শাওশিংয়ের বিকেলটা

লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ০৫ এপ্রিল, ২০১৩, ১২:২২:১৭ দুপুর



লা-মিয়ান

আমার পরবর্তী গন্তব্য চেইচিয়াং প্রদেশের চিশি সিটির একটি কোম্পানীতে। আমাকে যেতে হবে বাসে। আমার একমাত্র চিন্তা কিভাবে সেখানে নির্বিঘেœ যাব। ওখানে পৌঁছালে তারা আমাকে রিসিভ করবে এবং আরও দশ কি:মি: দূরে অবস্থিত তাদের অফিসে নিয়ে যাবে। কিন্তু সমস্যা হল আমি কোথা থেকে বাসে উঠব,কিভাবে যাব। রাতে খাবার পর যখন ইব্রাহিম ভাইকে জিজ্ঞেস করলাম,তিনি এক টুকরো কাগজে বাসের নাম লিখলেন এবং ইশারায় বললেন-যখন এই নাম চলন্ত বাসের গায়ে দেখবে তখন হাতের ইশারায় থামতে বলবে,বাস তখন কিভাবে ব্রেক করবে সেটা যখন তিনি দাঁত মুখ খিচে অভিনয় করে দেখাচ্ছিলেন ,তা দেখে তার স্ত্রী হেসে কুটি কুটি হচ্ছিল। কোথা থেকে বাস পাব সেটাও জানিয়ে দিলেন।

সকালে টিচারদের জন্যে সস্তার মধ্যে কিছু উপহার,খাদ্য সামগ্রী কিনলাম। তারা সাংঘাতিক খুশি হল। মানুষকে খুশি করতে পারলে আমার ভেতরে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। আমি তাতে ভেসে যাই তবে সে আনন্দ প্রকাশ না করে চেপে যাই। কারন ওখান থেকে নানামুখী অহংকারের সৃষ্টি হয়। বিকেলে আমি হাটতে বের হলাম একইসাথে আমার রুট সার্ভে করলাম। আমি ছোট নদীটার ওপরকার একটা চিকন ব্রিজ পার হলাম। এপাশে দেখলাম ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। এখানকার মানুষ বেশ গরিব মনে হল। একটা বাজারের ভেতর দিয়ে যখন হাটছিলাম তখন অনেক মনুষকে দেখলাম সস্তাগোছের পণ্য নিয়ে রাস্তায় বসেছে বিক্রি করার জন্যে। এক বৃদ্ধকে দেখলাম দুটো মুরগী নিয়ে বসে আছে। চোখাচোখি হতেই এমনভাব করল,যেন আমি তার একজন উত্তম ক্রেতা। আমি একগাল হাসি দিয়ে সরে পড়লাম। লোকটা আশাহত হয়েছে। তবে আমার যদি মুরগী কেনা প্রয়োজন হত,তাহলে আমি সত্যিই তার কাছ থেকেই কিনতাম। পৃথিবীর সব দেশের গরিবদের জন্যেই আমার সমবেদনা রয়েছে। আমি ভাবতে থাকি এদেরকে সাহায্য করা সত্যিই জরুরী। সব দেশের গরিবদের গল্প একই রকম।

আমি একটা রাস্তায় চলে এসেছি যেখানে উচ্চপদস্থ সরকারী কর্মকর্তারা থাকেন। এখানে রাস্তার দুপাশে গাছগাছালি রয়েছে এবং বিভিন্ন স্থানে পার্ক রয়েছে। ফুলের বাগানগুলো যে না দেখেছে সে তার সৌন্দর্য ভালভাবে কল্পনা করতে পারবে না। ওপাশে ছোট নদীটা। পানি বেশ স্বচ্ছ এবং নদীর দুপাড় কংক্রিটের তৈরী। আমি হাটতে হাটতে একই নদীর ওপর তৈরী একটি চমৎকার সেতুর ওপর আসলাম। এই সেতুটি বেশ খরচ করে তৈরী করা হয়েছে। এটি বেশ প্রশস্ত। সেতুর দুপাশে নদীর তীরের বিশাল অংশ জুড়ে পার্ক ও হাটার জায়গা তৈরী কর হয়েছে। আমি সেতুটি পার হলাম এবং সিড়ি বেয়ে নীচে নেমে আসলাম।



দেখলাম নদীর পাশ ধরে বিশাল প্রান্তর,যা টাইলসে মোড়া। এরপাশে বেশ কয়েকটা বাস্কেটবল কোর্ট যা উঁচু তারের নেট নিয়ে ঘেরা। পার্ক ও রেস্টুরেন্ট রয়েছে।



আমি নদীর পাশের চমৎকার টাইলসে মোড়া রাস্তা ধরে এগিয়ে চললাম। একটা বাগানের সন্ধান পেলাম,একপাশে কৃষিক্ষেত। কৃষকের বাড়িও দেখলাম। কয়েকজনকে দেখলাম ছিপ ফেলে মাছ শিকারে মত্ত। একটু দাড়ালাম। তারা ঘাড় ঘুরিয়ে একটু হাসল,আমিও । তারপর চলে আসলাম। খুব চমৎকার বাতাশ বইছে। এখন কোন ঋতু জানা নেই তবে শরতের মত মনে হল। বাগানের পাশ দিয়ে হাটার সময় এক দূর্গন্ধযুক্ত বাতাশ আমার নাকে প্রবল আঘাত হানল। আমি বুঝে নিলাম এখানেও কেউ কেউ মনের সুখে প্রকৃতির সান্নিধ্যে বসে ইয়ে করে। এই একটি ব্যাপার ছাড়া সবটাই চমৎকার লেগেছে।



আমি আসলাম পার্কের অংশে। এখানে ব্যায়ামের অনেক যন্ত্রপাতি রয়েছে। সকল সরকারী পার্কেই ব্যায়ামের নানান সামগ্রী সংযুক্ত থাকে। আমি অনেক বাচ্চাকে দেখলাম মনের আনন্দে খেলা করছে। তারা আমার কাছাকাছি আসল। এক বাচ্চাকে দেখে মনে হল গরিব।





তার বাড়ী পার্কের অদূরে। তার রূপ দেখে রাজকুমার মনে হওয়া স্বাভাবিক। সে আমার সাথে খেলা করা শুরু করল। একটা বার ধরে সে আমাকে বলল এখানে ঝুলতে থাকো। আমি সেটা ধরে অনেকবার শুন্যে ওঠা-নামা করলাম। এবার সে আমার মত করার চেষ্টা করল কিন্তু তার নাদুস নুদুস শরীরের কারনে সম্ভবপর হলনা। সে আমাকে বিভিন্ন রকমের কসরত করতে বলল এবং কিছুক্ষন পরপর আমার হাত ধরে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে বিভিন্ন রকম কসরত করতে বলছিল। আমাদের কান্ড দেখে ,বিশেষ করে তার ভাব জমানো দেখে বৃদ্ধরা বেশ মজা পাচ্ছিল। শেষে সে আমাকে সিড়ির ওপর আনল এবং কে কত দ্রুত উঠতে পারে সে প্রতিযোগীতায় লিপ্ত হল।

আমরা বড় রাস্তার ওপর উঠে আসলাম। কিন্তু সে তার বাড়িতে গেলনা। তার বয়স ৮/৯ বছরের মত হবে। আমি পড়লাম বিপদে। সে আমাকে পছন্দ করে ফেলেছে। সে আমার সাথে যেতে চায়। আমি তাকে বহু বুঝিয়েও বাড়িতে ফেরত পাঠাতে পারলাম না। তারপর আমি তার মাথায় হাত বুলিয়ে তার মুখ অন্য দিকে ঘুরিয়ে দিয়ে বললাম বিদায়। কাল আবার দেখা হবে। আমি হাটা শুরু করলাম। বেশ কিছুক্ষন পর পেছনে তাকিয়ে দেখী সে আমার পেছনে নিরবে হাটছে। খানিক পর রাস্তার ওপর নুডুলস এবং ফ্রেন্সফ্রাই এর ভ্যান-গাড়ি দেখলাম। সেখান থেকে তাকে ওগুলো কিনে দিয়ে বললাম এবার বাড়ি যাও। আবার দেখা হবে। সে আমাকে আমার থাকার স্থান কোথায় তা জিজ্ঞেস করল। আমি ইশারায় দেখালাম। সে আমার বাসায় আসবে জানিয়ে ফ্রেন্স ফ্রাই খেতে খেতে চলে গেল। দূরে গিয়ে হাত উচিয়ে বিদায় জানালো। ছেলেটার জন্যে মনের ভেতর কেমন জানি করতে লাগল। ভালবাসা খুব কঠিন জিনিস।

চলছে.....

বিষয়: বিবিধ

১৫৩১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File