নিউ চায়না ১৬
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ০৭ এপ্রিল, ২০১৩, ০৯:১৪:৫৭ সকাল
রাতে খাবার পর ইব্রাহিম ভায়ের সাথে গল্প হচ্ছিল। এক মার্কিন ‘ইনোসেন্স অব মুসলিম’ নামক একটি ফিল্ম তৈরী করেছে। সেখানে রসূল(সাঃ)কে অবমাননা করা হয়েছে। সারা বিশ্বে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। অনেকে ধারনা করছে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার মদদে এমন ফিল্ম তৈরী করা হয় যাতে তারা মুসলিমের মানুষিক অবস্থা সম্পর্কে একটি ধারনা লাভ করতে পারে। তাদের প্রতিক্রিয়ার ওপর নির্ভর করে তারা পরবর্তী পরিকল্পনা সাজায়। ইব্রাহিম ভাই খুবই মর্মাহত হল। তিনি বিভিন্ন স্থানের প্রতিবাদের ছবি আমাকে দেখাচ্ছিলেন। এরপর তিনি আমাকে তার মোটর বাইকে নিয়ে চিশি সিটির বাস কাউন্টার দেখিয়ে নিয়ে আসলেন। আমি চিনলাম।
এদিকে ওকিনাওয়া দ্বীপ নিয়ে চীন-জাপান দ্বন্দ চলছে। অনেক স্থানে জাপানিজ পতাকা পোড়ানো হয়েছে। জাপানীজ গাড়ী না কেনার আহবান জানানো হচ্ছে এবং তাদের ব্যবসায়িক পণ্যও বর্জনের ডাক দিয়েছে কম্যুনিস্ট সংগঠন। বেশ কয়েকস্থানে টয়োটা গাড়ি পোড়ানোও হয়েছে। শিক্ষকদের মধ্যে এ সংক্রান্ত আলোচনা চলতে দেখলাম। তারা ইন্টারনেট থেকে বিভিন্ন প্রতিবাদী ছবি দেখছিল। চায়নাতে ইউটিউব বন্ধ থাকলেও তাদের নিজস্ব ভিডিও দেখা সাইট রয়েছে,এর নাম ইউকু। সেখানে বিভিন্ন ধরনের ভিডিও সরকার সেন্সর করে তারপর প্রকাশ করে বা কিছু নিয়ম নীতি অনুসরন করে আপলোড করা হয়। আমি দেখলাম তারা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপান কর্তৃক চায়নিজদের ওপর চলা নির্যাতনের ভিডিও ক্লিপ দেখছে এবং জাপানকে গালি দিচ্ছে। আমাকে বলল-দেশের জন্যে আমরা সব করতে পারি। মনে মনে বললাম তোমরা যেভাবে দিন দিন পুঁজিবাদের আয়ত্বে চলে যাচ্ছ তাতে দেশের জন্যে হোক আর বাপ-মার জন্যে হোক কিছু করতে তোমাদের দশবার ভাবতে হবে। দ্বীপটি আসলে উভয়দেশই নিজেদের বলে দাবী করছে এবং উভয়ের কাছেই বলিষ্ঠ প্রমান রয়েছে। এমতাবস্থায় কাগুজে প্রমানের চাইতে বলিষ্ঠ পেশী বেশী কার্যকর। বর্তমানে চীন সেই সক্ষমতা অর্জন করেছে। এজন্যে তাদের অত্যাধুনিক রণতরীগুলো উক্ত দ্বীপের আশপাশে ঘোরাঘুরি করছে। আমেরিকার মদদে জাপানও বসে নেই। সেও বিভিন্ন ধরনের সামরিক যান নিয়ে অনুরূপ মহড়া দিচ্ছে। মহড়া চলতে থাকুক,আমি বিদায় হচ্ছি।
পরদিন সকালে রওনা হলাম হেটে। বেশ কষ্ট হচ্ছিল। স্যুটকেসের নীচের চাকাটা মোটামুটি বড়,এর ওপর আমার হাতব্যাগটা রেখে টানতে টানতে চললাম। ছোট্ট সেতুটা পার হলাম। বাজার অতিক্রম করে মূল সড়কে দাড়ালাম। চিন্তিত ছিলাম ঠিক বাসে উঠতে পারব কিনা। একটা বাস কাউন্টারে এসে দাড়ালাম। শা শা করে গাড়ি চলে যাচ্ছে। বেশ কয়েকটা বাস চলে গেল। হাতের মুঠোয় থাকা কাগজের টুকরোতে লেখার সাথে বাসের গায়ের লেখা মেলাতে পারলাম না। আমার কাছে এ লেখা চিত্রের মত। এটা যতদূর সম্ভব মনে রেখে চলমান বাসের গায়ে তাকাচ্ছিলাম। খানিক পর একজন প্রবিন ভদ্র মহিলা এসে হাজির হলেন। তিনিও কোনো বাসের অপেক্ষায়। আল্লাহকে ডাকতে থাকলাম এবং কোনো সাহায্য পাঠাতে বললাম,কারন অবস্থা যা দেখছি তাতে আমার পক্ষে বাস খোজা সম্ভব নয়। এখানে কোনো বাসও থামছে না যে তাদের কাছে ইশারা ইঙ্গিতে কিছু জিজ্ঞেস করব। চায়নিজ ভাষায় কিছু জিজ্ঞেস করলেও তারা যে উত্তর দিবে সেটা আমি বুঝতে পারব না। হঠাৎ দেখলাম ঘুম ঘুম চোখে ইব্রাহিম ভাই হাজির। প্রচন্ড খুশি হলাম তকে পেয়ে। সে নিশ্চয় বুঝেছিল যে,আমি সঠিক বাস চিনতে পারব না। তিনি আমার পাশে দাড়িয়ে থাকা মহিলাকে তার গন্তব্য জিজ্ঞেস করে বুঝলেন,তিনিও চিশি যাচ্ছেন। আহা কিযে ভাল লাগল। খানিকপর ইব্রাহিম ভাই একটা বাসের সামনে হাত দেখাতেই বাসটা থামল। তিনি আমাকে উঠিয়ে দিলেন এবং উক্ত ভদ্র মহিলাকে বারবার বলে দিলেন যাতে আমি ঠিকঠাক পৌঁছাতে পারি। তিনি ড্রাইভারকেও বলে দিলেন। এরপর ভেতরে থাকা কন্ট্রাকটর আমার ব্যাগটি উঠিয়ে নিল এবং তাকেও ইব্রাহিম ভাই বলে দিলেন আমার দিকে খেয়াল রাখার জন্যে। এক অসাধারন ভাল মানুষ ইব্রাহিম ভাইকে বিদায় জানালাম। জানিনা এখানে আবার আসা হবে কিনা। ভাষাগত পার্থক্যের কারনে হয়ত তার সাথে আর যোগাযোগ সম্ভব হবেনা। কিন্তু যে অকৃত্তিম ভালবাসা,সহানুভূতি পেয়েছি তার প্রতিদান তো আল্লাহ’ই দিবেন,আমি তো শুধু দোয়া করতে পারি।
বিষয়: বিবিধ
১৫৪৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন