সিডনীর ভিক্ষুকবর্গ
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ১০ জুন, ২০১৩, ০৯:৩৯:৪০ সকাল
শহরে ঘুরে ঘুরে মানুষের চাল চলন,গতি-বিধি দেখা,শহুরে প্রকৃতিকে উপলব্ধী করা ছিল আমার স্বভাব। ট্রেনে করে সেন্ট্রাল,মিউজিয়াম,সার্কুলার কী,টাউনহল,বন্ডাই,মার্টিন প্যালেস এবং সিডনীর আরও বহু এলাকায় যেতাম। তারপর যে কোনো এক দিকে হাটা শুরু করতাম। হাটতে হাটতে বহুদূর চলে যেতাম। কখনও বিভিন্ন শপিং সেন্টারে যেতাম বিভিন্ন পণ্য এবং তাদের দাম দেখতাম। দামে সস্তা হয় এমন কিছু কিনেছিও। তবে বেশীরভাগ সময়ই আমি দেখতাম। পোষাকের দাম এত বেশী যে আমি কেনার কথা ভবতে পারতাম না। একদিন একটা লেদার জ্যাকেট দেখলাম এবং পছন্দ হল। কিন্তু ৩০% ডিসকাউন্টের পরও সেটার দাম ছিল ১২শ ডলার। এরপর আর এসব দেখিনি।
সেন্ট্রাল স্টেশন আসলাম। এখান থেকে অনেকগুলো পথে বের হওয়া যায়। একটি টানেলের মধ্যে আসলে আমার বার বার হাসি পায় কারন এখানে বেশ কিছু শিল্পী(ভিক্ষুক) গান শুনিয়ে থাকে। গান শুধু উপলক্ষ্য মাত্র। গিটারে হাত থাকলেও চোখ(কখনও মনের চোখ) থাকে মানুষের পকেটে। সামনে টুপি অথবা গিটারের বাক্সটা ফেলে রাখে,যাতে মানুষ সেখানে কিছু দিতে পারে। অনেকে বেশী পায় অনেকে কম,তবে ওদের চলে যায়।
একদিন দেখলাম এক সুন্দরী মেয়ে ছোট স্পিকারে গান গাইছে এবং ভাল গিটারও বাজাচ্ছে। তার গলায় সুর আছে বেশ। আর মানুষের মুখের দিকে তাকিয়ে যেভাবে গান গাচ্ছে তাতে মনে হল এ এই লাইনে সফল। তার পাত্রে দেখলাম দশ ডলার,পাঁচ ডলারের নোট রয়েছে বেশ কয়েকটা আর দুই ও এক ডলারের কয়েন রয়েছে বহু সংখ্যক। ঘন্টা খানেকের মধ্যেই বোধহয় সে বেশ কামিয়েছে। এক বুড়োকে দেখলাম প্রথমে তার আকর্ষণীয় হাসিমুখের দিকে তাকাতে তাকাতে চলে গেল। বহুদূর গিয়েও যখন শেষ বারের মত তাকালো,তখন মেয়েটাও গান গাইতে গাইতে শেষবারের মত হাসল। বুড়ো বোধহয় আর সহ্য করতে পারল না, নিজের বিরুদ্ধে গিয়েই বোধহয় পাঁচ ডলারের নোটটা বের করে তার গিটারের বাক্সে ফেলে আসল। আমি সামনে এগিয়ে গেলাম।
দেখলাম এক লোক বসে আছে। বেশ অনাথ অনাথ চেহারা, বোধহয় ছিন্নমূল। পয়সার অভাবে সহসা মদটদ,পেটে পড়েনা। পাশে একটি মোটা কাগজে লেখা সাহায্য কর। লোকটার সামনে ১০/২০ সেন্টের কিছু কয়েন এবং ৫০ সেন্টের কিছু। এ লোক ঢং জানে না,ওর উন্নতি হবে কি করে ? এগিয়ে গেলাম।
এ লোকটি গিটারিস্ট কিন্তু পূর্বোক্ত মেয়েটার মত জ্ঞান বুদ্ধী নেই। এর কোনো মাইক্রোফোন সমৃদ্ধ স্পিকার নেই। সে খালি গলায় বেসুরো গান গাচ্ছে যা আমি একটু খেয়াল করেই বুঝতে পারলাম। আমি অবিষ্কার করলাম সে নিজে গান বেঁধেছে,উনি গাতক। খেয়াল করে শুনি নিজের বিভিন্ন দু:খ দূর্দশা নিয়ে গান গেয়ে যাচ্ছেন। কিভাবে জব হারালো এবং আবার তা পেলনা,কিভাবে দু:খ পেল এসব একের পর এক বয়ান করে মাথা ঝাকিয়ে গিটার কষে মানুষের দ্বারস্ত হয়েছে। সে তেমন বেশী উপার্জন করতে পারেনি তবে অনাথ লেকাটার চাইতে বেশী পেয়েছে। এখানে মুখ বন্ধ রেখে এবং কোনো প্রতিভার প্রদর্শনী না ঘটিয়ে ভিক্ষা করলে তার খবর খারাপ। একবার প্যাডিংটনে এক মেয়ে আমাকে দাড় করালো। তারপর বার্গার কিনে দিতে বলল। আমি সেদিন ওর মতই ফকির টাইপ ছিলাম। বার্গারের দাম দশ ডলার আর ওর যে সাইজ দেখেছি তাতে দশটা বার্গার লাগবে মনে করে রাস্তা মাপলাম।
বিষয়: বিবিধ
১৭৩৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন