আমার অভিমত
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ০৬ এপ্রিল, ২০১৩, ১১:৪৩:০১ সকাল
ইসলামী ফাউন্ডেশনের একজন ডিরেক্টরের সাথে আমার পরিচয় হয়েছিল অনেক আগে। তিনি ইতিহাস বিষয়ে লিখতেন এবং সৈয়দ হাসান আলী নদভীর অন্যতম প্রধান সাগরেদ ছিলেন। ভদ্রলোক মারা গেছেন কিন্তু একটা কথা আমার কানে বাজে-"নদভী সাহেবসহ বহু প্রখ্যাত আলেম বলতেন,বাংলার মুসলিমের মধ্যে ইসলাম প্রথিত হিজল গাছের শেকড়ের মত।"
আমি জানতে চাইলাম এটার মানে কি ? তিনি বললেন,পূর্বে প্রচলিত ছিল তালগাছের শেকড় মাটির সবথেকে গভীরে প্রথিত থাকে। কিন্তু আমাদের সময় জেনেছিলাম হিজলগাছের শেকড় আরো গভীরে প্রথিত থাকে। এ অঞ্চলের মানুষের আচার আচরণ দেখে সহসা হয়ত বোঝা যায়না যে ইসলাম এখানে কেমন। কিন্তু মানুষের বেশী কাছে গেলে তার অন্তরে ইসলামের অবস্থান দেখা যায়। আর এটা হল ইসলাম প্রচারকদের অভিজ্ঞতা,এটা এনজিওর পরিসংখ্যান নয়।
আমার মনে হল তিনি ঠিক বলেছেন। এখানকার একজন চরম খারাপ ,সন্ত্রাসী লোকের বাড়িতে গিয়েও যদি কেউ নামাজ পড়তে চায়,তাহলে জায়নামাজ জোগাড়ের জন্যে তিনি ব্যতিব্যস্ত হয়ে ওঠেন,যদিও তিনি কখনও নামাজ পড়েন না। এমন অনেক উদাহরনই শুনেছি এবং দেখেছি। আর মনে হয়েছে তিনি খারাপ এটা তিনি নিজেই জানেন কিন্তু ইসলামের পক্ষে থাকা যে ভাল কাজ, এটাও তিনি জানেন। আর তার অন্ধকারাচ্ছন্ন মনের একেবারে ভেতরে ইসলামের প্রতি যে মায়া আছে তা কখনও কখনও প্রকাশিতও হয়। তাদের অন্তরে ইসলামের আলো একেবারে ক্ষীনাকারে জ্বললেও তা নিভে যায়না। আমেরিকা কতৃক ইরাকে আক্রমনের সময় আমি অনেক খারাপ চরিত্রের এবং সন্ত্রাসী টাইপের লোকের মুখে এমন কথা শুনেছি যে- অবাক হয়েছি। কেউ কেউ বলেছে,ওসব কিছু নয়,আমরা মুসলিম এটাই হল ওদের প্রধান সমস্যা। অবাক হয়ে তাকিয়ে থেকেছি যে,এই লোকটি তাহলে নিজেকে মুসলিম ভাবত !
কিছুক্ষন পূর্বে টেলিভিশন দেখছিলাম। নিজ চোখে হেফাজতে ইসলামের যে গণঢল দেখেছি তাতে মনে হয়েছে মিলিয়ন ছাড়িয়ে যাচ্ছে। রাস্তার দুপাশে জায়গা নেই ,পুরোটাই ভরাট এবং এখনও বেশী সংখ্যক লোকই আসতে পারেনি। এটার উদ্দেশ্য কি বা এর পরিনতি কি বা এতে আমাদের কি লাভ হবে সে বিষয়ে প্রশ্ন আসতে পারে। কিন্তু আমার ফোকাস একদিকে, সেটি হল-এরা কোন অনুভূতিতে জাগ্রত হয়ে এখানে এত কষ্ট স্বীকার হরে জড় হল ?
উত্তর হচ্ছে এরা ইসলামকে ভালবাসে। এবং একেবারে নিঃস্বার্থভাবে। এ লক্ষ্যে এরা ঝুকিও নিতে পারে। কেউ বলতে পারে এরা ভুল বুঝেছে,কেউ বলতে পারে এরা অশিক্ষিত এবং অন্যের রাজনৈতিক হাতিয়ারে রুপান্তরিত হয়েছে। কিন্তু প্রত্যেকে এটা স্বীকার করবে যে,এরা ইসলামের প্রতি প্রচন্ড ভালবাসা থেকে এসেছে। মানুষের সবথেকে দূর্বল অংশে আঘাত লাগলে মানুষ তার অনেক হিসাব নিকাষ পাল্টে ফেলে । এদের অবস্থা হয়েছে সেটাই এবং এদের দূর্বলতা ইসলাম।
আজ একাধীক চ্যানেলে দেখেছি শাহবাগ চত্তরে লোকসংখ্যা চোখে পড়ার মত কম। এতটাই কম যে ক্যামেরা একেবারে ভেতরের থেকে টেলিকাস্ট করার পরও ক্যামেরা ফ্রেমের বাইরে লোক তেমন দেখা যাচ্ছেনা। এমনকি যেসকল লোক শাহবাগের জাগরণ দেখতে আসত উৎসাহ নিয়ে,তাদের উপস্থিতিও একেবারে কম। এবং যেসকল টিভি চ্যানেল শাহবাগকে প্রাধান্য দিয়ে খবর প্রচার করত,তারাই আজ জাগরন মঞ্চের নেতাদেরকে বিব্রতকর প্রশ্ন করছে এবং মনে হয়েছে প্রশ্নবানে জর্জরিত করে তাদেরকে ঘায়েল করার চেষ্টা হচ্ছে। মিডিয়া উভয় জাগরণকে তুলনা করা শুরু করেছে । এ ব্যাপারটিও মানুষকে একটি বার্তা দিতে পারে এবং তা কারো কারো জন্যে বুমেরাংও হতে পারে।
আমি আমার আশপাশে যত মানুষ দেখেছি এবং এলাকাবাসীদের মধ্যে যাদেরকে চিনি তাদের মধ্যে মাত্র কয়েকজন ছাড়া সকলেই হেফাজতকে সমর্থন করেছে। বন্ধুবান্ধবদের সাথে কথা বলেও এমনটা দেখেছি। আমার মনে হয়েছে,পুরো বাংলাদেশের মানুষের একটি বড় অংশই মানুষিকভাবে এদেরকে সমর্থন করছে।
এদেশে ইসলাম নিয়ে রাজনীতির ব্যাপারে অনেক অভিযোগ আছে কিন্তু ইসলামী আদর্শে গঠিত নয় এমন দলগুলোই ইসলামকে তাদের স্বার্থে বেশী ব্যবহার করার চেষ্টা করেছে। তা না হলে আমরা নির্বাচনের পূর্বে নেতাদেরকে তসবী,টুপি ব্যবহার করতে দেখব কেন ? আর সেসময় উমরা করতে তারা মক্কায়ও বা গমন করবেন কেন ? আর তারা ইসলামের পক্ষে আছে-এটাও বা প্রচার করার দরকার কি ? আমার মনে হয়েছে আস্তিক-নাস্তিক নির্বিশেষে এখানকার প্রায় সকলেই মানুষের অন্তরের অভিব্যক্তি সম্পর্কে বেশ অবহিত। এ কারনেই তারা ইসলামকে পছন্দ না করা সত্ত্বেও বা ইসলামের অনেক মৌলিক বিষয় পছন্দ না করা সত্ত্বেও ইসলামের পক্ষে আছে এটা প্রকাশ করে। অর্থাৎ ভাল কাজ করুক আর মন্দ কাজ করুক নেতারা ইসলামের অনুভূতির মধ্যদিয়েই করার চেষ্টা করে। কারন বেশীরভাগ মানুষই অন্তরে ইসলাম লালন করে।
এমতাবস্থায় আমার বুঝে আসেনা সরকার কেন এই বিশাল সমাবেশকে বাধা দেওয়ার কথা ভাবছে। এবং গুটিকয়েক নাস্তিককে কেন শাস্তির আওতায় আনছে না। এবং কেন এই আইন পাস করা হচ্ছেনা যে,কেউ কারো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিলে সর্বোচ্চ শাস্তি হবে। এটা তো সকল ধর্মের মানুষই স্বতস্ফুর্ত ভাবে চাইবে। আলেমরা তো অন্য ধর্মের অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার নীতিতে বিশ্বাসী নয়। তাহলে সমস্যা কোথায় ?
এটা কোনো রাজনৈতিক সমাবেশ নয় এবং তাদের রাজনীতিতে প্রত্যক্ষ ভূমিকা নেই। অবস্থা এমন আকার ধারন করেছে যে,মানুষের কাছে ভুল তথ্য যাচ্ছে-মুক্তিযুদ্ধের শক্তি ইসলাম বিরুদ্ধ। এভাবে মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধাদেরকে এজাতীয় বিষয়ের সাথে কেন আনা হল তা বোধগম্য নয়। আমার ধারনা, সরকারের সাথে যে অতিশয় ক্ষুদ্র বাম চিন্তার মানুষেরা রয়েছে তারা ইসলামের প্রতি স্বাভাবিক বিদ্বেষ থাকার কারনে ভুল তথ্য দিয়ে থাকতে পারে এবং ঘোলাপানি তারাই তৈরী করতে পারে। যদি কেউ ভোটের রাজনীতিতে বিশ্বাসী হয়ে থাকে তাহলে তাদের উচিৎ এই জাগরণ সমর্থন করা। কারন অবস্থা এমন আকার ধারন করেছে যে এর ওপর ভিত্তি করে সাধারণ মানুষের চিন্তা নতুন মাত্রা পেতে পারে। আর সেটার খেসারত হয়ত দিতে হবে বৃহৎ রাজনৈতিক দলকে। এদেশের মানুষ খুবই স্পর্শকাতর,তারা ক্ষেপে উঠলে সর্বনাশ। আর যারা আজ সমবেত হয়েছে এরা একেবারে সাধারন জনতার অংশ,ধনীক শ্রেনী নয়। এরা বৈষয়িক কোনো কিছু পাওয়ার আশায় মিলিত হয়নি এবং এদের আত্মত্যাগ সর্বোচ্চ পর্যায়ের হয়ে থাকে। তাই তাদের এই আবেগ মুছে যাবে বা স্তিমিত হয়েযাবে এমনটা ভাবা ভুল। তাদের আবেগ প্রকাশিত হোক আর অপ্রকাশিত হোক এটা স্থায়ী। আর যারা এ আবেগকে মূল্যায়ন করবে না,তারাই নিকট ভবিষ্যতে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এটা আমার উপলব্দী।
বিষয়: বিবিধ
১৯৪৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন