চরম মানুষিক কষ্টে আছি

লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ০৬ মে, ২০১৩, ০৮:৩০:৫৯ রাত



ওহুদের যুদ্ধের প্রথমিক বিজয়কে মূল বিজয় বলে ভুল করে মুসলিম সেনারা এবং তারা আবেগে রসূলের(সাঃ) আদেশ লঙ্ঘন করেন। আল্লাহ তায়ালা এ আদেশ লঙ্ঘনের শাস্তিস্বরূপ তাদেরকে মহা বিপদের সম্মুখিন করেন। কাফিররা পেছন থেকে আক্রমন করে বসে এবং মুসলিম বাহিনী বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। আল্লাহর রসূল(সাঃ)এর ওপর আক্রমন শুরু হয় । এ সময়ে রসূল(সাঃ)কে বাঁচাতে একে একে সাহাবারা(রাঃ) শহীদ হতে থাকেন। তারা তাকে ঘিরে প্রাচীর তৈরী করেন এবং তাদের পিঠ দিয়ে শত্রুর তীর ঠেকাতে থাকেন। সর্বনীম্ন ৮০টি তীর ধারন করেও তারা টলে যাননি এ কারনে যে,তিনি টলে পড়লে আল্লাহর রসূল(সাঃ)এর গায়ে তীর লাগবে।একজন কাফির তাঁকে(সাঃ) তরবারী দিয়ে আঘাত করলে সম্ভবত যোবায়ের(রাঃ)তার হাত দিয়ে সে আঘাত ঠেকান এবং তার চারটি আঙ্গুল কেটে পড়ে যায়। তার কাছে ঢাল ছিল কিন্তু ঢাল দিয়ে আঘাত ঠেকাতে গেলে দেরী হয়ে যেতে পারে এবং আঘাতটি রসূলের(সাঃ)মাথায় লেগে যেতে পারে ভেবে তিনি নিজের হাত পেতে দিয়েছিলেন।......

অনেক সাহাবা শহীদ হলেন। দুজন কাফির রসূলের(সাঃ) মাথায় পাথর নিক্ষেপ করল এবং এক পাথরে তার দাত,অন্য পাথরের আঘাতে তার কপাল ফেটে গেল এবং মাথার হেলমেট এর অংশ মাথায় গেথে গেল। তিনি পড়ে গেলেন একটি গর্তে.......মুসলিম সৈন্যরা তার মৃত্যুর সংবাদ শুনে পাগলের মত হয়ে পড়ল এবং প্রবল আক্রমন করল........

যুদ্ধের পর হযরত আবু ওবায়দা নিজের দাত দিয়ে রসূলের(সাঃ)মাথায় আটকে যাওয়া হেলমেট খুলতে গিয়ে সামনের সারির দুটি দাত হারান।.....তার এই দাত হারানোতে তিনি সাহাবাদের মধ্যে হয়ে ওঠেন ঈর্ষার পাত্র,কারন তিনি আল্লাহর রসূলের খেদমতে একাজটি করতে পেরেছেন। ......

এক আনসার মহিলা রসূলের মৃত্যুর সংবাদ প্রাপ্ত হয়ে ঊর্ধ্বশ্বাসে যুদ্ধের ময়দানে ছুটতে থাকেন এবং পথে একজনকে দেখতে পেয়ে জিজ্ঞেস করেন ,আমার রসূল কেমন আছেন ? জবাবে লোকটি বলে,তোমার স্বামী শহীদ হয়েছে। তিনি বলেন,তুমি ধ্বংস হও,আমার রসূল(সাঃ)কেমন অছেন? লোকটি জবাব দেয় তোমার তোমার পিতা এবং সন্তানও শহীদ হয়েছে। মহিলাটি বলেন, তুমি ধ্বংস হও,তোমার সর্বনাশ হোক,আমি জানতে চাচ্ছি আমার প্রিয় রসূল কেমন আছেন ?? লোকটি বলে, তিনি জীবিত আছেন । মহিলা বলেন- আলহামদুলিল্লাহ, তাহলে আমার পরিবারের লোকেদের জীবন দান বৃথা যায়নি। .......

হিযরতের সময় ছাওর পর্বতের গুহায় যখন খানিক সময়ের জন্যে আল্লাহর রসূল(সাঃ) আবুবকরের(রাঃ) কোলে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছিলেন ,তখন তার নিরাপত্তায় সেই গুহার একটি গর্ত আবু বকর বন্ধ করতে না পারায় গর্তের ওপর নিজের পায়ের গোড়ালী দিয়ে রাখেন। একটি বিষাক্ত সাপ তাকে দংশন করে কিন্তু সেই ভয়াবহ দংশনের জ্বালা তিনি সহ্য করতে থাকেন এ কারনে যাতে আল্লাহর রসূলের(সাৎ) নিদ্রা ভঙ্গ না হয়।তার চোখের পানিতে অবশ্য রসূলের ঘুম ভাঙ্গে..........

সহাবায়ে কেরাম(রাৎ) নিজেদের জীবনের বিনিময়ে রসূলের পায়ে একটি কাটা বিদ্ধ হওয়াও পছন্দ করতেন না। .......... তার মর্যাদা রক্ষার জন্যে তারা নিজেদের শ্রেষ্ঠ্য সম্পদ জীবনকে তুচ্ছাতি তুচ্ছ জ্ঞানে বিসর্জন দিতে সদা প্রস্তুত থাকতেন........

আজ রসূল(সাঃ) নেই, কিন্তু তার রেখে যাওয়া সুন্নাহ এবং আল-কুরআন রয়েছে। কুরআন-সুন্নাহর ওপর আঘাত অর্থ রসূলের(সাঃ)ওপরই আঘাত। সেদিন সাহাবারা রসূলের(সাঃ) সম্মান,ইজ্জত,নিরাপত্তা বিধানে যা করেছিল আজকের দিনে যদি তার উম্মত সেটা না করে তাহলে সে কিভাবে নিজেকে আল্লাহর রসূলের উম্মত হিসেবে দাবী করবে !!

আজ যখন আমার রসূলকে আপমান করা হয়,আপবাদ দেওয়া হয় তখন আপবাদ দাতাদেরকে বিরিয়ানী খাওয়ানো হয় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দিয়ে আর যারা নিজেদের ঈমানের দাবীতে এর প্রতিবাদ করে,তাদেরকে গুলি,গ্রেনেড মেরে শ'য়ে শ'য়ে হত্যা করা হয়। পরাক্রমশালী এক নায়ক ফেরাউন,নমরুদ,সাদ্দাদ নিজেদের ক্ষমতায় অন্ধ হয়ে নিজেদেরকে প্রভূ আখ্যায়িত করেছিল। তারা ছিল বর্তমান পৃথিবীর পরাশক্তির চাইতেও বেশী ক্ষমতাধর। আল্লাহ তাদের দম্ভ চুর্ণ বিচুর্ণ করে অপমানিত করে পৃথিবী থেকে বিদায় করেছেন। আমাদের আচরণ প্রমান করবে,আমরা রসূলের(সাঃ) উম্মত নাকি ফিরাউনের উম্মত। মনে রাখতে হবে,আব্দুল্লাহ বিন উবাইও ইসলাম গ্রহন করেছিল। .....

‍"শহীদের সর্দার হল হামযা(রাঃ) এবং সেই ব্যক্তি,যে যালিম শাসকের যুলুমের প্রতিবাদ করে এবং সেই শাসক তাকে হত্যা করে।"..(তিরমিযী)

যারা পৃথিবীতে স্থায়ী হতে চায়,তারা জেনে রাখুন-"তোমার প্রতিপালকের নিকট প্রত্যাবর্তন সুনিশ্চিত"-(আলকুরআন,৯৬: ৮)

"তোমরা যেখানেই থাকনা কেন, মৃত্যু তোমাদের গ্রাস করবেই"..(আল কুরআন ৪:৭৮)

"অপরাধীরা জাহান্নামে আর্তনাদ করে বলবে, হে আমাদের মালিক ! তুমি আমাদেরকে এখান থেকে মুক্ত করে দাও,আমরা তোমার পথে চলব,যা কিছু আগে করতাম তা আর করব না।(আল্লাহ বলবেন) আমি কি দুনিয়াতে তোমাদেরকে এক দীর্ঘ জীবন দান করিনি ? সাবধান হতে চাইলে কেউ কি সাবধান হতে পারত না ? তোমাদের কাছে তো সতর্ককারীও এসেছিল। সুতরাং এখন আযাবের মজা উপভোগ কর। যালিমদের কোনো সাহায্যকারী নেই। ..(আল কুরআন, ৩৫:৩৭)

যারা ঈমানদার তারা আল্লাহর উদ্দেশ্যে কাজ করবে এবং আল্লাহর ভয়েই কোনো কাজ করা থেকে বিরত থাকবে। আর তাদের জন্যে আল্লহ'ই যথেষ্ট।

রসূল(সাঃ) বলেন-নিশ্চয়ই আল্লাহ আমার সামনে পৃথিবীকে সঙ্কুচিত করলেন, ফলে আমি এর পূর্ব থেকে পশ্চিম প্রান্ত পর্যন্ত দেখতে পেলাম। এবং যতদূর আমি দেখেছি,আমার উম্মতের কতৃত্ব ততদূর পর্যন্ত পৌছে যাবে।( মুসনাদে আহমাদ)

বিষয়: বিবিধ

১৯৭৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File