সিডনী অপেরা হাউসে আমি (ছবি আছে)

লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ১০ মে, ২০১৩, ০২:২৯:১৩ দুপুর







আমি সাধারণত একা থাকতে পছন্দ করি কিন্তু অনেক সময় এই ব্যাপারটি অন্যেরা ভালভাবে নিতে পারেনা,ভাবে তাদের কোনো আচরনে বোধহয় আমি অসন্তুষ্ট এবং সেকারনেই গুপ্ত রাগের বশবর্তী হয়ে একা থাকতে চাইছি। এমন সম্ভাবনা দেখা দিলে আমি তাদের সাথে পাশেই থাকি। তবে একা ঘুরতে আমার ভাল লাগে। এতে আমি নিজের মত করে কোনো কিছু উপভোগ করতে পারি। একা থাকলেই আমার আনন্দ উপভোগ বেশী হয়। অনেকের মধ্যে থাকলে অনেকদিক খেয়াল রেখে আচরণ করতে হয়। অনেক ব্যাপারে সাবধানী হতে হয়। প্রত্যেকের মন বুঝে কথা বলতে হয়। প্রকৃতির সান্নিধ্যে রোবটিক হওয়া আমার ভাল লাগেনা। হারিয়ে যাওয়ার মধ্যে যে আনন্দ নিহিত আছে তা বেশী লোক বোঝেনা।

এদের এখানে একটি রোগ আবিষ্কার করেছি যা এদের আত্মীয়-স্বজন,বন্ধু-বান্ধব নির্বিশেষে সকলের মধ্যেই আছে। সেটি হল দাওয়াত রোগ। শুধু সিডনিতেই এরা বেশ কয়েক ডজন, আমার পক্ষের লোকজন তো আছেই। এরা প্রতিনিয়ত অন্যকে দাওয়াত করে এবং এতে আত্মতৃপ্তী লাভ করে থাকে। আর নিয়ম হল যখন কারো কোনো আত্মীয়-স্বজন দেশ থেকে আসবে তখন তাকে প্রত্যেকে দাওয়াত করে খাওয়াবে এক বা একাধিকবার। এদের পারষ্পরিক সম্পর্ক অসাধারন এবং পরষ্পর পরষ্পরের একান্ত সহযোগী। আমার ভাগনী যখন সন্তান সম্ভাবা ছিল তখন বেশ কয়েকজনের কাছে তার ফোন নাম্বার রাখা ছিল বিশেষ প্রয়োজনীয় নাম্বার হিসেবে। একটি বাটনে চাপ দিলেই যাতে তাকে কল করা যায়। যে কোনো জরুরী প্রয়োজনে যাতে তাদের যে কেউ তাকে হাসপাতালে নিতে পারে। এরা একে অপরের জন্যে তাদের সর্বোচ্চটা করে থাকে।









এখানে আসার পরদিন আমি ভাইগনা,ভাগনী মিলে সিডনী অপেরা হাউস দেখতে গেলাম। এই অপেরা হাউসটিই মূলত সিডনীকে সারা বিশ্বের কাছে পরিচিত করেছে। কোথাও এই অপেরা হাউস দেখলেই মানুষ বুঝে যায় এটি কোথায় অবস্থিত। বহু পূর্ব থেকেই এটা দেখার শখ ছিল,আজ বাস্তবে তা ঘটছে। শুরুতে কিছু আদীম অস্ট্রেলিয়ান লোকজনকে দেখলাম।



এরা সারাগায়ে বিভিন্ন রং মেখে বাঘের চামড়া সদৃশ টারজান মার্কা পোষাক পড়ে ভুভুজেলা বাজাচ্ছে। তবে এদের ভুভুজেলা বাশের তৈরী এবং প্রায় আট/নয় ফুট লম্বা। এটা বাজাতে ফুসফুসের শক্তি বেশী হতে হয়। এর সামনে একটি মাইক্রোফোন রেখে একজন এটা বিচিত্রভাবে বাজাচ্ছে আর অন্যরা সাথে টেপরেকর্ডারে রেকর্ডকরা ভিন্ন বাজনা বাজাচ্ছে। সমনে একটি পাত্র,সেখানে মানুষ কিছু পয়সা দিচ্ছে। এরা এদের ইতিহাস সম্বলিত কিছু ভিডিও সিডিও বিক্রিী করে থাকে। সরকার এদেরকে অনেক রকমের সুবিধা দিয়ে থাকে। এরা সরকারের কাছ থেকে নির্দিষ্ট অংকে ভাতা প্রাপ্ত হয়। সাধারণত এরা চাকুরী করেনা,অনেকে কৃষির সাথে যুক্ত। কোথাও গমন করতে এদের যানবাহন ভাড়া প্রদান করতে হয়না। তবে সরকারের ব্যাপারে এদের অনেক অভিযোগ রয়েছে।

ঔপনিবেশীক শাসনের সময় ইংরেজরা এদের ওপর প্রচুর অত্যাচার নির্যাতন করেছে এবং হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে। নাগরিক হিসেবে সুবিধা দেওয়া হয়নি এমনকি মানুষ হিসেবেও পূর্বে গণ্য করা হয়নি। কয়েক দশক পূর্বে বহু আন্দোলনের পর সরকার এদেরকে কিছু অধিকার দেয় এবং এরা যাতে বিলিন না হয়ে টিকে থাকে তার ব্যবস্থা করে। অনেকে বলে থাকে ফ্রি মদ এবং নেশার দ্রব্য খাইয়ে সরকার এদেরকে ধীরে ধীরে ধবংশ করছে। এটার সত্যতা আমি জানিনা। আমি অনেক স্থানে এদেরকে কিম্ভূতকিমাকার হয়ে বিভিন্ন পদ্ধতিতে ভিক্ষা করতে দেখেছি।







আজ সূর্যকিরন সাংঘাতিক। তবে ঠান্ডা বাতাসও প্রবাহিত হচ্ছে ফলে গরম তেমন লাগছে না। দুপুরের বহু পূর্ব থেকেই এখানে সূর্য একেবারে মাথার ওপর থাকে তাই রোদের মধ্যে ছবি ওঠালে ভারতীয়দের বেশী কালো দেখায়। আজ অনেক মানুষ এসেছে এখানে। প্রচুর বিদেশী এখানে ভ্রমন করে।

সার্কুলার কীতে পাঁচটি ফেরী ঘাট আছে। এগুলো অনেক পূর্বে প্রতিষ্ঠিত। আমরা অপেরা হাউসের কাছে আসলাম। এটা একটা বিরাট স্থাপনা। এর ওপরের অংশ শাপলা ফুলের পাপড়ীর মত দেখতে, পাশাপাশি দুটি ভবন রয়েছে এমন,তবে পাশেরটি খানিকটা ছোট। এর ওপররের অংশ স্বয়ংক্রিয়ভাবে স্থানান্তর করা যায়। এর ডিজাইন সত্যিই অপূর্ব। আমি মুগ্ধ হলাম। আশপাশের পরিবেশ সাংঘাতি সুন্দর। অপেরা হাউসের পাশের নীচু অংশের একটা বড় অংশ জুড়ে রেস্টুরেন্ট রয়েছে।





তার নীচেই সাগরের জলরাশি। পাড়টা অত্যন্ত মজবুত করে তৈরী করা। বড় বড় পাথরের চাক শক্তিশালী গাথুনিতে তৈরী। বিশাল ঢেউ আছড়ে পড়ছে বটে কিন্তু এ মজবুত পাড় বহু বছরেও ক্ষয় হয়নি। ওপরে রেলিং তৈরী করা হয়েছে শক্ত তারের সাহায্যে। পাড়ের কাছে বহু পর্যটক শুয়ে,বসে রয়েছে। অনেকে চা,কফি নিয়ে বসে গল্প গুজব করছে। ছুটির দিনগুলোতে এখানে প্রচুর লোক সমাগম হয়।

ছবিতে দেখতাম অপেরা হাউসটি পানির ভেতর। সত্যিই তাই। এটি পানির বেশ ভেতরের দিকে তৈরী করা হয়েছে। আমরা এর পাশ দিয়ে হাটতে থাকলাম। ওপাশে পৌঁছে আমি প্রচন্ড বাতাসের কবলে পড়লাম। মাথার ক্যাপ সামলে আবার এপাশে চলে আসলাম। অতি প্রশস্ত সিড়ি দিয়ে ওপরে উঠলাম। মোটা কাচের ব্যবহার করা হয়েছে নীচের দিকে। এখান থেকে চারিপাশটা দেখলাম। একপাশে পানি,অন্যপাশে চমৎকার সবুজ পার্ক। একদল চায়নিজ আমাদের সাথে ছবি ওঠালো। আমরা কিছু স্নাক্স,কোল্ড ড্রিংকস খেয়ে চলে আসলাম। সময় বেশ ভালই কাটতে লাগল।

চলিতেছে বলিতেছি......

বিষয়: বিবিধ

২১৮৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File