স্রষ্টার অস্তিত্ব !!! ১১, মুহাম্মদ ( সাঃ) ও ভারতীয় ধর্মগ্রন্থ

লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ২২ জুলাই, ২০১৩, ০২:৪৬:২০ দুপুর



মুহাম্মদ ( সাঃ) ও ভারতীয় ধর্মগ্রন্থ

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেন ঃ “এমন কোন সম্প্রদায় নেই যার কাছে সতর্ককারী(নবী) প্রেরিত হয়নি।” (আল-কুরআন,৩৫ঃ২৪)

আল্লাহ প্রত্যেকটি সম্প্রদায়ের কাছে সত্য দ্বীন সহ নবী পাঠিয়েছেন, যাতে তারা আল্লাহর বিধান পালনের ব্যাপারে সতর্ক হতে পারে। তিনি অসংখ্য নবী মানব জাতির হেদায়েতের জন্য প্রেরণ করেছেন। তিনি এদের কারো কারো কথা আল-কুরআনে উল্লেখ করেছেন, কারো কারো কথা উল্লেখ করেননি।

তিনি বলেনঃ “(হে রসূল)আমি তো তোমার পূর্বে অনেক রাসূল প্রেরণ করেছিলাম, তাদের কারো কারো কথা তোমার কাছে বিবৃত করেছি এবং কারো কারো কথা তোমার কাছে বিবৃত করিনি।” (আল-কুরআন,৪০ঃ৭৮)

আর আল্লাহ প্রেরীত নবীগণ সবাই এক আল্লাহর ইবাদতের বাণীই প্রচার করেছেন। প্রত্যেকেই ইসলামের কথা প্রচার করেছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন ঃ “(হে মুহাম্মাদ) ‘আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই” এই প্রত্যাদেশ ছাড়া তোমার পূর্বে কোন রসূলকে প্রেরণ করিনি।” (আল-কুরআন,২১ঃ২৫)

কিন্তু পূর্বের নবী,রসূলদের অনুসারীরা তাদের নবীর মৃত্যুর পর আল্লাহ কতৃক প্রেরীত কিতাবকে বিকৃত করে এবং নিজেদের মনগড়া উক্তিতে পরিপূর্ণ করে ফেলে। ক্ষমতাশালীরা ক্ষমতাকে পাকা পোক্ত করার জন্য আল্লাহর দোহাই দিয়ে মানুষকে অবৈধভাবে পরিচালিত করেছিল। মানুষকে নিজেদের ইচ্ছামত পরিচালিত করার জন্য স্রষ্টার বিধানকে তাদের বিকৃত করার প্রয়োজন হয়। এভাবে প্রত্যেক সম্প্রদায় নবী পরবর্তী সময়ে বিভ্রান্তিতে আবদ্ধ হয়ে পড়ত অথচ তাদেরকে নবীর মৃত্যুর পর রেখে যাওয়া ঐশী বিধান দ্বারা পরিচালিত হবার আদেশ দেওয়া হয়েছিল। মানুষ যখন ভ্রান্তিতে নিমজ্জিত হত তখন আল্লাহ আবার নবী প্রেরণ করতেন, তাদেরকে সঠিক পথে আনয়ন করার জন্য। রসূল(সাঃ)এর আগমনের পূর্বে এভাবেই চলছিল।

ভ্রান্ত মানুষেরা এক আল্লাহর স্থলে অসংখ্য সৃষ্টি কর্তাকে মানতে থাকে। কেউ কেউ এতদূর পর্যন্ত যায় যে,তাদের একক স্রষ্টাকে ৩৩ কোটি বানিয়ে ছাড়ে। তবে এর মধ্যেও একক স্রষ্টায় বিশ্বাসী লোকের আস্তিত্ব ছিল তবে তারা শাসকের রোষানলে পড়ার ভয়ে কোনঠাসা অবস্থায় অবস্থান করছিল। যখন অবস্থা এমন তখন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা কোন সম্প্রদায়ের জন্য নয়,সমগ্র পৃথিবীর জন্য রহমত স্বরুপ সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ রসূল হযরত মুহাম্মদ(সাঃ)কে প্রেরণ করলেন। তিঁনি মানুষকে পূর্বের সমস্ত কিতাবকে পরিত্যাগ করে(যেহেতু পূর্বের সবগুলো বিতাব বিকৃত হয়েছে) সর্বশেষ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ কিতাব আল কুরআনকে অনুসরণ করতে বলেন। তিঁনি “উম্মাহ একটি দেহের মত,এর কোথাও আঘাত লাগলে সমগ্র দেহে ব্যাথা ছড়িয়ে পড়ে” ঘোষণা করে সকল বর্ণগত,গোত্রগত,অঞ্চলগত জাতীয়তাবাদ বিলীন করে দেন এবং আল্লাহর স্বপক্ষে সকল শ্রেণীর মানুষকে একত্রিত করেন।

পূর্বের সকল নবীই তার পরবর্তী নবীর আগমনের শুভ সংবাদ দিয়ে যেতেন। পূর্বের আসমানী কিতাবে পরবর্তী নবীর আগমনী বার্তা লেখা থাকত। যেহেতু মুহাম্মদ(সাঃ) সর্বশ্রেষ্ঠ রসূল,তাই রসূল(সাঃ)এর আগমন বার্তা পূর্বের প্রত্যেকটি ঐশী কিতাবে লেখা ছিল স্পষ্টভাবে।

“যারা অনুসরণ করে বার্তাবাহক নিরক্ষর নবীর,যার উল্লেখ আছে তাওরাত ও ইন্জীলে(বাইবেল),যা তাদের নিকট আছে তাতেও লিপিবদ্ধ পায় ...( আল-কুরআন,৭ঃ১৫৭) “আল কুরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে সুস্পষ্ট আরবী ভাষায়। পূর্ববর্তী কিতাব সমূহে অবশ্যই এর উল্লেখ আছে। বনী ইসরাইলের(ইহুদীদের)পন্ডিতগণ এবিষয়ে অবগত আছে।”(আল-কুরআন,২৬ঃ১৯৫-১৯৭)

প্রত্যেকটি নবী তাদের উম্মতকে শ্রেষ্ঠ নবীর আগমনবার্তা শুনাতেন এবং তার আচরণ,নিদর্শণগুলোও বলে দিতেন। পূর্বের নবীরা আল্লাহর কাছে দোয়া করতেন,যেন তারা রসূল(সঃ)এর উম্মত হতে পারেন(শুধু হযরত ইশা আঃ এর দোয়া কবুল হয়,তিঁনি রসূলের উম্মত হিসেবে আবার আসবেন পৃথিবীতে)।

আজকের তাওরাত বনী ইসরাইল বা ইহুদীদের কিতাব। ইহুদীরা মুসলিমই ছিল। আল্লাহ আল-কুরআনে অনেকবার বলেছেন, এই ইহুদীদেরকে আমি সবথেকে বেশী নিয়ামত দান করেছি। তাদের বংশে অর্থাৎ বনী ইসরাইল বংশে সবথেকে বেশী নবী,রসূল পাঠানো হয়েছে। আর এরা আল্লাহর নাফরমানিও সবথেবে বেশী পরিমানে করেছে।(ইহুদীরা মূলতঃ হযরত ইয়াকুব আঃ এর উম্মত । ইয়াকুব (আঃ) এর আরেক নাম ছিল ইসরাইল বা ইজরাইল। তাদেরকে ইহুদী বলার কারণ হল-ইয়াকুব (আঃ) এর ১১ সন্তানের মধ্যে বড় ছেলের নাম ছিল ইয়াহুদা,তাঁর ছিল অনেক সন্তান। আজকের ইজরাইলদের অধিকাংশই ইয়াহুদার বংশধর,এরা ইয়াকুব আঃ এর অন্য একটি সন্তান নবী ইউসুফ (আঃ) এর আনুগত্য করত। আজকের ইহুদীদের মধ্যে শুধু ইয়াহুদার বংশধররাই নেই, বাকী ছেলেদের বংশধরও আছে কিন্তু ইয়াহুদা বড় ছেলে হওয়ার কারনে এবং তার সন্তান সংখ্যা অত্যধিক হওয়ার কারনে তার নামেও বনী ইসরাইলকে ডাকা হতো অর্থাৎ ইয়াহুদী বা ইহুদী।)

তাওরাতের পুরনো সংষ্করণে রাসূল(সাঃ)এর সম্পর্কে তথ্য ছিল। ইহুদীদের বড় বড় পন্তিতরা তাদের কিতাব পড়ে রাসূল(সাঃ)এর উপর ঈমান এনেছিল, আনুগত্য করেছিল। কিন্তু অনেকেই জেনে বুঝেও তাকে গ্রহন করেনি, প্রভাব নষ্ট হতে পারে ভেবে। তাওরাতে রাসূল(সাঃ)এর আগমনের কাল, তাঁর বৈশিষ্ট্য, তাঁর পরিচয়, পূর্ব পুরুষের পরিচয়, স্থানের নাম, বিভিন্ন ঘটনাবলী সহ উল্লেখ ছিল। রাসূল(সাঃ)এর সময় এমন কিছু ঘটনা ঘটেছিল, যেখানে তিনি তাওরাতের কোথায় কি লেখা ছিল তা বলে দিয়েছেন। তাদেরকে তাদের কিতাব অনুযায়ী বিচার করা হত কারণ কোনটুকু বিকৃত, কোনটুকু অবিকৃত তা আল্লাহ রাসূলকে জানিয়ে দিয়েছিলেন। রাসূল(সাঃ)এর সময় এমন ঘটনা অনেক ঘটেছে, যেখানে ইহুদীরা, খ্রিষ্টাণরা মক্কায় খুঁজতে বের হয়েছেন রাসূলকে, কারণ তাদের হিসাব অনুযায়ী রাসূলের আগমনের সময় হয়ে গিয়েছিল। ইতিহাস থেকে জানা যায় রাসূলের আগমনের পূর্বে বহু পন্ডিতেরই রাসূলের পরিচয়, স্থান, সময় একেবারে নখদর্পনে ছিল। ঈশা(আঃ)এর উপর অবতীর্ণ কিতাব ইঞ্জীলেও রাসূল(সাঃ)এর পূর্ণ পরিচয় লিপিবদ্ধ ছিল। এ কিতাব পরবর্তীতে বিকৃত হলেও অনেক বিষয়ই তারা বিলীন করতে পারেনি।

(এ ব্যাপারে জানতে আগ্রহী হলে পড়তে পারেন ঃ বাইবেলে সত্য নবী মুহাম্মদ(সাঃ)প্রাপ্তিস্থান, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, বাইতুল মুকাররম।)

(বিঃদ্রঃ আল কুরআন অবতীর্ণ হবার পর প্রাচীন সবগুলো কিতাবই বাতিল হয়ে গেছে কারণ - এটি সবশেষে প্রেরিত, সর্বশ্রেষ্ঠ এবং পূর্ণাঙ্গ। রাসুল (সাঃ) তাঁর সামনে অন্য আসমানি কিতাব পাঠ করা পছন্দ করেননি এবং এটি করতে নিষেধ করেছেন। রাসুল (সাঃ) সম্পর্কিত বিষয়ে আলোচনার জন্য তাঁর সম্পর্কে প্রাচীন ধর্মগ্রন্থ থেকে কিছু অংশ তুলে ধরেছি। যদিও কিতাবগুলো আমূল পরিবর্তিত ও বিকৃত হয়ে গেছে তবুও কিছু অংশ পরিবর্তন করা যায়নি। এই কিতাবপ্রাপ্তরা কখনও কখনও মুসলিমদের তাদের (বিকৃত করা) কিতাবের বাণী দ্বারা বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে।

এ ব্যাপারে আল্লাহ বলেনঃ “এই কিতাবধারীদের একটি দল কোন না কোন ভাবে তোমাদেরকে পথভ্রষ্ট করে দিতে চায়, যদিও তাদের এ বোধটুকু নেই যে, তাদের নিজেদের ছাড়া অন্য কাউকেই তারা পথভ্রষ্ট করে না।”(আল-কুরআন, ৩ঃ৬৯)। প্রাচীন ভারতীয় ধর্মগ্রন্থগুলো আসমানী কিতাব ছিল কিনা তা জানা যায়না, তবে এগুলো আসমানী কিতাব থেকে সংকলিতও হয়ে থাকতে পারে। আবার সরাসরি আসমানী বা ঐশী কিতাবও হয়ে থাকতে পারে, যেহেতু আল্লাহতায়ালা প্রত্যেকটি সম্প্রদায়ের কাছে নবী-রাসূল পাঠিয়েছেন। তাই, এ ব্যাপারে আল্লাহই ভাল জানেন।

নিন্ম লিখিত অংশটি “হযরত মুহাম্মদ(সাঃ) ও ভারতীয় ধর্মগ্রন্থ” ডঃ এম.এ. শ্রীবাস্তব, থেকে নেওয়া)

“ বেদ ”

বেদ সমূহে “নরাশংস” বা মুহাম্মদের আগমনের ব্যাপারে প্রদত্ত ভবিষ্যদ্বানী কোনো আশ্চর্যজনক ব্যাপার নয় বরং ধর্মগ্রন্থাবলীতে পয়গম্বরদের (ঈশ্দূতোঁ) আগমনের খবর বহুকাল পূর্ব থেকেই পাওয়া যাচ্ছিল। তবে এটা অত্যন্ত চমকপ্রদ ব্যাপার যে, হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর আগমনের ব্যাপারে যত ভবিষ্যদ্বানী ধর্মীয় গ্রন্থসমূহে করা হয়েছে, অন্য কোনো পয়গম্বরের আগমনের ব্যাপারে তেমনটি দেখা যায় না। খ্রিষ্টান, ইহুদী ও বৌদ্ধদের ধর্মগ্রন্থসমূহে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)এর শেষ নবী রূপে আগমনের ব্যাপারে ভবিষ্যদ্বানী করা হয়েছে।

বেদ সমূহে “নরাশংস” শব্দটি “নর” ও “আশংস” এই দুই শব্দযোগে নিষ্পন্ন হয়েছে। “নর” শব্দের অর্থ “মানুষ” এবং “আশংস” শব্দের অর্থ “প্রশংসিত”। “নর” শব্দের অর্থ মানুষ, কেননা “নর” মনুষ্যবাচক শব্দগুলির একটি। “নরাশংস” এর ন্যায়ই “মুহম্মদ” শব্দের অর্থ “প্রশংসিত”। “মুহম্মদ” শব্দটি ‘হামদ’ ধাতু নিষ্পন্ন হয়েছে, যার অর্থ প্রশংসা করা। ঋগে¦দ এ ‘কীরি’ নাম এসেছে, যার অর্থ ‘ঈশ্বর প্রশংসক’। ‘আহমদ’ শব্দটি এই অর্থটি প্রকাশ করে। ‘আহমদ মুহম্মদ (সাঃ)এর অন্য একটি নাম। বেদ সমূহের মধ্যে ঋগে¦দ সবচেয়ে প্রাচীন।

( ‘নরাশংস আউর অন্তিম ঋষি’ পৃ-৫। পন্ডিত রবীন্দ্রনাথ ত্রিপাঠী ‘কান্তির’ ২৮ অক্টোবর-৪ নভেম্বর ১৯৯০ সংখ্যায়। ঋগে¦দের মূল শ্লোকটি এইঃ যো রঘ্রম্যোচোদিতায়ঃ কৃশস্য যো ব্রহমনো নাধমানস্য কীরেঃ।)

নরাশংসের চারিত্রিক বিশেষত্ব ও হযরত মুহম্মদ (সাঃ) এর জীবনাচরণ এক ও অভিন্ন ঃ

মিষ্টভাষী (বা বাণীর মাধুর্য)

ঋগে¦দে ‘নরাশংস’ কে ‘মধুজিহব’ ( মধুরভাষী, মিষ্টভাষী বা মধুরকন্ঠী) বলে অবিহিত করা হয়েছে অর্থাৎ তাঁর বাণী ( ভাষা) হবে মধুর। তিঁনি মিষ্টভাষী ব্যক্তিত্ব বলে বিশেষভাবে পরিচিত হবেন। একথা সবাই জানেন যে, হযরত মুহম্মদ (সাঃ) এর ভাষা ছিল খুবই মধুর এবং তাঁকে কাফির,মুশরিকরা কথার যাদুকর বলত।

অপার্থিব বিষয়ের জ্ঞান ঃ

‘নরাশংস’ কে অপার্থিব জ্ঞানের অধিকারী বলে অভিহিত করা হয়েছে। ঋগে¦দ সংহিতায় ‘নরাশংস’ কে কবি বলে অভিহিত করা হয়েছে। আল্লাহ হযরত মুহম্মদ (সাঃ) কে কিছু ব্যাপারে অপার্থিব জগতের জ্ঞান দান করেছিলেন। যেমন, পয়গম্বরে ইসলাম হযরত মুহম্মদ (সাঃ) রোমক ও পারসিকদের মধ্যে সংঘটিত যুদ্ধে রোমানদের পরাজয় এবং নয় বছরের মধ্যে রোমানদের বিজয়ের আগাম সংবাদ দিয়েছিল। নাইনাওয়ার যুদ্ধে রোমানরা ৬২৩ খ্রিস্টাব্দে জয়লাভ করেছিল। পবিত্র কুরআনের সূরা রুম(অর্থাৎ রোম) এরই সাথেই সম্পর্কিত। রোমানদের পরাজয়ের পরে পূনরায় বিজয়ের কথা বলা হয়েছে। এরই সাথেই অদূর ভবিষ্যতে আদেশলংঘনকারীদের বিরুদ্ধে মুসলমানদের বিজয়ের সুসংবাদ ( ভবিষ্যদ্বানী) দেওয়া হয়েছে।

অপূর্ব দৈহিক সৌন্দর্যের অধিকারীঃ

‘নরাশংস’ কে অপূর্ব সৌন্দর্যের অধিকারী বলে অভিহিত করা হয়েছে। এই বিশেষত্বের বর্ণনার প্রথমে ঋগে¦দে‘স্বর্চি’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে।

‘স্বর্চি’ (একটি সমাসবদ্ধ পদ) শব্দটির সমাস নিষ্পন্ন হয়েছে এইভাবে ‘শোভনা অর্যির্যস্য সঃ’ অর্থাৎ সুন্দর বা দিব্যকান্তিযুক্ত। এ শব্দের তাৎপর্য হল’ এমন অপরূপ সৌন্দর্যের অধিকারী যাঁর চেহারা থেকে আলোক বিচ্ছুরিত হয়। ঋগে¦দেই বলা হয়েছে যে, তিঁনি ঘরে ঘরে আপন মাহাত্ম্যের আলোকদ্যুতি পৌঁছে দেবেন।

উল্লেখ্য যে, হযরত মুহম্মদ (সাঃ) মানুষের ঘরে ঘরে জ্ঞানের আলো জালিয়ে (পৌঁছে) দিয়েছিলেন। অজ্ঞানতার অন্ধকার বিদূরিত করেছিলেন এবং অন্ধকার( জাহেলিয়াতের)থেকে মানুষকে আলোর পথে নিয়ে এসেছিলেন।

সূত্রঃ নরাশংসঃ প্রতি ধামান্যণœন দিবঃ প্রতি মহ্রা স্বর্চিঃ। (ঋগে¦দ সংহিতা ২/৩/২), নরাশংসঃ প্রতি ধামাণ্যণœন তিস্ত্রো দিবঃ প্রতি মহ্রা স্বর্চিঃ ( ঋগে¦দ সংহিতা ২/৩/২)

পাপ নিবারক ঃ

ঋগে¦দে ‘নরাশংস’ কে ‘জনসাধারণকে পাপ থেকে নিবৃত্তকারী’ বলে অভিহিত করা হয়েছে। একথা আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না যে, হযরত মুহম্মদ (সাঃ) এর সমস্ত শিক্ষাই এবং তাঁর উপর অবতীর্ণ কুরআন একটি পাপ কর্মহীন জীবনের বিধান দিয়েছে।

পতœীদের সাথে সম-ব্যবহারঃ

নরাশংস এর ১২ জন পতœী থাকবেন, একথার প্রমানও অথর্ববেদের সেই মন্ত্র থেকে পাওয়া যায়, যে মন্ত্রে তাঁকে উষ্ট্রারোহী হওয়ার কথা বলা হয়েছে।

মন্ত্রটি এরকমঃ

“উষ্ট্রা যস্য প্রবাহিনো বধুমন্তোং দ্বির্দশ।

বষ্মা রথস্য নি জিহীডতে দিব ঈষমান উপস্পৃঃ। ”(অথর্ববেদ কুন্তাপ সূক্ত ২০/১২৭/২)

অর্থাৎ, যাঁর বাহন হিসেবে দুটি সুন্দর উটনী আছে। অথবা যিনি ১২ পতœী সমভিব্যবহারে উটের পিঠে আরোহণ করেন, তাঁর সম্মান- প্রতিষ্ঠা উর্ধ্বে আসমান থেকে নিচে জমীন পর্যন্ত বিস্তৃত।

এই মন্ত্রের অনুরূপ হযরত মুহম্মদ (সাঃ) এর ১২ পতœী ছিলেন। উল্লেখ্য যে, আর কোনো ধর্মীয় ব্যক্তিত্বের বারোজন পতœী ছিল না। হিন্দুদের ধর্মগ্রন্থসমূহে কতিপয় মহাপুরুষের শতাধিক পতœীর বিবরণ পাওয়া যায়।

অন্যান্য বিষয়ের সাথে সাম্যতাঃ

অথর্ব বেদে অন্যোক্তি অলঙ্কারের মাধ্যমে নরাশংসের পরিচিতি সম্পর্কে কিছু মন্ত্রের উল্লেখ আছে।

কুন্তাপ সূক্ত তে আছে-

“ইদং জনা উপ শ্র“ত নরাশংস স্তবিষ্যতে।”

এর অর্থ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে পন্ডিত ক্ষেমকরণ দাস ত্রিবেদী লিখেছেন, ‘হে মনুষ্য ! একথা মর্যাদার সাথে শ্রবণ করো যে, মনুষ্যকূলের মধ্যে প্রশংসিত পুরুষ(মুহাম্মদ) শ্রেষ্ঠতম ব্যক্তি হবেন। (অথর্ববেদ হিন্দী ভাষ্য, পৃঃ ১৪০১, সার্বদেশিক আর্য প্রতিনিধি সভা, নয়া দিল্লী।)

“অনস্বন্তা সতপতির্মামহে সে গাবা চেতিষ্টো অসরো মঘোনঃ।

ত্রৈবৃষ্ণো অগ্নে দশভিঃ সহস্রৈর্বৈশ্বানরঃ ত্র্যরুণাশ্চিকেত।” (ঋগে¦দ ম. ৫, সূ. ২৭, মন্ত্র-১)

অর্থাৎ, হকপরস্ত, অত্যন্ত বিবেকশীল, শক্তিশালী, দানী মামহে ঋষি কালাম (বাণী) এর সাথে আমাকে সুশোভিত করেছেন। সর্বশক্তিমান সকল শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী, সমগ্র জগতের জন্য ‘কৃপময়’ দশ হাজার অনুচরসহ ( মক্কা বিজয়ের সময় দশ হাজার সাহাবা ছিল সেটাই বোঝানো হয়েছে) বিখ্যাত হয়ে গেলেন। মামহে ঋষি হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)ছাড়া আর কেউ নন। ডঃ বেদপ্রকাশ উপধ্যায় ও মামহে ঋষিকে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলে মেনে নিয়েছেন।

“ পুরান ”

কেবল বেদেই নয়; বরং পুরানেও হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর কর্মক্ষেদ্ররূপে মরুস্থলের উল্লেখ করা হয়েছে। ভবিষ্য পুরান - এ কথা স্পষ্ট ভাষায় বলা হয়েছে ‘অন্য এক দেশে এক আচার্য মিত্র সমন্বিত হয়ে আবির্ভূত হবেন। তাঁর নাম মুহাম্মদ। তিনি মরুস্থলে আসবেন।

(এতম্মিন্নন্তরে স্লেচ্ছ আচার্যেন সমন্বিতঃ। মহামদ ইতি খ্যাতঃ শিষ্যশাখা সমন্বিতঃ।)

লিঙ্গচ্ছেদী শিখাহীনঃশ্মশ্র“ধারী স দূষকঃ।

উচ্চালাপী সর্বভক্ষী ভবিষ্যতী জনো সম। ২৫।

বিনা কৌলং চ পশবস্তেষাং ভক্ষ্য মতা মম।

মুসলেনৈব সংস্কারঃ কুশৈরির ভবিষ্যতি। ২৬।

তস্মানুসলবন্তো হি জাতয়ো ধর্মদূষকঃ।

ইতি পৈশাচধর্মশ্চ ভবিষ্যতি ময়া কৃতঃ। ২৭। (ভ. পু. পর্ব. ৩, খন্ড ৩, অধ্যায় ১, শ্লোক ২৫,২৬,২৭)

এই শ্লোকগুলির ভাবার্থ এরকম ঃ আমাদের লোকেদের খাৎনা হবে, তাঁরা শিখাহীন হবেন, তাঁরা দাড়ি রাখবেন, উচ্চঃস্বরে আলাপ করবেন অর্থাৎ আযান দেবেন। শাকাহারী ,মাংসাহারী (দুইই) হবেন কিন্তু তাঁদের জন্য বিনা কৌল অর্থাৎ মন্ত্র দ্বারা পবিত্র (অর্থাৎ জবেহ) করা ছাড়া কোন পশুর মাংস তাঁদের জন্য ভক্ষণযোগ্য (খাবার উপযুক্ত) হবে না ( তাঁরা হালাল মাংস খাবেন)। এরকমই আমাদের মতানুসারে আমাদের অনুসারীরা মুসলিম হবেন। তাঁদের মধ্যকার মুসলবস্ত অর্থাৎ নিষ্ঠাবান ব্যক্তিরা ধর্মপ্রচার করবেন এবং আমাদের কথায় পৈশাচ ( অর্থাৎ, পিশাচদের ধর্ম, বা কুসংস্কারাচ্ছন্ন ধর্ম) ধর্মের অবসান হবে।’

কল্কি অবতার ও হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)

বিশিষ্ট সংস্কৃতজ্ঞ পন্ডিত ডক্টর বেদপ্রকাশ উপাধ্যায় তাঁর এক গবেষণা সন্দর্ভে হযরত মুহম্মদ (সাঃ) কে কল্কি অবতার বলে অভিহিত করেছেন। কল্কি অবতারকে ঈশ্বরের শেষ অবতার(অন্তিম বার্তাবাহক বা সতর্ককারী) বলে অভিহিত করা হয়েছে। হিন্দীতে ‘কীরি’ শব্দের অর্থ ‘ঈশ্বরের প্রশংসক এবং আরবীতে ‘আহমদ’।

অন্তিম অবতার আগমনের লক্ষণ ঃ

কল্কি অবতার অবতরণের কারণ স্বরুপ বলা হয়েছে, বর্বরতার সাম্রাজ্য কায়েম হবে, লোকেদের মধ্যে হিংসা ও অরাজকতা ব্যপকভাবে ছড়িয়ে পড়বে। বৃক্ষাদিতে না ফুল হবে, না ফল হবে। ফলমূল যদিও আসে, তবে তা হবে খুবই কম। একজনকে হত্যা করে অন্য জন তার ধন সম্পদ লুট করবে, কন্যা সন্তান জন্মালে তাকে জ্যান্ত পুঁতে ফেলবে। এক ঈশ্বরের আরাধনা ত্যাগ করে অগনিত(মনগড়া)দেবদেবীর পূজা করবে, বৃক্ষ, পাথর, লতাপাতা ইত্যাদিকে ভগবান বলে পূজা করবে, ভালোর নামে মন্দকর্মে লিপ্ত হবে, অসাম্য ছড়িয়ে পড়বে। এরকমই এক অসহনীয় পরিস্থিতিতে হযরত মুহম্মদ (সাঃ) কে প্রেরণ করা হবে।

সপ্তম শতাব্দীর শুরুতে রোমক এবং পারসিক সাম্রাজ্য যে রকম অধঃপতিত অবস্থায় এসে পতিত হয়েছিল, সম্ভবতঃ আর কোনো কালে তেমনটি হয়নি। বাইজান্টাইন সাম্রাজ্য ক্ষীন হতে হতে সম্পূর্ন নষ্টভ্রষ্ট হয়ে পড়েছিল। পাদ্রীদের দুষ্কর্ম ও নষ্টামির কারণে খ্রিষ্টধর্ম অধঃপতিত হয়ে পড়েছিল। এই সময়েই হযরত মুহম্মদ

(সাঃ) কে প্রেরণ করা হয়েছিল। ইসলাম ধর্ম রোমান সম্রাজ্যের সাথে সংঘর্ষ থেকে দূরে অবস্থান করেছিল। এই ধর্মের ভাগ্যে এটাই লেখা ছিল যে, ঝড়ের বেগে তা সমগ্র পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়বে এবং তার সামনে যত বাধা, তা সাম্রাজ্য হোক, শাসক হোক এবং প্রথাই হোক, তাকে এমনভাবে উড়িয়ে দেবে, যেমনটি ঝড়ের আঘাতে ধূলো উড়তে থাকে।

(অঢ়ড়ষড়মু ড়ভ গড়যধসসধফ: ইু এড়ভৎবু ঐরমমরহং, চধমব-২.)

এরকমই জর্জ সেল্স তাঁর কুরআন এর অনুবাদের ভূমিকায় লিখেছেন ‘ গীর্জার পাদ্রীরা ধর্মকে টুকরো টুকরো করে ফেলেছিল, ফলে শান্তি, সৌন্দর্য ও প্রেম লুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। তারা মূল ধর্মকে ভূলে গিয়েছিল। ধর্ম বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন মত সৃষ্টি করে তারা পরস্পর কলহ বিবাদে জড়িয়ে পড়েছিল। এই পৃথিবী পৃষ্ঠে রোমান গীর্জা গুলোতে অগনিত ভ্রান্ত মত ধর্মের নামে প্রচলিত হয়ে পড়েছিল এবং নির্লজ্জের মতো মূর্তিপূজা প্রচলিত হয়ে পড়েছিল। এর পরিণাম স্বরূপ এক ঈশ্বরের স্থানে তিন ঈশ্বর হয়ে গেলেন এবং মরিয়মকে ঈশ্বরের মা বলে মনে করতে লাগল। অজ্ঞানতার এই দুঃসময়ে আল্লাহ তাঁর অন্তিম (শেষ) রসূল প্রেরণ করলেন।’

(ঞৎধহংষধঃরড়হ ড়ভ ঃযব য়ঁৎধহ ।মবড়ৎমব ংধষবং,চধমব ২৫-২৬)

কল্কি অবতারের আবির্ভাব স্থল ঃ

কল্কি এবং ভাগবত পুরানে কল্কি অবতারের আর্বিভাবস্থলরূপে শম্ভল নামক স্থানের কথা উল্লেখিত হয়েছে।

(১) ‘শম্ভল’ শব্দটি ‘শম’ (শান্ত করা) ধাতু থেকে এসেছে, অর্থাৎ, যেখানে শান্তি পাওয়া যায়।

(৩) ‘শম্ভল’ শব্দের নির্ঘন্ট (১/১২/৮৮) এ উদকনামো-র পাঠ রয়েছে। ‘র’ এবং ‘ল’ এর মধ্যে অভেদ হওয়ার কারণে ‘শম্ভল’ শব্দের অর্থ হবে জলের সমীপবর্তী স্থান।

এই রকমই সেই স্থান যার আশেপাশে জল আছে এবং সে স্থানে অত্যন্ত আকর্ষনীয় এবং শান্তিদায়ক হবে, সেই হবে শম্ভল। অবতার ভূমি পবিত্র হয়ে থাকে। ‘শম্ভল’ এর শাব্দিক অর্থ হল শান্তির স্থান। মক্কা কে আরবি ভাষায় ‘দার-উল-আমান’ বলা হয়, যার অর্থ হয় ‘শান্তির ঘর’ বা শান্তিধাম। মক্কা হযরত মুহম্মদ (সাঃ) এর কর্মক্ষেত্র।

জন্মতিথি ঃ

কল্কি পুরান এ অন্তিম অবতারের জন্মেরও উল্লেখ রয়েছে। এই পুরান এর দ্বিতীয় অধ্যায়ের ১৫ সংখ্যক শ্লোকে বর্ণিত হয়েছে।

“দ্বাদশ্যাং শক্ল পক্ষস্য, মাধবে মাসি মাধবম।

জাতো দদৃশতুঃ পুত্রং পিতরৌ হৃষ্টমানসৌ।।”

অর্থাৎ ‘যার জন্মের ফলে দুখী মানবতার কল্যাণ হবে, তাঁর জন্ম মধুমাসের শুক্ল পক্ষ এবং রবি ফসলের চন্দ্রমার দ্বাদশ তিথির হবে।’ অন্য এক শ্লোকে আছে যে, কল্কি শম্ভল এ বিষ্ণুযশ নামক পুরোহিতের ঘরে জন্ম গ্রহন করবে।

(কল্কি অবতার আউর মুহম্মদ সাহাব, পৃ- ৩০। শম্ভলগ্রামমুখ্যস্য ব্রাক্ষ্মণস্য মহাত্মনঃ ববনে বিষ্ণুযশসঃকল্কিঃ প্রাদুর্ভবিষ্যতি। ভাগবত পুরান, দ্বাদশ স্কন্দ, ২অধ্যায় ১৮তম শ্লোক)

হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখে জন্মগ্রহন করেছিলেন। রবিউল আউয়াল এর অর্থ হল ঃ মধুমাসের (বসন্তের) হর্ষোল্লাসের মাস। তিনি মক্কায় জন্মগ্রহন করেন। বিষ্ণুযশঃ কল্কির পিতার নাম । যেমন - হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর পিতার নাম ছিল আব্দুল্লাহ। বিষ্ণুযশ ও আব্দুল্লাহ সমার্থবোধক শব্দ।

(বৈদিক ভাষায়) বিষ্ণু শব্দের অর্থ আল্লাহ এবং যশ শব্দের অর্থ বান্দা- অর্থাৎ আল্লাহর বান্দা বা আবদুল্লাহ। এই রকমই কল্কির মায়ের নাম সুমতি (সোমবতী) লেখা হয়েছে, যার অর্থ শান্তি এবং মননশীল স্বভাবের অধিকারিনী। তাঁর (সাঃ) মায়ের নামও ছিল আমিনা যার অর্থ শান্তির অধিকারিনী।

দুষ্টের দমন ঃ

কল্কির বৈশিষ্ট্যাবলীর মধ্যে এটাও আছে যে, তিনি দুষ্টের দমন করবেন। দুষ্টদের দমনে সহায়তা করার জন্য আকাশ থেকে (তাঁর সাহায্যার্থে) দেবতারা নেমে আসবেন।

(ভগবত পুরাণ,কল্কিপুরাণ,অধ্যায় ২,শ্লোক-৭)

পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন যে, আমি তোমাকে বদরের যুদ্ধে সাহায্য করেছি, তোমরা সংখ্যায় কম ছিলে। অতত্রব, তোমাদের উচিত যে, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং তাঁর প্রতি সকৃতজ্ঞ হও। তুমি যখন মুমিনদের বলছিলে যে, এটা কি তোমাদের জন্য যথেষ্ঠ নয় যে, তোমাদের রব (প্রভূ) তোমাদের তিন হাজার ফেরেশতা পাঠিয়ে তোমাদের সাহায্য করবেন, বরং তোমরা যদি ধৈর্যধারন করো,আল্লাহকে ভয় করো, তাহলে আল্লাহ পাঁচ হাজার ফেরেশতা দিয়ে তোমাদের সাহায্য করবেন। (কুরআন, সূরা আল্ ইমরান, আয়াত সংখ্যা ১২৩, ১২৪, ও ১২৫। )

চার ভাইয়ের সহযোগিতা প্রাপ্ত ঃ

কল্কি পুরাণ অনুসারে, “কল্কি চার ভাইয়ের(সহযোগী অর্থে) সহযোগিতায় কলি (শয়তান) কে নিবারণ (ধ্বংস) করবেন।” মুহম্মদ (সাঃ) ও চার সাথীর সহযোগীতায় শয়তানকে (সকল খারাপকে) নাশ (পরাস্ত) করেছিলেন। এই চার সাথী (সাহাবা) ছিলেন আবুবকর (রাঃ),ওমর(রাঃ), উসমান (রাঃ) ও আলী (রাঃ)।

(কল্কিপুরাণ,২য় অধ্যায়,শ্লোক-৫)

আটটি শ্রেষ্ট গুণের সাথে সমন্বিত ঃ

কল্কি অবতারকে ভাগবত পুরাণ ১২ স্কন্ধ, দ্বিতীয় অধ্যায়ে ‘অষ্টৈশ্বর্যগুণান্বিত ঃ (আটটি ঐশ্বরিক গুণের সাতে যুক্ত) বলে অভিহিত করা হয়েছে। এ আটটি গুণের উল্লেখ মহাভারতেও রয়েছে। এ গুণাবলী নিম্নরুপ-

১. তিনি মহাজ্ঞানী হবেন। ২. তিনি উচ্চবংশজাত হবেন। ৩. তিনি আতœনিয়ন্ত্রণকারী হবেন। ৪. তিনি শ্র“তিজ্ঞানী হবেন। ৫. তিনি পরাক্রমশালী হবেন। ৬. তিনি দানশীল হবেন এবং ৮. কৃতজ্ঞতাপরায়ণ হবেন। এবার আমরা এসব গুনাবলীর সাথে ইসলামের পয়গাম্বার (সাঃ) এর গুনাবলী ক্রমানুযায়ী মিলিয়ে দেখব। মুহাম্মদ (সাঃ) মহাজ্ঞানী ছিলেন। তার মধ্যে প্রজ্ঞাদৃষ্টি ছিল। তিনি (সাঃ) অতীত এবং ভবিষ্যত সম্পর্কে এমন অনেক কথাই বলেন (আল্লাহর সাহায্যে), যা সন্দেহাতীত ভাবে সত্য প্রমাণিত হয়। প্রথমেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, রোমকদের পরাজয় এবং তারপর তাদের বিজয়ের ভবিষ্যদ্বাণী মুহাম্মদ (সাঃ) করেছিলেন। এটি একটি উদাহরণ। তাঁর প্রতিটি কর্মকান্ড থেকে তাঁর উচ্চস্তরের প্রজ্ঞাদৃষ্টির পরিচয় পাওয়া যায়।

( অষ্ঠৌগুণা ঃ পুরুষং দীপয়ন্তি, প্রজ্ঞা চ কৌল্যং চ দম শ্র“তঞ্চ।মহাক্রসশ্চা বহুভাষিতা চ,দানং যথাশক্তি কৃতজ্ঞতা চ - এটি মহাভাতের শ্লোক যাতে উপরোক্ত ৮ টি গুণের কথা উল্লেখ আছে)

মুহাম্মদ (সাঃ) উচ্চবংশে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, যা ছিল আরবের অত্যন্ত সম্মানিত ও সম্ভ্রান্ত বংশ এবং এরাই বংশপরম্পরায় কাবাগৃহের সংরক্ষক ছিলেন। হযরত মুহম্মদ (সাঃ) ঈশ্বর প্রদত্ত ইন্দ্রীয় দমন বা আত্মনিয়ন্ত্রণ গুণের অধিকারী ছিলেন। তিঁনি আত্মপ্রশংসা বিমুখ, দয়ালু, শান্ত, ইন্দ্রিয় দমনকারী এবং উদার ছিলেন। তিঁনি শ্র“তিজ্ঞানীও ছিলেন। শ্র“ত এর অর্থ হল যা ঈশ্বর কর্তৃক শোনানো হয়েছে এবং ঋষিদের(আল্লাহর বার্তা বাহক) দ্বারা শোনা হয়েছে। মুহম্মদ (সাঃ)কে জিব্রাঈল (আঃ) মারফৎ ঐশ্বরিক জ্ঞান প্রেরণ করা হত। খ্রিষ্টান ঐতিহাসিক লেনপূল তার গ্রন্থে লিখেছেন যে-দেবদূত মারফৎ ঐশ্বরিক বাণী প্রেরণ নিঃসন্দেহে সত্য ঘটনা। স্যার উইলিয়াম মূর লিখেছেন যে-তিঁনি সংবাদদাতা ও ঈশ্বরের প্রতিনিধি ছিলেন। পরাক্রমশালীতা অষ্টগুণের

মধ্যে পঞ্চম গুণ। রসূলূল্লাহু (সাঃ) যথেষ্ট পরাক্রমশালীও ছিলেন। তাঁর পরাক্রমের পরিচয় দিতে গিয়ে ডক্টর বেদপ্রকাশ উপাধ্যায় একটি ঘটনার উল্লেখ করেছেন, সেটি এরকম- “আরবের শ্রেষ্ঠ বীর রুকানা রসূলকে বললো,যদি তুমি আমাকে মল্য যুদ্ধে হারাতে পার তবে আমি তোমার ইসলাম গ্রহন করবো। রসূল তাকে পর পর তিন বার হারিয়ে দেন এবং রুকানা পালিয়ে যায়(বুখারী,সিরাতে ইবনে হিশাম সহ প্রায় প্রত্যেকটি সীরাত ও হাদিস গ্রন্থে উল্লেখ আছে)। তিঁনি পরাক্রমশালীতার সাথে ক্ষুদ্র বাহিনী নিয়ে বিশাল প্রতিপক্ষের সাথে ২৯ টি যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন ও জয় লাভ করেন। আটটি গুণের অন্যতম বিশিষ্ট গুণ হল ‘মিতভাষী” হওয়া। আল্লাহর রসূল (সাঃ)কম কথা বলতেন। অধিকাংশ সময় মৌনতা অবলম্বন করার ফলে তিঁনি যা কিছু বলতেন, তা লোকদের উপর এতটাই প্রভাব বিস্তার করত যে, শোনার পর তারা আর কখনো ভূলত না এবং তাঁর সুন্দর ও মনোমুগ্ধকর কথার জন্য কাফিররা তাঁকে কথার যাদুকর বলত। দান করা মহাপুরুষদের একটি মহৎ গুণ। হযরত মুহম্মদ (সাঃ) দান করতে কখনো পিছপা হতেন না। এই কারনে তাঁর বাড়িতে গরীব দুঃখীদের ভীড় লেগে থাকত। তাঁর বাড়ি থেকে নিরাশ হয়ে কেউ কখনো খালি হাতে ফিরে যেত না। মুহম্মদ (সাঃ) এর অন্যতম মহৎ গুণ ছিল কৃতজ্ঞতাপরায়নতা। এভাবেই প্রমাণিত হয় যে, মুহম্মদ (সাঃ) এর মধ্যে ঐশ্বরীয় গুণের সমাবেশ ঘটেছিল।

দেহ থেকে সুগন্ধি ছড়ানো ঃ ভাগবত পুরাণে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে যে,

“অথ তেষাং ভবিষ্যন্তি মনাংসি বিশদানি বৈ। বাসু দেবাংগারাগাতি পুণ্যগন্ধানিল স্পৃশাম। ”

(ভাগবত পুরাণ, দ্বাদশ স্কন্ধ, দ্বিতীয় অধ্যায়, ২১ তম শ্লোক)

অর্থাৎ “কল্কি অবতারের দেহ থেকে এমন সুগন্ধ ছড়াবে যে, তা থেকে লোকেদের মন নির্মল হয়ে যাবে। তাঁর শরীর থেকে নির্গত সুগন্ধি হাওয়ার সাথে মিশে গিয়ে মানুষের মনকে নির্মল করে দেবে।”

তিরমিজি শরীফে(সহী হাদীস গ্রন্থ) লেখা আছে যে-

“মুহম্মদ (সাঃ) এর শরীরের খুশবু (সুঘ্রান) তো সুপ্রসিদ্ধ বটেই। মুহম্মদ (সাঃ) যার সাথে হাত মেলাতেন তার হাত থেকেও দিনভর সুগন্ধি আসতে থাকত। একবার উম্মে সুলাইত মুহম্মদ (সাঃ) এর দেহের ঘাম একত্রিত করেন। রসূল (সাঃ) এর কারণ জিজ্ঞাসা করলে সুলাইত বলেন- আমি অন্য সুগন্ধির সাথে মেলাচ্ছি কেননা, এটি সকল সুগন্ধির সেরা।”

( তিরমিজী, পৃষ্টা ২০৮ ,অনুবাদ মওলানা মুহম্মদ জাকারিয়া। )

অনুপম সৌন্দর্যের অধিকারী ঃ

কল্কি অনুপম সৌন্দর্যের অধিকারী হবেন। বুখারী শরীফের হাদীস (বুখারী এমন একটি কিতাব যার ব্যাপারে বলা হয় আল কুরআনের পর সবথেকে বিশুদ্ধ,নির্ভূল কিতাব। পৃথিবীর মুসলিম, অমুসলিম নির্বিশেষে প্রখ্যাত সকল পন্ডিতেরা এ রায় দেন। এখানে ইতিহাস এমন নিখুঁতভাবে যাচাই করা হয়েয়ে ,যা অন্য কারো পক্ষে সেভাবে করা সম্ভব হয়নি। উল্লেখ্য ঃ ইসলাম ভিন্ন অন্য জীবনাদর্শের মানুষের ইতিহাস পরীক্ষা করার কোন ব্যবস্থা নেই। একমাত্র মুসলিমদের এই ব্যবস্থা আছে,যা “আসমাউর রেজাল” শাস্ত্র নামে পরিচিত)। মোতাবেক মুহাম্মদ (সাঃ) সবার চেয়ে সুন্দর ছিলেন এবং মনুষ্যকূলের মধ্যে সবচেয়ে আদর্শবান এবং সেরা যোদ্ধা ছিলেন। স্যর উইলিয়াম মূরও মুহম্মদ (সাঃ)কে সবচেয়ে রুপবান, পরাক্রমশালী ও দানশীল বলে অভিহিত করেছেন।

উপনিষদ(প্রাচীন ভারতীয় ধর্মগ্রন্থ)

উপনিষদেও মুহাম্মদ (সাঃ) এর চর্চা হয়েছে। উপনিষদ সমূহেও মুহাম্মদ (সাঃ) ও ইসলাম সম্পর্কে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে। নগেন্দ্র নাথ বসু দ্বারা সম্পাদিত বিশ্বকোষ এর দ্বিতীয় খন্ডে উপনিষদ সমূহের সেইসব

শ্লোক উদ্ধৃত হয়েছে, যেগুলি ইসলাম ও পয়গাম্বর (সাঃ) এর সাথে সর্ম্পকিত। সেগুলির মধ্যে প্রধান প্রধান কিছু শ্লোক ও তার অর্থ এখানে পেশ করা হচ্ছে যাতে পাঠক মূল বিষয়টি উপলব্ধি করতে পারেন।

অস্মাল্লাং ইল্লে মিত্রাবরুনা দিব্যানি ধত্ত।

ইল্লল্লে বরুণো রাজা পুনর্দুদঃ।

হয়ামিত্রো ইল্লাং ইল্লোল্লে ইল্লাং বরুনো মিত্রস্তেজস্কামঃ (১)

হোতার মিন্দ্রো হোতার মিন্দ্রো মহাসুরিন্দ্রাঃ।

অল্লো জেষ্ঠং শ্রেষ্ঠং পরমং পূর্ন ব্রহমানং অল্লাম। (২)

অল্লো রসূল মহামদ রকবরস্য অল্লো অল্লাস। (৩) (সূত্রঃ অল্লোপনিষদ ১,২,৩)

অর্থাৎ “এ দেবতার(স্রষ্টা অর্থে) নাম আল্লাহ। তিনি এক। মিত্রা বরুন ইত্যাদি তাঁর বিশেষণ (বিশেষত্ব)। বাস্তবিকই আল্লাহ বরুণ, যিনি সমগ্র সৃষ্টি কূলের বাদশাহ্। মিত্রো ! ঐ আল্লাহকে নিজের উপাসক বলে মনে করো। তিনি বরুন এবং এক বন্ধুর মতো সমগ্র মানুষকে সংবরণ (প্রতিপালন) করেন। তিনি ইন্দ্র, শ্রেষ্ট ইন্দ্র। আল্লাহ সবচেয়ে বড়, সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ, সবচেয়ে বেশী পূর্ণ এবং সবচেয়ে বেশি পবিত্র। মুহম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সর্বশ্রেষ্ট রাসূল। আল্লাহ আদি, অন্ত ,সমগ্র জগতের পালন (হার) কর্তা। সমস্ত শ্রেষ্ঠ কর্ম আল্লাহর জন্যই। বাস্তবিকই আল্লাহ চাঁদ, সূর্য ও নক্ষত্রপুঞ্জের সৃষ্টিকর্তা।”

উপরোক্ত উদাহরণ থেকে একথা নির্বিবাদে স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, সর্বশক্তিমান আল্লাহ এক এবং মুহাম্মদ (সাঃ) তাঁর প্রেরিত রাসূল(সাঃ)। এই উপনিষদের অন্যান্য শ্লোকেও ইসলাম ও মুহাম্মদ (সাঃ) এর সাথে সমতাপূর্ণ বর্ণনা এসেছে। এই উপনিষদে আরো বলা হয়েছে।

আদল্লা বূক মেককম। অল্লবূক নিঘাদকম্ (৪)

অলো যজ্ঞেন হূত হুতবা অল্লা সূর্য চন্দ্র সর্বনক্ষত্রাঃ (৫)

অল্লো ঋষীণাং সর্ব দিব্যাং ইন্দ্রায় পূর্ব মায়া পরমন্তরিক্ষা (৬)

অল্লঃ পৃথিব্যা অন্তরিক্ষজ্ঞং বিশ্বরুপম্ (৭)

ইল্লাংকবর ইল্লাংকবর ইল্লাং ইল্লল্লেতি ইল্লল্লাঃ (৮)

ওম্ অল্লা ইল্লল্লা অনাদি স্বরুপায় অথর্বণ শ্যাম্যা হুহ্রী জনান পশূন

সিদ্দান জলবরান্ অদৃষ্টং কুরু কুরু ফট। (৯)

অসুরসংহারিনী হ্রং হ্রীং রসূল মহামদরকবরস্য

অল্লো অল্লাম ইল্লল্লেতি ইল্লল্লা (১০)

(সূত্রঃ ইতি অল্লোপনিষদ )

অর্থাৎ “আল্লাহ সমস্ত ঋষিকে(নবী অর্থে) প্রেরণ করেছেন এবং চন্দ্র, সূর্য এবং নক্ষত্রপূঞ্জকে সৃষ্টি করেছেন। তিনি সমস্ত ঋষিকে প্রেরণ করেছেন এবং আকাশ সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ ব্রক্ষ্মান্ড (যমীন ও আকাশ) সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ শ্রেষ্ঠ, আল্লাহ ছাড়া আর কোনো উপাস্য নেই। আল্লাহ অনাদী কাল থেকে আছেন। তিনি সমগ্র বিশ্বের পালন কর্তা। তিনি সমস্ত মন্দ ও বিপদ বিতাড়নকারী। মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর রসূল । এতত্রব, ঘোষণা করো যে, আল্লাহ এক আর তিঁনি ছাড়া আর কোনো উপাস্য নেই”।

প্রাণনাথী (প্রণাম) সম্প্রদায়ের শিক্ষা

¬¬¬হিন্দুদের বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রাণনাথী সম্প্রদায়ের নাম সবিশেষ উল্লেখযোগ্য। এর সংস্থাপক এবং প্রবর্তক ছিলেন মহামতি প্রাণনাথ। তিঁনি লোকদের একেশ্বরবাদের শিক্ষা দেন এবং একই নিরাকার ঈশ্বরের উপাসনার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেন। তিঁনি নবুয়্যত বা ঈশ্বর প্রেরিত দূতের ধারণাকে সমর্থন করেন এবং তা সত্য বলে স্বীকার করেন। প্রাণনাথ জী বলেন-

কৈ বড়ে কহে পৈগংমর, পর, য়েক্ মহাংমদ্ পর, খতম।

অর্থাৎ ধর্মগ্রন্থে অনেক বড় বড় পয়গাম্বরের কথা বলা হয়েছে, কিন্তু মুহাম্মাদ (সাঃ)এর ( আবির্ভাবের) পর সে ধারা ( নবী,রসূল প্রেরণ) সমাপ্ত হয়েগেছে। রসূল মুহাম্মাদ(সাঃ) আখিরী পয়গম্বর। (মারফত সাগর পৃঃ. ৩৯, শ্রী প্রাণনাথ মিশন, নয়াদিল্লী।)

প্রাণনাথ জী অন্য এক স্থানে লিখেছেন-

রসূল আবেগা(আওয়েগা) তুম্ র্প, লে মেরা ফরমান।

আএ মেরে অরস্ কী, দেখী সব্ পেহেচান।

অর্থাৎ (ঈশ্বর বলেছেনঃ) আমার রসূল মুহম্মদ (সাঃ) তোমাদের কাছে আমার সংবাদ (বাণী) নিয়ে আসবেন। তিঁনি (এ) জগৎ সংসারে এসে তোমাদের আমার আরশ বা পরমধামের সাথে পরিচয় করানোর জন্য কিছু নিদর্শন দেখাবেন

(মারফত সাগর পৃঃ. ১৯, শ্রী প্রাণনাথ মিশন, নয়াদিল্লী।)

হযরত মুহম্মদ (সাঃ) ও বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থ

গৌতম বুদ্ধ তাঁর অনুসারীদের বলেনঃ

“নন্দ ! এই জগত সংসারে আমি প্রথম বুদ্ধ নই,শেষ বুদ্ধও নই। এজগতে সত্য ও পরহিতের(অপরের মঙ্গল)শিক্ষা দেওয়ার জন্য আমার পরে আরও এক বুদ্ধ আসবেন। তিঁনি পবিত্র অন্তঃকরনের অধিকারী হবেন। যেভাবে এজগৎ সংসারে আমি অবিনশ্বর সত্যের শিক্ষা দান করেছি,তিঁনিও তেমনি বিশ্বকে অবিনশ্বর সত্যের শিক্ষা দান করবেন। তিঁনি এ বিশ্বকে যে জীবন পথের দিশা দেবেন তা হবে শুদ্ধ ও পূর্ণ। নন্দ, তার নাম হবে মৈত্রেয়(রসূলের নামের অর্থের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ)।

(গসপেল অব বুদ্ধ,কারুস, পৃঃ ২১৭)

বৌদ্ধদের ধর্ম গ্রন্থসমূহে যে মৈত্রেয়ের আগমনের কথা বলা আছে তার বৈশিষ্ট হলোঃ

১.তিঁনি ঐশ্বর্য এবং ধনবান হবেন।(প্রখ্যাত ব্যবসায়ী খাদীজার সাথে বিবাহের ফলে তা হয়েছিলেন অবশ্য আল্লাহর পথে সমস্ত সম্পদ ব্যয় করেন)

২.তিঁনি সন্তানাদিদের সাথে যুক্ত (পিতা)হবেন।(হয়েছিলেন)

৩.তিঁনি স্ত্রী ও শাসন কার্যের সাথে যুক্ত হবেন।(হয়েছিলেন)

৪.তিঁনি পূর্ণ জীবনের অধিকারী হবেন।(হয়েছিলেন)

৫.তিনি নিজের কাজ নিজে করবেন।(করতেন)

৬.তিনি ধর্ম প্রচারক হবেন।(হয়েছিলেন)

৭.যে সময় বুদ্ধ একান্তে অবস্থান করেন সে সময় ঈশ্বর তার সাহয্যে দেবতা ও রাক্ষসদের (রাসূলের সাহায্যকারী হিসেবে ফেরেশতা)পাঠিয়ে দিবেন।(দিয়েছিলেন)

৮.জগতে এককালে কেবলমাত্র একজন বুদ্ধ (আল্লাহ কর্তৃক প্রেরিত নবী, রাসূল)থাকেন। (সাধারনতঃ তাই, তবে কখনও কখনও একসাথে একাধিকও ছিল)

৯.বুদ্ধের অনুসারীরা তার নিবেদিতপ্রাণ অনুচর হয়ে থাকে, কেউ তাদের বিপদগামী করতে পারেনা। (কেউ তাদেরকে বিপদগামী করতে পারেনি)

১০.কোন ব্যক্তি তাঁর গুরু হবেন না। (রাসূল সাঃ এর কোনো শিক্ষক ছিলনা)

১১.প্রত্যেক বুদ্ধ তার পরবর্তী বুদ্ধের আগমন সম্পর্কে স্মরণ করিয়ে দেন এবং বুদ্ধরা অনুচরদের ‘মার’(শয়তান)এর কবল থেকে রক্ষায় সাহায্য করেন।(ঠিক)

১২.সাধারণ মানুষদের চেয়ে বুদ্ধদের ঘাড়ের হাড় অত্যধিক দৃঢ় হয়, ফলে ঘাড় ফেরানোর জন্য সারা দেহকে হাতির মত ঘুরিয়ে নিতে হয়। (রাসূল সাঃ এর ক্ষেত্রে এ উক্তিও পুরোপুরি সঠিক)

জৈন ধর্মে মুহাম্মদ (সাঃ)

জৈন ধর্মে রাসূল(সাঃ) এর আগমনের সময়কাল সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে। (বিস্তারিত জানার জন্য কল্কিপুরান দেখা যেতে পারে) এখানে রাসূল(সাঃ) এর বিভিন্ন বর্ণনা দিয়ে বলা হয়েছে, তিনি যে জীবনব্যবস্থা আনবেন, তা সারা পৃথিবীর সমস্ত জীবনব্যবস্থার উপর বিজয়ী হবে।(আল কুরআনে আল্লাহ বলেন,“আমি রাসূলকে সত্য দ্বীনসহ এজন্য প্রেরণ করেছি যাতে তা সকল জীবনব্যবস্থার উপর বিজয়ী হতে পারে।”) এতে বলা হয়েছে “মহাবীর”(জৈন ধমের্র প্রবর্তক) স্বামীর নির্বানের এক হাজার বছর পর সর্বশেষ পয়গাম্বর জন্ম নিবেন। মহাবীর স্বামীর নির্বানকাল খ্রিষ্টপূর্ব ৫৭১ অব্দে । এখান থেকে একহাজার বছর পর হয় ৫৭১ খৃষ্টাব্দ, যা রাসূল (সাঃ) এর জন্ম সাল।

এ ব্যাপারে শেষ কথা হলো, আল্লাহ মানব জাতিকে তার ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছেন। তিনি মানুষকে পরীক্ষা করে নিতে চান, কে তাঁর ইবাদত করে আর কে প্রত্যাখ্যান করে। তাই, তিনি ভাল ও মন্দ দুটি পথ তৈরী করেছেন, একই সাথে - কোন পথে চললে পরিণতি কি হবে, তাও জানিয়েছেন। মানুষকে সঠিক পথে পরিচালিত করার জন্যে তিনি মানুষদের মধ্য থেকে কিছু মানুষকে মনোনীত করেছেন তাঁর নির্দেশ বাস্তবায়নের পদ্ধতি শিক্ষা দেওয়ার জন্য এবং সতর্ক করার জন্য। এ উদ্দেশ্যে তিনি যুগে যুগে অসংখ্য নবী, রাসূল প্রেরণ করেছেন। কিতাব প্রেরণ করেছেন নবী-রাসূলদের নিজস্ব ভাষায়, যাতে তারা সহজে শিক্ষা দিতে পারে। প্রত্যেক সম্প্রদায়ে নবী পাঠিয়েছেন। কিন্তু, নবীদের মৃত্যুর পর কিতাবকে বিভিন্ন ভাবে বিকৃত করা হয়েছে। এভাবে শ্রেষ্ঠ ও শেষ রাসূল পর্যন্ত চলছিল। এরপর, আল্লাহ একটি পরিপূর্ণ কিতাব আল-কুরআন অবতীর্ণ করে বলেন, পূর্বের কিতাবগুলো বিকৃত হয়েছে, এটি (আল-কুরআন) কখনই বিকৃত হবে না, এর সংরক্ষণের ভার

আমি (আল্লাহ) নিলাম। আল্লাহতায়ালা বলেন -“সুতরাং দূর্ভোগ তাদের জন্যে, যারা নিজ হাতে কিতাব রচনা করে এবং তুচ্ছ মূল্য প্রাপ্তির জন্য বলে‘এটি আল্লাহর নিকট হতে প্রাপ্ত’। তাদের হাত যা রচনা করেছে তার জন্য শাস্তি তাদের এবং যা তারা উপার্জন করে তার জন্যে শাস্তি তাদের।”(আল-কুরআন,২ঃ৭৯) “নিঃসন্দেহে জীবন বিধান হিসেবে আল্লাহর কাছে ‘ইসলাম’ই একমাত্র গ্রহনযোগ্য ব্যবস্থা।”(আল-কুরআন,৩ঃ১৯) “আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে (জীবন বিধান) পরিপূর্ণ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার অবদান সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্য দ্বীন (জীবন বিধান) হিসেবে মনোনীত করলাম।”(আল-কুরআন,৫ঃ৩) “আমি রাসূলকে সত্য দ্বীন সহ এজন্য প্রেরণ করেছি যাতে তা সকল দ্বীনের উপর বিজয়ী হয়।” ( আল-কুরআন, ৬১ঃ৯)

পৃথিবী ধ্বংস হবার পূর্ব পর্যন্ত এটি অবিকৃত থাকবে। যতদিন এর শিক্ষা বাস্তবায়ন করবে ততদিন গোটা বিশ্বের নেতৃত্ব তোমাদের হবে। এর সাথে কুফরের সংমিশ্রন করে চলতে চেষ্টা করলে পৃথিবী ও আখিরাত উভয় স্থানে লাঞ্চিত হবে। তাই পূর্বের কিতাবগুলোকে পুরোপুরি বাদ দিয়ে আল-কুরআন গ্রহন করো- আমার ভয়ানক ও অনন্তকালের শাস্তির হাত থেকে মুক্তি পাবে নইলে মুক্তির দ্বিতীয় কোন রাস্তা নেই।

উপরোক্ত কিতাবগুলোর অনেক অংশ বিকৃত হলেও কিছু অংশ কুরআন ও সুন্নাহর সাথে মিল পাওয়া যায় তাই আলোচনার সুবিধার্তে আমি প্রহন করেছি যদিও তা না করলেও চলত। কারণ পূর্নাঙ্গ জীবন বিধান পাবার পর পূর্বের বিকৃত কিতাব নিয়ে চলার চেষ্টা করলে আল্লাহর রোষানলে পড়তে হবে, এতে সন্দেহের অবকাশ নেই এবং তিঁনি কঠোর ভাবে নিষেধ করেছেন। কাফির,মুশরিকদের পদাংক অনুসরণকারীদের প্রতি কঠোর হুশিয়ারী উচ্চারণ করা হয়েছে ,তাই এসকল কিতাব অবশ্য পরিতাজ্য। পূর্ববর্তী কিতাবগুলোতে সত্যের সাথে মিথ্যা মিশ্রিত আছে,রসূল (সাঃ) বলেন, একাজ করলে পুরোটাই মিথ্যা হয়ে যায় এবং আল্লাহ তায়ালাও সত্যের সাথে মিথ্যা মেশাতে নিষেধ করেছেন। এসকল কিতাব অনুসরণকারীদের কর্তব্য হলো তাদের বিকৃত কিতাব ত্যাগ করা এবং সর্বশেষে আসা কিতাব,সর্বশেষ্ঠ কিতাব আল-কুরআনকে গ্রহন করা ও সে অনুযায়ী চলা। এটাই বুদ্ধিমানের কাজ। (বিকৃত কিতাব থেকে কিছু অবিকৃত সূত্র উল্লেখ করার জন্য আল্লাহর কাছে মাফ চাচ্ছি ,আল্লাহ আমাদের হেদায়াত দান করুক ! )

চলবে....

বিষয়: বিবিধ

৪৯০৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File