তুই রাজাকার !!!
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ১৭ জুলাই, ২০১৩, ১০:০৯:২৩ রাত
১৯৭১ এর পর ব্যপক ধনী হয়েছেন এমন কিছু লোককে চিনি। এরা ভাল খেতে পেত না। সমাজের চোখে যেসব কাজ খুব ছোট সেটা তারা করত। একজনের ব্যাপারে শুনেছি সে লুটপাট করত এমনকি হত্যাও করেছে। আরেক জনের কাছে হিন্দুরা স্বর্ণ গচ্ছিত রেখেছিল কিন্তু সে পরে সেটা ফেরত দেয়নি। এমন আরও অনেকে ছিল। পরে এরা ফুলে ফেপে উঠেছে। কোনো সরকারই এদের কিছু বলেনি। আমার ধারনা যেসব প্রাচীন লোক এসব জানত,তারা কুরআন হাতে নিয়ে সাক্ষ্য দিলেও তা সর্ব আদালতে প্রত্যাখ্যাত হবে।
দেশের শাসন ক্ষমতায় যেই আসুক না কেন এদের কখনই সমস্যা হয়না। এমন আরও বহু লোক আছে,যাদের কোনো সমস্যা হয়না। কারন তারা সর্বদা সরকারী দল করে। ক্ষমতাসীনরা তাদের কাছ থেকে মোটা চাদা পেয়ে খুশী। এরা রাজনীতি সচেতনতার বদলে প্রচন্ড অর্থ সচেতন। ফলে শাসক শ্রেণীর সাথে এদের সর্বদা বোঝাপড়া চমৎকার।
৭১ এ বহু লোক রাজাকার ছিল এবং বহুলোক মুক্তিযোদ্ধা ছিল। আমার এলাকায় আমি অনেক কৃষক,ভ্যান-রিক্সা চালক,কুলকে চিনতাম ,যারা আমাদেরকে মুক্তিযুদ্ধের গল্প বলত। সেসব গল্প শুনে আমার গায়ে কাটা দিয়ে উঠত। তারা অপ্রচলিত কৌশলে যুদ্ধের বিভিন্ন গল্প বলত। একজনের নাম মনে পড়ছে,তার নাম ছিল শফি। সে ছিল আমার হতদরিদ্র বন্ধু তেলার পিতা। শফি চাচা আমার ফুফাদের বাড়িতে গরু এবং ক্ষেত দেখাশুনা করত। বিনিময়ে মামুলি পয়সা পেত এবং খেতে পেত। পাকিস্থানী শাসক গোষ্ঠীর শোসন থেকে দেশ মুক্ত হয়েছে ,এটাই ছিল তার খুশী। এটাই ছিল প্রাপ্তী। তিনি এবং অন্য মুক্তিযোদ্ধারা সরকারের থেকে সুবিধা পাবেন বা নিবেন বা এমন একটা সুবিধার বিষয় থাকা জরুরী এটা জানতেন না বা কল্পনাও বোদহয় করতেন না।
এলাকায় রাজাকারও ছিল। তারা বিভিন্নভাবে রাজাকারী করেছে। অনেকের পরিচয় গোপন ছিল আর অনেকেই পরিচিত ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে এলাকার মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে তাদের চলতে সমস্যা হয়নি। হয়ত মানুষিকভাবে অমিল ছিল কিন্তু তারা কোনোভাবেই একে অপরের শত্রু ছিলনা।
রাজাকার অনেক শ্রেণীর ছিল। কেউ জীবন বাচাতে রাজাকারী করেছে। কেউ পরিবার পরিজন বাচাতে তাদেরকে সহযোগীতা করেছে। কেউ মিথ্যা তথ্য দিয়ে নিজেকে রাজাকার প্রমানের চেষ্টা করেছে বাচার জন্যে। আবার কেউ লুটপাট,হত্যা,ধর্ষন করেছে,বা সহযোগীতা করেছে। কিছু বিহারী লোক ছিল যাদের কিছু অংশ প্রকাশ্য হত্যায় জড়িত ছিল। তাদের সাথেও মুক্তিযোদ্ধা,অ-মুক্তিযোদ্ধা সকলকে মিশতে দেখেছি। সম্ভবত মুক্তিযোদ্ধারা ভাবত,ওরা অপরাধ করেছে কিন্তু ক্ষমা করা মহত্বের কাজ। আবার যেসব পরিবার ক্ষতির শিকার হয়েছিল তারা শোক ভুলতে পারেনি। অনেকে প্রতিশোধ পরায়নও হয়েছে। কিন্তু বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই ফৌজদারী মামলা করেনি,বরং মেশামিশি ,লেনদেন বন্ধ করেছে। এভাবেই চলছিল।
প্রসঙ্গে আসি। ৭১এর মুক্তিযুদ্ধের পরপরই রাজাকার সংক্রান্ত বিষয় চাঙ্গা থাকার কথা। আজ যদি কেউ আমার পরিবারকে হত্যা করে তাহলে আমার আজকের অনুভূতি হবে এমন যেন আমিও তাকে হত্যা করব। যত দিন যাবে ততই আমার অনুভূতি পুরোনো হবে। খুনের সংকল্প থেকে আমি মামলার সংকল্পে উপনিত হব। কিন্তু আমার জানা নেই ৭১ এর পরে কেন এই বিষয়গুলো মিমাংসা করা হলনা। স্বাদীনতার পক্ষের শক্তি ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও কেন এই বিচার করল না। তাহলে আজ আমরা একটি দেশকে দুভাগে ভাগ হতে দেখতাম না। এরশাদের সময় বাদ দিলে ৯১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত আসকের ক্ষমতাসীনরা আরও একবার ক্ষমতায় ছিলেন তাহলে তখনও কেন সেটা সমাধা করা হলনা। এটা কোনোভাবেই গ্রহনযোগ্যতা পেতে পারেনা যে, তখন তাদের ক্ষমতা ছিলনা। বরং স্বাধীনতার পরবর্তী সময়েই এটা করা আরও বেশী গ্রহনযোগ্য হত এবং কার্যকরী হত।
আমার জানামতে এবং আরও বহু মানুষ বা অধিকাংশ মানুস একমত হবেন যে, রাজাকার অনেক ছিল এবং তারা শুধু এক দলের মধ্যে ঢুকেনি। দলহীন রাজাকারের সংখ্যাই বেশী । তাহলে স্বাদীনতার ৪৩ বছর পর শুধুমাত্র জামাতে ইসলামীর নেতাদের ধরে ন্যায় বিচার রক্ষা করার চেষ্টা চলছে কেন ? কাহিনী কি ? দেশে আর কোথাও কোনো রাজাকার নেই ?
আমার ধারনা , যারা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ রাজাকার শুধু তাদের মধ্য থেকে খোজার ব্যাপারে ঐক্যমত্যে পৌছানো হয়েছে। এটা রাজনৈতিক রাজাকার এবং রাজনৈতিক রাজাকারী খেলা।
কোনো লোক যদি হত্যা,ধর্ষন,লুটপাট করে থাকে তাহলে ৪৩ বছর পর বিচার করা এত সোজা কাজ নয়। আর প্রত্যক্ষদর্শী ছাড়া বা চাক্ষুষ প্রমান ছাড়া কোনো অপরাধে ফাসি হতে পারে,এটা অসম্ভব ব্যাপার। পৃথিবীর কোনো দেশের কোনো বিচারক এভাবে রায় দিবে বলে মনে করিনা। হুকুমের আসামীর যদি ফাসি হয় ,তাহলে এদেশের বড় রাজনৈতিক দলের ওপরের নেতাদের বহুবার ফাসি হতে পারে। কারন আমরা সাক্ষী তাদের অংগ সংগঠনগুলো হত্যা,সন্ত্রাস,ধর্ষন করে। এবং ওপরের নির্দেশ ছাড়া কারো পক্ষ্যে এতটা বেপরোয়াভাবে ঘটনা ঘটানো সম্ভব নয়। তাহলে তাদের নেতাদেরও তো ফাসি হওয়ার কথা। এখানে তথ্য প্রমান আরও তাজা,আরও অথেনটিক।
বহু পূর্বের ঘটনা বিশ্লেষন করা হয়েছে দায় সারা ভাবে এবং প্রত্যক্ষদর্শী নয় বরং শুনে শুনে সাক্ষী এমন লোকজনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে এবং তাদের অনেকে মিথ্যা সাক্ষ্য দিচ্ছেন এমনও রেকর্ড রয়েছে। তৎকালীন পত্র-পত্রিকা ঘাটা হয়েছে এবং অনুমান করা হয়েছে ,এই ব্যক্তিই নির্দেশদাতা ইত্যাদী। এভাবে অনুমানে কারো ১০ ঘা বেত্রদন্ড দেওয়া যায়, এক মাসের জেল দেওয়া যায় কিন্তু যাবজ্জীবন কারাদন্ড !!! মৃত্যুদন্ড !!!
আমি মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। জামাতের রাজনৈতিক মতাদর্শের লোক নই। কিন্তু এই বিচার প্রক্রিয়া আমার কাছে স্বচ্ছ মনে হয়নিস। তার থেকেও বড় ব্যাপার হল, দেশ এখান থেকে হানাহানি মারামারি ছাড়া আর কিছু পাবেনা। এখানে সাধারন জনতার কোনো লাভ নেই। কারো রাজনৈতিক ফায়দা হতে পারে কিন্তু সেটা জনতার নয়। তাদের কাছে যদি এসব বিষয় জিজ্ঞেস করেন,তবে উত্তর আসবে-অন্য-বস্ত্র,বাসস্থান-শিক্ষা-চিকিৎস্যার নিশ্চয়তা চাই। ভন্ডামী বাদ দেন। আমাদের ভাতের বন্দোবস্ত করেন !
দেশকে ভালবাসার নামে দেশকে মানুষিকভাবে খন্ড বিখন্ড করা হচ্ছে। দেশের সম্পদ কিভাবে ব্যবহার করে উন্নতি করতে হবে। কিভাবে দক্ষ নেতৃত্ব দিয়ে অন্যদের সাথে প্রতিযোগীতা করে এগিয়ে যেতে হবে,তার কোনো খবর নেই। নিজেদের স্বার্থের চিন্তাকে গোটা জনতার চিন্তা হিসেবে চালিয়ে দিচ্ছে। এসব বন্ধ হওয়া জরুরী। যারা দেশকে ভালবাসে বলে দাবী করে,তারা দেশের মানুষের প্রকৃত চিন্তাকে মূল্যায়ন করুক,নইলে তারা সমর্থন প্রত্যাহার করবে সকল ব্যাপারে।
বিষয়: বিবিধ
১৪৩২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন