হঠাৎ সফর-১

লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ৩০ জুন, ২০১৩, ০৭:২৪:৪২ সন্ধ্যা



হঠাৎই এক সপ্তাহের ছুটি পেলাম বা নিলাম। জয়ের মৃত্যুর পর সালাহউদ্দীন ভায়ের মনটা ভাল ছিলনা। সে সিদ্ধান্ত নিল সাতক্ষিরায় তার বাড়িতে যাবে এবং আমাকে অবশ্যই সাথে যেতে হবে। আমার পছন্দ পার্সেমাছের ভূনা আর ল্যাংড়া আম। আমি যতবার না বলি ততবারই সে এগুলোর লোভ দেখায় বিভিন্ন আঙ্গিকে। শেষে বললাম আগে আমার বাড়িতে যাব ,তারপর সাতক্ষিরায়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তার কথাতেই রাজি হলাম। আর সঙ্গে সঙ্গে সজিব বলল,আগামী মঙ্গলবার আপনি অবশ্যই দুপুরে আমার ঝিনাইদহের বাড়িতে আসছেন। সে ৫দিনের ছুটি ম্যানেজ করেছে।

বাসে দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গ ভ্রমনের বিড়ম্বনা হল পদ্মার ফেরী পারাপার। এপথে এতটাই যান চলাচল করে যে,সারা বছর ফেরী পারাপারে দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন হয়। আমরা শনিবার সকাল ৬টায় রওনা হলাম সজিবের বাসার উদ্দেশ্যে কারণ নাস্তাটা ওখানে সেরে তবে যেতে হবে। আমরা আন্টির তৈরী মজাদার খাবার খেলাম আর এক গামলা ল্যাংড়া আম খেয়ে নিলাম। সজিব আমাদেরকে বাস কাউন্টারে পৌছে দিল এবং সকল পরিকল্পনা পাকা হল।

বাস চলতে শুরু করল আর আমরা মুখ চালাতে শুরু করলাম। সালাহউদ্দীন ভাই ঘুম কাতুরে মানুষ,তার ওপর রাতে তেমন ঘুমায়নি,তাই সে বাসের পেছনের খালি সিটে কয়েকটা কম্বল জড় করে ঘুমিয়ে পড়ল। আমি পত্রিকা পড়তে থাকলাম। বাস ফেরীঘাটে এসে ঘন্টা তিনেক জ্যামে আটক থাকল। আমরা যখন নদী পার হলাম তখন সালাহউদ্দীন ভাই একবার চোখ মেলল,আমি বললাম এখনও বহুপথ,ঘুমান। সে বলল-কি কন না কন, আমি কি ঘুমাইছি নাকি, আমি তো একটু তন্দ্রচ্ছন্ন হয়েছিলাম। সে আবারও একটু তন্দ্রাচ্ছন্ন হল। প্রায় দুঘন্টা পর আমরা একটা হাইওয়ে ফুডপার্কে যাত্রা বিরতী করলাম। এখানে আমরা যোহর ও আসরের কছর নামাজ একসাথে আদায় করলাম। এখানে মিস্টি বানায় দারুন। আমরা গুড়ের বিখ্যাত এক সন্দেশ খেলাম।

সকাল ১০টায় গাড়িতে উঠে সাতক্ষিরায় নামলাম রাত ৯টায়। বাপের ওপর চাপা অভিমান থাকায় সে কাউন্টারে গাড়ি পাঠাতে বলেনি ফলে মাশুল গুনলাম সম্মিলিতভাবে। এখানকার মানুষেরা খুব ভাল। এক চায়ের দোকানদার আমাদের বাসের তথ্য নেওয়ার জন্যে নিজের মোবাইল থেকে ফোন করে তথ্য নিয়ে জানাল। আমরা টিপটিপ বৃষ্টির মধ্যে একটা লোকাল বাসে উঠলাম। এবার নামলাম তার পিতার হ্যাচারীর সামনে। বাংলাদেশে তার পিতা সর্বপ্রথম বাদগা চিংড়ীর হ্যাচারী তৈরী করে এবং তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে স্বর্ণ পদকও পেয়েছেন। সাতক্ষিরা এবং খুলনাতে তিনি অতি পরিচিত একজন এবং সম্মানিত। আঙ্কেলের সাথে খানিক কথা বলে তার বাড়িতে আসলাম। রাতে খাওয়ার সময় অন্য মাছ দেখে বললাম,আমার পার্সেমাছ কই ?? সালাহউদ্দীন ভাই বলল, এখন কি পার্সে মাছের সিজন ? এটা আরও কয়েকমাস পর পাওয়া যাবে। হায় হায় !! আমি ঠকেছি ! খাওয়ার পর ফজলী,আম্রপালি আম আসাতে বললাম, আমার ল্যাংড়া আম কই ?? সে বলল, ল্যাংড়া আম অন্তত ২০দিন আগে চলে গেছে। আগামী বছরের আগে ওটা আর ফিরছে না। ওরে,,,, আমার সর্বনাশ হয়ে গেল রে !!! আমি ধোকাগ্রস্ত। মনে মনে আন্টির সেই বিখ্যাত দইয়ের কথা মনে হচ্ছিল কিন্তু তা আর বললাম না। আন্টি দুধ ঘন করতে করতে লাল করে ফেলেন এরপর অল্প চিনি দিয়ে বিখ্যাত দই তৈরী করেন। পূর্বে ভেবেছিলাম এটা বাজারের দই। কিন্তু বাড়ির একপাশে শ’খানেক মাটির তৈরী খালি দইয়ের পাত্র দেখে মনে খটকা লাগল। জিজ্ঞেস করাতে বুঝলাম এগুলোতে প্রতিদিন দৈ তৈরী করা হয়। আমাদের চলাচলের জন্যে আঙ্কেল পাজেরো জিপ বরাদ্দ করলেন। কিন্তু সালাহউদ্দীন ভাই মটারবাইক দাবী করলেন। সে পূর্বে মটরবাইক থেকে পড়ে যাওয়াতে তার পিতা এটা তাকে দিতে চান না। তবে সজিব দক্ষ মটর বাইক চালক হওয়াতে পূর্বে আমরা বাইক বরাদ্দ পেয়েছিলাম। আমি নিজেও ভাল চালক কিন্তু সালাহউদ্দীন ভাই এটা মানতে নারাজ আর আমিও তার ওপর আস্থা রাখিনা। আমার এক কথা ,সে চালালে পেছনে আমি নেই।

রাতে আমরা গেলাম তার নানার বাড়িতে,এটা ৪কি:মি: দূরে। তার নানা এলাকায় বিখ্যাত এবং সর্বজন শ্রদ্ধেয় লোক। রাতে স্থানীয় স্কুলের অতি চমৎকার শান বাধানো বড় পুকুরের পাড়ে বসে আমরা গল্প করলাম,সে গোসল করল,আমি করলাম না।

সকালে উঠে আমরা তার বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়েও হতে পারলাম না,কারণ সে এলাকার বহু লোকের সাথে কথা বা গল্প করার কারনে মাত্র তিন’শ মিটার পার হলাম সাড়ে তিন ঘন্টায়। একজন খুব ব্যস্ততা নিয়ে কোথাও যাচ্ছিল, সে তাকে থামিয়ে গল্প করল..আচ্ছা তোমার মনে আছে, এই পুকুরের পাড়ে একটা পাপড়াগাছ ছিল, আচ্ছা সেটা ঠিক কোন পাশে যেন ছিল ? তবে গাছটা কিন্তু চমৎকার ছিল।.....লোকটা আমার দিকে তাকিয়ে বলল,ভাই এ আমাকে আজ কাজ করতে দিবে না। বলেই সে সাইকেল নিয়ে যেতে চাইল কিন্তু সালাহউদ্দীন ভাই তাকে গল্প না করে ছাড়তে রাজি হলনা। তার সাইকেল আটকে রেখে খানিকক্ষন গল্প চলল। লোকটা এক পর্যায়ে জোর করেই পালাল। আমরা সকল ধরনের যানবাহন মিস করাতে তার পিতার গাড়ির জন্যে অপেক্ষমান থাকলাম।

আপনারা এ পর্যায়ে হয়ত ভাবছেন,সালাহউদ্দীন ভাই আঠার মত একজন,যার কাছে গেলেই আটকে ফেলে। এটা ঠিক যে সে তাই ,তবে সে অসার কথা কম বলে। আর এখানে আমরা এসেছি মজা করতে ,তাই এসব সে বেশী ঘটাচ্ছে। এখানে সে জীবনের একটা সময় কাটিয়েছে,আর মানুষেরা তাকে প্রচন্ড পছন্দ করে। তার বন্ধুদের মধ্যে কুলি-মজুর,রিক্সা চালক রয়েছে আবার উচ্চ শিক্ষিত,ধনীক শ্রেণীও রয়েছে। এরা একে অপরেরও বন্ধু। আর একসাথে তাদের সাথে যখন কথা বলেছি বা গল্প করেছি,তাদেরমধ্যে কোনো পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়নি। প্রত্যেকে সাবলিলভাবে গল্প করেছে,মজা করেছে। এ এলাকায় প্রচুর হিন্দু পরিবার রয়েছে। কিন্তু তারা মুসলিমদের সাথে সুদূর অতিত কাল থেকে অন্তরঙ্গ পরিবেশে বসবাস করে আসছে। এখানে সাম্প্রদায়িক স¤পৃতি সাংঘাতিক ভাল। সালাহউদ্দীন ভাই তাদের কারো কারো কাছে ইসলাম প্রচার করেছে। তারা তাকে স্বাগত জানিয়েছে। তার পিতার প্রতিষ্ঠানের উচ্চ পদেও অনেক বিশ্বস্ত হিন্দু লোক রয়েছে। তবে এখানে বেশ কয়েকটা খারাপ ঘটনাও শুনেছি। কিছু লোক হিন্দুদের সম্পত্তি দখল করেছে এবং সম্পত্তি নেওয়ার জন্যে তাদেরকে নানাভাবে বিপদেও ফেরেছে। ক্ষতিগ্রস্ত সেসব পরিবারের পাশে সকলে দাড়ালেও অনেকের মন ভেঙ্গে গেছে এবং তারা সম্পত্তি বিক্রী করে ভারতে চলে গেছে। এদের সংখ্যা যদিও কম তারপরও এসব ঘটা খুবই দু:খজনক। কিছু খারাপ চরিত্রের নামধারী মুসলিমের জন্যে সকল মুস%

বিষয়: বিবিধ

২৬৮১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File