হাত বাড়াও বন্ধু পাবে
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ০২ জুন, ২০১৩, ০৯:৫৩:৫৯ রাত
আজ ব্যাংকে গেলাম একটা কাজে। কাজটা বেশ সময়সাপেক্ষ। তাই বসে ছিলাম একটা সোফায়। পাশেই দুজন পিওন ছিল। খানিক পর ব্যাংকের পরিচ্ছন্ন কর্মী আসল সেখানে। পিওন দুজন নিজেদের ভেতর আলোচনা করছিল। একজনকে বেশ হতাশ দেখাচ্ছিল। কথোপকথন শুনে বুঝলাম তার ডায়াবেটিস ধরা পড়েছে এবং ফাস্টিং ব্লাড সুগার ১৩। চিন্তার বিষয় বটে।
দূর্ভগ্যজনকভাবে দুজনই একই পথের পথিক। একজনকে নিয়মিত ইনসুলিন নিতে হয়। আমি হতাশ লোকটির সাথে কথা বলা আরম্ভ করলাম। এ বিষয়ে আমার জানা জ্ঞান যতটুকু ছিল তা বললাম। তাকে পরামর্শ দিলাম অত্যন্ত আন্তরিকভাবে। উভয়কেই কিছু বললাম এবং খানিক পর তারা আমাকে অত্যন্ত আপনজন ভাবা শুরু করল। তারা তাদের শারিরীক আরও কিছু বিষয়ে প্রশ্ন করল। সবিনয়ে বললাম আমি ডাক্তার নই তবে একজন সচেতন মানুষ আর ফিজিক্যাল ট্রেনার হিসেবে যতটুকু জানা সম্ভব ততটুকু জানি আর এর ভিত্তিতেই কথা বলছি। আমার ভুলও হতে পারে। তবে আপনাদেরকে যে তথ্য দিচ্ছি তা আমার জানামতে সঠিক।
আমি তাদের খ্যাদ্যাভ্যাস এবং শরীর চর্চার ব্যাপারে পরামর্শ দিলাম। বিশেষকরে হতাশ লোকটিকে আমি মানুষিকভাবে শান্তনা দিয়ে তার ভয় দূর করার চেষ্টা করছিলাম। আমি সুন্নাহ থেকে যে জ্ঞান পেয়েছি তাতে এটা স্পষ্ট যে,মানুষকে আশার বানী শোনাতে হবে। কাওকে হতাশ করা উচিৎ নয়। আলহামদুলিল্লাহ তার ভয় ভাঙতে সক্ষম হয়েছি। সে আমার ওপর বেশ খুশী হল।
এবার আমার বামপাশে বসে থাকা পরিচ্ছন্ন কর্মী প্রবীন ভদ্র মহিলা তার নিজের ব্যাপারে কথা বলা শুরু করলেন। তার হাড়ে ব্যাথা। এ সম্পর্কে আমি যা জানি তা বললাম এবং ডাক্তার দেখাতে বললাম। আর আমার মনে হল পায়ের গোড়ালী এবং হাটুর ব্যাথার যে বয়ান তিনি দিলেন তাতে তার ইউরিক এসিড বেড়ে গেছে। তাই তাকে খাবার দাবারের ব্যাপারে কিছু পরামর্শ দিলাম। আর যেহেতু গরিব মানুষ এবং আমি পরামর্শ দিলেও যেহেতু তিনি ডাক্তারের কাছে যাবেন না(তার কথায় এটা মনে হয়েছিল), তাই একজনকে তার কথা জানিয়ে একটা ওষুধ নিলে নিলাম এবং ওষুধটা তাকে কিনে খেতে বললাম। তাকে আরও অনেক উপদেশ নসিহৎ করে বুঝলাম এদের সাথে মানুষ সাধারনত কথা বলে না।
এদেরকে আদেশ দেওয়া ছাড়া অন্য কোনো কথা বলা হয় বলে মনে হয়নি। আমার অত্যন্ত আন্তরিকতাপূর্ণ কথায় তারা যে খুব সন্তুষ্ট হল,এটা বুঝতে জ্ঞানী হওয়ার দরকার নেই। আর প্রত্যেকটা মুহুর্তে মনে হচ্ছিল আল।রাহ যেন আমার এই সামান্য কথাকে সদাকা হিসেবে গ্রহন করেন এবং পৃথিবী ও আখিরাতে কোনোভাবেই শাস্তি না দেন।
এবার ডান পাশের পিওন ভদ্রলোকটা তার কাঠাল খাওয়ার গল্প করল। তাতে হাসির কিছু না থাকলেও আমি হাসি হাসি মুখ করে তা শুনলাম। এবার বামের ভদ্রমহিলা কোথা থেকে দু-পিছ টোস্ট নিয়ে হাজির হল এবং আমাকে খেতে দিল। একপিছ তাকে দিলাম,আরেক পিছ খেতে খেতে কথা বললাম। আপনারা যদি জানতেন ওই টোস্টের দাম কত,তাহলে চোখ কপালে উঠে যেত। পুরো পৃথিবী বিক্রী করলে যত টাকা পাওয়া যাবে,তার চাইতে ওই টোস্টের দাম অবশ্যই বেশী।
ডানের ভদ্রলোকটি ইতিমধ্যেই এক কাপ চা নিয়ে হাজির। না করার সুযোগ তৈরী হতে দেননি তিনি। অনেক ধন্যবাদ দিলাম কিন্তু তিনি নিশ্চুপ থাকলেন,না এটা তার অভদ্রতা নয়। এরা ধন্যবাদ পেতে অভ্যস্ত নয়। তার নিরবতাই আমাকে সন্তুষ্ট করল।
চলে আসার সময় ভাবছিলাম,ভদ্র মহিলাটা কি ওই ওষুধ কিনবে ? ভাবলাম আরেকদিন তো যেতে হবে,আমি না হয় ওষুধটা কিনে নিয়ে যাব। হ্যা, এটাই ঠিক করলাম। কারন এরা বড়ই অলস। দয়া না করতে শেখা সমাজ-রাষ্ট্র এদের তিল সদৃশ পয়সার ওপর ট্যাক্স বসিয়ে ,চিকিৎস্যার নূন্যতম প্রয়োজন থেকে বঞ্চিত করে ওদেরকে অলস বানিয়ে দিয়েছে। ডাক্তারের ভিজিট ,ডাক্তারী পরিক্ষা আর ওষুধের রসদের চিন্তা এদেরকে অলস করে দেয়।
কিন্তু ভাল লাগছে। ওরা আমার ওপর খুশী,আমিও। এরাই বন্ধু,এটাই বন্ধুত্ব।
বিষয়: বিবিধ
২০০১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন