বিশ্বের বৃহত্তম বে ব্রীজ
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ০৯ এপ্রিল, ২০১৩, ০৯:৪৭:০৩ সকাল
পরদিন শনি এবং রবীবার। পুরো দুদিন ছুটি। ম্যানেজার আমাকে তার সাথে তার জন্মস্থান অতি সুন্দর পিংহু সিটিতে যেতে বলল,কারন এখানে অফিস বন্ধ থাকবে। আর পৃথিবীর সর্ব বৃহৎ সমুদ্র সেতু-হাংজো বে ব্রীজের ওপর দিয়ে ওখানে যেতে হয়। এই ব্রিজের কারনে নিংবো এবং সাংহাই এর দূরত্ব ২২০ কি:মি: কমেছে এবং এই দুটি ব্যবসায়িক সিটির মধ্যে যোগাযোগ তাদের ব্যবসা বাণিজ্যকে আরও এগিয়ে নিয়ে গেছে।
আজ আকাশ মেঘলা। সকাল থেকেই গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল। আমি অন্তত কেজী খানেক চকলেট খেয়ে ফেলেছি। অফিসের একেক জন একেক রকমের চকলেট খাওয়াচ্ছে। অফিস শেষে আমরা রওনা হলাম। আর আমার সামনে এক বাস্কেট চকলেট রাখা আছে,আমি খেয়েই চলেছি। কিছু নিলাম পকেটেও।
আমরা চলতে শুরু করলাম। প্রায় একঘন্টা ড্রাইভ করে পৃথিবীর বৃহৎ বে ব্রীজের ওপর আসলাম। ৮৫ ইউয়ান টোল দিয়ে চলতে শুরু করলাম। পানি থেকে অনেক ওপরে তৈরী এ ব্রিজটি। শুধু পানির ওপরের অংশের ব্রিজের দৈর্ঘ্য ৩৬কি:মি:। দুপাশে তিন লেন করে মোট ৬লেনে বিভক্ত। মাঝে রয়েছে বড় সড় ডিভাইডার। প্রচন্ড বৃষ্টি শুরু হল। আমরা দ্রুত গতিতে চলতে লাগলাম। এ ব্রিজের ওপর দিয়ে প্রায় ৪০টি চাকা সম্বলিত বিশাল গাড়ি দ্রুত গতিতে চলে যাচ্ছে এবং তাতে ব্রিজের কিছুই আসছে যাচ্ছে না। কোনো কোনো বিশাল ট্রাকে ১৪টি করে গাড়ি পরিবহন করা হচ্ছে। এরা কোনোকিছু তৈরী করলে তা খুব শক্তিশালী করে তৈরী করে। আর ফাঁকি দেয় কিনা জানিনা তবে দিলেও আমাদের মত অতটা বিশাল নয়। আমাদের যমুনা সেতু তৈরীর কয়েক বছরের মাথায় ফাটল দেখা দিয়েছে। বুয়েটের বিশেষজ্ঞরা তদন্ত করে বলেছেন,যে মাত্রায় উপাদান ব্যবহৃত হয়েছে তা পূর্বোল্লিখিত মাত্রার তিন ভাগের দু-ভাগ মাত্র। এত বিশাল মাত্রার ফাঁকিকে শুভঙ্করের ফাঁকি বললে ভুল হবে। শুভঙ্কর এত ফাঁকি দিত না।
বৃষ্টির জন্যে ব্রিজ থেকে সাগরের পানি দেখা যাচ্ছিল না। তবে খুব ভাল লাগছিল বৃষ্টির মধ্যে চলতে। অল্প কিছু গাড়ি চলছিল বিজের ওপর। ব্রিজের মাঝামাঝি একটি বিশাল স্থাপনা রয়েছে। সেখানে মোটেল এবং রেস্টুরেন্ট রয়েছে। থেমে কিছুটা সময় কাটানো যায়। কিন্তু আমরা বৃষ্টির মধ্যে আর সেখানে থামলাম না। চমৎকার ব্রিজটি পার হয়ে আরও কিছুদূর গিয়ে অতিশয় সুন্দর এক সিটি পিংহু। ম্যানেজার এখানে আমাকে একটি চমৎকার হোটেলে রেখে তার বাড়িতে চলে গেলেন।
আমার হোটেলের পাশে বেশ বড় একটি প্রাঙ্গন যা দামী টাইলসে মোড়ানো। তার ওপাশেই এমন একটি পার্ক রয়েছে যার বর্ণনা আলাদাভাবে দিতে হবে। সমগ্র চায়নাতে এমন পার্ক আরও বেশ কটি থাকলেও এর আবেদন ভিন্ন। হোটেলের সামনের অংশে একটি চমৎকার কৃত্তিম লেক যা বেশ সরু এবং লম্বায় প্রায় ৫০০মিটার হবে। সরু লেকটির দুপাশে কংক্রিট,অমসৃন পাথর এর কারুকাজ। দুপাশে রয়েছে টাইলসে মোড়া ফুটপাথ এবং ফুলের বাগান। নাম না জানা বহুবিধ বৃক্ষও রয়েছে। কিছু কিছু স্থানে ফুটপাথ থেকে সিড়ি চলে গেছে সরু লেকটিতে। বেশ কয়েকটি দৃষ্টিনন্দন চমৎকার ব্রিজ রয়েছে এর ওপর। বিভিন্ন স্থানে সুন্দর সুন্দর ভাষ্কর্য নির্মিত হয়েছে। জানালা খুলে মুগ্ধ না হওয়ার কোনো করন থকতেই পারেনা।
এ এলাকার খাবারের স্বাদ তেমন একটা ভাল না লাগলেও কিছু খাবার খুঁজে বের করলাম যা খাওয়া যায়। বিরিয়ানির মত একটা খাবার পেলাম এক রেস্টুরেন্টে। সেটাতে চিকেনের পরিবর্তে ডিম,ভেজিটেবল দিতে বললাম, সাথে মাছ। এই শহরটা বেশ দামী। এখানে জিনিসপত্রের দাম বেশী। আমি একটু হিসাব করে চলছিলাম।
সকালে হালকা পোষাকে ফুরফুরে আমেজে বের হলাম হাটতে। ফুটপাথের ওপর এক খাবারের দোকান দেখলাম। একটা পরোটার ওপর ডিম ভেজে তার ওপর সালাদ এবং সস মাখিয়ে রোল তৈরী করছে। দেখেই কেমন জানি লোভ লাগল। প্রথম ধাক্কায় আমি এটা রেখে বেশ খানিকদূর চলে গিয়েছিলাম। পরে আমার মস্তিষ্কের তথ্য যাচাই বাছাই করে দেখলাম- এমনকি আমার শরীর পর্যন্ত বিষয়টা সমর্থন করেছে ! এরপর সামনে যাওয়ার সাধ্য কার আছে ! পেছনে ফিরে সে জিনিস খেলাম। স্বাদ বেশ ভালই। বহুদূর পর্যন্ত হাটলাম। চারিপাশ ঘুরলাম। বেশ কয়েক কি:মি: এলাকা চিনে নিলাম। এর ভেতরে আছে অনেক গলিপথ,তবে খুব পরিচ্ছন্ন। পিংহু খুবই পরিচ্ছন্ন শহর।
বড় রাস্তার দুপাশ ধরে শতশত বিভিন্ন ধরনের পন্যের দোকান। একটা বড় পোষাকের দোকানে ঢুকলাম। দাম দেখে চক্ষু আমার ছানাবড়া। কোনো কোনো জিন্স প্যান্টের দাম বাংলা টাকায় প্রায় চল্লিশ হাজার টাকা পড়ে যায়। একজন এসে সাদরে সম্ভাষণ জানালো এবং একে একে বিভিন্ন পোষাক দেখাতে লাগল। আমি দেখলাম। গায়ের সাথে ধরে দেখলাম বেশ ভাল মানিয়েছে। এভাবে ঘ্রানে অর্ধ ভোজনপর্ব সমাধা করে চলে আসলাম। এবার আসলাম ভেতরের দিককার শপিং জোনে। এখানে বহু সংখ্যক দোকাট পাট রয়েছে এবং দামে বেশ সস্তা। কিন্তু মানের দিক থেকেও বেশ সস্তা হওয়াতে আমি তেমন আর দেখাদেখী করলাম না। একটা বিশাল শপিংমলে ঢুকলাম। এখানে জিনিসপত্রের দাম বেশী হলেও ঘুরতে বেশ ভাল লাগল। গোল্ড,ডায়মন্ডের এমন খোলামেলা দোকান পাট দেখে মনে হল এসব চুরি ডাকাতি হয়না ? মনে হয় তেমন খারাপ রেকর্ড নেই,নইলে এভাবে এমন দামী জিনিস বিক্রী করবে কেন ! এখানে আর.টি মার্ট হল বিশাল চেইন শপ। দাম মোটামুটি সস্তা। কিছু খাদ্য সামগ্রী,পানীয় কিনলাম।
এ শপিং মলের ভেতরে বেশ কিছু বিখ্যাত খাবারের দোকান রয়েছে। ম্যানেজার সাহেব আমাকে এখানে এনেছিলেন। তিনি লা-মিয়ান নামক স্যুপ নুডুলস অর্ডার করলেন। এরা নীজ হাতে এসব নুডুলস বানায়। প্রচন্ড ঝাল এক গামলা আমার সামনে উপস্থিত হল। এটা তিনজন খেতে পারবে। এর স্বাদ আমার বেশ ভাল লাগল। কিছু ধনে পাতা,সস যুক্ত করে আমি খেতে থাকলাম। পেটিস ধরনের আরও কিছু খেলাম। কিন্তু আমি অর্ধেকও শেষ করতে পারলাম না। আর প্রচন্ড ঝালের কারনে আমার নাক ও চোখ দিয়ে পানি ঝরতে থাকল। না, এ জিনিস আর খাবনা। ফেরার পথে এক রুটির দোকান থেকে নানান ধরনের রুটি,কেক,পেস্ট্রি,পেটিস,রোল কিনলাম। এগুলোর স্বাদ ছিল অতুলনীয়। একরাতেই সব শেষ করে ফেললাম।
পরবর্তী পর্বের জন্যে আওয়াজ তুলুন যাতে পরবর্তী পোস্টটি স্টিকি করা হয়। খুব দারুন কিছু ছবি আপলোড করব। আপনারা আমার সাথে হারিয়ে যাবেন। মডারেটর বরাবর পূর্বেই নিবেদন করলাম । আর আগামী কাল তো দেখতেই পাবেন ইনশাআল্লাহ....
বিষয়: বিবিধ
২৭৩৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন