হঠাৎ সফর ৩
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ০৫ জুলাই, ২০১৩, ০৮:১৪:৪৩ রাত
এদিককার কণ্ট্রাকটর নমনীয় ধরনের হয় কিন্তু একটা কঠোর মনের কর্কশ ভাষী কণ্ট্রাকটরকে পেলাম। সে আমার থেকে বোধহয় ৫০% বেশী ভাড়া রাখল,আমি অনুমানে বুঝলাম। অনেকের সাথে তার ভাড়া নিয়ে গন্ডগোল হল। আমার কাছে এটা খুব খারাপ লাগল। কারো কটু কথা আমার ভাল লাগেনা। আমি কখনও কাওকে গালি দেইনি,আমাকেও মানুষ গালি দেয়না। যতবার বাসে উঠেছি কখনই কণ্ট্রাকটরদের সাথে ভাড়া নিয়ে কথা বলিনি। সে যদি বেশী নিয়ে থাকে আল্লাহই যথেষ্ট। কণ্ট্রাকটর অনেক যাত্রীর সাথে যথেষ্ট খারাপ আচরণ করল। আমি বললাম,ভাই আপনি শান্ত হোউন,আপনি অবশ্যই একজন ভদ্রলোক। সে একটু শান্ত হল। খানিকপর বাসের ইঞ্জিনে সমস্যা দেখা দিল। একস্থানে থামিয়ে ইঞ্জিন হাতাহাতির পরও ঠিক হলনা। তখন ধীরে ধীরে চালিয়ে একটা গ্যারাজে নিয়ে আসা হল। এখানে লেদ মেশিন রয়েছে এবং তা পরিচালিত হয় প্রায় নিরক্ষর লোকজন কর্তৃক। কিন্তু তারা বাসের ইঞ্জিন খুলে একটি পার্টস বের করে সেটির মত অনুরূপ আরেকটি পার্টস তৈরী করতে লেগে গেল। বাংলাদেশ বোধহয় বিশ্বের বুকে একমাত্র দেশ যেখানে মেধা পথে ঘাটে পাও পাওয়া যায়। এখানে উড়োজাহাজ ছাড়া আর সকল যানবাহনের পার্টস রাস্তার পাশের লেদ মেশিনে তৈরী করা যায়। হাতে তৈরী এসব পার্টসের বাজার বছরে তিন হাজার কোটি টাকার ওপরে। ইতিমধ্যে বাসের কণ্ট্রাকটর পালিয়েছে কারণ যাত্রীরা বাসভাড়া ফেরৎ চাইতে পারে। আধাঘন্টা পর যখন পার্টসটি তৈরী হওয়ার পথে তখন কণ্ট্রাকটর এসে বলল,এই আর মাত্র কয়েক মিনিট,এক্ষুনী রওনা হব। একঘন্টা পরও যখন পার্টসটি যথাযথভাবে সেট হলনা তখন কণ্ট্রাকটর আবারও লাপাত্তা। আমি নেমে আরেক বাসে উঠে পড়লাম।
নতুন এই বাসের কণ্ট্রাকটর একেবারে পূর্বেরটার বিপরীত। একেবারে রসগোল্লা মার্কা। তিনি জিজ্ঞেস করলেন আমি কোথায় যাব এবং বললেন,কোনো চিন্তা নেই,আমি যথা সময়ে নামিয়ে দিব। হেলপার একবার আমার পাশে এসে বসল এবং কথা বলল। তারসাথে হাসিমুখে কথা বললাম। যাত্রীরা বেশ উদার। এক বৃদ্ধ যাত্রীকে কণ্ট্রাকটর খুব সাহায্য করল সিটে বসতে। এক ভদ্রমহিলার সাথে গল্প করল এবং তাতে দেখা গেল তাদের আত্মীয়ের ডালপালার সাথে সম্পর্ক রয়েছে এবং সে সূত্রে তারা আত্মীয়। এতে সে কম ভাড়া রাখল। মহিলা পুরো ভাড়া দিতে আগ্রহী। নামার সময় কণ্ট্রাকটর তার ব্যাগ নিয়ে নীচে ভালভাবে নামিয়ে দিল। লোকটাকে বাড়িতে দাওয়াতও করলেন ভদ্র মহিলা। এক কৃষক পরিবার উঠল বাসে। তারা আনাড়ীর মত আমার সাথে কিছু কথা বললেও আমি অনেক মার্জিতভাবে সহজ ভাষায় উত্তর দিলাম। আমি কোথায় যাচ্ছি,আমার ব্যাগে কি রয়েছে,হাতের ব্যাগটি কেন সীটের নীচে ঢুকিয়ে দিচ্ছিনা ইত্যাদী নানান প্রশ্ন করলেন। আমি হাসিমুখে উত্তর দিলাম। এরা দিলখোলা মানুষ। খানিকপর হেলপারের সাথে গল্প শুরু করল এবং নামার সময় বলল,এতক্ষন আমার বাড়িতে রান্না হয়ে গেছে,চল যাই দুপুরে একসাখে খাব। হেলপার হাসিমুখে বিদায় জানাল।
যশোরের জামতলার সাদেক গোল্লা বা রসগোল্লা খুব বিখ্যাত। এখানে বাস খানিক থামলে আমি হেলপারকে বললাম মিস্টি কেনার মত সময় পাব ? ড্রাইভার থামবে ? সে বলল,পাচ মিনিট থামার নিয়ম ,বেশী দেরী করলে আমাদেরকে জরিমানা গুনতে হবে। ভাবলাম পাচ মিনিটই যথেষ্ট। কিন্তু বাস দ্রুত ছেড়ে দিল। হেলাপার ড্রাইভারকে গাড়ি থামাতে বলল,কারণ আমি মিস্টি কিনব। ভাবলাম আমার একার জন্যে এতগুলো যাত্রী বসে থাকবে,এটা হতে পারেনা। বললাম, মিস্টি পরে কিনলেও চলবে।
বিকেলে বাড়িতে পৌছলাম এবং একদিন বেশ ভালই কাটল। জুনিয়র বাহিনীর অনেক রকম ডিমান্ড থাকে,তা মেটালাম। এবার বৃষ্টির মধ্যে ফুটবল খেললাম। কাদা-পানিতে ফুটবল খেলার মজাই আলাদা। খানিক দৌড়ে চিৎ হয়ে পড়েও মজা। নদীদে একটানা তিনঘন্টা গোসল করলাম বহুদিন পর। বহুদূর পর্যন্ত সাতার কাটলাম মাথা না ভিজিয়েই।
পিরোজপুরের হ্যাচারীতে অবস্থানের সময় সালাহউদ্দীন ভাই সজীবকে ওখানে আসতে বলল। কিন্তু সে একটা চালে ভুল করেছে বলে আক্ষেপ করল। সে সজীবের বাড়িতে যাবেনা এটা বলে ফেলেছে। ফলে সজীব আসবে না। সে বিভিন্নভাবে প্রাকৃতিক দৃশ্য বর্ণনা করার পরও সজীব রাজি হলনা। অথচ তাকে প্রায় ৭০% রাজি করানো হয়েছিল। বাড়িতে একদিন থাকার পর চিন্তা করলাম সকাল থেকে সজীবের ফোন নেই,অতএব আমার ঝিনাইদহ না যাওয়ার অজুহাত তৈরী হল। খানিকপর সজীব বলল-যে অবস্থায় অছেন ওই অবস্থায় দৌড় দেন। কোনো অপশন নেই। ঝেড়ে দৌড় দিলাম আরামের একটা ঘুম ফেলে।
বিষয়: বিবিধ
১৪৯১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন