সিডনীর পথে ঘোরাঘুরি

লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ০৩ জুন, ২০১৩, ১০:৪৮:২৪ সকাল



সাপ্তাহিক টিকেট পকেটে থাকলে চিন্তা থাকেনা। শুধু সময়মত বিভিন্ন যানবাহনে উঠে পড়ার দরকার। আমি উদ্দেশ্যহীন চলতাম। চায়নার মত এদেশে যেহেতু ভাষার সমস্যা নেই এবং মানুষ খুবই বন্ধুবৎস্যল আর পুলিশও সাহায্য করতে মরিয়া তাই চিন্তা করা লাগত না। কেউ যদি হারিয়ে যায় তাহলে মানুষ বুঝতে পারলে তাকে হয় পুলিশের কাছে হস্তান্তর করবে,নয়ত নিজেই পৌছে দিবে। যদি নিজের ঠিকানা বলতে না পারে তাহলে মোবাইল থেকে ফোন করে আপনজনদের কাছ থেকে জেনে নিবে। আর যদি ঠিকানা বলতে না পারে,মোবাইলও না থাকে তাহলে পুলিশ তার নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় দায়িত্বশীলতার সাথে ঠিকানা খুঁজে তাকে যথা স্থানে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করবে। তাকে বিপদগ্রস্থ অবস্থায় ফেলে অবশ্যই পালাবে না। কারো আত্মীয় হারিয়ে গেলে তার কাছে মোবাইল ফোন থাকলে জিপিএস সিস্টেম ব্যবহার করে তার অবস্থান জেনে পুলিশ উদ্ধার করবে। রাস্তায় কেউ অসুস্থ্য হলে তাকে হাসপাতালে পৌঁছানো মানুষ তার কর্তব্য মনে করে। যে কোনো বিপদে পুলিশ খুবই বিশ্বস্ত বন্ধু। আর এসকল সেবা প্রদানের জন্যে যদি রাষ্ট্রীয় তহবীল থেকে লাখ লাখ ডলারও খরচ হয় তবুও পুলিশ তা করতে মোটেও পিছপা হবে না। গাড়িতে কাজ না হলে আকাশে এক বা একাধীক হেলিকপ্টার ওঠানো হবে এবং কর্তব্যে শিথিলতা প্রদর্শন করা হবে না। ফলে এখানে মানুষ বেশ নিশ্চিন্তে থাকতে পারে।

সার্কুলার কী তে আসলাম। এখানে রয়েছে পাঁচটি ফেরীঘাট। ফেরীগুলো অত্যন্ত দ্রুতগতি সম্পন্ন। এর নীচ দিয়ে পুরো ফাকা। ফেরীর নীচের দুপাশের কিনারা পানিকে স্পর্শ করেছে। দুতলা এই ফেরীগুলি দেখতে স্পিডবোটের মত। এটি বেশ বড় এবং শতাধীক ছিট রয়েছে ভেতরে। ফেরীগুলো সাগরে চলছে। সাগরের বড় বড় ঢেউ ভেঙ্গে এটি নিশ্চিন্তে চলাচল করে দ্রুত গতি নিয়ে। সম্ভবত এটি ঘন্টায় ১২০কি:মি: বেগে চলতে পারে। কাছাকাছি কোনো দ্বীপ বা এলাকায় যেতে আমি ফেরী ব্যবহার করি কারন এতে সময় বাচে। সীডনীর সরকপথ সোজা সাপ্টা না হয়ে একটু ঘুরপ্যাচের। তাই সাগরের কিনারায় অবস্থিত কোনো এলাকায় যেতে ফেরীই উত্তম। সম্ভবত এটা তাসমান সাগর ,এটা মিলিত হয়েছে প্রশান্ত মহাসাগরে।

সিডনীর এ অংশে হিংস্র হাঙরের বসবাস,তবে ডুবুরীদের আহত হওয়ার খবর তেমন পাওয়া যায়না। সকল সি-বীচে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা আছে। তারপরও কিছু লোক সেসব সতর্কতা না মেনে সাতার কাটে এবং পাড়ের উঁচু পাথরখন্ড থেকে পানিতে লাফ দেয়। এদেরকে আক্রান্ত হতে দেখিনী। এছাড়া বহু লোককে সার্ফিং করতে দেখেছি এমনকি সাফিং বোর্ডটির ওপর উঠে দাড়িয়ে বৈঠা দিয়ে বাইতে বাইতে মনের আনন্দে এগিয়ে যায় আবার সেখান থেকে লাফিয়ে পানিতে নামে। অনেকে অনেকদূর পর্যন্ত সাতার কাটে। কেউ কেউ গামলার মত দেখতে ছোট নৌকা চালায়,চিৎ হয়েও পড়ে কিন্তু হাঙরের কামড় খায়নি। মাঝে মাঝে সাতার প্রতিগেীতাও হয় সাগরে। অতি অল্প কয়েকজন ছাড়া হাঙরের কামড় খাওয়ার রেকর্ড নেই। হাঙর এক হাজার কোটি ফোটা মানির মধ্যে থাকা এক ফোটা রক্তের অবস্থান পরিষ্কার বুঝতে পারে। ২৫০ মিটার দূরত্বে থেকে তারা পানির ভেতরে চলমান কোনো জীব,বস্তুর অবস্থান বুঝতে পেরে সেটাকে টার্গেটে রুপান্তরিত করতে পারে। পানির ভেতর প্রায় দুই কি:মি: দূর থেকে তারা রক্তের গন্ধ পায়। আর কৌতুহল মেটাতে মাত্র একটা কৌশলই শুধু তার জানা আছে। সেটা হল প্রচন্ড বেগে একটা মধুর কামড়। এভাবেই সে কোনো কিছু পরখ করে থাকে। সে কামড়ে কাষ্ঠখন্ড,প্লাস্টিক পর্যন্ত খন্ডিত হয়ে যায়। কিছু করার নেই এটাই তার স্টাইল। হাঙরের দাত পড়ে গেলে তা আবার গজায় এবং বার বার গজায়। হাঙরের কামড় খাওয়া আসলে ভাগ্যের ব্যাপার। এখানকার অধিকাংশ সাঁতারুরা এমন ভাগ্যবান না হতে পেরে ধন্য।

যতদিন ফেরীঘটে এসেছি ,ততদিনই একটা করে সুবিশাল জাহাজ বা প্রমোদতরী ঘাটে দাড়িয়ে থাকতে দেখেছি। বড় ফেরীটি জাহাজের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় নিজেকে খুব ক্ষুদ্র মনে হয়। সাধারনত ডেকের ওপর থেকে এগুলো ১০/১২ তলা উঁচু। ডেকের নীচে সম্ভবত আরও দশ তলা হবে। ছাদের ওপর আরও অনেক জিনিসপত্র,যন্ত্রপাতি রয়েছে। এর ভেতর মানুষের আরাম আয়েসের সকল ব্যবস্থা রয়েছে এবং সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়েছে। প্রতিদিন এখান থেকে যাত্রীদেরকে তুলে নিয়ে জাহাজ তার গন্তব্যে রওনা হয়। বিলাসী আমোদ ফুর্তীতে এর জুড়ী নেই।

বিষয়: বিবিধ

২০৪৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File