সিডনীর রাস্তায়

লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ১৩ জুন, ২০১৩, ০২:৪০:১৮ দুপুর







আশপাশে বেশ খানিক সময় হাটলাম। এবার ট্রামে চেপে চলে আসলাম চায়না টাউনের কাছে। এখান থেকে খানিক হেটে মনোরেল স্টেশনে আসলাম। এ ট্রেনগুলো মাথার ওপর দিয়ে হুশ হাশ চলে যায় চিকন একটা রেলের ওপর দিয়ে। এটি আকারে লম্বা নয় আবার চাওড়াও নয়। চারটি মাইক্রো বাস পরষ্পর জুড়ে দিলে যা দাড়ায়,তাই হল মনোরেল। এর মাধ্যমে কিছু স্থানে খুব দ্রুততম সময়ে চলে যাওয়া যায়। এমনকি ডার্লিং হারবার ব্রিজের ওপর দিয়েও এটি চলে গেছে। আমি আমার সাপ্তাহিক টিকেটটি দেখিয়ে বললাম,এই টিকেটে কি মনোরেলে ওঠা যাবে ? ভদ্রলোকটি বললেন না, আপনাকে ষোল ডলারে টিকেট কাটতে হবে। আমি ভাবলাম আমি যাব সেন্ট্রালে। খানিক হাটলেই তো যেতে পারি। এতে ওঠা তো জরুরী নয়,অবশ্য এসব হল যুক্তি; কিন্তু আমি আসলে;ষোল ডলার খরচ করতে চাইনি হেহেহেহে....। ওই লোক যদি বলত- এই টিকেটেই তুমি ভ্রমন করতে পারবে। তাহলে এসব যুক্তি নিজের মনের মধ্যে না এনে মনোরেলে উঠে পড়তাম। Tongue

চায়না টাউন আসলাম। এটা চায়নিজদের ব্যবসা জোন। এখানে বহু ধরনের পণ্য সামগ্রী তারা অন্য স্থানের চাইতে কিছুটা কম মূলে বিক্রি করে। এখানে অনেকগুলো চায়নিজ রেস্টুরেন্ট আছে। আমি একদিন এদিক দিয়ে যাওয়ার সময় একজনকে একটা ঠিকানা জিজ্ঞেস করে বুঝলাম সে ইংরেজী জানেনা,আরেকজন বলল-“নো দোন্ট ইঙিলিছ”(আমি ইংরেজী জানিনা)। অন্য লোক না পেয়ে আরেক চায়নিজের দারস্থ হলে তিনি আমাকে সাহায্য করলেন। এখানে প্রতিনিয়ত চায়নিজরা আসছে কাজ করার জন্যে। বাঙ্গালীদের একটা বদনাম রয়েছে,তারা নিজের দেশের লোকদেরকেও ছাড় দিতে চায়না। তার কর্ম সংস্থান হলে তার পরিবার ভাল থাকবে এমন চিন্তা করে কাওকে উপকার করে বলে তেমন শোনা যায়না। বরং আদম ব্যাপারীরা অত্যন্ত অমানবিক আচরণ করে থাকে। সর্বস্থ লুটে নিয়েও অনেকে সন্তুষ্ট হতে পারে না। এমন ব্যবস্থা করে দেয় যাতে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে দেশে ফেরত যায়। অনেক লোমহর্ষক সত্য ঘটনা রয়েছে এ ব্যাপারে। আর সরকারী লেকদেরও যেহেতু অনেক সময় চরম অমানবিক হতে দেখা গেছে তাই ভুক্তভোগীরা অনেক সময় অভিযোগও করে না।

চায়নিজরা এমনটা করেনা। এরা এদের লোকদেরকে ঠেলে ওপরে উঠিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। যদিও এমন জাতীয়তাবাদী চেতনা সমঅধীকারের অন্তরায় তারপরও বিদেশে এসে মানুষ নিজের জাতির লোকের কাছে আশ্রয় চায়। সেক্ষেত্রে বাঙ্গালীকে তেমন উদার হতে দেখিনি বা শুনিনি। বরং অনেকে বিদেশে এসে বাঙ্গালীকে এড়িয়ে চলে। তারা মনে করে,এরা আমার সাথে মিশে কোনোভাবে ক্ষতি করতে পারে অথবা ক্ষতি করার সম্ভাবনা না থাকলেও বাঙ্গালী বাঙ্গালীকে এড়িয়ে চলে। যাইহোক বাঙ্গালী কর্তৃক ক্ষতির ঘটনা এত বেশী ঘটেছে যে,এই বিশ্বাসে বিশ্বাসী মানুষের পরিমান বেশী।

এ মুহুর্তে একটা ঘটনা মনে পড়াতে খারাপ লাগছে। চায়নাতে তিনমাস কাটানোর পর একবার এক বয়ষ্ক বাঙ্গালী মুরব্বীর সাথে দেখা হল,তার মুখে ছিল দাড়ী। আমি তাকে দেখে অত্যন্ত খুশী হলাম। বিদেশের মাটিতে পরিচিত মুসলিম বাঙ্গালী মানে বড় কিছু। অনেকদিন পর কাওকে সালাম দিতে পারব। তিনি তখন অন্য আরেকজন বাঙ্গালীর সাথে ছিলেন। আমি উনাকে স্বসম্মানে সালাম দিলাম। আর উনি আমার সালামের কোনো উত্তর না দিয়ে অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন,আমার দিকে পর্যন্ত আর তাকালেন না এবং যার সাথে তিনি কথা বলছিলেন তিনিও মাথা নীচু করে চুপ করে রইলেন। আমি খানিকক্ষন পাথরের মত নিশ্চুপ দাড়িয়ে থেকে দু:খ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে চলে গেলাম। আমি ফেরার পর হয়ত তারা নিজেরা নিজেদের আচরনে চরম সন্তোষ প্রকাশ করেছেন যে আশু ক্ষতির হাতথেকে তারা রক্ষা পেলেন !

বিষয়: বিবিধ

১৯৯৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File