নারী অধিকারের পোস্টমর্টেম-২

লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ১৪ মে, ২০১৩, ০৮:৫০:৫২ সকাল



পাশ্চাত্য বলে তারা নারীকে সকল অধিকার দিয়েছে অথচ আজ তারা একটি পণ্য ও নারীর মধ্যে কোন পার্থক্য খুঁজে পায়না। তাই তারা সেভিং জেল,রেজার, সিগারেট সহ প্রত্যেকটা পণ্যের বিজ্ঞাপনে নারীকে পণ্যের পাশাপাশি ব্যবহার করছে তাদের চাহিদা অনুযায়ী আকর্ষনীয় করে উপস্থাপনের মাধ্যমে। অর্থাৎ নারী হচ্ছে একটি ফ্রি পণ্য,প্রত্যেকটা পণ্যের পাশেই তাকে আকর্ষনীয়ভাবে পোজ দিতে হবে,যাতে পুরুষরা আকৃষ্ট হয় নারীকে দেখে এবং পণ্যটা তাড়াতাড়ি কিনে (নারীদের উদ্দেশ্যে আল্লাহ তায়ালা বলেন-“প্রথম মূর্খ যুগের মত তোমরা নিজেদেরকে প্রদর্শন করে বেড়িও না” আল-কুরআন,৩৩ঃ৩৩)।

ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় একটি বহুজাতিক কোম্পানির স্টল দেখলাম। সেখানে অনেক রমমের পণ্যের মধ্যে মোবাইলও ছিল। মোবাইল প্রদর্শণের সোকেস গুলো তৈরী করা হয়েছে আনুমানিক ৫.৬ ফুট উচ্চতায় এবং চওড়ায় একহাত পরিমানে(এ মাপের ক্ষেত্রে আমার কোন অভিযোগ নেই)। অনেকগুলো সোকেস দেখলাম এবং প্রত্যেক সোকেসের পাশে দু জন করে সুন্দরী তরুনীকে উত্তমরুপে সাজিয়ে,কিছুটা খোলামেলা পোশাকে দাড় করিয়ে রাখা হয়েছে। একটি সোকেসের দুপাশে দুজন নারী। আপনি যদি মোবাইল দেখতে চান তবে আপনাকে দুই নারীর মাঝখান বরাবর তাঁকাতে হবে। এমতবস্থায় যুবকদের দৃষ্টি কোন দিকে নিপতিত হবে, তা সহজেই অনুমেয়। এ স্টলে যুবকদের ভিড় ছিল লক্ষ্য করার মত(সঙ্গত কারনেই)। এখানে পণ্য কেনার চাইতে মোবাইল নিয়ে বিক্রেতাদের সাথে যুবকদের আড্ডা জমজমাট দেখলাম। মেলার অন্য স্টলগুলোর অবস্থা একই রকম। এখানে পণ্য বিক্রির পাশাপাশি একটি উদ্দেশ্য স্পষ্ট তা হলো নারী পুষের অবাধ মেলামেশা এবং নারীকে পণ্যের মত করে যে কোনভাবে উপস্থাপন করা । অর্থাৎ নারীকে দেখিয়ে পণ্য বিক্রী করা। নারীর সত্বাকে তারা পণ্য বানালো এবং তাকে যথেচ্ছা ব্যবহার করলো অথচ ওরাই(পশ্চিমারা) নারীর স্বাধীনতা, স্বাতন্ত্র, অধিকার(?) মর্যাদা(?) প্রতিষ্ঠিত করলো। টেলিভিশনে বিজ্ঞাপনের জিঙ্গেল শোনা যায় “ আরসির মজা কত,তোমার মত, যখন যেমন চাই...” অর্থাৎ দোকানে কিছু পয়সা দিয়ে যখন তখন যেমন আরসি বা একটা পণ্য পাওয়া যায় তেমনিভাবে নারীকেও....।

টেলিভিশনের বিজ্ঞাপনে প্রচারিত হয় কালো চামড়া ওয়ালা নারীদের সমাজে কোনো মূল্যই নেই বা একেবারেই কম। কেউ তার দিকে ফিরেও তাকায় না, এরপর যখন সে বিশেষ কোনো প্রসাধনী ব্যবহার করে তখন তার কদর বেড়ে যায়। সে তখন একটা ভাল চাকুরী পায় বা পুরুষের কাছে তার গুরুত্ব বেড়ে যায়।

লক্ষ্য করুণ ! এই কনসেপ্ট তারাই সরবরাহ করে যারা নারী অধিকার নিয়ে বেশী সরব(এ জাতীয় কনসেপ্টের পৃষ্ঠপোষকরা বহু প্রগতিশীল নারীবাদী সংগঠন,এন.জি.ওর মালিক)। অথচ তাদের বক্তব্য হল যে সমস্ত নারী দেখতে সুন্দর নয় বা যাদের ত্বক উজ্জ্বল নয় তারা প্রত্যাখ্যাত। তাহলে নারী অধিকারের প্রবক্তারা কি বুঝাতে চান যে- উজ্জ্বল ত্বকের অধিকারী সুন্দরীরাই কেবল নারী বা যোগ্য নারী ? এভাবে ঘুরে ফিরে সেই একই কাহিনী- “নারীর বাহ্যিক সৌন্দর্যের প্রদর্শনী বা পুরুষের মনোরঞ্জনের মাধ্যমে যোগ্যতার বর্হিপ্রকাশ”।

নারীকে তারা তাদের অফিসের রিসিপশনিষ্ট বানায় যাতে সে অফিসে পুরুষের যাতায়াত বেড়ে যায়। আর পাশ্চাত্য সমাজে তো তাকে স্বল্প ব্যসনা হয়ে অথবা সেক্স সিম্বল হয়ে অফিস করতে হয়,যাতে করে অফিস জমজমাট হয়, ক্রেতার যাতায়াত বেড়ে যায়,ব্যবসা ভাল হয়। তাকে এমনভাবে সেজে বসে থাকতে হবে যাতে পুরুষরা পছন্দ করে। জাতীয় জীবনের প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে তারা নারীদেরকে পুরুষের মনোরঞ্জনের জন্য তৈরী করলো আর ঘোষণা করলো তারা নারীর মর্যাদা রক্ষার অগ্রপথিক। তাদের শক্তিশালী মিডিয়া,আগ্রাসী নীতি আর বলিষ্ঠ চাপা মানুষদেরকে এ ব্যাপারে বিশ্বাসী হতে বাধ্য করেছে। তারা নারীর মর্যাদা রক্ষার কথা বলে এমন এমন নীতি বাস্তবায়িত করছে যাতে নারী শ্রেণীর কিছু ভাবছে তারা মর্যাদাবান হচ্ছে আর পুরুষশ্রেণী তাদেরকে অতি সম্মানের সাথে পণ্য বানিয়ে লাভবান হচ্ছে। অর্থাৎ সাপ মরছে কিন্তু লাঠি ভাঙ্গছে না।

পাশ্চাত্য সমাজ তাদের জীবন উপভোগের উদ্দেশ্যে ভোগবাদিতা বা মুনাফা নীতির মাধ্যমেই গোটা পৃথিবীর যাবতীয় বিষয়ের ফায়সালা করে। তাদের কাছে আত্মতৃপ্তির সংজ্ঞা হলো ইন্দ্রীয়ের তৃপ্তি অর্থাৎ সর্বাধিক ভোগ। তাই অর্থ ইনকামের জন্য তারা এক তরফা মুনাফার বিষয়টিকে প্রাধান্য দেয়। একটি কাজ করার আগে চিন্তা করে এখানে তার কত লাভ হবে।

যদি প্রচলিত নীতিতে বেশী লাভ না হয় তাহলে নীতির পরিবর্তন করে ব্যক্তিগত বা সামষ্টিক উদ্দোগে। তাই তাদের একপেশে মুনাফার কারনে অন্য জাতির লোকেরা সুবিধা পেল, নাকি অসুবিধায় পড়লো, এটা তাদের বিবেচ্য বিষয় নয়। তারা যদি অন্য দেশ বা জাতির সুবিধার কথা বলে তাহলে বুঝতে হবে- সুবিধার এ মহান বাণীর মধ্যেও তাদের নতুন মুনাফা রয়েছে। অর্থাৎ পণ্যের আওতা বাড়াতে চাচ্ছে। যদি আত্মতৃপ্তির ব্যাপারে কথা বলি তাহলে বলতেই হয় ঝধঃরংভধপঃরড়হ কখনই সীমাহীন ভোগের মাধ্যমে অর্জন করা সম্ভব নয়। কারণ- তার ইন্দ্রীয় প্রতিনিয়ত একই জাতীয় ভোগের কারনে তাকে এক ঘেয়ে করে তুলবে এবং ভোগের ক্ষেত্র বাড়ানোর এক পর্যায়ে তাকে নিশ্চিত হতাশ করবে। ক্রমবর্ধমান চাহিদা তাকে পূর্ণতা দিবেনা। তার আকাঙ্খার অসমাপ্তী তাকে শুধু হতাশাই উপহার দিবে। আজ পাশ্চাত্য সমাজ দেখেই তা স্পষ্ট বোঝা যায়। একদিকে তারা নারী নিয়ে ফূর্তি করে গলা পর্যন্ত মদ খায় অন্য দিকে লক্ষ লক্ষ ডলার খরচ করে একটু শান্তিতে সুন্দরভাবে ঘুমানোর জন্য। আর তাদের ভোগের শ্রেষ্ঠ উপকরণ হলো নারী, যাকে তারা ভুল বুঝিয়ে লাঞ্চিত করেছে।

ফুটবল বিশ্বকাপে বা অলিম্পিকে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লক্ষাধীক নারীকে স্বাগতিক দেশগুলোতে হয় দেহ ব্যবসার জন্য। উদ্দেশ্য হল দেশ বিদেশের ধনী ব্যক্তিরা সেখানে ভীড় করবে তাই ভাল দাম পাওয়া যাবে। ইউরোপ আমেরিকাতে শোবিজ তারকা বানানোর কথা বলে নারীদেরকে একটি অবমাননাকর পেশায় বাধ্য করা হয়। নারী অধিকারের কথা বলে,স্মার্টনেসের কথা বলে তারা নারীকে দিয়ে যাচ্ছেতাইভাবে পয়সা কামিয়ে নেয়। নারীরা তাদের কথামত নিখুঁত মাপে তাদের ফসিল ফিগার(অতি স্লিম) ধরে রাখতে বা ফসিল ফিগার তৈরী করতে প্রয়োজনের তুলনায় কম ক্যালরী গ্রহন করছে। এতে তারা কম ওজন প্রাপ্ত হয়ে জটিল রোগ-ব্যাধীতে আক্রান্ত হচ্ছে। অনেকে এ কারনে মৃত্যু বরণও করেছে। কখনও কখনও তাদেরকে এমন ট্রাপে পড়তে বাধ্য করে,যেখান থেকে আত্মমর্যাদা পূণরুদ্ধার করা সম্ভব হয়না ওই সব নারীদের পক্ষে। তারকা বানানোর কথা বলে,আরও স্মার্ট হতে বলে,অধিকার সচেতন হিসেবে গড়ে ওঠার জন্য পুরুষরা নারীদেরকে তাদের মত করে চলতে বাধ্য করেছে। পুরুষরা তার শারিরীক সৌন্দর্যকে যেভাবে দেখতে পছন্দ করে,সেভাবে তাকে উপস্থাপিত হতে বাধ্য করে কনসেপ্ট সরবরাহ করে। সরাসরি শরীর দেখানোর কথা বললে সে অস্বীকৃতি জানাবে তাই তাকে দিয়ে সৌন্দর্য প্রতিযোগিতা করানো হয়। মূলতঃ এখানে মুখের সৌন্দর্য তখনই আকর্ষনীয় হয়ে ওঠে যখন সে তার শরীরকে বিভিন্ন ভঙ্গীতে পুরুষের সামনে উপস্থাপন করতে পারে(প্যারীস,রোম,লন্ডন,লাসভেগাসসহ ইউরোপ-আমেরিকার বহু শহরে নারীদেরকে মডেল হিসেবে গ্রহন করার আগে তাদেরকে বিবস্ত্র করে ক্যাট ওয়াক করানো হয়। তারা মানুষকে হট করতে পারবে কিনা তা পরিক্ষা করা হয়। এছাড়া নগ্ন হয়ে ক্যাট ওয়াক করার সময় শরীরের বিভিন্ন ভাজ শৈল্পিকভাবে ফুটে উঠছে কিনা তা পুরুষ বোদ্ধারা পরিক্ষা করেন। যারা বাদ পড়েন তাদেরকে আরও বেশী অনুশীলন করতে,ওজন কমাতে বলা হয়। পৃথিবীর বহু দামী শহরে নারীকে পন্যের মত করে নগ্ন বা অর্ধ নগ্ন করে দোকানে সাজিয়ে রাখা হয় এবং নারীর উপর মূল্য লিখে রাখা হয়। ক্রেতা নির্ধারিত মূল্যে কিছু সময় বা অধিক সময়ের জন্য তাকে পেতে পারে। এ বিষয়গুলি তাদের রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃত,বৈধতাপ্রাপ্ত) আর পুরুষের ঈন্দ্রীয় যদি তাতে খুব বেশী তৃপ্ত হয় তবে সে বেশী নাম্বার

দেয় (বিচারক হলে)অথবা তার পক্ষে ঝগঝ পাঠায়। এখানে নারীকে উপভোগের মাধ্যম বানানো হলো অথচ তা উচ্চারিত হলো না। তাকে বুঝানো হলো,এটাই তোমার যোগ্যতা যে,তুমি পুরুষের সামনে নিজেকে তাদের দৃষ্টিতে শ্রেষ্ঠ ভোগের সামগ্রী হিসেবে উপস্থাপন করতে পারো,অতএব তুমি সফল হয়েছ। এরপর এসকল সফল নারীকে পণ্যের সাথে হাটে ওঠানো হবে।

প্রচলিত কুফর জীবন ব্যবস্থা নারীকে নিয়ে ব্যবসা করতে শেখায়। এর বিনিময়ে তারা কিছু টাকা নারীর হাতে ধরিয়ে দেয় এবং এটাই নারীকে দেওয়া পাশ্চাত্যের অধিকার। তাদের নারী অধিকার মানে নারীকে লুটপাট করা। তারা নারীকে খুবই সস্তা একটি পণ্য বানিয়েছে। আজ পাশ্চাত্য এবং তাদের আদর্শ অনুসরনকারীদের দিকে তাকালে ব্যাপারটি খুবই স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তাদেরকে যখন তখন,যেভাবে খুশি সেভাবে একজন পুরুষ পেতে পারে যদি সে অর্থশালী হয়। কারণ- সমাজব্যবস্থা সেভাবেই সাজানো হয়েছে। তাদের কেউ কেউ যে এব্যাপারটি বুঝেনা তা নয় কিন্তু প্রবল গতিতে বয়ে চলা স্রোতে ভাসমান অবস্থায় বিপরিত দিকে চলা খুবই কষ্টকর(বর্তমানে পাশ্চাত্যের অনেক নারীবাদী সংগঠন নারীকে এভাবে ব্যবহারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছে)। তাই কষ্টের সাথে তাদেরকে ব্যাপারগুলো হযম করতে হয়। পাশ্চাত্যের নারীদের অনেকেই এবং মাঝে মাঝে তাদের চিন্তাবিদরাও এব্যাপারে কথা বলে কিন্তু বাস্তবতা তাদেরকে সবসময় কোণঠাসা করে দেয়।

চলবে...

বিষয়: বিবিধ

১৮১৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File