ইসলামের বিরুদ্ধে অপপ্রচার (চুরীর শাস্তি)
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ২৪ মে, ২০১৩, ০৬:৫৬:১৯ সকাল
ইসলামের বিরুদ্ধে অপপ্রচার
পুঁজিবাদী,সাম্রাজ্যবাদী নীতি পদ্ধতির বাস্তবায়নের পথে সব থেকে বড় বাধা হল ইসলাম। তাই মুসলিমকে নিষ্ক্রীয় করার জন্য,একে ভেতর থেকে দূর্বল করার জন্য তারা ইসলামের বিরুদ্ধে নানামুখী অপপ্রচারে লিপ্ত। তাদের মিডিয়ার মাধ্যমে পত্যক্ষ,পরোক্ষভাবে এমন চতুরতার সাথে অপপ্রচার চালায় যাতে মুসলিমরা হীনমন্যতায় ভূগতে থাকে এবং ইসলাম পালন করতে লজ্জা বোধ করে। তারা চায় ইসলাম নিয়ে কেউ যাতে এগিয়ে না যায় এবং যারা ইসলামকে ছাড়তে পারেনা তারা যেন একে শুধুমাত্র একটি ফ্লেভার হিসেবে ধরে রাখে। । পাশ্চাত্যের মানবতা বিধ্বংসী পরিকল্পনা দেখে তারা যেন শুধুমাত্র “অন্তর থেকে ঘৃণা করো”এই নীতি মেনে নিয়ে প্রতিবাদ,প্রতিরোধ করার যোগ্যতা হারিয়ে ফেলে। এ লক্ষ্যে তারা(ইসলাম বিরুদ্ধ শক্তি) প্রত্যক্ষ,পরোক্ষভাবে চাপ সৃষ্টি ছাড়াও যে কৌশলটির আশ্রয় নেয় তা হল-“ইসলামের পক্ষে থেকে এর বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচারণা চালানো এবং যুবক,তরুণদের মানুষিকতাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করা”।
যদিও পাশ্চাত্যের লোকেরা এটি হাড়ে হাড়ে বুঝে এবং মাঝে মাঝে স্বীকার করে যে, ইসলামকে ঠেকানো সম্ভব নয়,তা প্রতিষ্ঠিত হবেই। কিন্তু ইসলামকে না ঠেকালে তাদের লুটে পুটে খাওয়ার দিন শেষ হয়ে যাবে,মানুষকে বোকা বানানোর রাস্তা বন্ধ হয়ে যাবে তাই ইসলামকে যেভাবেই হোক ঠেকিয়ে রাখতে হবে,যতদিন পারা যায়। তাই বুদ্ধিবৃত্তিক উপায়ে ও শক্তিমত্তা প্রদর্শন করে ইসলামকে চাপা দিতে হবে। যে সমস্ত মুসলিম শুধু মসজিদে যায় আর আসে ,যারা পরিপূর্ণ জীবন বিধান হিসেবে ইসলামকে নেয়নি,তারা এদের কাছে অতি প্রিয় এবং এদেরকে তারা প্রকৃত ও শান্তিপ্রিয় মুসলিম অখ্যায়িত করে। আর যারা ইসলামকে পরিপূর্ণ জীবন বিধান হিসেবে নেয়,তাদেরকে এরা বলে সন্ত্রাসী,গোঁড়া,প্রাচীন,মৌলবাদী,মানবতা বিধ্বংসী ইত্যাদি(মুসলিমকে এমন সার্টিফিকেট দেওয়া দেখে মনে হয় ওরা সব বড় বড় আলীম,মুস্তাহিদ)।
তারা ইসলামী বিধান সম্পর্কে জনমনে ভীতি ছড়ায়, যাতে মুসলিমরা ইসলাম সম্পর্কে উদাসীন হয়ে পড়ে। ইসলামের বিভিন্ন আইনের ব্যাপারে তারা (পাশ্চাত্য এবং দালালরা) আপত্তি করে যেমন ব্যাভিচার ও চুরির শাস্তির ব্যাপারে বিরুপ মন্তব্য করে বলে, এটি অমানবিক। এবার এ দুটি বিষয় নিয়ে দুটো কথা বলবো ঃ
১. চুরির শাস্তি
আল- কূরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন “কোন পুরুষ বা নারী চুরি করলে তার হাত কেটে ফেল,এটি তার কৃত কাজের শাস্তি এবং এটি আদর্শ শাস্তি যা অপরাধ দমনের জন্য মহান আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে নির্ধারিত। আল্লাহ সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী এবং প্রজ্ঞাময় ।” (আল-কুরআন,৫:৩৮)
এর অর্থ এই নয় যে, ইসলামী খিলাফত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হবার পরই চোরদের ধরে ধরে হাত কাটা শুরু করে দিবে। আল-কূরআনে বর্ণিত আল্লাহ পাকের প্রত্যেকটি হুকুম বাস্তবায়িত করার একটি পদ্ধতি আছে, আর সে পদ্ধতি মহান আল্লাহ তায়ালা তার রসূল(সাঃ) এর মাধ্যমে আমাদেরকে শিখিয়েছেন। তাই আল্লাহর প্রত্যেকটা হুকুম আল- কূরআন দেখেই হুবহু বাস্তবায়িত হয় না বরং রসূল (সাঃ) কিভাবে তা বাস্তবায়িত করেছেন, সেই পদ্ধতি বা সুন্নাহ অনুসরণ করা হয়। এছাড়া প্রধান সাহাবাদের(রাঃ) সম্মিলিত মতামত বা “ইজমা” অনুসরণ করা হয় যা কূরআন ও সুন্নাহর সাথে সম্পৃক্ত। এরপর “কিয়াস(ইযতিহাদ)” বা মুজতাহিদদের(সর্ব শ্রেষ্ঠ আলিমদের) আল- কূরআন, সুন্নাহ এবং ইজমা হতে নির্ণেয় সিন্ধান্ত বা মতামত অনূসরণ করা হয়। খুলাফায়ে রাশেদার খলিফাগনের কার্যপ্রনালী বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
এভাবেই ইসলামী ফিকাহ্ বা আইন শাস্ত্র তৈরি হয়েছে। একেকটি বিষয়ের বিষদ ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা, কিয়াস অনুসরণ করে বিচার কার্য পরিচালনা করা হয়। আর একাজ এতটা সতর্কতার সাথে ও বস্তুনিষ্ঠতার সাথে করা হয় যা, অন্য জাতির পক্ষে কখনই করা সম্ভব নয়।
কোন চোর যদি চুরি করে তবে সে কেন চুরি করেছে তা সর্ব প্রথম দেখা হয়। চুরি করা জিনিসের পরিমান, মুল্য নিরুপন করা হয়। সন্দেহতীতভাবে দোষী সাব্যস্ত হলেই তবে কঠিন শাস্তির বিধানের প্রশ্ন আসে। এছাড়া বিভিন্নভাবে জেরা এবং সাক্ষ প্রমানের ভিত্তিতে যদি সাব্যস্ত হয় যে,এই লোকটি চোর কিন্তু উক্ত লোকটি যদি যৌক্তিকভাবে বলে সে চুরি করেনি,এ বিষয়ে যদি বিচারক সিদ্ধান্ত হীনতায় ভুগেন,তাহলে এক্ষেত্রে কঠিন শাস্তির বিধান বর্তায় না, দোষ প্রমানিত না হলে খালাস করে দেওয়া হয়। কঠিন শাস্তির বিধান আরোপের জন্য নিঃসন্দেহ হওয়া জরুরী এবং পূর্ব,পরের যাবতীয় ঘটনা বিশ্লেষণ করা হয়। চোর যদি অভাবের তাড়নায় চুরি করে তাহলে তাকে শাস্তি দেওয়ার প্রশ্নই ওঠেনা বরং জনগণের প্রতিনিধি বা খলিফা এব্যাপারে লজ্জিত হন এবং এমন ঘটনা ঘটলে তিনি জনতার উদ্দেশ্যে ক্ষমা প্রার্থনা করেন এভাবে যে- “ এটি আমার ব্যর্থতা, আমি যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়ার কারণে অভাবী মানুষের সৃষ্টি হয়েছে, এ দায় আমার অতএব আমি ক্ষমা প্রার্থী ”।
এ জাতীয় চোরকে (অভাবের তাড়নায় চুরি করা চোর) পূর্ণবাসিত করা হয়। পূর্ণবাসিত হবার পর এ লোকটি যদি স্বচ্ছল হয় (যাতে অভাবের তাড়নায় আর চুরি করা না লাগে) এবং তারপর যদি চুরি করে তবে সে পেশাগত ভাবেই চোর বলে প্রতিয়মান হয়। আর তখন সমাজে দৃষ্টান্ত স্থাপন করার জন্যে কঠোর শাস্তির প্রয়োজন হয়ে পড়ে। এ পরিস্থিতিতে চুরির শাস্তি “হাত কাটা” আইন ফরজ হয়।
হযরত ওমর(রাঃ)যখন খলিফা ছিলেন,তখন একদা এক ধনী ব্যবসায়ী তার এক কর্মচারীকে খলিফার কাছে ধরে নিয়ে এসে বললো-সে আমার কর্মচারী এবং সে চুরি করে ধরা পড়েছে,আপনি এখন তার উপর হাত কাটার শাস্তি প্রয়োগ করুন। হযরত ওমর(রাঃ) উক্ত কর্মচারীকে তার বেতনের কথা জিজ্ঞেস করলেন এবং সে তা বললো। তারপর তিনি জিজ্ঞেস করলেন,এই বেতনে তার ভালভাবে চলে কি না। সে বললো-এই পরিমান বেতনে তার সত্যিই চলে না। উক্ত ব্যবসায়ীকেও জিজ্ঞেস করা হলো এই পরিমান বেতনে ভালভাবে চলা সম্ভব কি না। ব্যবসায়ী বললো-যে বেতন সে পায় তা দিয়ে ভালভাবে চলা সম্ভব নয়। অতঃপর হযরত ওমর(রাঃ)বললেন-তুমি তার বেতন বাড়িয়ে দিবে,আর যদি বেতন না বাড়াও এবং আবারও একই কারনে এখানে বিচার চাইতে এসো;তাহলে ওর চুরির জন্য তোমার উপর শাস্তি প্রয়োগ করব।
এছাড়া জাতীয় সংকটকালীন সময়ে পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে এ শাস্তি স্থগিত করা হয়ে থাকে। যেমন- মদীনাতে দূর্ভীক্ষ্য দেখা দিলে রসুল (সঃ) হাত কাটার আইন বা চুরির যে কোন ধরনের শাস্তির বিধান স্থগিত করেছিলেন কারণ তিঁনি মনে করেছিলেন,মানুষ এখন স্বভাবের জন্য নয়,অভাবের তাড়নায় চুরি করতে পারে। তার থেকেও বড় কথা হলো একটি অনুকূল পরিস্থিতি সৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত এ শাস্তির বিধান চলু করা হয় না। যেমন- বাংলাদেশের পরিস্থিতি হলো যে, এদেশটি ক্রমাগত কয়েকবার দূর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, ধর্ষণ, এসিড নিক্ষেপ, হত্যা এখানে নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার। সর্বক্ষেত্রে চরম অরাজকতা বিরাজমান। রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষই স্বয়ং চুরির সাথে জড়িত। বিভিন্ন ক্ষেত্রে চুরির ঘটনা এমন ভাবে ঘটছে যেন এটাই সাংষ্ষ্কৃতি এবং মানুষেরও গা সওয়া হয়ে গেছে। তাই এ পরিস্থিতিতে উক্ত আইন বলবৎ করার আগে এ জাতীয় পরিস্থিতি সৃষ্টি হবার কারণ অনুসন্ধান, পর্যালোচনা করেই এ শাস্তির বিধান চালু করা হবে বা এভাবে হয়।
এখানকার ৫০% এরও বেশি মানুষ দারিদ্র সীমা%
বিষয়:
২০৯৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন