সিডনীর পথে...২
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ২৭ মে, ২০১৩, ০৯:২১:৫৮ সকাল
আজ সিটির মার্টিন প্যালেসে একটা মিটিং ছিল বিশ্বের সর্ব বৃহৎ সৌর বিদ্যুৎ প্যানেল নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের সাথে। সিডনীতে এসে আমি একটা বিষয় দেখে অবাক হলাম। এখানে কোনো প্রতিষ্ঠান কোনো ব্যক্তির সাথে সরাসরি কথা বলেনা এবং মিটংয়েও বসে না। কোনো প্রতিষ্ঠানের সাথে কারো কথা বলার থাকলে অবশ্যই তার নিজের তথ্য দিয়ে ইমেইল বা তাদের ফ্রন্ট ডেস্কে তথ্য জমা দিতে হবে,অবশ্য অনেক প্রতিষ্ঠানের ফ্রন্ট ডেস্ক ব্যবস্থা নেই। সেক্ষেত্রে ইমেইল বা ফোনই ভরসা। এসব তথ্য উপাত্য যাচাই করে উক্ত কোম্পানী যদি মনে করে তাদের কথা বলা জরুরী তাহলেই তারা সাক্ষাতের সময় নির্ধারণ করে,নচেৎ নয়।
এরা সময়ের ব্যাপারে বেশী হিসেবী। এতে যদি তাদের কোনো মূল্যবান কাস্টমার হাতছাড়া হয়ে যায় তাতেও তাদের কিছু এসে যায় না,মনে হল। দেশে থাকতেই বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের সাথে আমার কথা হয়েছিল তাই আমার মিটিংএ সমস্যা হয়নি। কিন্তু এখানে আসার পর যাদের সাথে যোগাযোগ করেছি এবং নিজের সম্পর্কে সু-ধারনা দিয়েছি তাদের প্রায় প্রত্যেকেই একই আচরণ করেছে। সেটা হল- ‘আমরা আপনার সাথে পরে যোগাযোগ করব এবং আপনাকে জানাবো’। এদের কেউ কেউ আমাকে নিজেদের অবস্থান বিশ্লেষণ করে না বোধক অবস্থান জানিয়েছে আর কেউ কেউ আর কোনো যোগাযোগই করেনি। আমি এত কষ্ট করে এতদূর পর্যন্ত আসলাম তাদের সাথে একটু কথা বলার জন্যে বা কোনো ব্যবসায়িক ডিল করার জন্যে,এটার কোন দামই নেই তাদের কাছে। আর সবথেকে বড় ব্যাপার হল উক্ত কোম্পানীর যার সাথে কথা বলতে হবে,তার কোনো হদীস পাওয়া মহা দুষ্কর। এমনকি বহু অফিস দেখেছি লক করা,অথচ ভেতরে তাদের কাজ চলছে। এরা পূর্ব নির্ধারিত সাক্ষাতের সময়সূচী ছাড়া কাওকে ভেতরে পর্যন্ত আসতে দেয়না। তবে এক্ষেত্রে দরজার বাইরে একটি টেলিফোন রাখা থাকে যেটা থেকে তাদের কারো সাথে যোগাযোগ করা যায়। আর খারাপ ঘটনা হল,আমার যে কথাগুলো উক্ত কোম্পানীর মালিক বা ওপরের পদে দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গ বুঝতে পারবে,সেটা সঙ্গত কারনেই নীচের পদের লোকেরা বুঝতে সক্ষম নয়। ফলে এভাবে আমার পক্ষ থেকে উক্ত কোম্পানীর কাছে যে তথ্য যাবে,সেটি যুৎসই না হওয়াই স্বাভাবিক। আর আমার তথ্যটা কিভাবে উপস্থাপিত হল সেটিও আমি কখনও জানতে পারব না। অর্থাৎ এদের ব্যবসার ধরণ আমার কাছে পরিষ্কার হয়েছে।
কেউ যদি সরাসরি কোনো পণ্যের ক্রেতা হন,তাহলে তিনি পৃথিবীর যেকোনো দেশেই গুরুত্ব পেয়ে থাকেন। তবে সেক্ষেত্রে এশিয়া এবং ইউরোপ,আমেরীকা,অস্ট্রেলীয়ার সাং®কৃতি ভিন্ন। এশিয়াতে ক্রেতাকে লক্ষী,দেবতা,মহাকাঙ্খিত মনে করে এমন আচরণ করা হয় যে এখানকার ক্রেতারা জামাই আদরের চাইতে বেশী কিছু পান। কিন্তু ধনী দেশগুলোর ক্ষেত্রে এ জাতীয় বিষয় সকল ক্রেতার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। বিশেষ করে বৃহৎ বৃহৎ প্রতিষ্ঠানগুলো পূর্বেই তাদের কর্ম পদ্ধতি নির্ধারন করে থাকে এবং সে অনুযায়ী আচরন করে। একটি প্রক্রিয়া অনুসরন করে তারা কাজ করে। এমনকি উক্ত কাজটি করলে লাভ হত,এমনটা সত্য হলেও অনেক সময় তারা সেটা করতে অনেক সময় নিয়ে থাকে অথবা তাদের বর্তমান অবস্থায় অবস্থান করে। তারা কোনো তথ্য পাবার পর তাদের একটি বিভাগ সেটি নিয়ে কাজ শুরু করে এবং রিপোর্ট দাখিল করে। তারপর তথ্য উপাত্ত যাচাই বাছাই করে তারা সিদ্ধান্তে আসে, হুটহাট সিদ্ধান্ত নেয়না।
আমাকে জানানো হয়েছিল,বাংলাদেশ নিয়ে আমরা এখনও চিন্তা ভাবনা করছি কিন্তু সেখানে আমরা ব্যবসার প্রসার ঘটাবো কিনা এখনও সিদ্ধান্তে আসিনি,তাই আপনার প্রস্তাবে আপাতত সাড়া দিতে পারছি না। অথচ এই একই প্রস্তাব যদি ভারত বা চায়না পেত, তাহলে আমাকে তারা আগে ফুল ছিটিয়ে বরণ করে নিত। তারপর আমার গলা জড়িয়ে এক কোমর নেচে নিত এরপর কোম্পানীর(যত বৃহৎ হোক না কেন) মালিক পার্টি দিত এবং আমার মন জয় করার চেষ্টা করত। তারপর ডিল ফাইনাল হয়ে যেত। আমি এমন আচরনে অভ্যস্ত হওয়াতে অস্ট্রেলিয়াতে বেশ হতাশ হলাম। আরও একটা বিষয় বুঝলাম,আমরা তৃতীয় বিশ্বের নাগরিক হিসেবে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত যাচ্ছেতাই এবং অমানবিক পরিশ্রম করে অল্প পারিশ্রমিক প্রাপ্ত হই। কিন্তু এরা যে পরিবেশে যে কাজ করে আমাদের লোকেরা এমন পরিবেশে দ্বিগুন সময় কাজ করতে পারত। তবে কিছু কিছু কাজ অনেক পরিশ্রমের আর এরা তেমন একটা কাজে ফাঁকি দেয়না।
আমার উপরোক্ত বক্তব্যের অর্থ এই নয় যে,তারা কাস্টমারকে বা ব্যবসায়িক পার্টনার হতে চাওয়া এজেন্টকে পাত্তা দেয়না। তবে তাদের সাং®কৃৃতিটা ভিন্ন। তারা বেশ কঠোরভাবে তাদের কিছু নিয়ম মেনে চলে। সরাসরি কাস্টমারকে তাদের বেশীরভাগ প্রতিষ্ঠান বেশ কদর করে। যেমন টাউন হলের এক বৃহৎ শপিং মলে হাটাহাটি করছিলাম,এমন সময় প্রসাধনীর বিশাল এক দোকানের একজন মহিলা বিক্রয় প্রতিনিধী আমার সামনে এসে কিছু প্রশংসা বানী আওড়ালো। এতে আমি চলন্ত অবস্থায় থেমে গেলাম। এবার তিনি আমার শার্টের টাইএর প্রশংসা করলেন। আমি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করলাম। আমার দেশ,নাম জিজ্ঞেস করলেন,আমি বললাম। তিনি জানালেন যে,তিনি ভারতে গিয়েছিলেন । এবার তিনি বললেন এখানে এই লবনের মত দেখতে প্রসাধনীর দিকে একটু তাকান। আমি আপনার হাতটা ধুয়ে দিব এটা দিয়ে এবং এরপর আপনি দয়া করে বলবেন,জিনিসটি কেমন। প্রসাধনীর বিজ্ঞাপনের জন্যে আমরা একাজ করছি। সময় সুযোগ না দিয়েই আমার হাতটা তিনি ধরে কাচের এক গামলার মধ্যে রাখলেন। এবং তার নিজের হাতে কিছু প্রসাধনী নিয়ে আমার হাতে মালিশ করে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেললেন। তারপর পাত্রে থাকা পানির দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন,আমি দেখলাম কিছু ময়লা বের হয়েছে(মনে মনে বললাম সাবান দিয়ে ধুলেও তো এ ময়লা বের হত)। তিনি বললেন এ প্রসাধনী আপনার শরীরের লোমকূপ থেকে ময়লা উঠিয়ে আনে,ক্ষতিকর তেল চর্বী দূর করে এবং হাত শুকে দেখুন কত চমৎকার গন্ধ এবং এ গন্ধ সারাদিন থাকবে। গন্ধটা ছিল চমৎকার। আর প্রসাধনীটির কিছু গুণ নিশ্চয় ছিল।
ওটা দিয়ে হাত পরিষ্কার করার পর আমার হাতটা বেশ সজীব মনে হচ্ছিল এবং হাত থেকে সুগন্ধ ছড়ানোতে নিজের কাছে ভাল লাগছিল। এরপর তিনি বললেন, এটা আপনি নিজের জন্যে একটা নিতে পারেন। বললাম না, আমি এসব ব্যবহার করিনা। তারপর বললেন পরিবারের অন্য সদস্যদের জন্যে নিতে পারেন। কললাম,তারা তাদের পছন্দে কিনুক। ধন্যবাদ দিয়ে চলে আসলাম। জিনিসটা আসলে খারাপ না কিন্তু আমার মত মেঠো লোকের জন্যে এটি উপযোগী নয়। আমি এমনিতেই রোদ,ময়লা-মাটির মধ্যে থাকি। ধুলোবালি আমার কাছে কঠিন কোনো বিষয় নয়। আর সাবানই যথেষ্ট এবং ঢাকায় এসব জিনিস কার্যকরী নয়। ধুলোবালির মধ্যেই আমরা বসবাস করি। ধুলো ছাড়া আমাদের দিন চলে না,বরং এসব না হলেও চলে।
চলবে...
বিষয়: বিবিধ
২১৬১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন