ডার্লিং হারবার ২
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ১৬ জুন, ২০১৩, ০৭:৫১:১৫ সন্ধ্যা
আমি টি-বার নামক একটি ব্রান্ডের দোকান খুঁজছিলাম। এটার অনেকগুলো শাখা আছে কিন্তু কয়েকসপ্তাহ পূর্বে আমি কোন শাখায় গিয়েছিলাম তা বুঝতে পারলাম না। এ কোম্পানীর একজনের সাথে দেখা করা জরুরী। তার ভিজিটিং কার্ড হারিয়ে ফেলেছি। ডার্লিং হারবারে এসে বুঝলাম এ শাখায় সে লোক ছিলনা। তবুও এখান থেকে তথ্য পেতে পারি মনে করে এগিয়ে গেলাম। এখানকার বুড়িরা সাংঘাতিক হেল্পফুল। আমি রাস্তাঘাটে বুড়িদের কাছে কোনো ঠিকানা জানতে চাইলে তারা সাহায্যের জন্যে তটস্থ হয়ে ওঠে। বুড়োরাও বেশ।
এক যুবক হাতের ইশারায় কোন দিকে যেতে বলল তা তেমন ভাল বুঝলাম না। এক বুড়ি আমার সাথে খানিক এসে ভাল করে বুঝিয়ে দিল কোন দিক থেকে কোথায় যেতে হবে।
হারবারে দেখলাম একটা বিশাল হলুদ রঙের দেহ,লাল ঠোট বিশিষ্ট হাস ভেসে বেড়াচ্ছে। এটি কোনো এক ব্রান্ডের লোগোতে রয়েছে। লোগোর হাসকে তারা বিশাল আকৃতির হাওয়া ভর্তী প্লাস্টিকের পুতুলে পরিনত করে সাগরে ভাসিয়েছে। এর আগে একদিন দেখেছিলাম ব্যান্ড পার্টিসহ বেশ কয়েকটি বড় বোট নিয়ে এই হাসটিকে এখানে ওখানে টেনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সেদিন বোধহয় এর উদ্বোধন করা হয়েছে। অনেকে চমক দেখাতে পছন্দ করে। এসব চমকের কারনে প্রতিষ্ঠানগুলো বেশ লাভবানও হয়।
ডার্লিং হারবারে প্রত্যেকদিন হাজার হাজার পর্যটক আসে। ছুটির দিনে আসলে মানুষের ঢল দেখা যায়। এখানে সাগরের তীর সমান্তরাল নয়, সাগর স্থলভাগের ভেতরে প্রবেশ করে কয়েক দিক দিয়ে বের হয়ে যাওয়াতে তীরের কাঠামো হয়েছে এবড়ো খেবড়ো। তবে পয়সা আর প্রযুক্তির কল্যানে এরা পুরো এলাকাটাকে যা বানিয়েছে তা হয়েছে অতি দর্শনীয় স্থান। এখানে সাগরের প্রানীদের নিয়ে বিশাল বিশাল এ্যাকুইরিয়াম রয়েছে। সাগরের প্রানীদের মিউজিয়াম রয়েছে এবং পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মাদাম তুসো যাদুঘরের একটি শাখা রয়েছে এখানে।
মাদাম তুসোর বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এখানে পৃথিবীর বিখ্যাত বিখ্যাত ব্যক্তিদের মোমের মূর্তী গড়ে রাখা হয়। সেটা এতটাই জীবন্ত যে প্রথম,দ্বিতীয়,তৃতীয় ধাক্কায়ও মানুষ ধোকা খেতে পারে। আমি লক্ষ্য করলাম পা থেকে মাথা পর্যন্ত অত্যন্ত দক্ষতার সাথে তৈরী করা। চুলগুলো যেন প্রত্যেকটা আলাদাভাবে তৈরী। চোখের দিকে তাকিয়ে থাকলেও জীবন্ত মানুষের সাথে তফাৎ বোঝা যায় না। শুনেছি একেকটা মূর্তী গড়তে ছয় মাস সময় লাগে। এটা মোমের হলেও বেশ শক্ত পোক্ত। অটত্রিশ ডলারে টিকেট কেটে ঢুকতে হয়। মানুষ ছবি তোলার সময় বেশ ধস্তাধস্তী করছিল কিন্তু মূর্তীর কোনো ক্ষতি হয়নি।
হার্বারের একটি অংশে সাবমেরীন দেখলাম, এটার ওপর ওঠার জন্যে টিকেট কাটতে হয়। কয়েক ফিট পাশ থেকেই তো ভাল দেখা যাচ্ছে,ওর ওপর উঠে দেখার কি আছে ? পুরো ডার্লিং হার্বার জুড়ে প্রচুর খাবার দোকান এবং সুভেন্যির,পোষাকের দোকান। বড় বড় অনেক প্রতিষ্ঠানের শাখা অফিস রয়েছে এখানে। এখানে অফিস বা প্রতিষ্ঠান থাকার মধ্যে আলাদা মর্যাদা রয়েছে।
হার্বার ব্রিজটি বহুকাল পূর্বে ইংরেজদের তৈরী কিন্তু এখনও শক্ত পোক্ত। এটি কাঠ এবং লোহার সমন্বয়ে তৈরী। নীচের দিকে স্টিল এবং কাঠের পিলার রয়েছে। কাঠামোর অধিকাংশই কাঠ। কাঠের সাথে স্টিলও ব্যহৃত হয়েছে। ব্রিজটির ওপরের অংশ কংক্রিটের। ব্রীজের নীচের দিকে নামা যায় সিড়ি দিয়ে।
আমি আমার কাঙ্খিত লোকের ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য পেলাম। ফুরফুরে মেজাজে চলতে শুরু করলাম। হার্বার এলাকাটাকে নানান রকমের টাইলসে মোড়া হয়েছে এবং সেখানে বিভিন্ন রকমের কৃত্তিম ঝর্ণা তৈরী করা হয়েছে। কৃত্তিম কিছু গাছও আছে। নানান বর্ণের বাতি শোভিত এলাকা এটি। এখানে হাটতে সবারই ভাল লাগবে। মানুষ সময় কাটানোর জন্যে এখানে আসে। অত্যন্ত পরিচ্ছন্ন পরিবেশ আর সাগরের নির্মল হাওয়া সত্যিই ভাল লাগে। হাটতে হাটতে এক পাশে এসে দেখলাম একটা মিউজিক গ্র“প। আমার ভাষায় বান্দর গ্র“প। এ গ্র“পে অন্তত বিশ জন লোক রয়েছে শুধু নাচ-গান করার জন্যে,এছাড়াও অনেক হেলপার রয়েছে। এজাতীয় গ্র“পগুলো বেশ অর্থ কামায়। এদের সাজ সরঞ্জাম বেশ। কোনো উম্মুক্ত স্থানে এরা বেশ বড় একটা স্টেজ তৈরী করে খানিক ঘিরে,বড় বড় সব স্পিকার স্থাপন করে লম্ফ ঝম্প করে গান বাজনা করে। কয়েকজনকে দেখলাম সাংঘাতিক শারিরীক কসরতে পটু। এরা এক হাতের ওপর ভর করে লাফাচ্ছে,ওপরে পুরো শরীর। নানান প্যাচে ডিগবাজি খাচ্ছে। ছেলে মেয়ে সকলেই বেশ তুখোড়। একেক জনের সাজসজ্জা একেক রকম। কারো কারো দেখলাম মাথার চুলে বহু রকম রং করেছে,কেউ বড় ঝুটি ওয়ালা,কেউ নাকে মুখে নানান রকমের রিং পরিয়েছে,হাতে-পায়ে-গায়ে উল্কী,কেউ টাক।
এ গ্র“পকে টেলিভিশনের কোনো এক অনুষ্ঠানে দেখেছি। রাতে এদের অনুষ্ঠান আছে,এখন তার মহড়া চলছে। এসব ফুটপাথের অনুষ্ঠান এরা প্রচন্ড দ্রুত আয়োজন করতে পারে। স্টেজ তৈরী করার সাজ সরঞ্জাম বড় বড় ট্রাকে করে নিয়ে এসে একটার সাথে আরেকটা সংযুক্ত করে কিছুক্ষনের মধ্যেই স্টেজ বানায়। বড় জেনারেটর থেকে ইলেট্রিক লাইন টেনে বড় বড় স্পিকার বিভিন্ন স্থানে স্থাপন করে ফেলে। তারপর দর্শকদের ব্যারিকেড দেওয়ার জন্যে আরেকটি অংশ তৈরী করে। পুরো কাজটি করার জন্যে থাকে সুদক্ষ একটি টিম। সিডনীতে এরকম অনেকগুলো গানের দল আছে। শহরের ভেতরের কোনো হাটাচলার রাস্তায় এরা গানের আয়োজন করলে পুলিশ আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করে। কিছুক্ষনের মধ্যেই পাল পাল লোক চারিদিক থেকে জড় হতে শুরু করে। গানের সাথে গলা মেলায় এবং নিজেরা নাচতে থাকে। এসব কাজে স্কুল বা ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা এগিয়ে।
সেদিন সন্ধ্যায় এমনই একটি অনুষ্ঠান হতে দেখলাম টাউন হলে। সে সময় আমার টয়লেটের তাড়া ছিল। আমি একটি উত্তম জায়গা খুঁজছিলাম কিন্তু মানুষের ভীড়ের মধ্যে পড়ে আমি আটকে গেলাম। আমি সামনে যেতে চাচ্ছিলাম আর সামনের লোকেরা ভাবছিল আমি বুঝি একেবারে স্টেজের কাছাকাছি গিয়ে গান শুনতে চাচ্ছি। বাঙ্গালী হলে ধাক্কা দিয়ে এগিয়ে যাওয়া ব্যাপার না কিন্তু তাদেরকে ঠেলে সামনে যাওয়া সম্ভবপর ছিলনা। তারপরও একটু একটু করে এগিয়ে গেলাম কারন পেছানোর অবস্থা নেই। এবার বামে মোড় নিয়ে এক বড় শপিং সেন্টারে ঢুকতে যাব,তখন পুলিশ বলল এদিকে যাওয়া যাবে না,ওদিকে যান। বললাম- আমি টয়লেটে যাব, পুলিশ বলল-ও অচ্ছা আচ্ছা যান যান। বিরাট বড় স্থান। মানুষদেরকে জিজ্ঞেস করলাম কিন্তু যে প্রান্তে এসেছি সেখানে শুধুই মহিলা টয়লেট। আবার বহু দূর হাটলাম আবার ভুল ঠিকানা। আবার হেটে টয়লেট পেলাম। আমিও ফিরলাম,গানও শেষ হল। দর্শক আরেকটি গান গাওয়ার জন্যে অনুরোধ করছিল কিন্তু শিল্পীরা রাজি হলনা। স্টেজে শিল্পী দেখলাম পাচ জন। এরা দল বেধে নেচে নেচে গায়।
বিষয়: বিবিধ
১৫৮০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন