অন্ধকারাচ্ছন্ন ইউরোপ এবং ইসলামের স্বর্ণযুগ...প্রথম পর্ব
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ১০ এপ্রিল, ২০১৩, ১২:১০:৫৭ দুপুর
ইসলাম আবির্ভাবের পূর্বে ইউরোপ ছিল অন্ধকারাচ্ছন্ন। আমরা হর-হামেশা একথা শুনে থাকি যে,মধ্যযুগ ছিল অন্ধকার যুগ অথবা কোন নৃশংষতা দেখলে বলা হয়, মধ্যযুগীয় বর্বরতা,মোট কথা মধ্যযুগ মানেই বর্বরতার যুগ। ভুল বুঝবেন না ! আমরা আমাদের পাঠ্য পুস্তকে মূলতঃ ইউরোপীয় ইতিহাস পড়ে থাকি বলে মধ্যযুগ সম্পর্কে একতরফা মন্তব্য করি।
মধ্যযুগে ইউরোপ ছিল পাতালের অন্ধকারে কিন্তু এসময় ইসলামী খিলাফতভুক্ত অঞ্চল সমূহ ছিল আলোর দিশারী। তারা জীবনযাত্রার প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে উন্নতির সর্বোচ্চ শিখরে অবস্থান করছিল,তাদের সমকক্ষ কেউ ছিলনা এবং মুসলিম সভ্যতা ইউরোপের উপর বিশেষভাবে দয়া করাতে তারা ধীরে ধীরে আলোর দিকে আসতে থাকে। তবে পরের দিকে অর্থাৎ শপ্তদশ,অষ্টাদশ শতাব্দীর দিকে তারা মুসলিমদের প্রায় সব আবিষ্কার,অবদান নিজেদের নামে চালিয়ে দেয়। অনেক মৌলিক কিতাব শুধু অনুবাদ করে নিজের নামটি প্রতিস্থাপন করে নিজের নামে চালিয়ে দেয়।
তাদের সৎ পন্ডিতরা মাঝে মাঝে তাদের বিজ্ঞানীদের আমন্ত্রণ জানাতো কোন অনুষ্ঠানে,তখন তারা পূর্বে লেখা মুসলিম বিজ্ঞানীর কিতাব এবং তার কিতাব পাশাপাশি রাখতো এবং এব্যাপারে জিজ্ঞেস করতো লজ্জা দেওয়ার জন্য। মূলতঃ রেনেসাঁ আন্দোলনের পর মুসলিমরা কাফির মুশরিকদের জঘন্ন ষড়যন্ত্রে বিভিন্নভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে এবং নিজেদের ভেতর রেষারেষী চরম আকার ধারণ করে ফলে তাদের কিছু আভ্যন্তরীণ দূর্বলতা সৃষ্টি হয় যার ফলে অন্যরা সে সুযোগকে কাজে লাগায়। পরের দিকে ইসলামী খিলাফত ব্যবস্থা ধ্বংস হওয়াতে কাফির মুশরিকরা বেপরোয়া হয়ে ওঠে এবং মানব জাতির জন্য মুসলিমদের অবদান চাপা পড়ে যায়। ইউরোপীয় সমাজকে অসভ্যতা,বর্বরতা গ্রাস করেছিল। ইসলাম পূর্ব ইউরোপের অবস্থা ইউরোপের জ্ঞানী,দার্শনিক,বুদ্ধিজীবীরা বিভিন্নভাবে বর্ণনা করেছেন।
যেমন ডুয়েশ বলেন ঃ “আল-কুরআনই একমাত্র কিতাব যার সাহায্যে আরবগণ আলেকজান্ডারের চাইতেও বিরাট সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছিল। এ সাম্রাজ্য রক্ষনাবেক্ষনকল্পে তারা সকলপ্রকার প্রয়োজনীয় কার্যক্রমে প্রজ্ঞার পরিচয় দিতে সক্ষম হয়েছিল। তারা বিজয়ীবেশে ইউরোপ এসেছিল এবং সেখানে মনুষ্যত্যের উপযোগী ভাবধারা সৃষ্টি করেছিল। তাদের আসার পূর্বে ইউরোপ ছিল অন্ধকারাচ্ছন্ন এবং অত্যাচারে জর্জরিত।”
ফ্রান্সের দার্শনিক আলকাস লোযায়েজোন বলেন ঃ “কুরআন একটি জ্ঞানপূর্ণ ও জ্যোতির্ময় গ্রন্থ। আমরা(ইউরোপীয়গণ)বিজ্ঞানের যে সমস্ত বিষয় আমাদের খ্রিষ্টধর্মের সাথে সমন্বয় সাধনের চেষ্টা করছি,সেগুলোর সমাধান ইসলাম বা আল কুরআনে বহু পূর্ব থেকেই বিদ্যমান।”
মূলতঃ বহু শতাব্দীকাল ধরে মানুষ যে সমস্ত বিষয় নিয়ে গবেষণা করছিল এবং যা মানুষের কল্পনাতেও ছিলনা সে সমস্ত বিষয়েও আল কুরআন সুস্পষ্ট বর্ণনা দিয়েছে। ১৪ শত বছর পূর্বে যেখানে আল কুরআন বলছে ,চন্দ্র ও সূর্য নিজ নিজ কক্ষপথে ভ্রমন করছে,চন্দ্রের নিজস্ব আলো নেই,সূর্যের আলোতেই সে আলোকিত,সেখানে কয়েক শতাব্দী পূর্বেও ইউরোপ এ সত্যটি মেনে নিতে পারেনি শুধু তাই নয়, এটাকে স্রষ্টার উপর বাড়াবাড়ি বলে তারা আখ্যায়িত করেছিল।
আর যারা এবিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করতো তাদেরকে নিষ্ঠুরভাবে দমন করা হয়েছে। অনেককে হত্যা করা হয়েছিল। তৎকালীন শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানিরা যেমন- কোপারনিকাস, ব্র“নো, গ্যালিলিও এ তিন বিজ্ঞানী সত্য আবিষ্কার ও তা প্রচারের জন্য স্বৈরাচারী চার্চের কোপানলে পতিত হয়। ব্র“নোকে ১৬০০ সালের ১৭ ফেব্রয়ারী হাত-পা বেধে আগুনে নিক্ষেপ করে নিষ্ঠুর ভাবে হত্যা করা হয়। কোপারনিকাস যাযকদের অত্যাচারের হাত থেকে মুক্তি পাবার জন্য প্রাণ পণ চেষ্টা করে শেষ পর্যন্ত বেঁচে গেলেন- অকালে প্রাণ ত্যাগ করে। নিজ আবিষ্কার সত্য জেনেও বিজ্ঞানি গ্যালিলিওকে প্রাণ বাঁচানোর তাকিদে অপরাধ(!) স্বীকার করতে হয়। তবুও তিঁনি পরিত্রাণ পেলেন না। বন্দীদশায় তিঁনি প্রাণ ত্যাগ করেন ১৬৬২ খ্রিষ্টাব্দে।
স্পেনের মনীষী মাইকেল সারভেন্টাস(১৫১১-১৫৫৩)কে জীবন্ত দগ্ধ করা হয়। কারণ তিঁনি গডের ত্রিতত্ত্ববাদ বিশ্বাস করার কোন যৌক্তিক কারন খুঁজে পাননি এবং যিশুর খোদা পুত্র হবার কোন কারণ না খুঁজে পাবার জন্য। আর ইটালির ধর্মযাযকদের এবং তাদের মদদপুষ্ট মূর্খ জনতার সমালোচনা করার জন্য টমাস উইলিয়ামের ফাঁসী হয় ১৫৫২ খ্রিষ্টাব্দে। তাঁর দেহকে খন্ড বিখন্ড করে তা কুকুরকে খাওয়ানো হয়। এধরনের শত শত ঘটনা ইতিহাসের পাতাকে কলুষিত করেছে।
“ম্যান এমং ম্যানকাইন্ড” গ্রন্থের রচয়িতা ব্রিনলি লা পোর ট্রেঞ্জ লিখেছেন, মুহাম্মদ (সাঃ) ও তাঁর অনুসারিদের নিকট খ্রিষ্টান জগৎ এমন কৃতজ্ঞ ঋণে আবদ্ধ যে, ঋণ পরিশোষ করা প্রায় অসম্ভব। এ কৃতজ্ঞতা নিহিত মন-মানুষিকতার ক্ষেত্রে,দর্শন শাস্ত্রে,চিকিৎসা শাস্ত্রে ও বিজ্ঞান বিষয়ে।”
ইসলামই পৃথিবীর জ্ঞান বিজ্ঞানকে জিইয়ে রেখেছিল এবং তাকে ইহুদী,নাসারাদের হাত থেকে রক্ষা করেছিল।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ জব্লিউ বুশ বলেন-“ইসলামী সভ্যতা যুগ যুগ ধরে শিক্ষা ও সাং®কৃতির কেন্দ্রবিন্দু ছিল। বিশ্বের সব ধর্মের লোক জন ইসলামের আবির্ভাব থেকে উপকৃত হয়েছে। মুসলমানদের দর্শন,গবেষণা ও চিকিৎস্যা ক্ষেত্রে আবদানের কারনে পুরো মানব সভ্যতা ভিষণভাবে উপকৃত হয়েছে।” -(প্রথম আলো,২১সেপ্টেম্বর,২০০৮)
মধ্য যুগে ইউরোপে শহরের পরিমান খুবই কম ছিল। বেশিরভাগ মানুষই গ্রামে বাস করত। শহরে যা বিক্রী হত তা হল জুতা , রুটি,খাবারের পাত্র,অলংকার,মাংস ইত্যাদি। বেশীরভাগ মানুষ মদ পান করত। দোকানগুলো থকত রাস্তার উপর। শহরে মানুষ গাদাগাদি করে থাকত। একই ঘরে অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে অনেক মানুষ বাস করত। শহরের পরিবেশ ছিল ভয়াবহ নোংরা। কোনো রাস্তা ২(দুই)মিটারের অধিক প্রশস্ত(চওড়া)ছিলনা। রাস্তাগুলো ছিল মাটির তৈরী এবং রাস্তায় কিছুদূর পর পর গর্ত থাকত যার অনেকগুলো থাকত বড় বড় আর পানি ভর্তি অবস্থায়, ফলে রাস্তায় চলাচল ছিল যথেষ্ট বিপজ্জনক।
মানুষের জন্য কোনো টয়লেট ছিলনা এবং শহরে কোনো ড্রেনেজ ব্যবস্থা ছিলনা,এ সুবিধাগুলো শুধু রাজ প্রাসাদেই থাকত। মানুষেরা ছিল ভয়াবহ মূর্খ তারা রাস্তায় ময়লা ফেলত। রাস্তা ঘেষে বাড়ি ঘর তৈরী হত এবং পশু পাখির নাড়ি,ভূড়িসহ যাবতীয় ময়লা তারা রাস্তা বরাবর নিক্ষেপ করত। কখনও কখনও তা পথচারিদের মাথায় পড়ত,এ নিয়ে প্রায়ই পথচারিদের সাথে তাদের গন্ডগোল হত(মধ্যযুগের শহরের অবস্থা নিয়ে পরবর্তীতে যথেষ্ট শিল্প চর্চা হয়েছে,সেখানে চিত্রে দেখা যেত বা যায় উপর থেকে চোখ বন্ধ করে কেউ পথচারীর মাথায় ময়লা ঢেলে দিচ্ছে) । বাজারের দোকানদারেরা তাদের সমস্ত নষ্ট তরি তরকারি,মাছ,মাংস,ময়লা রাস্তায় ফেলত(ওগুলো যে দূর্গন্ধযুক্ত, সম্ভবত তারা তা বিশ্বাস করত না)। শহরের বাসিন্দারা যেখানে সেখানে মল-মূত্র ত্যাগ করত। রাস্তা থেকে ময়লা পরিষ্কারের ভাল কোনো ব্যবস্থা ছিলনা।
রাস্তায় কুকুর ও শুয়োর খাবার নিয়ে কাড়াকাড়ি করত। প্রত্যেকটি স্থানে ইদুরের আখড়া ছিল এবং মানুষ ইদুরের উৎপাতে মহা বিরক্ত ছিল কিন্তু তাদের শাসক তাদের জনগণকে মানুষ মনে না করার কারনে জনগণের অবস্থা নিয়ে ভাবতে রাজি ছিলনা তাই তাদের কবি সাহিত্যিকদের ছন্দে ছন্দে অপ্রকাশ্যে শাসককে নিয়ে বিদ্রুপ করা ছাড়া কোনো গতি ছিলনা। (এ জাতীয় অস্বস্তিকর অবস্থা থেকে মুক্তির সম্ভাবনা না দেখতে পেয়ে তারা “হ্যামেলিনের বাঁশি ওয়ালা” নামক এক রক্ষা কর্তাকে গল্পের মাধ্যমে আবিষ্কার করে,যিনি বাঁশি বাজিয়ে ইদুর নিধন করেন, কারণ সেখানে নিয়ম ছিল জনগণ শাসককে সার্ভিস দিবে,শাসক জনগণকে নয়)।
ইউরোপের কোনো বাড়িতে পানির বন্দোবস্ত ছিলনা,নির্দিষ্ট কিছু স্থান থেকে সবাইকে বহু কষ্টে পানি সংগ্রহ করতে হত। তবে সে পানি অধিকাংশ সময়ই নোংড়া থাকত ফলে তা পান করে তারা রোগ ব্যাধীতে ভূগত। হাজার হাজার শহরের মধ্যে কিছু শহর খানিকটা পরিচ্ছন্ন থাকলেও সেখানকার পানি নোংড়া থাকত। উচ্চ পদস্থ লোকেরা ভাল পানি কিনতে পারত ,তারা শহরের বাইরে থেকে ব্যারেলে করে পানি আনত কিন্তু তাদের সংখ্যা ছিল অতি নগণ্য। শহরে সবসময় রোগ ব্যাধী লেগেই থাকত। গোটা ইউরোপের মোট শিশুর অর্ধ্বেকই তাদের ১(এক) বছর বয়স হবার আগেই মারা যেত। প্লেগ মহামারির মত দেখা দিত এবং একবার ইউরোপের মোট জনসংখ্যার এক চতুর্থাংশ মারা যায় প্লেগে। তাদের গড় আয়ু ছিল ৪০(চল্লিশ)বছরেরও কম।
ইউরোপে প্রচুর অপরাধ সংঘটিত হত(সম্ভবতঃএখন আরো বেড়েছে )। শহর ও গ্রামে অজস্র অপরাধ সংঘটিত হত এবং সেখানে পুলিশ বাহিনীর অস্তিত্ব ছিলনা,এগুলো দেখার কেউ ছিলনা। রাজা বাদশাহ্রা নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত থাকত। রাস্তায়,খুন,ছিনতাই,ধর্ষণ ছিল গা সওয়া ব্যাপার। মানুষ অপরাধীকে ধরতে পারলে অধিকাংশ সময়ই হত্যা করে ফেলত।
মধ্যযুগে ইউরোপে সামান্য কারনে বড় বড় যুদ্ধ হত। এর মধ্যে কিছু যুদ্ধ যথেষ্ট হাস্যকর ঃ
***১২২৫ সালে ইটালিতে বাদামী রঙের কাঠের তৈরী একটি বালতি চুরি হয়ে যাওয়াতে যুদ্ধ হয়েছিল। বালতিটি চুরির দায়ে উত্তর ইটালীর মোদেনা শহরের সৈন্যরা পার্শ্ববর্তী শহর ‘বোলোনায়’আক্রমন করে। বোলোনাও ছেড়ে দেওয়াা পাত্র নয় তারা মর্যাদার জন্য দীর্ঘ বার বছর পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যায় । হাজার হাজার লোক নিহত হয় তবে বালতিটি পাওয়া যায়নি।
*** স্পেন খ্রিষ্টানদের হাতে যাবার পর বৃটেনের সাথে তার ১৭৩৯-১৭৪৩ সাল পর্যন্ত যুদ্ধ হয় একজনের কান কাটা নিয়ে। পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জে এক স্পেনিশ এক ইংরেজ নাবিক রবার্ট জেনকিন্সের কান কেটে নিয়েছিল,তা নিয়ে এই যুদ্ধ। বৃটিশ পার্লামেন্টে কান কাটার ঘটনা উপস্থাপিত হবার সাথে সাথে যুদ্ধ ঘোষিত হয়। জয় পরাজয় নিষ্পত্তি হয়নি।
***১৯২৫ সালে গ্রিসের এক বেওয়ারিশ কুকুর বুলগেরিয়া সীমান্তে প্রবেশ করে এবং তাদের সেনারা কুকুরটিকে হত্যা করাতে গ্রীক সেনারা ক্ষেপে যায় এবং বুলগেরিয়া আক্রমন করে। দীর্ঘদিন ধরে চলে এ যুদ্ধ।
**দক্ষিন আফ্রিকার জুলু উপজাতি প্রধানের স্ত্রী মনোমালিন্যের কারনে স্বামীকে ছেড়ে বৃটেনে চলে যায়। অবৈধ অনুপ্রবেশের কারনে বৃটেনের সৈন্যরা তাকে হত্যা করে,তখন দুই দেশের মধ্যে ভয়াবহ যুদ্ধ শুরু হয়। এছাড়া ইউরোপে আরও তুচ্ছ কারনে যুদ্ধ বিগ্রহ চলত। একজন নারীকে পাবার জন্য শত শত যুদ্ধ হয়েছে। সামান্য সম্পদের জন্য এবং অতি সামান্য কটাক্ষ করার জন্যও বছরের পর বছর ধরে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছে।যা ছিল হুবহু আরবের আইয়ামে জাহেলীয়ার যুগের অনুরূপ।
মধ্যযুগে ইউরোপ ছিল অন্ধবিশ্বাস,কু-সংষ্কারে পরিপূর্ণ। নানা রকম উদ্ভট কির্তী-কলাপে তারা লিপ্ত ছিল। তারা ছিল অসভ্য বর্বর। তাদের অসভ্যতা এখনকার সভ্য রাষ্ট্রের দাবীদারদের আচরনে সু-স্পষ্টভাবে পরিলক্ষিত হয়। মধ্যযুগীয় অন্ধকারের রেশ এখনও ইউরোপ,আমেরিকার দেশগুলোতে দেখাযায়। যেমন-
খরগোশের পাঃ
পশ্চিমা দেশের লক্ষ লক্ষ লোক খরগোশের পেছনের পায়ের থাবা অথবা সোনা, রুপা দিয়ে তৈরী খরগোশের নকল থাবা সৌভাগ্যের কবচ হিসেবে ব্যবহার করে। খরগোশের পেছনের পা দিয়ে মাটির উপর আঘাত করার অভ্যাস থেকে এই বিশ্বাসের উৎপত্তি। প্রাচীন কালের লোকদের মতে,খরগোশরা মাটি আঘাত করার সময় ভূগর্ভস্থ আত্মাদের সাথে কথা বলতো। এই কারনে আত্মাদের কাছে কারো মনের বাসনা জানানো এবং সাধারণভাবে সৌভাগ্য বহনের মাধ্যম হিসেবে খরগোশের পেছনের থাবা সংরক্ষণ করা হত এবং হয়।
ঘোড়ার খুরের নালঃ
আমেরিকার বহু ঘরের দরজায় ঘোড়ার খুরের নাল পেরেক দিয়ে লাগানো থাকে। এছাড়া খুরের নালের প্রতিকৃতি ব্রেসলেট,চাবির চেইন অথবা গলার হারে পরা হয় এই বিশ্বাসে যে ,এরা সৌভাগ্য বয়ে নিয়ে আসবে। প্রাচীন গ্রীক পৌরানিক কাহিনীতে এই বিশ্বাসের উৎপত্তি পাওয়া যায়। নালের খোলা দিক উপরের দিকে করে ঝুলিয়ে রাখা হয় কারন, তা যদি নিচের দিকে খাকে তাহলে সৌভাগ্য ঝরে পড়ে যায়। ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম আলো পত্রিকায় পড়লাম আমেরিকার অর্ধেকেরও বেশী মানুষ বিশ্বাস করে-তাদের ভাল-মন্দের ব্যাপারগুলো দেখা শুনা করে বিশেষ কিছু দেবতা।
তাদের অনেকেই শয়তানের ইবাদত করে, কারণ শয়তান শক্তিশালী। পূর্বের অজ্ঞতার সময়ে তারা যেসমস্ত আচরণ করত তাকে সম্মান জানাতে এখনও তারা বিশেষ বিশেষ দিবস পালন করে। সেসব দিনগুলোতে তারা অদ্ভুত সব কান্ড করে থাকে। তার কিছু কিছু সম্প্রতি আমাদের দেশেও আসতে শুরু করেছে তবে আমাদের জনতা এবং তাদের জনতার অনেকেই এসমস্ত দীবসগুলির উৎপত্তির কারণ জানে না। ফান-ফুর্তির আইডিয়া দিয়ে পয়সা কামানোর জন্য তাদের বুদ্ধিমান ব্যবসায়ী শ্রেণী এসব দিবসগুলী চাঙ্গা করলেও প্রত্যেকটির পেছনে ছিল তাদের পূর্ববর্তীদের অজ্ঞতা এবং অত্যাচার সংক্রান্ত ইতিহাস(এবং পরবর্তীদের ব্যবসা সংক্রান্ত ইতিহাস)।
১৪৯২ সালে নাবিক ক্রিষ্টফার কলস্বাস সান্তামারিয়া, পিন্টা ও নীনা নামক ৩ টি জাহাজে করে সমুদ্রে একটি দিক ঠিক করে স্থল ভাগের সন্ধানে চলতে শুরু করতে মনস্থির করেছিলেন। যাত্রার আগে তিঁনি স্পেনের প্রধান পাদ্রীর কাছে গেলেন দোয়া নিতে। পাত্রী তাঁর উদ্দেশ্যের কথা শুনে বললো তুমি বিপদের সম্মুখিন। এটা অসম্ভব, তুমি একাজ করোনা। কারণ তুমি যদি আন্দাজে সমুদ্রে যে কোন একদিকে চলতে শুরু করো, তাহলে তুমি চলতে চলতে পৃথিবীর সীমা ছাড়িয়ে নরকে পড়ে যাবে, কারণ নরক নীচে অবস্থিত। পৃথিবী যেহেতু সমতল তাই এই সমতলে চলতে চলতে যখন এর সীমা শেষ হয়ে যাবে, তখন তুমি পড়ে যাবে। যাই হোক তার কথা না শুনেই কলম্বাস সমুদ্রে যাত্রা করলো। কলম্বাস যেসব জ্ঞানীদেরকে সাথে নিয়েছিল,তারাও ছিল কু-সংস্কারছন্ন । মাসের পর মাস সমুদ্রে চলতে চলতে বিরক্ত হয়ে তারা নানান হাস্যকর মন্তব্য করতে থাকে এবং এক পর্যায়ে বিরক্ত হয়ে কলম্বাসকে হত্যা করতে চেয়েছিল। কিন্তু সময় বেঁধে দেওয়া শেষ ৩দিনের ভেতরেই একটি শুকনো ডাল দেখে তারা স্থলভাগের নৈকট্য জানতে পারে।
মজার ব্যাপার হলো কলম্বাস স্থলভাগে নেমে ঘোষণা করেন যে, আমরা ইন্ডিয়ার একটি অংশে এসেছি কিন্তু যখন তাঁর সঙ্গীরা বললো - ইন্ডিয়ার মানুষ তো লাল না,এরা তো লাল রঙের মানুষ। তখন কলম্বাস বললো, এরা রেড ইন্ডিয়ান, এলাকাটির নাম দেন “রেড ইন্ডিয়া” অথচ তখন তিঁনি গিয়েছিলেন বর্তমানের আমেরিকাতে। সে না হয় মানলাম কিন্তু তিঁনি আমেরিকার আবিস্কারক কিভাবে হন ?
কলম্বাসের আগমনের বহু পূর্ব থেকেই তৎকালীন আমেরিকার মানুষ (কলম্বাসের রেড ইন্ডিয়া) আরব বিশ্বের সাথে প্রতিনিয়ত নৌপথে ব্যবসা বানিজ্য করত এবং কলম্বাস সেখানে এমন সম্প্রদায়ের লোকদেরকে দেখতে পান যার সম্পর্কে তিনি বলেন-তারা মোহামেডানিজম(মোহাম্মদী ধর্ম) অনুসরণ করে।
মহিউদ্দিন রইস নামক একজন মুসলিম বিজ্ঞানী কলম্বাসের আমেরিকা যাবার ৫০০ বছর পূর্বে আরব থেকে আমেরিকা এবং পশ্চিম আফ্রিকা যাবার ম্যাপ তৈরী করেন। এসকল স্থানে যাবার সমুদ্র পথের পূর্নাঙ্গ নঁকশা তিঁনি তৈরী করেন যা এখনও যাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। অবাক হই কলম্বাস এবং আমেরিকা সংক্রান্ত বিষয়ে পাঠ্য পুস্তকে লেখা দেখে।
আগামী পর্বে মধ্যযুগে শুধুমাত্র বাগদাদের অবস্থা কেমন ছিল সেটা আলোচিত হবে এবং আপনারা বুঝতে পারবেন কোনটা অন্ধকার আর কোনটা আলোকিত। আগামী পর্বে শেষ হবে।
বিষয়: বিবিধ
৩৫৮৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন