ব্লগার ওরিয়নের সাথে এক রাত

লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ৩১ মে, ২০১৩, ১২:১০:০১ দুপুর



ব্লগার ওরিয়ন বা আলতাফ ভায়ের ফোন আসল। আজ রাতে তিনি আমাকে সেন্ট মেরীতে দাওয়াত করেছেন।

আমি মাসকট থেকে সেন্ট্রাল স্টেশনে এসে পেনরিথ লাইনের ট্রেনে উঠলাম। দেড় ঘন্টারও বেশী সময় পর আমি সেন্ট মেরী স্টেশনে নামলাম। আলতাফ ভাই এবং নুরুদ্দীন ভাই আমাকে নিয়ে গেলেন এখানকার মসজিদে।

আজ কিয়ামূল লাইল বা রাজ জেগে ইবাদত। কিয়ামূল লাইল বলতে রাতে দাড়ানোকে বুঝায়,ভাবগত অর্থ হল,রাতে আল্লাহর ইবাদতের উদ্দেশ্যে দাড়ানো বা নামাজে দাড়ানো। সন্ধ্যা সাড়ে আটটা বা নয়টার দিকে আমি পৌঁছলাম। এখানে একজন তাফসীরকার কুরআনের তাফসীর করছিলেন। টপিক ছিল আল্লাহর ইবাদতে বা বাণী প্রচারে ধৈর্য্য,শহনশীলতা,একাগ্রতা,নির্ভীকতা ইত্যাদী,আমি যোগ দিলাম। যালিম শাসকের নির্যাতনের প্রেক্ষিতে কিভাবে ধৈর্য্য ধারন করে এবং নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে সর্বোচ্চ শক্তিমত্তার সাথে তা মোকাবিলা করতে হবে সেটা ছিল আলোচনার মূল।

মসজিদটার ভেতর অংশ বেশ চমৎকার। মোটা নরম কার্পেট ,বসে মজা আছে। গ্রামের কিছু মসজিদে কার্পেটের নামে পাটের তৈরী এক ধরনের অমসৃন মাদুর পাতা হয়। সেটার ওপর নামাজ পড়লে বা বসলে পশ্চাৎদেশে,পায়ের নীচে, হাটুতে খবর হয়ে যায়। এরা মসজিদের জন্যে পয়সা খরচ করে,ফলে সমস্যা নেই।

আলতাফ ভাই আমাকে তার প্রায় সকল বন্ধু এবং মুরব্বীদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন। তাদের সাথে পরিচিত হয়ে খুব ভাল লাগল। তারা আমাকে অপন মানুষ ভাবল। অবশ্য আমি লোকটা এমন মানুষদেরকে পর পর ভাবিনা। সেখানকার ভায়েরা ছিল খুবই আন্তরিক। কিছুক্ষন পরপর একেক জন নিজ দায়িত্বে আমার সাথে পরিচিত হচ্ছিল এবং ব্যক্তিগত খোজ খবর নিচ্ছিল। কেউ কেউ আবার ছিলেন বেশী আন্তরিক।

কুরআনের তাফসীর খুব ভাল লাগল। এমন দেশে ইসলামের চর্চা আছে শুনতেও ভাল লাগে। রাতে খুব দারুন জিনিস খেলাম। এটা আমার খুব প্রিয় ছিল। বড় পাত্রে গরুর মাংস রান্না হয়েছে,যেখানে আলু ও ঝোলের উপস্থিতি প্রচুর। আমি আলুখোর মানুষ। আর গরুর মাংসের ঝোল রুটি দিয়ে খেতে আমার দারুন লাগে। লেবানিজ রুটির সাথে আমরা খেলাম। আমি সত্যিই অনেক বেশী খেলাম,বলাযায় হাভাতের মত খেলাম। আর কিছু ভাই পাশ থেকে চাপাচাপি করছিল বেশী খাওয়ার জন্যে। সাধারনত আমি অতিরিক্ত খাইনা বরং পরিমিত খাই। কিন্তু এ রাতে আমি খুব ভক্তি করে প্রচুর খেলাম। সাথে ছিল কোমল পানীয়।

গভীর রাতে ব্লগার ওরিয়ন ভাই পরম মমতায় মোটা কার্পেটের ওপর মোটা ও নরম লম্বল বিছিয়ে আরেকটি কম্বল গায়ের ওপর দিয়ে দিল। চোখ বুজতেই রাত শেষ। ফজরের সময় একজন খুব নরম সূরে আমাদের কক্ষে এসে সালাম প্রদান করলেন,এতে কারো ঘুম ভাঙল,কারো ভাঙল না। যাদের ভাঙল তারা পাশের লোককে খুবই মৃদুভাবে উঠিয়ে দিল এবং ওযু করে আমরা নামাজে দাড়ালাম। নামাজের পর একজন আমাদেরকে সূরা-ক্কিরাতের প্রচলিত কিছু ভুল উচ্চারনকে শুদ্ধ করার জন্যে তালিম দিল। বয়তে তিনি ছিলেন অনেকের চাইতে নবীন কিন্তু তার পড়াশুনা অনেকেই চাইতে বেশী। খুব ভাল লাগল। পুরো পরিবেশটা ছিল আমার অন্তরের অনুভূতির পক্ষে। আমি ইসলাম অনুসরনকারী তরুন-যুবকদের পছন্দ করি। আলতাফ ভাই বার বার বলছিল,ভাই আপনাকে ঠিকভাবে আপ্যায়ন করা সম্ভব হলনা। কি জানি কি দিয়ে কি খাওয়ালাম ব্লগে আবার তা লিখে দিবেন। ভাই কিছু মনে কইরেন না ...ইত্যাদী। আমি সত্য বলি। আসলেই আমি তাদের খাবার খুব পছন্দ করেছি এবং আমি ছিলাম তৃপ্ত। ওগুলো ছিল আমার পছন্দের খাবার। যদিও কেউ আপ্যায়ন করলে খাবার খারাপ হলেও সুন্নাহ হল সেটার প্রশংসা করা কিন্তু দ্বার্থহীনভাবে বলতে পারি খাবারগুলো ছিল উপভোগ্য। আর খেয়েছিলাম একেবারে গলা থেকে তলদেশ পর্যন্ত। Happy তাদেরকে জানাচ্ছি অন্তরের অন্তস্থল থেকে শুভেচ্ছা এবং ধন্যবাদ। আল্লাহ তাদেরকে দুনিয়া এবং আখিরাতের কল্যান দান করুন ! আর ব্লগার ওরিয়ন হলেন এক অমায়িক ভাল মানুষ। তার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক !

আজ রবীবার,এদের এই অনুষ্ঠান আজ সারাদিন চলবে। আমাকে একজন বাসায় পৌঁছে দিতে এক পায়ে খাড়া হলেন। আমি গেলাম না,কারন আমাকে সিটিতে যেতে হবে। আমার আবার কাজ আছে। কাজ ছাড়া আমি আবার বাঁচতে পারিনা (!) ,বান্দর কোথাকার !!

বিষয়: বিবিধ

১৯৩৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File