অবার্নের মাঠে

লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ১৮ জুন, ২০১৩, ০৯:৩৮:৪৮ সকাল



আমার ভাগনী জামাই ভাল ক্রিটেটার। এখানে বেশ কয়েকটি বাংলাদেশী টিম রয়েছে,সে একটি টিমের ক্যাপ্টেন। আমাদের এক পারিবারিক বন্ধু এখানকার ক্রিকেট বোর্ডের কর্মকর্তা। তারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রতিযোগীতার আয়োজন করে থাকে। এটা তেমন জাকজমকপূর্ণ না হলেও আনন্দ দেয়।

এক রবীবারে আমরা স্বপরিবারে গেলাম খেলা দেখতে। এখানে বিশাল বিশাল মাঠ রয়েছে। রাস্তায় চলার সময় সেসব বিশাল মাঠ দেখে মন ভাল হয়ে যায়। প্রত্যেক এলাকায় পাশাপাশি কয়েকটি বাড়ি তারপর বিশাল সবুজ মাঠ তারপর আবার কিছু বাড়ি তারপর আবারও বিশাল বিশাল মাঠ। প্রত্যেকটি এলাকাকে কয়েকভাগে ভাগ করা হয়েছে এবং তাদের জন্যে বিভিন্ন সুবিধা সংরক্ষণ করা হয়েছে। বৃষ্টির পানি প্রবাহিত করার জন্যে যেভাবে ড্রেন তৈরী করা হয়েছে তার শৈল্পিক দিকটি দেখলেও ভাল লাগে। আর মুষলধারে বৃষ্টি হলেও কোথাও পানি জমে থাকেনা। ড্রেনগুলো খুবই প্রশস্ত এবং মজবুত কংক্রিটের তৈরী। সেটা কারো বাড়িঘরের পাশ দিয়ে অতিক্রম করলে তার পাশে অবশ্যই লোহার গ্রিল বা তারের নেট দিয়ে সেটা ঘিরে রাখা হয়। আমি সকল ড্রেনই শুকè অবস্থায় দেখেছি। কোনো কোনো এলাকায় ড্রেনগুলো টানেলের মত। সেগুলো দিয়ে আমরা হেটে অন্য রাস্তায় গিয়ে উঠেছি। ড্রেনগুলো শুকè থাকার কারণ হল,এখন গৃষ্মকাল। যদিও কিছু বৃষ্টি হয় তারপরও সেটা তেমন নয়। আর সিডনীতে জনবসতি এতটাই কম(অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা হল সিডনী) যে, পানি যা তারা ব্যবহার করে সেটা ড্রেনে পৌছে খানিকক্ষনের মধ্যে শুকিয়ে যায়। বাড়িতে ব্যবহৃত পানি ভিন্ন পথে প্রবাহিত হয়। রাস্তা,ফুটপাথগুলো খুব চমৎকারভাবে তৈরী এবং তার সাথে সামঞ্জস্য রেখে ড্রেনগুলো তৈরী করা হয়েছে। রাস্তায় ঘাস,গাছ রোপন করা হয়েছে খুব যতেœর সাথে ফলে সেখানে হাটতে মানুষের ভাল লাগবে।









যাইহোক অবার্নের মাঠে আসলাম। এখানে পাশাপাশি তিনটি বিশাল মাঠ। আশপাশে আরও মাঠ আছে। এখানে বয়ষ্ক কিছু রসিক বাঙ্গালীকে দেখলাম। তারা বিভিন্নভাবে খেলোয়াড়দেরকে অনুপ্রানিত করে থাকেন। অনেকে এখানে বিশেষ বিশেষ দায়িত্বপ্রাপ্ত। খেলার এক পর্যায়ে আমি আমার নাতিকে নিয়ে হাটতে চলে গেলাম। রাস্তায় লোকজনের তেমন আনাগোনা নেই। হেটে আমি একটি পার্কে প্রবেশ করলাম। একপাশে দেখলাম একটি বোটানিক্যাল গার্ডেন। এর গেটের ওপর হাটাহাটি করছে বিশাল এক ময়ুর। এপাশ ওপাশ করছে। আমি কাছে গেলাম তবুও সে ভয় পেলনা। ময়ুরের সৌন্দর্য অসাধারণ। ভেতরে বহু ধরনের গাছ গাছালি রয়েছে। এখানে গবেষকরা গবেষনাও করেন। আমি ভেতরে প্রবেশ না করে পাশের পার্কে ঢুকে গেলাম। এটা বেশ বড় পার্ক। এর ভেতর মাটি অনেক উঁচু করে সবুজ ঘাস লাগানো হয়েছে। দেখে মনে হবে সবুজ পাহাড়। আজ অনেকে পারিবারিক পিকনিকে এসেছে। এক আরবীয় পরিবারকে দেখলাম এখানে বাচ্চার জন্মদিন উজ্জাপন করছে। তারা একটি শেডকে বেছে নিয়েছে এবং আত্মীয় স্বজন মিলে সেটাকে বেলুন,ফুল দিয়ে সাজাচ্ছে। রান্না বান্নার জন্যে সকল আয়োজন সম্পন্ন করছে। বাচ্চারা খেলাধুলা করছে। বুড়া বুড়িরাও এসেছে হাটাহাটি করতে যদিও এটি দুপুর। ছায়াঘন এ এলাকাটিতে অবশ্য যে কোনো সময়ই আসা যায়। আর যে কোনো কাজে বিরক্ত করার কেউ নেই তাই যে কোনো লোক এটাতে এসে স্বস্তি বোধ করবে।

আমি হেটে হেটে বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করলাম। এখানে রাজহাসের মত বড় এবং লম্বা বাকানো ঠোটের সাদা রঙের এক ধরনের পাখি আছে ,যা সর্বত্র বিরাজমান। এদের কোনো আতঙ্কভাব নেই। এরা মানুষের আশপাশে থাকে এবং খাবার খায়। আমাদের দেশে এমন পরিবেশে এসব পাখি ঘুরে বেড়ালে আমাদের মুরগীর খরচ বেঁচে যেত। আমরা এমন পার্কে শুধু রান্নার সরঞ্জাম নিয়ে হাজির হতাম। আমার মনে হল একেকটি পাখি থেকে অন্তত তিন/চার কেজী মাংস পাওয়া যাবে। এমন দুটো পাখি দিয়ে অন্তত এক ডজন বন্ধুর এক পাল’কে খাওয়ানো যায়। তবে এরা একাজ করেনা। কারণ এটা করে ধরা পড়লে সর্বনাশ। জেল না হয় খাটা গেল,কিন্তু জরিমানার টাকা গুনতে ফকির হতে হবে। তবে জেল জরিমানা না থাকলেও এরা এটা খেতনা। এরা শিক্ষিত এবং সচেতন আর সৎ।

বিষয়: বিবিধ

১৮৩১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File