লা পেরুজ
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ১৯ জুন, ২০১৩, ০৯:৩৬:০৪ সকাল
আমাদের দেশে স্থানীয় এবং অতিথী পাখি শিকারে নিষেধাজ্ঞা আছে। তারপরও সেগুলো শিকার করা হয়। আমাদের এলাকার কিছু লোক মাঝে মাঝে পাখি শিকার করে গোপনে আমাদের বাড়িতে দিয়ে যেত। তবে পাখির মাংস মুরগীর মাংসের মত চমৎকার নয়। ওটা বেশ শক্ত ধরনের। হতে পারে আমি মুরগীর মাংসে অভ্যস্ত হবার কারনে আমার এমনটা মনে হচ্ছে। আমি বহু রকমের পাখির মাংস খেয়েছি তবে সেগুলো মুরগীর মত স্বাদের মনে হয়নি। আমার আব্বা ভোজন রশিক হওয়াতে তার পাখি প্রীতি ছিল। অতিথী পাখি অতিরিক্ত শিকারের ফলে আমাদের দেশে এদের উপস্থিতি অনেক কমে গেছে। অতিথী পাথি শিকারের ব্যাপারে কথা বলতে গিয়ে প্রয়াত এক মন্ত্রী একবার বলেছিল-‘ওরা অতিথী কিভাবে হয়,ওদেরকি আমরা দাওয়াত করে এনেছি ?’
আমরা হাটছি একটা বড় ড্রেন বা খালের পাশ দিয়ে। এখানকার পানিগুলো পরিষ্কার মনে হলনা। তবে আশপাশটা বেশ চমৎকার। এর পাশ দিয়ে খুব সুন্দর একটা রাস্তা চলে গেছে। সেখানে অনেকে সাইকেল চালাচ্ছে দেখলাম। পার্কে খেলাধুলা করার অনেক সরঞ্জাম রয়েছে। এখানকার পরিবেশ ভাল লাগল।
খানিক পর নাতিকে ঠেলতে ঠেলতে পূর্বোক্ত মাঠে প্রবেশ করলাম। আমাদের দল জেতার পথে এবং শেষ পর্যন্ত জিতে গেল। আমাদের ক্রিকেট টিমটি এখানে খুব শক্তিশালী। টিমের সকলেই অত্যন্ত ভাল মনের মানুষ। তাদের মানুষিকতার মিলের কারনেই তারা একে অপরের খুব ভাল বন্ধু। এরা একে অপরের জন্যে সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ করে থাকে। কারো প্রয়োজনে প্রত্যেকে এগিয়ে আসে। এভাবে দূর দেশে এরা একটি দারুন কমিউনিটি গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে। এদের প্রতি রইল আমার শুভকামনা।
আমরা এটা ওটা খেয়ে চলে গেলাম লা-পেরুজ। সিডনীতে বহু সংখ্যক সি-বীচ রয়েছে। এখানে দেখার তালিকায় তাই সি-বীচ শীর্ষে। প্রত্যেকটা সি-বীচের সৌন্দর্য্য অতি অসাধারণ। আমরা লা পেরুজ আসলাম এবং দেখলাম রাস্তার দুপাশেই বীচ। এটা রাস্তার একটা সরু মাথা যা সাগরের ভেতর চলে গেছে। এখানে একটি ছোট্ট দ্বীপ রয়েছে যেখানে গড়ে উঠেছে একটি দারুন স্থাপনা। সেখানে যেতে একটি কাঠের সেতু পার হতে হয়। জেম্স বন্ড সিরিজের একটি ছবি এখানে নির্মিত হয়েছিল। জনাব মহা শক্তিধর জেমস বন্ড যে পাহাড় বেয়ে উঠেছিলেন। সেই অতি উচ্চ পাহাড়ের কাছে এসে দেখলাম এটা বড় জোর বিশ/পচিশ ফুট উঁচু হবে। তবে দেখতে চমৎকার,আর নির্দিষ্ট একটি অংশে ক্যামেরা ধরলে মনে হবে বিশাল কোনো খাড়া পাহাড়ের শীর্ষদেশ।
আমরা সাগর তীরে আসলাম। এখানটা পাথরে ভরা। পাথরখন্ড ক্ষয়ে ক্ষয়ে একটি শৈল্পিক পটভূমী তৈরী করেছে। আমরা সেটার ওপর দিয়ে হাটলাম। পাড়ের অংশ বেশ উচু এবং পাথরের তৈরী। এটা পাথুরে শিলা দিয়ে গঠিত। পাড়ের জেমসবন্ড পাহাড়ের(!) নীচের অংশ খুবই সুন্দর। সেখানে পাথর ক্ষয়ে এমন আকার ধারন করেছে যে মনে হয় প্রাকৃতিক গুহা এবং সেটার পৃষ্ঠদেশ মসৃন এবং সেখানে আরবী ক্যালিগ্রাফীর মত তৈরী হয়েছে। সে সৌন্দর্য্য দেখার জন্যে অনেকক্ষন তাকিয়ে থাকলাম।
কিছুক্ষন পরপর বড় বড় ঢেউ এসে পাথরের ওপর আছড়ে পড়ছে। এ দৃশ্য দেখে সত্যিই ভাল লাগল। এখানকার সি-বীচগুলোতে মানুষ তেমন সাতরাতে আসেনা। এদিকটা দেখার জন্যেই বেশী লোক আসে। রাস্তার আরেকপাশে রয়েছে সবুজ মাঠ তার ওপাশে আবার সাগর।
আমরা এবার এমন একটি স্থানে আসলাম যা এ স্থানটি থেকে খানিক দূরে। সচরাচর মানুষ এদিকে আসেনা। এখানে লতাপাতা কাটা,খানা খন্দক পাড়ি দিয়ে আমি আর আমার ভাগনী জামাই আসলাম একটা উঁচু পাড়ে। এটা খাড়া পাথরের পাড়। ষাট ফিট হবে উচ্চতায়। এখান থেকে সাগর দেখা বিরাট কিছু। নীচে কিছু ডুবুরীকে দেখলাম ডুব মারছে। এখানে বাতাসের তীব্রতা এতটাই বেশী যে মনে হচ্ছিল যে কোনো সময় নীচে পড়ে যেতে পারি। তারপরও কিনারায় গেলাম। যেখানে দাড়িয়ে ছিলাম সেটার নীচের অংশ ছিল একটি পাতলা পাথরের পাত। নীচের দিকটি ক্ষয়ে ক্ষয়ে এমন হয়েছে। এখানে পাথরের ওপর নানান রকমের লতা গুল্প জন্ম নিয়েছে। সেগুলোর সৌন্দর্য মুগ্ধ করল। বাতাসের প্রকোপের জন্যে এখানে বেশীক্ষণ থাকা হলনা। আমরা ফিরলাম। তবে সাগরের প্রেমে পড়লাম। মনের মধ্যে গেথে গেল,সাগর-প্রকৃতি।
বিষয়: বিবিধ
২৪১৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন