খোলা চোখে ঢাকা ঘেরাও
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ০৩ মে, ২০১৩, ০৩:০৫:০৬ দুপুর
ব্লগ,মিডিয়া এবং শাহবাগের কিছু লোক কর্তৃক কিছু ইসলাম বিরোধী কর্মকান্ড সংঘটিত হওয়ায় ইসলামপ্রিয় মানুষের অন্তরে ক্ষোভ জন্ম নেয়। কিন্তু সেটা ব্যক্তিগত পর্যায়ে থাকার কারনে তেমন মাত্রা পায়নি। কিছু ইসলামিক রাজনৈতিক দল এটার প্রতিবাদ করলেও সেটা আমজনতার আলোচনায় ঝড় তোলেনি বা ততটা গুরুত্ব পায়নি। কিন্তু কাওমী মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকদের নেতৃত্বে(সাধারণ মানুষ সহ) হেফাজতে ইসলাম নামক ব্যানারে যখন প্রতিবাদ জানানো হয়,তখন মানুষ ইসলামের স্বপক্ষে একটি বিশাল সমাবেশ বা গণজোয়ার দেখতে পায়।
এই সমাবেশের গুরুত্ব ছিল এই কারনে যে,এতদিন প্রগতিশীল বা সুশীল সমাজ নামক এক সমাজ এবং কিছু বুদ্ধিজীবী মিডিয়ার মাধ্যমে সকলকে বুঝানোর চেষ্টা করছিল যে, এদেশের বেশীরভাগ মানুষই সেক্যুলার মানুষিকতা সম্পন্ন এবং তারা মনে-প্রানে বাঙালী। বাঙালী সাংষ্কৃতি লালনেই তারা বেশী আগ্রহী। আর বিভিন্নভাবে বাঙালী সাংষ্কৃতি হিসেবে যা উপস্থাপিত হয়েছে তার মধ্যে ধর্ম নিরপেক্ষতার স্থলে হিন্দু ধর্মের আধিক্য ছিল। কর্তাব্যক্তিরা বহুভাবে কথামালার মাধ্যমে বুঝানোর চেষ্টা করলেও মানুষ তা বুঝেছিল কিনা সে খবর আম-জনতার কাছে ছিলনা। ফলে তারা সকলকে প্রগতিবাদী হওয়ার নামে যা শেখাচ্ছিল বা শিখতে বলছিল বা চর্চা করতে বলছিল,সেটা তাদেরই আরেক মুখ থেকে উচ্চারিত হয়ে আসছিল যে,এদেশের লোকেরা প্রকৃত বাঙালী/সেক্যুলার এবং এসব সাংষ্কৃতি তারা মনে প্রানে মেনে নিয়েছে। এসব বক্তব্যের স্বপক্ষে যখন কিছু কিছু স্থানে কিছু সমাবেশ,সেমিনার হয়েছে সেটাকে তারা সকল জনতার সম্মিলিত মতামত হিসেবে চালিয়েছে। এমনকি আমিও বিশ্বাস করতে বাধ্য হয়েছিলাম যে, বোধহয় দেশের বেশীরভাগ মানুষই এখন সেক্যুলার বা ধর্ম নিপেক্ষ বা সনাতন ধর্মের মডার্ণ রূপে বিশ্বাসী।
কিন্তু হেফাজতে ইসলাম এক বিশাল সমাবেশ করে আমার মুখে ঝামা ঘষে দিল। তাদেরকে শ্মরনকালে সর্বোচ্চ বাধা দেওয়ার পরও তারা লাখ লাখ লোকের সমাবেশ ঘটিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ শেষ করল। সাধারন মানুষের আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে উঠল হেফাজতে ইসলাম। তারা যেটা বোঝাল সেটা হল এই যে,এদেশের বেশীরভাগ মানুষের আবেগ অনুভূতি ইসলাম কেন্দ্রীক। এবং ভালকাজ কর আর খারাপ কাজই কর,ইসলামের ওপর দিয়েই করতে হবে। অর্থাৎ কেউ যদি খারাপ কাজও করতে চায় তাহলে তিনি নিজেকে প্রমান করার চেষ্টা করবেন যে,তিনি ইসলামের বিপক্ষে নন। বিষয়টা একটু হাস্যকর হলেও আম-জনতার জ্ঞান-বুদ্ধির স্টাটাটাসের কথা চিন্তা করে দোষারোপ করা যাবেনা।
যাইহোক, হেফাজতে ইসলাম এখন মানুষের মূল আলোচনা। অরাজনৈতিক সংগঠন হয়েও তারা এখন রাজনৈতিক ময়দান কাপাচ্ছে। তাদের ওপর নির্ভর করে অনেকে অনেক রকম হিসাব নিকাষ করছে। অনেকে ভাবছে তাদের বিরুদ্ধে গিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকা যাবেনা ,অনেকে ভাবছে তারা কোনো ঘটনাই নয় বরং কিছুদিন পর এমনিতেই তেল ফুরিয়ে যাবে, আবেগ বেশীক্ষন থাকেনা ইত্যাদী।
আসল বিষয়ে আসি। আবেগ এবং পদ্ধতি এক বিষয় নয়। যদিও আবেগ ছাড়া সবকিছু অচল তারপরও সেখানে যদি একটি নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতি না থাকে তাহলে আবেগ সঠিক মাত্রা পায়না। আর কোনো বিষয়ের/বিধানের রাজনৈতিক মূল্য না থাকলে তা স্থায়ী হওয়ার সম্ভাবনা নেই। হেফাজতে ইসলাম একটি অরাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান এবং তাদের দাবীগুলো রাজনৈতিক। এমতাবস্থায় তারা আশা করছে তাদের দাবীর বাস্তবায়ন সম্ভব। এবং এমন একটি কর্তৃপক্ষের নিকট এই আশা করছে,যারা পদ্ধতিগতভাবেই তাদের এই দাবীর বিরোধী প্রতিষ্ঠান তৈরী করেছে। তারা যদি এসব দাবী মানে তাহলে,তাদের প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়ে। এসব জানার পরও দাবী করা এবং নিজেদের দাবীর বাস্তবায়ন আশা করাটা বাস্তবসম্মত নয়। আবার এসব দাবী না করলেও ঈমান রক্ষিত হচ্ছেনা।
হাসিতে আমার বুক ফেটে যায়। এরা আয়নাতেও নিজের চেহারা দ্যাখেনা। এরা জীবনেও নিজেদের সক্ষমতার অস্তিত্ব বা বাস্তবতা স্বীকার করেনা। অথবা এরা বুঝেনা। এত অধিক সংখ্যক মানুষ নিয়ে এরা দূর দূরন্ত থেকে এসে ঢাকায় সমাবেশ করল এবং না খেয়েও চরম শৃঙ্খলার পরিচয় দিল। সংখ্যায় অগনিত হয়েও নেতৃত্বের প্রতি অবিচল থাকল। আনুগত্য,শৃঙ্খলা,নিষ্ঠা,একাগ্রতা,কর্মতৎপরতা এবং শক্তিতে অপ্রতিরোধ্য হয়েও এরা ছিটে ফোটা বিষয় নিয়ে দাবী দাওয়া তুলছে এবং তা বাস্তবায়নে শহীদ হতে চাচ্ছে। অথচ এদের যা জনবল,শক্তি,সামর্থ্য তা নিয়ে এরা এদের বিশ্বাসের বাস্তব রূপ দিতে সক্ষম। এরা ইসলামের অধীনে একটি সমাজ গঠনে যথেষ্ট এবং তখন সকল কিছুই এরা ইসলাম অনুযায়ী পরিচালিত করতে পারে। আমার ধারনা আম-জনতা ইসলাম কি; সেটা ভালভাবে বা বাস্তবতার নিরিখে না বুঝলেও এটা অন্তত মানে যে,ইসলামই শ্রেষ্ঠ। এবং এর অধীনেই তারা চলতে বেশী আগ্রহী হবে। আর অধিক সংখ্যক মানুষ এটা সমর্থন করলে সর্বত্র মানুষিক ঐক্য বিরাজমান থাকবে এবং সরকারী দল ও বিরোধী দলে পুরো দেশ দুভাগে বিভক্ত হওয়ার হাত থেকেও জানতা রক্ষা পাবে। সংখ্যাগরিষ্ঠতার কারনে বিষয়টি গণতান্ত্রিকও হল। ফলে এরিস্টটল বা অব্রাহাম লিংকনের উত্তরসূরীরা বা অন্যান্য যারা গণতান্ত্রিক আছেন বা চর্চা করেন তারাও ঠিক থাকল,সমর্থন দিল অথবা মনে মনে অখুশি থাকলেও আইন-কানুন বিধানের বিরুদ্ধে গেলনা। আর অমুসলিমরা ভন্ডামির নিরাপত্তার স্থলে আমানতদারিত্বের সাথে সার্বিক নিরাপত্তা লাভ করল। এতে জনতা ঐক্যের সাথে সামনে অগ্রসর হয়ে উন্নতি লাভ করল।
কিন্তু না,তা হবেনা। সিংহ জন্মের পর থেকে ভেড়ার পালে ঢুকে ভেড়ার দুধ পান করে ভেড়া হয়েছে। সজাগ রাখাল জানে এ খবরটা তার কানে দেওয়া যাবেনা। তাহলে সে তার অস্তিত্ব রক্ষায় সিংহের মত আচরণ করবে এবং দুষ্ট রাখালকে সাবাড় করে পূণরায় বনের রাজা বনে যাবে।
হ্যা, ঢাকা অবরোধে বা হেফাজতের বিশাল সমাবেশে কিছু লাভ হবেনা তা নয়। গোটা দেশ এবং বিশ্ব দেখবে এখানে ইসলামের স্বপক্ষ্যে একটি গনজোয়ার রয়েছে। এ বিষয়টি মুষড়ে পড়া বা হিনবল হয়ে পড়া অন্যান্য ইসলামী সংগঠনের কর্মীদের মানুষিক বল বাড়াবে। তারা তাদের কাজে আরও বেশী আত্মনিয়োগ করার সুযোগ ও সাহস পাবে। ১৩ দফা দাবী বাস্তবায়িত হোক আর না হোক ইসলামপ্রিয় মানুষের সমাবেশটি একটি বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। এখানে আরও একটি বিষয় হল,যারা ইসলামকে নিয়ে নানাভাবে কটাক্ষ করত তারা খানিকটা ঘাবড়ে গেছে। ইসলাম বিরোধী শক্তির মানুষিক বল খানিকটা কমে গেছে,এটাকে তারা প্রাপ্তী বলতেই পারে। তবে সার্বিক প্রাপ্তী কখনই সম্ভব নয় যতক্ষন না ইসলাম রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। আর সেক্যুলারিজম প্রতিষ্ঠা করে মদীনা সনদের ভিত্তিতে তা পরিচালিত করতে চাওয়া মানে হল প্লেনের মধ্যে বাসের ইঞ্জিন বসিয়ে তা আকাশে ওড়ানোর চেষ্টা।
সবাই ভাল থাকেন। ইদানিং ভাল থাকাটা আষাড়ে গল্পের মত হয়ে যাচ্ছে।
বিষয়: বিবিধ
১৮০৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন