স্টাটাসে পদাঘাত

লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ০৪ জুন, ২০১৩, ০৬:০৬:২১ সন্ধ্যা



সেদিনের সেই গেঁটেবাত ওয়ালা ভদ্রমহিলার জন্যে ওষুধ নিয়ে আজও ব্যাংকে গিয়েছিলাম কিন্তু একজন পিওনের কাছে জানতে পারলাম তিনি আসলে এখানে কাজ করেন না,তিনি আরেকটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। তবে আল্লাহ আমার নিয়ত কবুল করেছেন ধরে নেওয়া যায়,কারণ আল্লাহ নিয়ত দেখেন। ব্যাংকে থাকা অবস্থায় মনে করলাম ইদানিং মানুষ সুন্নাহ নিয়ে যা খুশী তাই বলছে এবং করছে। আমি কি বেশ কিছু বিখ্যাত সিরাতগ্রন্থ অধ্যায়ন করে একটি থিসিস মার্কা কিছু দাড় করাতে পারিনা ? অথবা একটি সংকলন লিখতে পারিনা ? যেই মনে হল ,সেই সময়ই উঠে দাড়ালাম। নাহ আজই,এক্ষুনি কিছু সীরাত গ্রন্থ কিনে পড়া শুরু করতে হবে।

আমার বোনের ফোন আসল কিন্তু তা রিসিভ করলাম না। কারণ আমাকে তার জন্যে একটা প্লেনের টিকেট কাটতে হবে গুলশান থেকে। আমি এখন মতিঝিল। ব্যাংকে আমার কাজ আছে কিন্তু সব কাজ বন্ধ করে এখন আমি যাব বায়তুল মুকাররম মার্কেটে। নাহ কিছু একটা লিখতেই হবে। মনের মধ্যে বইগুলোর নাম সেট করার চেষ্টা করলাম। মনে হয় নিজেকে আমি সীরাত রচয়ীতাদের কাতারে নিয়ে গিয়েছি।

এসব ভাবতে ভাবতেই ব্যাংক থেকে বের হলাম। ব্যাংকের সামনের রাস্তায় একটা নোংড়া পানি ভর্তি স্থান। একটু সামনে যেতে গিয়ে দেখলাম এক সাইকেল আরোহী সাইকেলের ওপর বসে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে,সাইকেল নিয়ে এদিক দিয়ে পার হবে কিনা। তার হঠাৎ থেমে যাওয়ায় আমি তার পেছনে ভদ্রতার সাথে অবস্থান করতে থাকলাম। হঠাৎ তিনি সাইকেল থেকে হিন্দী সিনেমার নায়কের মত পেছনে পা ঘুরিয়ে নামলেন আর ঠিক সেই মুহুর্তে বেশ দশাসই একটা লাথি আমার বুকে এঁকে দিলেন। শার্টটা ছিল একেবারে পরিষ্কার। লাথিটা একেবারে পারফেক্ট হয়েছে। কিন্তু ভদ্রলোক সাইকেল ফেলে আমাকে সরি সরি বলে জড়িয়ে ধরলেন। আমি যতই বলি এটা কোনো ব্যাপারই না,ভাই আমি কিছুই মনে করিনি। ততই তিনি লজ্জিত হয়ে ক্ষমা চাইছিলেন। আমি আসলে তার লাথিকে একেবারেই অবজ্ঞা করে চলে যেতে উদ্দত হয়েছিলাম। কারণ আমি জানি তিনি একাজ ইচ্ছাকৃতভাবে করেননি। এসকল ক্ষেত্রে আমি কখনই তাদের দিকে তাকাই না,আমি চলমান হলে চলার গতিও কমাই না। অনেক সময় এমন ক্ষেত্রে তারা ভাবে আমি বোধহয় বিষয়টা খেয়াল করিনি। কিন্তু বিষয়টা স্পষ্ট জানা সত্ত্বেও আমি এড়িয়ে যাই কারণ এর মধ্যে মহা কল্যাণ রয়েছে। বহু লোক এসব বিষয়কে উপলক্ষ্য করে ছোট খাটো জটলা পাকিয়ে ফেলে এবং কিছু গালি-গালাজও ছোড়াছুড়ি হয়। আমার গায়ের শক্তি তাদের চাইতে কম নয়। কিন্তু আমি তাৎক্ষনিকভাবে মনে করি এটা আমার জন্যে একটি সহজ পরিক্ষা কারণ আমি সবসময় আল্লাহর কাছে দোয়া করি,তিনি যেন পৃথিবীতে আমার পরিক্ষাগুলো অত্যন্ত সহজ করে দেন। আর এটা সবসময় মনে থাকে যে,আমি ধৈর্য্যধারন করলে তার জন্যে মহা পুরষ্কার রয়েছে।

আরও একটা বিষয় মনে থাকে যে, আমি যে আচরণ তার সাথে করলাম এবং বিষয়টা স্বাভাবিকভাবে নিলাম,তিনিও এরূপ পরিস্থিতিতে এমন আচরণ করতে পারেন। তার উক্ত আচরনটিতে যদি আমার এই আচরণটি একটি অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করে ,তাহলে পরবর্তীতে তার এসকল সদাচারনের সওয়াবের আমিও একজন ভাগীদার এবং তাতে ওই লেকাটির সওয়াব কমবে না।

নিজে নিজে মনে করি- এ বিষয়টিতে আমি বেশী সওয়াব পাব যদি ঘটনার সম্মুখিন হয়েও বুঝতে না পারার ভান করি। কারণ তিনি একটি অনাকঙ্খিত কাজ করেছেন আর আমি যদি থেমে তাকে তা মনে করিয়ে দেই ,অথবা দাড়িয়ে পড়ি তাহলে তিনি অবশ্যই লজ্জিত হবেন। আর আমি তার দিকে না তাকিয়ে নিজের পথে চলে গেলে তিনি মনে মনে খানিক লজ্জিত হবেন বটে কিন্তু একটা প্রকাশ্য লজ্জা থেকে তিনি রেহাই পাবেন। এই কারনে আমার মনে হয় বিষয়টাকে এড়িয়ে গেলেই আমার সওয়াবের পাল্লা ভারী হবে। আমি রাস্তাঘাটে হাটার সময় বহুসংখ্যকবার থুথু,নোংড়া পানি,পানের পিক,কলার খোসা,ময়লা,কাকের ইয়ে ইত্যাদীর সংস্পর্শে এসেছি। একবারও বিরক্ত হয়নি। বরং সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহর কাছ থেকে এর পুরষ্কার নেওয়ার কথা মনে হয়েছে। আর মুমিনের পায়ে সামান্য কাটা ফুটলেও আল্লাহ তায়ালা তার কোনো পাপ ক্ষমা করেন এবং সওয়াব দান করেন। যদিও আমি কোনো জাতের মুসলিম নই কিন্তু মুমিন হওয়ার ইচ্ছা সবসময় মনের মধ্যে গেঁথে থাকে।

যাইহোক, লাথি খাওয়ার পর মনে মনে এ কথাটাই ঘুরপাক খাচ্ছিল যে, যে মুহুর্তে নিজেকে একজন সীরাত রচয়ীতার পর্যায়ে উন্নিত করলাম,ঠিক সে মুহুর্তেই আল্লাহ তায়ালা একখান জম্পেস লাথি খাওয়ালেন। অর্থাৎ বুঝিয়ে দিলেন, ওহে নাদান , মূর্খ ! আয়নায় নিজের যে ছবি দেখিস সেটাও উল্টো ! আর নিজের মস্তিষ্ক সম্পর্কে যে উচ্চাভিলাষ সম্বলিত ছবির জন্ম নিল,সেটা বরাবর ওই লাথিটা মনে রাখিস !

আসলে ফাইটং ম্যাট ছাড়া মনে করতে পারছি না,আর কখনও এমন কিক খেয়েছি কিনা। লোকটা ছিল তাগড়া যুবক। তবে খানিক পর ,আবার মনে হল,আমি তো সীরাতের সঙ্কলন লিখতে চাইছি। আমি তো আর রসূল(সাঃ) সম্পর্কে মিথ্যা রচনা লিখছি না। অতি সতর্কতার সাথে লিখলে সেটা থেকেও তো কিছু মানুষ উপকৃত হতে পারে। আমার নিয়ত তো ছহি।

চলে আসলাম ইসলামী ফাউন্ডেশনে। সীরাত ইবনে হিশাম চাইলাম। বলা হল বহুকাল পূর্ব থেকে এটা ছাপানো বন্ধ আছে। বললাম-ও। অন্যকোনো সীরাত গ্রন্থ্য কি আপনাদের আছে ? তারা বলল-না। জিজ্ঞেস করলাম-এগুলো তো অনেক গুরুত্বপূর্ণ বই,ছাপানো বন্ধ কেন ? তারা বলল-সরকারী বরাদ্দ নেই। ব্যস ! এই একখানেই সবাই ধরা। বরাদ্দ বন্ধ থাকলে অনেক কিছুই আপনা আপনি বন্ধ হয়ে যায়। বেশ কিছু হাদীস গ্রন্থের ছাপাও বন্ধ আছে। তবে সকল ক্ষেত্রে বরাদ্দ বন্ধ নেই। হযরত বদনা শাহ্ যদি তার বদনার কারামত সংক্রান্ত বয়ান করে তিন খন্ডের বই প্রকাশ করেন,তাহলে তা চাহিদার নীম্নে থাকলেও প্রকাশনার লিস্টে উর্ধ্বাবস্থান ধরে রাখবে,আশা করা যায়।

এবার পাশের বইয়ের দোকানগুলোতে আসলাম। তারা বিভিন্ন সীরাতগ্রন্থ দেখাল কিন্তু আমার পছন্দ হলনা। আমি বিখ্যাত কিছু সীরাতের বাংলা কপি খুঁজলাম কিন্তু পেলাম না। মনে হল বাংলার আলিমরা ঐতিহ্যবাহী খাবার দাবার ভক্ষন করেছে সামনে কয়েক ফুট ভূড়ী বাড়ানোর জন্যে। আবার অনেক আলিমের কথা মনে হল,তারা অনেক কাজ করেছেন কিন্তু মানুষেরা তাদের রেকর্ড মুছে দিয়ে তৃপ্ত। খানিক পর আলিমদের ওপর চাপা রাগ আর থাকল না। এখানে তো তারা খেয়ে না খেয়ে কুরআন-সুন্নাহ চর্চা করে। পৃষ্ঠপোষকতা না থাকার পরও কিছু যে হয়েছে ওটাই এখন শান্তনা ! ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রফেসরের লেখা সিরাত গ্রন্থ কিনলাম। তারপর মনে হল নেটে সার্চ করলেও তো কিছু পাওয়া যায়। বাসায় এসে নেটে সার্চ করে ইবনে হীশাম পেলাম নিম্নোক্ত ঠিকানায় :

http://www.mediafire.com/download/4rd6bxrx1rnbvx2/Life+of+Prophet+Muhammad+%28peace+be+upon+Him%29_seerat+Ibn+Hisam_Bangla.pdf

সু-মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা যেন আমার সৎ ইচ্ছা পূরণ করেন এবং সকল ভুল-ত্র“টি ক্ষমা করে দেন ! আমি বড়ই অধম ।

বিষয়: বিবিধ

২৬৪৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File