অবশেষে ফিরলাম

লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ২৮ এপ্রিল, ২০১৩, ১১:৩৬:৩০ রাত



ম্যানেজারকে সকালেই অন্য একটি এলাকায় ফিরে যেতে হবে। তাই আমাকে সকালেই সাংহাইএর উদ্দেশ্যে রওনা হতে হবে। সকালে রওনা হলাম জিশান(চায়নিজ উচ্চারন চিশান)সাউথ রেলওয়ে স্টেশন অভিমূখে। প্রায় ত্রিশ কি:মি:দূরে বুলেট ট্রেন স্টেশন। এখান থেকে সাংহাই মাত্র ৩০/৩৫কি:মি: দূরে। দেখলাম যারা এদেশের জাতীয় পরিচয়পত্রধারী তারা অনায়াশে সেটি বিশেষ মেশিনে পাঞ্চ করে বিশেষ মূল্যহ্রাসসহ টিকেট কাটতে পারে। বড় নোট মেশিনে ঢোকালে মেশিন ইমানদারিত্বের সাথে টিকেটের দাম রেখে বাকীটা ফেরৎ দেয়। আমার পকেটেও একটি জাতীয় পরিচয়পত্র রয়েছে তবে তা কোনো বিশেষ সুবিধা প্রাপ্তীর জন্যে নয় বরং পাঁচ বছর অন্তর অন্তর শোষক শ্রেণীর মনোরঞ্জনের জন্যে নিবেদিত।

টিকেট কাটতে একটি লাইনে দাড়ালাম এবং টিকেট কাটলাম ৩০ইউয়ানে। ব্যাগ নিয়ে ট্রেনের ভেতরে ঢুকলাম। আমার ছিট সামনের দিকে,তাই ধীরে ধীরে সেদিকেই এগিয়ে যাচ্ছিলাম। ট্রেন চলছে কাটায় কাটায় ৩০০কি:মি: গতিতে। বাইরের দিকে তাকিয়ে মনে হলনা যে এত দ্রুত চলছি। তবে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ট্রেনকে দেখে মনে হল কানের পাশ দিয়ে গুলি চলে গেল। আমার ছিট নাম্বার মেলানোর জন্যে যখন টিকেটটি বের করে বোঝার চেষ্টা করছি। তখন আমার ছিটে বসে থাকা ভদ্র মহিলাটি আমাকে ছিট ছেড়ে দিলেন। জীবনেও আমি এক্ষেত্রে ছিট গ্রহন করিনা। তাকে বিনয়ের সাথে ওখানেই বসতে বললাম কিন্তু তিনি উঠে চলে গেলেন সামনের দিকে। উপায় না দেখে আসন গ্রহন করলাম। টিভি স্ক্রিনে জ্যাকি চানের একটি মুভি চলছিল। একটু তাকালাম এবং এরপর ডিজিটাল স্ক্রিনে দেখলাম পরবর্তী স্টেশন সাংহাই হংকিও। ব্যাপার বুঝতে পারলাম না,কারন কেবলই তো উঠলাম। পাশে ইংরেজী জানা এক লোককে জিজ্ঞেস করে বুঝলাম এটাই ঠিক। অল্প কিছুক্ষনের মধ্যেই সাংহাই পৌঁছে গেলাম। বুলেট ট্রেন ধরে নিশ্চিন্তে মানুষ দূর দূরন্ত থেকে সাংহাইতে তাদের কর্মক্ষেত্রে আসে। সারাদিন আমাকে এয়ারপোর্টে বসে থাকতে হবে। তবে ভেতরে বসার ব্যবস্থা চমৎকার। আমি বসে ডায়েরী লিখতে থাকলাম। পানির পিপাসা পেল,ইচ্ছা করল না উঠে গিয়ে এক বোতল পানি কিনে আনি। পাশেই দেখলাম কেউ একজন খানিক খেয়ে একটি পানির বোতল রেখে গেছে। এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখলাম কেউ আমাকে দেখছে কিনা। না এখন আমি নিরাপদ। প্রচন্ড লজ্জায় বোতলটি ধরলাম তারপর কোনো দিকে না তাকিয়ে ঢোক ঢোক ঝেড়ে দিলাম। তবে খানিক পর যখন আবার পানি পান জরুরী হল তখন কিন্তু আমি অন্যের ফেলে যাওয়া বোতলে হামলা চালায়নি। পকেটের পয়সা দিয়ে কিনে খেয়েছি। পানি কেনার যন্ত্রটি স্থাপন করা হয়েছে আমার থেকে অন্তত ৩০০ মিটার দূরে। এতদূর পর্যন্ত ট্রলি ঠেলে যেতে ভাল লাগছিল না। পানি আর কোকের দাম সমান কিন্তু পানিই কিনলাম যদিও কোমল পানীয় আমার পছন্দ। কোমল পানীয় শরীরের জন্যে যথেষ্ট ক্ষতিকর তাই চেষ্টা করছি এটা এড়িয়ে চলার; যদিও অনেক সময় তা সম্ভব হয়না। বিকেল পর্যন্ত এখানে বসে থাকলে ভাল লাগছিল না তারপরও থাকলাম। মাঝে মাঝে হাটাহাটি করে এয়ারপোর্টটাকে বোঝার চেষ্টা করছিলাম। বিভিন্ন স্থানে বিশাল আকৃতির সচিত্র ম্যাপ দেওয়া রয়েছে। সেটা দেখে দিক ঠিক করে নির্ধারিত স্থানে পৌঁছা সম্ভব। তারপর ঢাকায় চলে আসলাম।

মাত্র দুই দশক পূর্বেও চায়নার অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা এ পর্যায়ের ছিলনা। অল্প সময়ের মধ্যে তারা অর্থনৈতিক,সামরিক ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উন্নতি সাধন করেছে এবং উন্নয়নের ধারা এখনও উর্ধ্বমুখী। চায়না এখন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্ধনীতি। প্রতিযোগীতায় তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের থেকে অল্প খানিক পেছনে রয়েছে। কয়েক বছরের মধ্যে তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকেও টপকে যাবে আশা করা হচ্ছে। জনগনের ঐক্য আর সঠিক দিক নির্দেশনা থাকলে যে কোনো দেশ দ্রুত উন্নতির পথে ধাবিত হয়। তবে তাদের সাং®কৃতিক অঙ্গনে বেশ পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। পাশ্চাত্যের তথাকথিত আধুনিক সভ্যতার ছোঁয়ায় তাদের হাজার বছরের সাং®কৃতিতে বেশ পরিবর্তন এসেছে। শহরে মানুষের আচার আচরণ চলা-ফেরায় পরিবর্তন চোখে পড়ে। যেসকল কাজ তারা এতদিন করা থেকে বিরত থাকত বা অত্যন্ত গোপনে ঘটত,তা আজ বেশ কিছুটা খোলামেলা হয়েছে। পূর্বে যেখানে একজন তার জীবনসঙ্গীকে সারাজীবনের জন্যে পেতে চাইত এবং যেকোনো মূল্যে সম্পর্ক অটূট রাখত;আজ সেখানে তারা অহরহ সম্পর্ক চুকিয়ে ফেলছে। পুত্র সন্তানের আশায় তারা ভ্রুন হত্যায় পৃথিবীতে প্রথম স্থানটি অধিকার করেছে। পারিবারিক অশান্তি পূর্বের যেকোনো সময়ের তুলনায় আনেক বেশী। সামাজিক অপরাধ,দূর্নীতিও বেড়েছে। আধুনিক সভ্যতার পরশে অঢেল অর্থের হাতছানিতে তারা এই সভ্যতার অন্ধকার অংশটাও প্রাপ্ত হয়েছে। কিন্তু চায়না আমার কাছে খুব প্রিয় একটি দেশ। ভাষাগত সমস্যা একটি ব্যাপার,তবে সেটিও ব্যাপার নয় যখন এখানকার পরিচ্ছন্ন প্রাকৃতিক পরিবেশ আর বন্ধুবৎস্যল সহজ-সরল মানুষকে হিসেবে আনা হয়। চায়নার মানুষের জন্যে শুভকামনা রইল।

শেষ হল কিন্ত মুক্তি নেই.....

বিষয়: বিবিধ

২২৫৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File