সেন্টানিয়াল পার্ক(ছবি আছে)

লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ২৯ মে, ২০১৩, ০৯:৪৮:৫০ রাত





আহ অসাধারণ পার্ক। পার্কটি বেশ বড়। এর ভেতরের রাস্তাগুলো পরিচ্ছন্ন এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ দেখার মত। সরকার জনগনের চিত্ত বিনোদনের জন্যে কিছু করে; তা বোঝা গেল। ভাল লাগার মত সব উপাদান রয়েছে এখানে। রাস্তার দুপাশে বড় বড় বৃক্ষ দেখলাম। এরকম বড় রাস্তা বেশ কয়েকটি চলে গেছে পার্কের ভেতর দিয়ে। পরিচিত গাছের মধ্যে বড় বড় বটগাছ দেখলাম। আমরা চমতৎকার লেক সমৃদ্ধ গাছগাছালিতে পরিপূর্ণ এবং বড় খেলার মাঠ সংযুক্ত ছায়াঘন একটি স্থানে আসলাম। এমন স্থান এখানে অনেক আছে। মাঠের এক পাশে বৃহৎ গাছপালা,তার পাশে স্টিলের একটি বড় টেবিলের মত জিনিস রয়েছে। এটি আসলে দুটি গ্যাসের চুলা,যেখানে মাংস স্টেক করে খাওয়া যায় অর্থাৎ ভাজি ভুজি করে কিছু খাওয়া যায়। একেবারে বিনা পয়সায় যতখুশী চুলা জ্বালানো যায়। জিনিসটা যে বেশ দামী তা বোঝা যায়। পাশে একটি অতি চমৎকার শেড রয়েছে। সেখানে রয়েছে নারী-পুরুষের জন্যে আলাদাভাবে তৈরী খুবই পরিচ্ছন্ন বাথরুম। চমৎকার ডিজাইনসহ ওটা বানাতে বেশ পয়সা খরচ করেছে বোঝা যায়।



এখানে আজ আমরা এক পাল জড় হয়েছি। বন্ধু-বন্ধব,আত্মীয় স্বজন,বাচ্চ-কাচ্চা মিলে অনেক। কয়েকজন ভেড়া,মুরগী স্টেক করতে লাগল। আমরা লেবানিজ রুটি,সস,সালাদ সরকারে খেতে থাকলাম। মাঠে ক্রিকেট,ফুটবল সব খেলাই চলল। বাচ্চারা হুড়োহুড়ি,মারামারি,কান্নাকাটি করতে লাগল। তাদের মায়েরা বা নতুন স্ত্রীরা গল্প গুজবে মশগুল হল। তারা মিউজিক বল খেলে আসর জমালো। এটি অতি পরিচিত খেলা,যেখানে সকলে গোল হয়ে বসে একটি বল/বালিশ একে অন্যের হাতে দ্রুত হস্তান্তর করে লাইফ বাচায়। মিউজিক/ঘন্টা বাজতে থাকে এবং একজন এদের দিকে না তাকিয়েই এক সময় বন্ধ করে এবং তখন বলটি ধরে থাকা ব্যক্তিটি খেলা থেকে বাদ পড়েন। এভাবে সর্বশেষ লোকটি প্রথম হন। প্রথম তিনজনকে পুরষ্কার দেওয়া হল।

খানিকপর দেখলাম ইউরোপের দুজন লোক হকিস্টিকের মত বিশেষ ব্যাট দিয়ে বল পেটাচ্ছে। এটা নাকি তাদের জাতীয় খেলা। আমাদের অনেকে ভাল ক্রিকেটার তারা কৌতুহলী হয়ে সেটা দিয়ে পেটাতে লাগল এবং বলটা কয়েকবার ফেলল বড় পুকুরের পানিতে। এরা অতিশয় ভদ্রলোক।

আমি একা একা হাটতে থাকলাম। পাশেই একটি উঁচু স্থান দেখলাম। সেখানে গিয়ে দেখলাম অনেকগুলো বিশাল বিশাল বটগাছ। আর একটি দেওয়াল ঘেরা অংশে একটি বিশাল পুকুর। পাছপালার ভেতর দিয়ে হেটে আরেক পাশে দেখলাম অতিশয় চমৎকার দিঘি,যার ভেতর ছোট দ্বীপ রয়েছে। চারিদিকে ঝোপঝাড় আর ফুলের বাগান। এ মনোরম দৃশ্য সহ্য করতে না পেরে রাস্তা পেরিয়ে আরেক পাশের চমৎকার গার্ডেনে প্রবেশ করলাম। রাস্তায় ঘোড় সওয়ার পুলিশ দেখলাম। ঐতিহ্য ধরে রাখতে এ এন্তেজাম। এখানে রাস্তা থেকে ক্রমশ সবুজ মাঠ ঢালু হয়ে একটি বিশাল দিঘিতে চলে গেছে। দিঘির পাড়ে রয়েছে বড় এবং ঘন ঘাস,লতা গুল্ম। এর সৌন্দর্য অসাধারণ। লেকটির পানি কবুতরের চোখের মত স্বচ্ছ এবং এর মাঝখানে একটি দ্বীপ রয়েছে। সেখানে বহু প্রাচীন বটবৃক্ষসহ আরো নানা রকমের বৃক্ষরাজি রয়েছে। পানিতে রাজহাস তার বাচ্চাসহ,বালুহাস,পাতিহাস সাতার কাটছে। দিঘির পাড়েও বিভিন্ন রকমের পাখি,হাস,হাসের ছোট ছোট বাচ্চা হাটাহাটি করছে,আমি মুগ্ধ হয়ে সেদিকে তাকিয়ে থাকলাম। আমি আমার দৃষ্টি প্রসারিত করলাম এবং আমি মুগ্ধ হলাম,তাকিয়েই থাকলাম। এটা সত্য নয়,যেন এটি শিল্পীর তুলিতে আঁকা ছবি। আবার মনে হল শিল্পী এত দারুন ছবি আকতে পারবে না। আমি অসহ্য স্যেন্দর্যের সমারোহে অতিষ্ঠ হয়ে উঠলাম।



একটা বিশাল মাঠে আসলাম। এখানে একটি গ্র“প এসেছে পিকনিকে। বোধহয় কোনো কোম্পানীর পক্ষ থেকে। এরা নানান খেলাধুলা,আড্ডা,গল্পে মত্ত। এরা একটা খেলা করছিল যা আমার মনে ধরল। দু-দল কিছুটা দূরত্ব রেখে দু লাইনে দাড়াল। এরপর এপাশের লোক তার সম্মুখ বরাবর থাকা ওপাশের লোকের দিকে ডিম ছুড়ে দিচ্ছিল। যদি ডিম ফেটে যায় অথবা ধরতে ব্যর্থ হয়,তাহলে সে বাদ পড়বে। এভাবে প্রথমবার সফলভাবে ডিম ধরতে পারলে পরেরবার আরও খানিকটা দূরত্বে দাড়িয়ে অনুরূপ ডিম ধরার চেষ্টা করছিলেন। এভাবে শেষ পর্যন্ত টিকে থকা ব্যক্তিটিই সেরা। কেউ কেউ মজা করে সিদ্ধ ডিম ছুড়ছিল তখন সেটা ধরে সে খেয়ে ফেলছিল। আবার কেউ ডিম ধরতে না পারায় ডিমটি যখন নীচে পড়ে ফেটে যাচ্ছিল,সকলে উচ্চস্বরে হেসে উঠছিল। কারো কারো মুখ বরাবর ডিম ছুটে আসলে হাতে লেগে তা মুখেও পড়েছে,সেটি আরও বেশী হাস্যরসের সৃষ্টি করে। আমি বেশ খানিকক্ষন ধরে এ দৃশ্য দেখে আরেক পাশে গেলাম।

এপাশে আরও অসহ্য ব্যাপার। এখানে ফুল আল ফুল। একটারও নাম জানিনা। তবে লাল,হলুদ,কমলা,বেগুনী কত যে রঙের ফুল তা সঠিকভাবে বলতে পারব না। অনেকগুলো পুকুর আছে। এক পুকুর আবার দেখলাম শান বাধানো। খুব ভাল লাগল। কোনো পুকুরই অশোভন নয়। এরা এতটা যত্ম করে এগুলোর সৌন্দর্য্য বর্ধন করেছে যে,ভাল না লেগে উপায় নেই। এখানে চমৎকার রাস্তাটি পেরিয়ে দেখলাম ওপাশে বিশাল একটি মাঠ। পুরো মাঠ সবুজ ঘাসে পরিপূর্ণ। এর একপাশে দেখলাম বড় বড় বৃক্ষের একটি বড় বাগান। সেখানে একই মাপের বৃক্ষগুলো দূর থেকে দেখে আমার খুবই ভাল লেগেছে। নীচে সবুজ ঘাস সৌন্দর্য্য বর্ধন করেছে।























সবগুলো ছবি আমি উঠিয়েছি। আমি যে জগৎসেরা ফটোগ্রাফার এগুলো দেখে হঠাৎ আমার তা মনে হল। Happy

না, এসব সহ্য হচ্ছেনা। চলে আসলাম লোকজনের মধ্যে। কারো কারো সাথে গল্প করলাম। আরও খেলাম। খাবারের উচ্ছিষ্ট,নানান প্যাকেট এবং পাত্রে পাশে থাকা সহজে স্থানান্তরযোগ্য ডাস্টবিন পরিপূর্ণ হল। সদা বিচরণশীল সাদা রঙের লম্বা ঠোটের পাখিরা এটা ওটা ঠোক মেরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল। বিকেলের মধ্যেই অবশ্য সরকারী পরিচ্ছন্ন কর্মীরা স্থানটি আবার পূর্বের মত পরিচ্ছন্ন করে রাখবে। ভাল কাটল দিনটা। আলতাফ ভায়ের ফোন আসল। আজ রাতে তিনি আমাকে সেন্ট মেরীতে দাওয়াত করেছেন।

পরের পর্ব মিস করবেন না। আমার মনে হচ্ছে আপনাদের ভাল লাগবে Happy সাথে থাকুন

বিষয়: বিবিধ

২৬২২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File