তংহু আমাকে বশিভূত করল
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ১০ এপ্রিল, ২০১৩, ১০:০৩:০১ সকাল
এবার সেই লেকে নিয়ে যাব আপনাদের। আমি রাতে বের হলাম। আলো-ছায়াযুক্ত একটা পথ দেখে আমার মনে হল আমি ছোটবেলায় দেখা একটা স্বপ্নের ভেতর চলে গেছি। আমি না হেটে দুচোখ দিয়ে সে দৃশ্য খেতে থাকলাম। আমি দেখলাম আকাশে চাঁদ,আর নীচে ছোট বড় নানান রকমের বৃক্ষ। চমৎকার টাইলসে মোড়া রাস্তা। রাস্তার দুধারে ফুলের বাগান। ছোট ছোট কিছু গাছ আছে যার পাতাটাই আসল। কোনো পাতার রং লাল,কোনোটা হলুদ,কোনোটা সবুজ। গাছের ভেতর এমনভাবে লাইট স্থাপন করা হয়েছে যে,গাছের পাতাগুলোকে নানান রঙের উজ্জল বাতির মত মনে হচ্ছে। চলার পথের ওপর নানান রঙের বাহারী সে আলো পতিত হয়ে যে অপরূপ রুপের সৃষ্টি করেছে তা বর্ণনা করার যোগ্যতা এখনও অর্জন করতে পারিনি। আমি সে পথে খানিক হাটলাম। আমার নিজের শরীরের দিকে তাকিয়ে দেখলাম ফোটা ফোটা অস্পষ্ট আলোর ছটা আমার শরীরে খেলা করছে। হাটলেই সেগুলোকে জীবন্ত মনে হতে লাগল। এ রাস্তা যাতে দ্রুত ফুরিয়ে না যায় তাই আমি ধীরে হাটতে থাকলাম। একটি মনোরম ছোট্ট সেতুর ওপর উঠে চারিদিকে তাকাতে থাকলাম। প্রত্যেকটা দিকে তাকিয়ে মুগ্ধ হলাম। আমি ওপাশে লেকের পানির ওপর অবস্থিত একটি স্থাপনার ওপর উঠলাম। এরা যা কিছু তৈরী করে তা ভাল না লেগে উপায় নেই।
আমি পানির দিকে তাকালাম সেখানে শুধু আকাশের চাঁদই নেই,নানান রঙের আলোর বিচ্ছুরণ সেখানে বহু সংখ্যক চাঁদের প্রতিচ্ছবি তৈরী করেছে। আমি সেই মনোরম রাস্তার পাশে থাকা আরেকটি রাস্তায় চলে আসলাম। এটি তৈরী হয়েছে লেকের পানির কিনারা ধরে তবে খানিক উঁচুতে। পথের বাম পাশটা,যেদিকে লেক,সেদিকে কংক্রিট এবং টাইলসের তৈরী তিন ফুট উঁচু কারুকার্যময় রেলিং। কোথাও কোথাও এটার উচ্চতা কম,কারন সেখানে বিশাল প্রাঙ্গন রয়েছে যা কারুকার্যময় এবং মনোরম ভাষ্কর্যের ছড়াছড়ি।
মানুষেরা সেখানে শরীর চর্চা করতে পারে এবং বিশ্রামও নিতে পারে। এসব অংশে স্বচ্ছ ফ্লাড লাইট স্থাপন করা হয়েছে এবং এখান থেকে বিভিন্ন ভঙ্গিমায় সিড়ি চলে গেছে সরাসরি লেকের পানিতে। সেখানে শতশত কারুকার্যময় ভাসমান কলসের মত বস্তু রয়েছে,তার পাশে রয়েছে বহু সংখ্যক রং বেরঙের ভাসমান বাতি। এ দৃশ্য দেখে থামতেই হবে। রাস্তার ডানে রয়েছে ছোট ছোট ফুলগাছ। সেসব ফুলগাছের ভেতর উক্ত গাছের পাতার রঙের বাতি এমনভাবে সংযুক্ত করা হয়েছে যাতে মনে হয় গাছটির পাতা জ্বলছে।
আমি হাটছি তো হাটছিই। এটি বর্গাকৃতির লেক নয়। এ এক বিশাল লেক কিন্তু পুরো লেক জুড়ে রয়েছে কারুকার্যময়তা। একবারে পুরো লেক ঘোরা সম্ভব নয় কারন বেশ কয়েকটি এলাকা নিয়ে এই লেক। বেশ কয়েকটি মোটামুটি বড় আকারের সেতু রয়েছে এই লেকের ওপর। সেতুগুলো যে অনেক খরচ করে তৈরী করা তা বোঝা যায় এর মনোরম নির্মানশৈলী এবং কারুকাজ দেখে। রাতে এসব সেতুর দিকে তাকালে মনে হবে নানান রঙের আলোর সারি পানিকে না ছুঁয়েই তার সাথে সন্ধী করে চলেছে। লেকের ভেতর কৃত্তিম দ্বীপ রয়েছে যা নানান রকমের গাছগাছালিতে পরিপূর্ণ।
হঠাৎ লেকের একপাশে জ্বলন্ত পদ্ম দেখে তাকিয়ে থাকলাম। এটা বিশাল। সাদা ধবধবে পদ্ম এবং পাপড়ীর নীচের দিকে খানিক নীলাভ আলো। এটা পদ্ম ফুলের আকৃতিতে তৈরী একটা থিয়েটার হল।
এটা নির্মান করা হয়েছে খুবই নিখুঁতভাবে । এর আকার বিশাল এবং ব্যয়বহুল তো বটেই।
আমি হেটেই চলেছি। আমার মনে হচ্ছে স্বপ্নে হাটছি। লেকের অপরপাশের দৃশ্য দেখে মনে হচ্ছে সেখানে এপাশের চাইতেও মনোরম দৃশ্য রয়েছে। হাটতে হাটতে সামনে দেখলাম একটা সাংঘাতিক সুন্দর চার ছাদবিশিষ্ট টেম্পল। এই টেম্পলটির প্রতিটি পিলার,ছাদ,দরজা,জানালা সবকিছুতেই নানান রঙের বাতির কারুকাজ।
এর পাশে দুটি বড় গাছ রয়েছে এবং অনেকগুলি ছোট গাছ যেগুলোর পাতার আসল রং বোঝা গেলনা বাতির কারনে। বড় বড় গাছগুলির মধ্যেও চমৎকারভাবে বাতি সংযুক্ত হয়েছে। এর সামনে একটি বিশাল খোলা প্রাঙ্গন। আমি টেম্পলের ভেতরে তাকিয়ে দেখলাম এটার ভেতর মানুষ ভোজন ইবাদতে মত্ত। বুঝলাম এটা টেম্পলের আদলে তৈরী রেস্টুরেন্ট।
আমি একটা বড় প্রাঙ্গনে উপস্থিত হলাম। এখানে খানিকক্ষন দাড়িয়ে থেকে লেকের পানির সৌন্দর্য দেখলাম।
তারপর সিড়ি দিয়ে নেমে গেলাম পানির কাছাকাছি। কাছ থেকে দূরে নিয়ে গেলাম আমার দৃষ্টি। সে দৃষ্টি মুগ্ধতা নিয়ে আবার আমার কাছেই ফিরে আসল। আমি হারিয়ে গেলাম। এবার উঠে সেই প্রথমের রাস্তায় চলে গেলাম। আহ স্বপ্নের পরশে হাটতে থাকলাম। নিজের ভেতরে অপরিসীম পুলক অনুভব করলাম। রাস্তার কোনো কোনো বাঁকে অন্ধকার অংশ ছিল,সেটা আমার কাছে আরও বেশী কাঙ্খিত মনে হল। আমি সেদিকে তাকিয়ে ছিলাম। অন্ধকারেরও সৌন্দর্য্য আছে,সেটা আমাকে মানতে হল। কোথাও কোথাও একফুট লম্বা ঘন ঘাস,তার ভেতরেই ছোট বড় বিভিন্ন ধরনের বৃক্ষরাজি। আলোচ্ছটা পুরো অবস্থাকে করেছে আরও বেশী প্রাণবন্ত। এর ভেতর দিয়ে আমি হেটে চলেছি মাদকতাপূর্ণ এক স্বপ্নিল আবেশে।
একস্থানে দেখলাম কিছু লোক হুইল দিয়ে মাছ ধরছে। তারা হুইলকে একটি যন্ত্রের সাথে ফিল করে বসে থাকল। আমি অনুমান করলাম মাছ ধরার কোনো নতুন প্রযুক্তি হবে হয়ত। এই লেকে মাছ আছে বেশ। একজনকে অন্ধকারে মৎস্য কিশারে গভীর মনোনিবেশ করতে দেখে আমার আব্বার কথা মনে পড়ল। তিনি ছিলেন বিলাসী মৎস্য শিকারী। বিভিন্ন রকমের হুইল এবং নানান রকমের মাছের খাবার নিয়ে তিনি বিভিন্ন পুকুর,দিঘী,নদী,লেকে বসে যেতেন এবং দিনব্যাপী মৎস্য সাধনা করতেন। মাছ ধরা পড়–ক আর নাই পড়–ক তার ধৈর্য্যে ফাটল ধরত না। কখনও মাছ পেলে তার আনন্দের সীমা থাকত না। পানিতে মাছের খেলা তার ভাল লাগত। মাছ ধরা উপলক্ষ্যে বন্ধুদের নিয়ে পিকনিক করাটা ছিল তার স্বভাব।
আমি এই লেকের সৌন্দর্য্যে আবিভূত,পরাভূত,জর্জরিত,ক্ষতবিক্ষত। সত্যিই ‘তংহু লেক’ আমাকে বশীভূত করেছে।
বিষয়: বিবিধ
১৯১৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন