শেষের দিনগুলো
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ২৪ এপ্রিল, ২০১৩, ০৫:৫০:৪৮ বিকাল
আজ সকালে আসলাম আবারও সেই রাতের লেকপার্কে। দিনের বেলা এটি অন্য রকম সুন্দর। আবারও সেসকল পথে হাটলাম। এবার সেই থিয়েটার হলের কাছে গেলাম।
এটা সত্যিই খুব চমৎকার। এর সামনের প্রশস্ত প্রাঙ্গনে দেখলাম একদল মার্শাল আর্টিস্ট কুংফু প্রাকটিস করছে। ষাটোর্ধ নারী-পুরুষও ছিল। এক বুড়োকে শাওলিন কুংফুর একটি বিশেষ কোরিওগ্রাফি তাইজিচুয়ান প্রাকটিস করতে দেখলাম।
তার শারিরীক শক্তি দেখে মুগ্ধ হলাম। আমার আতীত স্মৃতি মনে পড়ল। তায়কোয়ানন্দোর পূর্বে আমি শাওলিনের স্টুডেন্ট এবং শিক্ষক ছিলাম। এটা নিয়ে একসময় সেখানকার বন্ধুদের সাথে কত যে মজা করেছি তা বলাই দুষ্কর। মজা করে নিজেকে গ্রান্ডমাস্টার আখ্যায়িত করে নিজে নিজে জগাখিচুড়ী কুংফু প্যাটার্ন তৈরী করে অন্যদেরকে দেখাতাম। তখন তাদের কেউ কেউ আবার আমার মত উদ্ভট নাম দিয়ে নিজের মনে আরেকটি প্যাটার্ণ তৈরী করে এদিক ওদিক হাত পা ছুড়ে তা প্রদর্শন করত এবং নিজেকে আরও বড় গ্রান্ড মাস্টার বলে দাবী করত। তাইজচুয়ান নিয়ে আমরা অনেক বেশী মজা করেছি। এখানে একটি অংশে খুব শক্তি দিয়ে খোলা হাত সামনে প্রসারিত করতে হয়,সেটা দেখতে অনেকটা ভিক্ষুকদের ভিক্ষা চাওয়ার মত। আমরা একটি ভাবগাম্ভির্য্যপূর্ণ পরিবেশেও পকেট থেকে একটি এক টাকার কয়েন বের করে তার হাতের ওপর দিয়ে আস্তে করে চলে আসতাম। অর্থাৎ ভিক্ষা দিলাম। সে অপমানিত বা লজ্জিতও হত তখন আমরা অট্ট হাসিতে ফেটে পড়তাম আবার কোনো কোনো বন্ধু তাড়া করত।
আজ হাটতে হাটতে অনেকদূর আসলাম। লেকের অন্য দিকের রাস্তায় হাটছিলাম। এদিকটাও খুব জাঁকজমকপূর্ণ। পানির পাশ দিয়ে তৈরী সিড়িতে হাটলাম। আজ সূর্য্য বেশ কড়া। আমি সবুজ পার্কে ঢুকলাম। এখানে একটি কমিউনিটি সেন্টার রয়েছে। সেটাও খুব দারুনভাবে তৈরী করা। এ অংশে পাথরের কাঁরুকাজ চোখে পড়ার মত। বেশকিছু ভাষ্কর্যও রয়েছে। কয়েকজনকে দেখলাম গিটার শিখছে। আনমনে গিটার বাজাতে দেখলাম এক বাচ্চকে। বয়স দশ বছরের মত হবে। সে পারে কিনা দেখলাম। আসলে সামনে একটি খাতা নিয়ে সে আবোল তাবোল বাজাচ্ছিল। আমার সাথে চোখাচোখি হতেই একগাল হাসল। আমি তার কাছে গিয়ে গান গাইব এমন একটা ভঙ্গী করলাম কিন্তু জিহবার সাহায্যে হাস্যকর উল্টাপাল্টা আওয়াজ করে তার চোখের দিকে তাকালাম। তার চোখ আরও ছোট হয়ে গেল। সে হো হো করে হাসছে। যে কোনো বাচ্চার এ ভাষা বুঝতে কষ্ট হবার কথা নয়। আমার উদ্দেশ্য ছিল তাকে একটু আনন্দ দেওয়া।
অন্যদিকে চলে গেলাম। হাটতেই থাকলাম। বেশ গরম লাগছে। লেকের পানি রোদে ঝিলমিল করছে। লেকের পাড় এমনভাবে সাজিয়েছে যে ভাল না লেগে উপায় নেই। এদিকে একটা বড় সেতু দেখলাম,রাতে এটি রঙিন আলোয় আলোকিত হয়। একটি দ্বীপ দেখা যাচ্ছে। সেখানে অনেক প্রজাতির গাছ চোখে পড়ল। গরমের কারনে গাছগাছালির ভেতর দিয়ে হাটছিলাম। খুব পিপাসা পেল তাই ফিরে আসলাম। লেকের এক পাশে দেখলাম একটি ব্যয়বহুল হোটেল। অনেক দামী দামী গাড়ি সারিবদ্ধভাবে সাজানো সেখানে। দেখলাম এব নব দম্পতি। বিয়ে কেবল হয়েছে। সাদা পোষাকে হাতে ফুল নিয়ে মেয়েটা দাড়িয়ে আছে কালো স্যুটের নতুন স্বামীর সাথে। ফটোসেশন চলছে। আত্মীয়স্বজনরা বেশ হৈ হুল্লোড় করল তারপর নীচতলায় সারিবদ্ধভাবে সাজানো চেয়ারে আসন গ্রহন করল। এরা এবার আহারপর্ব সারবে। লোভ লাগল। চলে আসলাম,কারন ওরা আমাকে নিমন্ত্রণ করেনি।
দুপুরে ম্যানেজারকে দাওয়াত করলাম একটি রেস্টুরেন্টে। সে তার স্কুলপড়–য়া বোনকে নিয়ে আসল। আমাদের পাশের টেবিলে এক দাদির কোলে এক রসগোল্লাকে দেখলাম। রসগোল্লা ঘুমাচ্ছে আরামে। বয়স কয়েকমাস হবে। চোখ এখন একটি সরল রেখার মত। মুখ তার গোল। হঠাৎ তার ঘুম ভেঙে গেল এবং অপলক তার দাদির মুখের দিকে তাকিয়ে থাকল। দেখলাম চোখ তার এখনও মোটামুটি একটি মোটা রেখার মত। মোটা রেখার ভেতর দিয়ে কালো চোখটি কোনোমতে দেখা যাচ্ছে। তার চিত্তচাঞ্চল্য শুরু হল। তার মা বুঝে গেছে যে তার খাবার সময় হয়েছে। দ্রুত তিনি বড় ব্যাগের ভেতর থেকে গরম পানি,গুড়োদুধ ইত্যাদী বের করলেন। দুধ তৈরী করতে করতেই বুঝলেন তিনি দেরী করে ফেলেছেন। রসগোল্লার চিত্ত চাঞ্চল্য বেশী পরিলক্ষিত হল। মা তখন ফিডারের দুধটি ঝাকিয়ে এবং ফু দিয়ে খানিক ঠান্ডা করার চষ্টা করলেন। কিন্তু সেটা দ্রুত ঠান্ডা হবার নয়। তিনি খানিকক্ষন ফু দিয়ে নিজের হাতের উল্টোপিঠে একটু দুধ ঢেলে পরিক্ষা করছিলেন আরামদায়ক তাপমাত্রায় পৌঁছেছে কিনা। ভাবলাম পৃথিবীর সকল মা একই চরিত্রের। তারা তাদের সন্তানের কল্যান ছাড়া কিছুই চান না। তারা সন্তানের মঙ্গলের জন্যে সকল কষ্ট সহ্য করেন।
সন্ধ্যায় কিছু কেনাকাটা করলাম ,কারন কারো কারো জন্যে কিছু না কিনে উপায় নেই। একটা পোষাকের দোকানের সামনে দাড়িয়ে থাকলাম পুতুলের মত। আগামীকাল বিকেলে আমাকে ফিরতে হবে।
এভাবে হাসগুলিকে আস্ত ঝুলিয়ে বিক্রী করা হয়। এগুলো রান্না করাই আছে। দেখে মনে হল আমাদের সরকার আমাদেরকে এভাবে যত্নে রাখে সর্বদা।
বিষয়: বিবিধ
২২১৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন