উদার। নিজের জন্য সর্বদাই মিতাচারী। কঠিন তিঁনি মিথ্যা শপথের বিরুদ্ধে, ব্যভিচারীর বিরুদ্ধে, খুনী ও কুৎসাকারী, অপরাধী ও অর্থলোভী, মিথ্যা সাক্ষ্যদাতা এবং এ জাতীয় লোকের বিরুদ্ধে। ধৈর্য্য, বদান্যতায়, দয়ায়, পরোপকারিতায়, কৃতজ্ঞতায়, পিতা-মাতা ও গুরুজনের প্রতি সম্মান প্রদর্শনে এবং নিয়মিত আল্লাহর প্রার্থনা অনুষ্ঠানে এক মহান ধর্ম প্রচারক। (মহানবী স্মরনীকা, ৯৮ হিজরী-৬৫ পৃঃ) দার্শনিক, সুবক্তা, স্বর্গীয় দূত, আইন প্রনয়নকারী, যোদ্ধা, বশীভূতকারী, যুক্তিপূর্ণ মতবাদের মূর্তিবিহীন ধর্মীয় প্রথার পুনঃসংস্থাপনকারী, আঞ্চলিক সাম্রাজ্যের এবং একটি আধ্যাত্মিক সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন এই মুহাম্মদ(সাঃ)। যা দিয়ে মানবীয় মহত্ত্বের পরিমাপ করা চলে, তার সকল মানের বিচারেই আমরা যথার্থ প্রশ্ন করতে পারি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামের চাইতে মহত্ত্বর কোন ব্যক্তি কি আছেন ? (জগৎগুরু মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম,পৃ- ৯০) কোন মানুষ সেচ্ছায় কিংবা অনিচ্ছায় তার স্রষ্টার সাথে মুহাম্মদ(সাঃ)এর চেয়ে উন্নত সম্পর্ক স্থাপন করতে পারেনি। স্রষ্টার প্রতি মানুষের আনুগত্য এবং মানুষের
প্রতি স্রষ্টার অনুরক্ততা, সৃষ্টি ও স্রষ্টার যুক্তি সংগত সম্বন্ধ তিনিই প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। (বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের দৃষ্টিতে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম, কুরআন ও ইসলাম- ৫ পৃঃ)
প্রখ্যাত মনীষী মি. ওয়েলস ঃ উদারতা মহানুভবতা ও বিশ্বজনীন ভ্রাতৃত্ববোধের গুণরাজিতে ইসলাম পরিপুর্ণ। ইসলাম তাঁর নিজস্ব পদ্ধতির মাধ্যমে ধনী, দরিদ্র সকলকে একই কাতারে সাম্য মৈত্রীর বন্ধনে আবদ্ধ করেছে। এই সমস্ত মহৎ গুণের অধিকারী হওয়ার দরুন মুহাম্মদ(সাঃ) সর্ব প্রকার মানুষের অন্তরে স্থান করে নিতে পেরেছিলেন। ইসলামে রয়েছে শিক্ষিত চিকিৎসক, শিক্ষক, ধর্ম প্রচারক, কিšু— আজ পর্যন্ত নেই কোন পুরোহিত। ইসলাম পূর্ণভাবে দয়া, বদান্যতা ও ভ্রাতৃত্বের প্রাণশক্তি, এক সহজ ও বোধগম্য ধর্ম। ইসলামের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দিতায় নিয়োজিত হয়েছিল ইহুদি ধর্ম, স্থাপন করেছিল আল্লাহর এক সামাজিক পরিষদ। খৃষ্টধর্ম সীমাহীনভাবে ঈশ্বরের ত্রিতত্ত্ব মতবাদ ও জনশ্র“তি সম্পর্কে এত সব কথা বলছিল আর প্রচার করে যাচ্ছিল যে, সাধারণ লোক তার মাথা মুন্ডু কিছুই ঠাহর করতে পারছিল না। মুহাম্মদ(সাঃ) এর ধর্ম যখন এলো, তখন তিনি অধিকাংশ মানুষের কাছে যে আবেদন জানিয়েছিলেন তা ছিল এই যে, তাঁর প্রচারিত এই আল্লাহ ছিলেন তাদের হৃদয়ে বিবেক পরীক্ষার, ন্যায়পরায়নতার এক ঈশ্বর এবং মুহাম্মদ (সাঃ)এর মতবাদ ও পদ্ধতির অকপট স্বীকৃতি। অনিশ্চয়তা, বিশ্বাসঘাতকতা ও অসহনীয় দলাদলির এই দুনিয়ায় বিশ্বাস ভাজন মানুষের মহান ও ক্রমবর্ধমান ভ্রাতৃত্বের সম্মুখে খুলে দিয়েছিল মুক্তির দুয়ার। দ্ব্যর্থবোধক কোন প্রতীকতা ছাড়াই অন্যকে মসীলিপ্ত বা পুরোহিতগণের ¯ু—তি না করেই মুহাম্মদ(সাঃ)সেই আকর্ষনীয় বিশ্বাসগুলি মানবজাতির হৃদয়ঙ্গম করিয়েছিলেন। ইসলাম সৃষ্টি করেছিলো এমন এক সমাজ এর আগে দুনিয়ায় অস্তিত্ববান যে কোন সমাজের তুলনায় যা ছিল নিষ্ঠুরতা ও সামাজিক অত্যাচার মুক্ত। (সত্য সমাগত- ৫৫-৫৬ পৃঃ) মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর জীবন কালে যে আদর্শ প্রতিষ্ঠা করে গিয়েছিলেন তা চিরকাল বিশ্ব সমক্ষে সমুজ্জল। (অমুসলিমদের দৃষ্টিতে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম ৪ পৃঃ, বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্মন্ধে অমুসলিম মণীষীদের বাণী, পৃঃ ৪৭-৪৮)
বিশ্ববিখ্যাত ঐতিহাসিক এডওয়ার্ড গিবন ঃ
ক্স মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ধর্মের সন্দেহ ও নিন্দা করার উপযুক্ত কিছুই নেই। তাঁর উপাস্য তিনি, যিনি অনাদি, অনন্ত, তুলনাবিহীন।
ক্স ইসলামের সাহায্যে মুহাম্মদ(সাঃ) আরব জাহান থেকে হৃদয়ের নিষ্ঠুরতা, প্রতিহিংসা, অরাজকতা, নারী লাঞ্চনা, শত্রুতা, বেআইনি, বিশৃংখলা, সুদ খাওয়া, মদ খাওয়া, শিশু হত্যা, খুনাখুনি, নরবলী এবং কুসংস্কার ও দুর্নীতি উচ্ছেদ করেন। এই ধর্মের দ্বারা তিনি মনজগতে স্বর্গীয় রাজত্ব কায়েম করেন, যে রাজ্য যীশু খ্রীষ্ট কামনা করেছিলেন।
ক্স ...যারা তাঁর বর্ণনা দিতে চেয়েছে তাঁরা বলেছে, তাঁর মত আগে কখনও কাউকে দেখিনি, পরেও না।
ক্স জাতিগত শক্তির সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছেও আল্লাহর রাসুল (সাঃ) তাঁর নিজ ভৃত্যের কাজগুলি করতেন। আগুন জ্বালাতেন, ঝাড়– দিতেন, কাপড় সেলাই, জুতা সেলাই ও গাভীর দুগ্ধ দোহন এবং পরিবারের অন্যান্য দায়িত্ব পালন করতেন।
ক্স হযরত মুহাম্মদ(সাঃ) ক্ষমতার উচ্চতম আসন লাভ করেও তাঁর ভীষণতম শত্র“কেও ক্ষমা করেছেন। যে নারী (হিন্দা) তাঁর বীর চাচার যকৃৎ বের করে চর্বণ করেছিল, তিনি তাকেও ক্ষমা করেছিলেন। যে ব্যক্তি তাঁর জনৈকা আতœীয়ার কন্যার মৃত্যুর কারণ হয়েছিল, তিনি তাকেও ক্ষমা করেছেন। সর্বোপরি তাঁর যে সকল স্বদেশবাসী তাঁর শিষ্যবর্গকে উৎপীড়িত, এমনকি তাঁকেও মেরে ফেলতে চেষ্টা করেছিল, তিনি তাদের সকলকেই ক্ষমা করেছেন। মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম পদানত সমস্ত শত্র“কে ক্ষমা করে ঔদার্য ও ক্ষমাশীলতার যে আদর্শ প্রদর্শন করেছেন জগতের সুদীর্ঘ ইতিহাসে তার দ্বিতীয় দৃষ্টান্ত নেই।
ক্স মক্কা নগরীর আত্মসমর্পনে তিঁনি প্রতিহিংসা চরিতার্থের যথেষ্ট সুযোগ পেয়েছিলেন। যে সকল গর্বিত কোরায়েশ নেতৃবৃন্দ তার ধর্ম বিধ্বস্ত করতে ত্র“টি করেনি এবং তাঁর সাথে অতীব কদর্য ব্যবহার করেছে, এমনকি তাঁকে হত্যা করতে অগ্রসর হয়েছিল, তারা সকলেই এখন তাঁর সম্পূর্ণ করতলগত। তিঁনি কাতর কন্ঠে বলেছিলেন- ‘ হে মহান ভ্রাতা, হে মহান ভ্রাতুস্পুত্র-‘ দয়া’। তিঁনি বললেন, “ইউসুফ স্বীয় ভ্রাতাগনকে যা বলেছিলেন, আমিও তোমাদেরকে তাই বলবঃ আমি আজ তোমাদেরকে ভর্ৎসনা করব না, আল্লাহ তোমাদেরকে ক্ষমা করলে তিঁনি দয়াময় ও প্রেমময়। যাও তোমরা সকলে মুক্ত। ”(মক্কা বীজয়ের পর)
ক্স মুহাম্মদ (সাঃ)এর ধর্মমত অতি সরল ও সন্দেহ বিবর্জিত। কুরআন তৌহিদবাদের উজ্জল দৃষ্টান্ত। তাত্ত্বিক দার্শনিকগণ মুসলমানগণের প্রচলিত ধর্মবিশ্বাস অক্লেশে গ্রহন করতে পারেন। এই ধর্মমত এত মহান যে, আমাদের বর্তমান ধীশক্তি এর তত্ত্বদ্বার উদঘাটন করতে অসমর্থ।
( বিশ্বনবী সাঃ সম্বন্ধে অমুসলিম মনীষীদের বাণী, পৃঃ ২৪-২৭)
ক্স সপ্তম শতকের খৃষ্টানদের দেখা যায় যে, তারা কুফরের রসম রেওয়াজ গ্রহন করে নিয়েছিলেন। একত্ববাদ বদলে গিয়ে রুপ নিয়েছিল ত্রিত্ববাদের । স্ব স্ব স্থানে তিনটি সত্তার সৃষ্টি করে ঈসায়ীরা কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছে। আল্লাহর বান্দা যীশুকে আল্লাহর পুত্রে রুপান্তরিত করেছে। খৃষ্টধর্মের বিভিন্ন দল এ আকীদাটিকে নিজ নিজ ধরণা অনুযায়ী গ্রহন করেছে এবং প্রত্যেকেই দাবী করতে লাগলো যে, সত্য ও সঠিক আকীদা তাদের দলেরই। এমনিভাবে খৃষ্টানদের কাছে আল্লাহর ধারণা অস্পষ্টতা ও ধূম্রজালের অন্তরালে চলে যেতে থাকে। মুহাম্মদ(সাঃ) আল্লাহতায়ালা সম্পর্কে যে ধারনা দেন তা, মুহাম্মদ (সাঃ) এর উপর অবতীর্ন আল-কুরআন আল্লাহর একত্বের শানদার প্রমান।
ক্স মক্কার পায়গম্বর মুহাম্মদ(সাঃ) প্রতিমা, মানুষ, গ্রহ নক্ষত্রের পূজাকে অস্বীকার করেছেন। তিঁনি বুদ্ধিবৃত্তিক ও যুক্তিগ্রাহ্য মূলনীতি সামনে রাখলেন, যা উদিত হয় তা অস্তমিত হবে, যা জীবিত তা একদিন মরে যারে। যে সরলতা আর যুক্তির সাথে তিঁিন (সাঃ) আল্লাহর একত্বের বিশ্বাস ও প্রমান পেশ করেছেন, সারা পৃথিবীতে এর উদাহরণ পাওয়া যায় না। মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে, আল্লাহ তিনি, যিনি মানুষের মনের গোপন রহস্য সম্পর্কেও অবগত। অতীত বর্তমান ভবিষ্যতের জ্ঞান একমাত্র আল্লাহরই আছে। (অমুসলিম মনীষীদের চোখে আমাদের প্রিয় নবী, ৩৯-৪০ পৃঃ)
খৃষ্টান পাদরী রেভারেন্ড বসওয়ার্থ স্মিথ ঃ
ক্স মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক সঙ্গে তিনটি বিষয়ের প্রতিষ্ঠাতা হওয়ার দাবী করতে পারেন। তিঁনি একটি জাতি, একটা সামাজ্য ও একটা ধর্মকে গড়ে তুলেছিলেন। ইতিহাসে এতবড় সৌভাগ্যশালী পুরুষের পরিচয় খুব কমই মিলে। সম্পূর্ণ নিরক্ষর হয়েও তিঁনি এমন মহান গ্রন্থের প্রচার করে গিয়েছেন যা একাধারে মহাকাব্য, আইনগ্রন্থ ও উপাসনার কিতাব।
ক্স যে সব ঘৃণ্য প্রথা আফ্রিকা মহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রচলিত ছিল, যা এখনও আফ্রিকার কোন কোন দেশে দেখা যায় যথা নরভোজী মানুষ, নরবলী দান ও শিশুকে জীবন্ত সমাহিত করা এ সকল ঘৃণ্য মানব সম্প্রদায় ও তাদের গর্হিত আচরণ ইসলামের অভ্যুদয়ের সাথে সাথে মুসলমান অধ্যুসিত অঞ্চল থেকে চিরতরে বিলুপ্ত হয়েছে। যে সকল পার্বত্য জাতি উলঙ্গ থাকত তারা এখন পরিচ্ছন্ন রুচিসম্পন্য হয়ে কাপড় পরতে শিখেছে। যেসব উপজাতি কখনো গোসল করতো না বা ধৌত প্রক্রিয়ার সাথে পরিচিত ছিল না, তারা কুরআনের আদেশ অনুযায়ী নামাজ পড়ার উদ্দেশ্যে অজু করে হাত মুখ প্রক্ষালন করে(ইউরোপের লোকেরাও একদা এমন ছিল,তারা বাগানে টয়লেট সারত,গোসল করত না,অনেকে পাহাড়ের গুহায়,গাছের গুড়িতে থাকত,মুসলিমরা ইউরোপে গিয়ে তাদেরকে সভ্যতা শিক্ষা দেয়)। উপজাতিগণ ক্রমে একতার বলে এক জাতিতে পরিণত হয় এবং জ্ঞান-বিজ্ঞান পরিচর্যা ও স্বীয়শক্তির প্রভাবে সাম্রাজ্য স্থানে সক্ষম হয়। মুসলমানদের ইতিহাস থেকে এর নজীর পাওয়া যায় এবং সন্নিহিত দেশ সমূহের শত বছরের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে এ সত্যটুকু প্রকাশিত হয়ে উঠবে। ...এটা অত্যন্ত স্পষ্ট ও সত্য ঘটনা যে, ইসলাম নব দীক্ষিত নিগ্রোদেরকে সাহস, মর্যাদা, আতœনির্ভরশীলতা ও আতœসম্মান দান করেছে খৃষ্টান ধর্মের মাধ্যমে যা কদাচিত সাধিত হয়েছে।
ক্স ইসলামে দাস ও সুলতান সকলেরই সকল বিষয়ে কথা বলার সমান অধিকার রয়েছে। এখানে সত্যকে গ্রহন করা হয়েছে এবং মিথ্যাকে বর্জন করা হয়েছে।
ক্স এই পৃথিবীতে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মহাপুরুষ রূপে প্রেরণ করা হয়েছিল।
ক্স হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সমসাময়িক লোকেরা ও তাঁর ধর্ম বিরোধী শত্র“রাও এক বাক্যে তাঁর ধর্মনিষ্ঠা, ন্যায়পরায়নতা, সত্যবাদিতা, ক্ষমাশীলতা ও নম্রতার ভূয়সী প্রশংসা করেছে।
ক্স হযরত মুহাম্মদ(সাঃ) সিজারের ন্যায় শাসনতন্ত্রের শীর্ষভাগে অবস্থান করলেও পোপের ন্যায় জাঁকজমক এবং সিজারের ন্যায় সেনাবাহিনী ছিল না। বেতনভোগী সেনা, দেহরক্ষী সৈনিক, রাজকীয় প্রাসাদ ও নির্ধারিত রাজস্ব ব্যতীত তিনি স্বর্গীয় অধিকার বলে রাজত্ব করেছেন । আমি বিশ্বাস করি, সুবিজ্ঞ দার্শনিক এবং প্রকৃত খৃষ্টানগণ একদিন হযরত মুহাম্মদ(সাঃ) পরমেশ্বরের প্রকৃত নবী বলে বিশ্বাস করতে বাধ্য হবেন। ( আর বসওয়ার্থ স্মিথকৃত “মুহাম্মদ এ্যান্ড মুহামেডানিজম” ১৯৪৬ বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুন্ধে অমুসলিম মনীষীদের বানী, পৃঃ৩৫-৩৭)
মহাবীর নেপোলিয়ান বোনাপার্ট ঃ আমি খোদাতালার প্রশংসা করি। বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ও পবিত্র কুরআনে রয়েছে আমার অবিচল শ্রদ্ধা। (বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে অমুসলিম মনীষীদের বাণী ) মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার অনুচরদেরকে তাঁর পাশে রাখতেন। কয়েক বছরের মধ্যে মুসলমানরা অর্ধেক পৃথিবী জয় করেছিলেন। (প্রাগুক্ত, ২৮ পৃঃ)
ক্স মুহাম্মদ(সাঃ) আরববাসীদের ঐক্যের শিক্ষা দিয়েছেন। তাদের পারস্পরিক দ্বন্ধ-কলহ নিরসন করেছেন। অল্প কিছু দিনের ভেতর তাঁর অনুসারী উম্মত বিশ্বের অর্ধেকের চেয়েও বেশি জয় করে ফেলে। এ বিস্ময়কর সাফল্য মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর শিক্ষা ও তার উপর আমল করার কারনেই সূচিত হয়েছে। (অমুসলিম মনীষীদের চোখে আমাদের প্রিয় নবী. ৩৯ পৃঃ)
প্রখ্যাত ঐতিহাসিক স্যার উইলিয়াম মূর ঃ
ক্স মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর অনুশাসন গুলো যেমন ছিল স্বল্প সংখ্যক, তেমনি ছিল সহজবোধ্য, অলৌকিক এবং মহৎ কর্ম দ্বারা সম্পাদিত। আদিম খ্রিষ্ট ধর্ম সুপ্ত জাতিকে সজীব করতে প্রয়াস পেয়েছিল এবং পৌত্তলিকতার বিরুদ্ধে কঠিন সংগ্রামে লিপ্ত হয়েছিল, কিন্ত আধ্যাতিœক জীবনের চরম উৎকর্ষ, ধর্মের জন্য এমন ত্যাগ এবং বিবেকের জন্য লুন্ঠিত দ্রব্যকে এরূপ সানন্দে গ্রহন করতে পারেনি। (জগৎ গুরু মুহাম্মদ(সাঃ) ৮২ পৃঃ, বিশ্বনবী সম্বন্ধে অমুসলিম মনীষীদের বাণী,পৃ- ২৯ ) ।
ক্স সপ্তম শতাব্দীতে খ্রীষ্টানদের মধ্যে অনৈক্য ও বিভেদ দেখা দিয়েছিল। তাদের মধ্যে কোন একতা ও শৃঙ্খলা ছিল না। তাদের ধর্ম জরাজীর্ণ দূর্নীতিপরায়ন ছিল। পারস্য দেশে একজনের মাতার সাথে সন্তানের বিয়েতে কোন বাধা ছিল না। নিজ ভগ্নি ও কন্যাকেও বিবাহে বাঁধা ছিল না। চীন দেশে কবর ও ভূত পিশাচের পূজা করা হত। ভারতে অশ্লীল লিঙ্গ পূজা লজ্জাহীনভাবে প্রচলিত ছিল এবং তথায় মদ্যপান ও ব্যভিচার পুরোদমে চলত। আরবদের সামাজিক বর্বরতা ও নিষ্ঠুরতা সব বিছুর সীমা অতিক্রম করে গিয়েছিল এবং সভ্যতা বলতে বর্বরতা ও নিষ্ঠুরতা বুঝাতো। সামান্য কারনে রক্তপাত সংঘটিত হতো এবং প্রতিশোধ স্পৃহা বংশানুক্রমে সঞ্চারিত হত। কন্যা সন্তানের জন্মকে অশুভ লক্ষণ বলে মনে করা হত এবং কোন প্রকার সমবেদনা ব্যতীত নিজ পিতারাই অসহায় শিশুকে জীবন্ত প্রোথিত করে হত্যা করত। পুত্তলিকার সম্মুখে উলঙ্গ হয়ে নৃত্য, শিষ দেওয়া এবং হাততালি দেওয়া উপসনার অঙ্গ ছিল। আরব কবিতায় অশ্লীল বিষয়বস্তর অবতারণা করা হত। বিবাহিতা স্ত্রীদের অপর পুরুষদের সঙ্গে
সহবাসের অনুমতি দেওয়া হত এবং তাদের স্বামীগণ এ অনুমতি দিত। সন্তান ধারনের জন্য আরবে এ প্রথার প্রচলন ছিল। যার সঙ্গে হিন্দুদের নিয়োগ প্রথার সাদৃশ্য আছে।
( বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্বন্ধে অমুসলিম মনীষীদের বাণী, ২৯-৩০ পৃঃ)
ক্স মহানবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর আবির্ভাবের সময়ের মত সামাজিক অধোগতি আর কখনো ঘটেনি এবং মহানবী মুহাম্মদ(সাঃ) এর তিরোধানের সময় সমাজ জীবন যে পূর্ণতা পেয়েছিল তাও আর কখনও দেখা যায়নি। হযরত মুহাম্মদ(সাঃ)এর জীবনের সঙ্গে তুলনা হতে পারে এমন কোন জীবনী আর নেই। (প্রাগুক্ত, ৩১ পৃঃ)
ক্স সর্বশ্রেণীর ঐতিহাসিকগণ এক বাক্যে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যৌবনকালীন স্বভাবের শিষ্টতা ও আচার ব্যবহারের পবিত্রতা স্বীকার করেছেন। এমন গুণরাজি তৎকালিন মক্কাবাসীগণের মধ্যে অতি বিরল ছিল। এই সরল প্রকৃতির যুবকের সুন্দর চরিত্র ও সম্মানজনক আচরণ তার স্বদেশবাসীর প্রশংসা অর্জণ করতে সমর্থ হয়েছিল এবং তিঁনি সর্ব সম্মতিক্রমে আল-আমিন বা বিশ্বাসী আখ্যা লাভ করেছিলেন। (প্রাগুক্ত, ৩২পৃঃ)
ক্স মক্কা বিজয়ান্তে মক্কা ও মক্কার পার্শ্ববর্তী মুশরিক সম্প্রদায় ইসলাম ধর্ম প্রহনে অনিচ্ছুক হয়েছিল। রাসুল্লাহ(সাঃ)অতি সরল চিত্তে তাদের সাথে সন্ধি করেছিলেন, ইসলাম গ্রহনের জন্য কাউকে বাধ্য করেননি। (প্রাগুক্ত,৩২)
ঐতিহাসিক পি কে. হিট্টি ঃ
মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর স্বল্প পরিসর জীবনে অনুল্লেখযোগ্য জাতির মধ্য থেকে একটি জাতি ও ধর্মের পত্তন করলেন যার ভৌগলিক প্রভাব খ্রীষ্টান ও ইহুদিদের অতিক্রম করে গেল। মানব জাতির বিপুল অংশ আজ তাঁর অনুসারী। (ফিলিপ কে হিট্টি, দি হিট্টি অব দি এরাবস ম্যাকমিলন এ্যান্ড কোং লিমিটেড লন্ডন ১৯৫৩ ইং, জগৎ গুরু মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম ৮৩ পৃঃ, প্রাগুক্ত, ৬৬-৬৭ পৃঃ)
প্রখ্যাত সাহিত্যিক কাউন্ট লিও টলষ্টয় ঃ প্রখ্যাত সাহিত্যিক কাউন্ট লিও টলষ্টয় (১৮২৮-১৯১০খৃঃ) বলেন, মুহাম্মদ (সাঃ)এর আবির্ভাবের পূর্বকার পৃথিবীর ভ্রান্তির আঁধারে তিঁনি আলো হয়ে জ্বলে উঠলেন। তিঁনি আরো বলেন- আমি মুহাম্মদ (সাঃ)হতে অনেক কিছু শিখেছি।
অধ্যাপক হরিপ্রসাদ শাস্ত্রী ঃ
নবী(সাঃ) সাম্যনীতি, উদারতা, উচ্চতম নৈতিকতা, বদান্যতা, প্রেম, সরলতা প্রভৃতি গুণরাজির সাক্ষাৎ প্রতিমূর্তি ছিলেন। পার্থিব ধনৈশ্বর্য, পার্থিব সম্মান, পার্থিব শক্তি প্রভৃতির প্রতি তাঁর তাচ্ছিল্যতা তাঁর জীবনে সম্যক প্রস্ফুটিত হয়েছে। তিঁনি দরিদ্রদেরকে ভালাবেসেও ক্ষান্ত হন নি, বরং যাকাত প্রদানের ব্যবস্থা করে গেছেন। যদি এই অনুষ্ঠানকে জাতীয় জীবনের নিয়ামক রূপে গ্রহণ করা হয় নিশ্চয় মানব সমাজ হতে দারিদ্র অন্তর্হিত হবে। ১৩শত বছর পূর্বে তিঁনি সুরাপান ও অন্যান্য মাদক দ্রব্য নিষেধ করে গিয়েছেন। যখন ইউরোপ কু-রূচী ও মুর্খতার গভীর গহবরে নিমগ্ন ছিল, যখন ইউরোপীয় রাজধানীতে ডাকিনীগণ জীবন্ত দগ্ধ হচ্ছিল ও জ্ঞানার্জন হলাহল সদৃশ ঘৃণিত হত, তখন মুসলিমগণ স্পেনের প্রত্যেক গ্রামে স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং শিল্প, বিজ্ঞান, দর্শণ ও সাহিত্য শিক্ষা দিচ্ছিলেন।
(নবী শ্রেষ্ঠ, ৩৩৭ পৃঃ)
(এভাবে আরও অনেক মনীষী অনেক মন্তব্য করেছেন, তার সবটাই উল্লেখ করা সম্ভব নয়,উদ্দেশ্যও নয়)
এতক্ষণ আমরা সৃষ্টিকর্তা, তাঁর প্রেরিত রসূল, কিতাব সম্পর্কে আলোচনা করেছি। যে যুক্তিগুলো প্রদর্শিত হয়েছে তা আমাদের মানুষিকতা প্রসূত। আমরা সাধারণতঃ যেভাবে চিন্তা করি বা করতে পারি তার ভিত্তিতে প্রমাণিত হয় যে- আল্লাহ এক অদ্বিতীয়, তিঁনি সৃষ্টি কর্তা। কিন্তু সেই স্রষ্টার সহযোগীতা ছাড়া, তাঁর সম্পর্কে অন্য কিছু জানা সম্ভব নয়। তাই সঙ্গত কারনেই তাঁকে আমাদের সাথে নিজের ইচ্ছায় যোগাযোগ করতে হবে নইলে আমরা তাঁর সম্পর্কে জানতে অপারগ। আমরা জেনেছি তাঁর বাণী একজন রসূলের কাছে এসেছিল যার নাম মুহাম্মদ (সাঃ) এবং সেই বাণীর সমষ্টিই হল আল-কুরআন যা এখনও অবিকৃত আছে,কিয়ামত পর্যন্ত অবিকৃত থাকবে।
এতকিছু বলার পরও, এ মন্তব্য করা কি সম্ভব যে, মুহাম্মদ নামক ব্যক্তিটি আল-কুরআন রচনা করেছে ? তাঁর কোন শিক্ষকই ছিলনা এবং তিনি নিরক্ষর ছিলেন, তাহলে এমন একটা কিতাব কিভাবে রচনা করলেন ? তাছাড়া তিনি মহাকাশ, সাগর এসব সম্পর্কে জানতেন না এবং গ্রহ, নক্ষত্র, সহ যাবতীয় রহস্যপূর্ণ ব্যাপার সম্পর্কে ১৪ শত বছর পূর্বে তার পক্ষে জানা সম্ভবই ছিলনা। যে সব বিষয় বিজ্ঞান আজকের দিনে জানল, সে সমস্ত বিষয় তিনি এত আগে জানলেন কিভাব ? তিনি তো সাধারণ মানুষের মতই একজন মানুষ ছিলেন। এ ব্যাপারগুলো চিন্তা করেই বলা যায় আল-কুরআন মুহাম্মদের(সাঃ) তৈরী নয় এবং এটি কোন মানুষের তৈরী নয়। অতএব এটি স্রষ্টা আল্লাহর তৈরী কিতাব। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেনঃ
“আল-কুরআন জগতসমূহের প্রতিপালকের পক্ষ হতে অবতীর্ণ। জিবরাইল এটি নিয়ে অবতরণ করেছে তোমার অন্তরে, যাতে তুমি সতর্ককারী হতে পার। অবতীর্ণ করা হয়েছে সুস্পষ্ট আরবী ভাষায়। পূর্ববর্তী কিতাব সমূহে অবশ্যই এর উল্লেখ আছে। বনী ইসরাইলের(ইহুদীদের) পন্ডিতগণ এ বিষয়ে অবগত আছে।” (আল-কুরআন, ২৬ঃ১৯২-১৯৭)
আল-কুরআন সম্পর্কে বলা হয়েছিল যে, একজন বিদেশী নাম ‘জাবের’ তিনি মুহাম্মদকে এগুলো শিখিয়ে দিয়েছিলেন। প্রশ্ন হলো তিনি বিদেশী ছিলেন এবং আরবী ভাষার ওপর তার দখল ছিল না তাহলে কিভাবে এতসব বিষয় শেখালেন ? আর তিনি এতসব জানলেন কিভাবে ? এটা কি তাঁর পক্ষেও সম্ভব ? জাবেরও মানুষ এবং এই বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন কারো পক্ষে সম্ভব নয় এবং তা প্রমানিতও হয়েছে। যদি এটা মুহাম্মদ এর লেখা না হয় বা তাঁর অতিকল্পনা না হয় অথবা যদি এটা মানুষেরই তৈরী না হয় তাহলে এটা কে তৈরী করেছে ? অবশ্যই স্রষ্টা আল্লাহ সুহানাহু ওয়া তয়ালা তৈরী করেছেন। আমরা কি এখন এই আল্লাহ কর্তৃক প্রেরিত কিতাবকে মেনে নিয়ে এই কিতাবের ভেতরে ঢুকতে পারিনা ?
আল্লাহ এই আল-কুরআনকে তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি, শ্রেষ্ঠ মানুষ ও রাসুল হযরত মুহাম্মাদ(সাঃ) এর উপর অবতীর্ণ করেন। আল-কুরআনের সত্যতা ও অবিকৃতির ব্যাপারে আল্লাহ বলেনঃ
“আমি আল-কুরআন সৃষ্টি করেছি এবং আমিই এর হেফাজতকারী ” তিনি আরও বলেছেন “আল্লাহর বাণীর কোন পরিবর্তন নেই, এ এক মহা সাফল্য”। (আল-কুরআন)
যারা এই কিতাব সম্পর্কে জানতে চায় বা এ সংক্রান্ত বিষয়ে সন্দেহ পোষণ করে তাদের প্রতি এবং সকল মানুষের প্রতি বলা হয়েছে ঃ
“তবে কি তারা কুরআন সম্পর্কে অনুধাবন করেনা ? এটা যদি আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কাছ থেকে অবতীর্ণ হতো, তবে এরা এতে অনেক অসঙ্গতি পেত।”(আল-কুরআন,৪ঃ৮২)
“নিশ্চয়ই আল-কুরআন জগৎ সমূহের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে অবতীর্ণ। জিবরাইল এটি নিয়ে অবতরণ করেছে ।”
(আল-কুরআন,২৬ঃ১৯২)
এভাবে আল্লাহ তাঁর কিতাবের বিভিন্ন স্থানে তাঁর নিজের সম্পর্কে আল-কুরআন এবং রাসূল সম্পর্কে সুস্পষ্ট ভাবে কথা বলেছেন। অর্থাৎ আল্লাহ তাঁর রাসূল এবং কিতাব এগুলো পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। এদের যে কোন একটিকেও অস্বীকার করার উপায় নেই। যেহেতু আমরা মুহাম্মদ নামক একজনের মুখ থেকেই আল-কুরআন সম্পর্কে জানলাম এবং এ সংক্রান্ত বিষয়ে দ্বিতীয় কোন ব্যক্তিকে পাওয়া যায়নি তাই মুহাম্মদ নামক ব্যক্তিই আল্লাহর প্রেরিত রসূল (সাঃ) এতে কোন সন্দেহ নেই।
বিষয়: বিবিধ
৩৫৫১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন