শিরোনামহীন
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ০৪ এপ্রিল, ২০১৩, ১১:৪৮:০৯ রাত
বরাবরই আমাদের পারিবারিক পেশা ছিল ব্যবসা। পিতা-মাতা উভয় পক্ষের পরিবারেরই সামাজিক মর্যাদা ,প্রতিরিধিত্ব ছিল। ১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চ যখন পাক হানাদার বাহিনী পূর্ব পাকিস্থানের নিরস্ত্র,মযলুম জনতার উপর আক্রমন শুরু করেছে,তখন আারেকটি চক্র আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য ধ্বংস করে। সাপ্লাইয়ের উদ্দেশ্যে খাদ্য-শস্য,পাট ভর্তি বহু সংখ্যক ট্রাক একদিনের মধ্যেই লুট হয়ে যায়। গুদামও পরবর্তী কয়েকদিনের মধ্যে লুট-পাট হয়। সুযোগ সন্ধানী গোষ্ঠী বিভিন্ন উপায়ে ক্ষতি সাধন করতে থাকে। পূর্ব বিরোধের জের ধরে কিছু ক্ষমতাশালী ব্যক্তি ক্ষতি করতে উঠে পড়ে লাগে। আমাদের পরিবারকে পাক সেনাদের দিয়ে হত্যা করানোর পরিকল্পনাও নেওয়া হয়। এমনকি আমার মায়ের দিকে রাইফেল তাক করেছিল হানাদার বাহিনী। কিন্ত পরিচিত এক রাজাকার(কেউ কেউ আপাত দৃষ্টিতে রাজাকার হয়ে গোপনে মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করেছিল আবার কেউ কেউ মুক্তিযোদ্ধা সেজে লুটপাটও করেছিল,এরা মূলত: মুক্তিযোদ্ধা ছিলনা।) বলেছিল-‘এই মহিলা এ বাড়ির কাজের লোক,সে তোফাজ্জল হোসেনের স্ত্রী নয়।’
এদিন রাতেই আমার দাদা-দাদী,মা তার ৩ সন্তানসহ দূরবর্তী এক গ্রামে পালিয়ে যায়। সেটাও নিরাপদ না হওয়াতে আরেক গ্রামে চলে যায়। এ ছোটাছুটি মোটেও সুখকর কোনো ভ্রমন ছিলনা। এমনকি গরুর গাড়ীও জোটেনি। তাদেরকে যেতে হয়েছিল পায়ে হেটে। আমার বড়বোন ৪,মেঝো ২ এবং ভাই ছিল কয়েক মাস বয়সের। তাদের নিয়ে হাটাও ছিল কষ্টকর। সাথে নগদ টাকা-কড়িও তেমন ছিলনা। এটাও জানা ছিলনা যে- তারা ঠিক কোথায় চলেছে,বরং বাড়ী থেকে পালানোই উদ্দেশ্য ছিল। তারপর দূরের এক গ্রামের দূর সম্পর্কের এক আত্মীয়ের বাড়িতে উঠতে হয়েছিল। তাদের পরিবারের লোক সংখ্যা ছিল অত্যধিক। একটি মাত্র নোংড়া ঘর তাদেরকে দেওয়া হয়েছিল। খাওয়া-দাওয়ার অবস্থা ছিল খুবই করুণ। সে সময়ের বর্ণনা দিতে ভাল লাগছে না,আমি নিজেও অনেক কিছু ভুলে গেছি। কয়েক মাস পর্যন্ত আমার পিতার সাথে পরিবারের কোনো যোগাযোগ ছিলনা। আমার অত্মীয়-স্বজনরাও বাড়িতে দু একজন বুড়ো মানুষ রেখে পালিয়েছিল। ফলে আমার পরিবার অনেক দিন পর্যন্ত সকল রকম সাহায্য সহযোগীতা থেকে বঞ্চিত ছিল।
এ দূর্দীনে একটি লোকই যোগাযোগ রক্ষা করেছিল,তার নাম মুহাম্মদ। এ লোকটি মুক্তিযুদ্ধে আমার পিতাকে সাহায্য করেছিল যুদ্ধে এবং তথ্য আদান প্রদানে। আমার পরিবারের সাথে পিতার যোগাযোগও একমাত্র তার মাধ্যমে ঘটত। সে ছিল সাংঘাতিক বিশ্বস্ত। তার মাধ্যমে প্রাপ্ত সংবাদের ভিত্তিতে আমার পিতা কয়েকবার আক্রমন পরিচালনা করেছেন। (আমার পিতা ৮ নং সেক্টরের একজন আর্মী কমান্ডার ছিলেন এবং সম্ভবত: ৬ ব্রিগেড সৈন্যের কমান্ডার ছিলেন। এছাড়া তার নেতৃত্বে বহু যুবককে যুদ্ধের প্রশিক্ষণ দিয়ে উপযোগী করা হয়।) এর একটি আমার মনে আছে তবে স্থানটি সঠিকভাবে মনে নেই। এ অভিযানে আমার পিতা মাত্র ৭ জন সৈনিককে সাথে নিয়েছিলেন । একটি গ্রামে কিছু পাকিস্থানী সেনা এক মাতব্বর ব্যক্তির অতিথী হয়ে রাতে ভোজনপর্ব সারতে এসেছিল। আস্ত খাসির গ্রীল করা হয়েছিল। কিন্তু তা আর তাদের খাওয়া হয়নি। কয়েকজনকে গুলি করে হত্যা এবং বাকী ৪ জনকে জ্যান্ত ধরা হয়। এরপর আমার পিতা তার জিপের পেছনে বেঁধে তাদেরকে টেনে হিচড়ে হত্যা করেন। এ ঘটনা তিনি এমনিতেই ঘটাননি। উক্ত সেনারা বহু নিরিহ মানুষ হত্যা করেছিল এবং তাদেরকে সহায়তাকারী রাজাকাররা লুটপাট ,ধর্ষণ করত। ........
যাইহোক ,বাড়িতে থাকাকালীন সময়ে স্থানীয় রাজাকাররা হাসিমুখে আমার পিতার অবস্থান জানতে চাইত। তাদের ধারনা ছিল নিশ্চয় আমার পিতা পরিবারের সাথে যোগাযোগ রাখে। কিন্তু আমার পিতা কখনই আমার পরিবারকে তার অবস্থান জানাতো না। তিনি ছিলেন সামরিক বাহিনীর এক যোগ্য অফিসার। তার দূর্বলতার সুযোগ শত্ররা নিতে পারে এ তিনি জানতেন। তবে আমার দাদী কখনও কখনও তার অবস্থান জানতেন। আমার পিতা ছিলেন তার পিতা-মাতার একমাত্র সন্তান। ফলে দাদীর অতি আগ্রহের কারনে তিনি আমার পিতার অবস্থান কখনও কখনও জেনেছেন। কিন্তু তিনি ছিলেন অতিরিক্ত বুদ্ধিমতি। তার কাছে পরিচিত ব্যক্তিরা(রাজাকাররা) এসে করুন সুরে বলত-“ভাইকে অনেক দিন দেখিনা। শুনেছি অমুক স্থানে ক্যাম্পিং করেছেন। ভাবছি একবার গিয়ে দেখে আসব। আমাকে একবার তার কাছে নিতে পারেন ?” অথবা ভাই এখন কোথায় আছেন ? ইত্যাদী। কিন্তু প্রতিউত্তরে আমার দাদী ততধীক করুন সুরে বলতেন-“ওগো তোমরা আমার খোকাকে দেখেছো ? আমার খোকা এখন কেমন আছে ? ইত্যাদী । ” অনেক সময় তাদের কথা বলার আগেই আমার দাদী কান্নাকাটি শুরু করে দিতেন ,যাতে তারা তার সন্তানের ব্যাপারে আগ্রহ হারায়। দাদী দক্ষভাবে বহু রকমের প্রয়োজনীয় খবরা খবর আদান প্রদান করতেন নিখুঁত গোয়েন্দার মত। দক্ষতার সাথে পরিবার সামলাতেন এবং অন্যদেরকে নিরাপত্তা দেওয়ার ক্ষেত্রেও তার ভূমিকা ছিল। তিনি ছিলেন প্রচন্ড সাহসী এবং শক্তিশালী মহিলা(আমার পিতাকে পেটাতে তার ছোট খাট অজুহাতই যথেষ্ট ছিল। এমনকি আমি ছোট বেলায় দেখেছি এক প্রভাবশালী ব্যক্তি পিতার সাথে দেখা করতে এসেছিলেন তখন কোনো এক কারনে হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে দাদী পাশে থাকা লাঠি নিয়ে আমার পিতার দিকে তেড়ে গেলেন,আর আমার পিতা ভদ্রলোকটির সামনে থেকে উঠে ঘরের মধ্যে চলে গেলেন।)।
দাদী বেঁচে থাকলে বোধহয় মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সার্টিফিকেট পেয়ে যেতেন। কিন্তু তিনি সার্টিফিকেট ব্যাপারটা বুঝতেন না। আমার মনে হয় বেঁচে থাকলে তিনি মুক্তিযুদ্ধের সার্টিফিকেট নিয়ে বা নানামুখী সুবিধাদী নিয়ে প্রচলিত কুকুর কামড়া-কামড়িতে অংশ নিতেন না। আমার পিতাও কখনও সার্টিফিকেট নিয়ে ভাবেননি। এমনকি মুক্তিযুদ্ধের বহু পর অনেক মুক্তিযোদ্ধাদের(ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা) নিয়ে রসিয়ে কথা বলতেন। অনেকেই যুদ্ধ না করে মুক্তিযোদ্ধা হয়েছে,কেউ কেউ হয়ত মুক্তিযোদ্ধাদেরকে পানি পান করিয়েছিল। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধাকে চিনি,যিনি এক ঝাল-মুড়ী ওয়ালার কাছে দেখেছিলেন একটি মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট ঝাল-মুড়ি পাকেট হতে যাচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে সেটি ছো মেরে নিয়ে তিনি নিজের নাম বসিয়ে আরেকটু জারিজুরি করে মুক্তিযোদ্ধা বনে যান। সরকারের বহু কর্মকর্তা আমার পিতার ব্যাপারে আগ্রহ দেখালেও আমার পিতা তাদের ব্যাপারে আগ্রহ দেখাননি। ভেজাল কোথায় ছিল তা তিনি স্পষ্ট জানতেন। তাকে দেওয়া কোনো সংবর্ধনা তিনি কোনোদিন নেননি ,অনিচ্ছায় একটি ছাড়া। সেটি হল রাষ্ট্র কর্তৃক মরনোত্তর গার্ড অব অনার। এক বন্ধু মন্ত্রী তার সার্টিফিকেটটি আমাদের বাড়িতে নিয়ে এসেছিলেন। আমি বাড়িতে ছিলাম না,শুনেছিলাম তাকে তিনি অপমান করেছিলেন। তিনি কখনও মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য প্রদত্ত সম্মান,সম্মানী গ্রহন করেননি। এ বিষয়ে কেউ আমন্ত্রণ জানালে তিনি কঠিন ভাষায় আক্রমন করতেন। তিনি উচ্চস্বরে বলতেন, ‘আমার এখন মনে হচ্ছে ৭১ এর পর হাজার খানিক লিস্টেড শয়তানকে মেরে ফেললে ভাল করতাম। ’ তার সন্তান হিসেবে আমরা কেউ কখনই স্কুল,কলেজ,চাকুরী কোথাও তার সার্টিফিকেটটি প্রদর্শন করে সুবিধা গ্রহন করিনি। তিনি যে উদ্দেশ্যে যুদ্ধ করেছিলেন,আল্লাহ তা কবুল করে বিজয় দিয়েছিলেন যদিও স্বাধীনতা অর্জন করে তা রক্ষা করতে আমরা হিমশিক খাচ্ছি। তিনি পাকিস্থানের বৈষম্যমূলক নীতি,শাসকগোষ্ঠীদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করতেন এবং তিনি স্বাধীনতা উত্তর ভারতের আচরনেও খুশী ছিলেন না। তিনি হাজার হাজার হিন্দু পরিবারকে হানাদার বাহিনী,রাজাকার,স্থানীয় সুযোগ সন্ধানীদের হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন। তিনি ছিলেন আমানতদার এবং চরম পরোপকারী এক ব্যক্তি,এক বীর মুক্তিযোদ্ধা।
আমি পূর্বে সরাসরি কখনই কোনো মুক্তিযোদ্ধার মুখে পাকিস্থানী শাসকের খারাপ আচরণ, অন্যায়ভাবে সাধারণ মানুষের ওপর ঝাপিয়ে পড়া এবং তার বিপরীতে নিজেদের অপ্রচলিত যুদ্ধ কৌশল,বিরত্ব প্রদর্শনের কথা ছাড়া অন্য কিছু শুনিনি। মুক্তিযুদ্ধের কারন হিসেবে জানতাম এ অংশের মানুষের যথাযোগ্য মর্যাদা না দেওয়া,যথাযথ রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব না থাকা,অর্থনৈতিক বৈষম্য ইত্যাদী। কিন্তু এখন শুনতে পাচ্ছি এ অঞ্চলের মানুষেরা ধর্ম নিরপেক্ষ শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা,ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতির মুলোৎপাটন করা,সমাজতন্ত্র,গণতান্ত্রিক পুঁজিবাদী ধ্যান ধারনার প্রতিষ্ঠা কল্পে যুদ্ধ করেছিল। এ অঞ্চলের ৯০ শতাংশ মানুষ মুসলিম অথচ এরা এদের বিশ্বাসের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠায় জীবন উৎসর্গ করল বা প্রানান্তকর প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখল,এ বিষয়টি বুঝে আসল না। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় কি সকল মুক্তিযোদ্ধা আজকের বুদ্ধিজীবীদের এ বক্তব্যটি জানত ? এটা আমার একটি জিজ্ঞাসা।
এখানে যুদ্ধের নামই হল মুক্তিযুদ্ধ। অর্থাৎ পাকিস্থানী শাসন-শোষন,আক্রমন থেকে মুক্তি লাভের যুদ্ধ। এটি ছিল সময়ের দাবী। মানুষ স্বতস্ফুর্তভাবে ঝাপিয়ে পড়েছে। ইতিহাস পাঠে যা জানতে পারি তা হল,এমন একটি সামরিক আক্রমন হতে পারে সেটি এ অংশের মানুষের ধারণার অতীত ছিল। নেতারা রাজনৈতিক সমাধানই আশা করছিল। আর প্রচলিত রাজনৈতিক,অর্থনৈতিক ধারায় এ অংশের মানুষের যথাযথ অংশগ্রহন স্বীকৃত না হওয়াই ছিল ক্ষোভের কারন। তখনকার নেতারা ধর্মনিরপেক্ষতা,ধর্মভিত্তিক রাজনীতির বিরোধীতা,ইসলামের বিরোধীতা,সমাজতন্ত্র ও পুঁজিবাদের সংমিশ্রিত শাসন ব্যবস্থা ইত্যাদী নিয়ে দরকষাকষি করেছেন বলে দেখিনি। অবশ্য এ বিষয়ে আমার জ্ঞানের স্বল্পতা রয়েছে।
আজকের দিনে গণমাধ্যমে অমরা মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে যা জানতে পারছি তাতে কিছু নেতা,বুদ্ধিজীবীর কথামত চরম ইসলাম বিদ্বেষী একটি ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠাই ছিল মুক্তিযদ্ধের চেতনা। এবং মুক্তিযেদ্ধাদেরকে ইসলামের বিরুদ্ধে দাড় করানো হচ্ছে। আমার ধারনা পূর্বের নেতারা এমন কথা বলে যাননি,যা এখনকার লোকেনা তাদের বক্তব্য এবং আচরনে প্রকাশ করছেন। এ অঞ্চলের মানুষেরা প্রচন্ড ধর্মভীরু এবং স্বাভাবিকভাবে তারা ধর্মহীন কোনো অবস্থা চায়না। এটা বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিতও হয়েছে। আর জনতার এ চিন্তা বা মানুষিকতার সাথে পূর্বের নেতারা পরিচিত ছিলেন। কিন্তু বর্তমান সময়ে আমরা যেসব বক্তব্য শুনতে পাচ্ছি তাতে এদেশে আদর্শ সংক্রান্ত চরম সংঘাত সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও বর্তমানে সংঘাত চলছে কিন্তু সেটি সেই সংঘাত নয়,যা আমি বলছি। এটি হল প্রচলিত শাসনে অংশিদারিত্ব না থাকা সংক্রান্ত সমস্যা ও সংঘাত। এটি একই ধরনের বলয়ে থেকে রাজনৈতিক স্বার্থহানী সংক্রান্ত সংঘাত। অবশ্য ক্ষুদ্র পরিসরে এখানে আদর্শিক সংঘাতও রয়েছে। কিন্তু আমি যেটা বলতে চাচ্ছি সেটা হল,এ অঞ্চলের মানুষেরা খুব দ্রুত নিজেরদেরকে আদর্শিক বিভক্তির দিকে নিয়ে যাচ্ছে এবং এতে মানুষেরা দলীয় রাজনীতির উর্ধ্বে উঠে নীতি-নৈতিকতার প্রশ্নে ঐক্য তৈরী করতে পারে।
একটি জাতির উন্নতির জন্যে তার জনতার নীতি নৈতিকতার দিকটি পরিষ্কার হওয়া খুবই জরুরী এবং এ সংক্রান্ত ঐক্য আরও বেশী জরুরী তা না হলে তাদের আচরণ এবং বিশ্বাসের ভিন্নতার কারনে সার্বিক উন্নতি চরমভাবে বাধাপ্রাপ্ত হয়। যতক্ষণ না আমরা আমাদের জাতীয় নীতি আদর্শে ঐক্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হচ্ছি ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের জন্যে কোনো শুভ সংবাদ নেই। অবশ্য সচেতন জনতা ছাড়া আদর্শিক ঐক্যও কষ্টকর ব্যাপার। আদর্শ পছন্দ করার ক্ষেত্রে যদি মানুষের মধ্যে ভেটাভুটিও হয়,তবু লাভ নেই,কারন বেশীরভাগ জনতা’ই জানেনা কোনটা কি ধরনের আদর্শ। সম্ভবত এ কারনেই নেতারা তাদের নিজেদের মুখে মুখে বানানো কোনো আদর্শ,বিশ্বাসকে গোটা জনতার আদর্শ হিসেবে প্রচার করে থাকেন। আর জনতার বিবেচনা বোধ হল এরকম-“যেহেতু শুনেছি উনি ভাল লোক,তাই উনি কি আর খারাপ কিছু করবেন ?”
তবে আমি আদর্শিক দ্বন্দ পছন্দ করি। এতে জাতি একটি সিদ্ধান্তের দিকে এগুতে থাকে যে,তারা ঠিক কোন আদর্শে নিজেদেরকে পরিচালিত করতে চায়। ক্ষমতার দ্বন্দ আমাদেরকে যেদিকে ঠেলে নিয়ে যাবে,সেটি হল অন্ধকারাচ্ছন্ন অঞ্চল। আদর্শিক প্রশ্নে জনতার অবস্থান আমাদেরকে একটি স্থিতিশীল অবস্থানে আসার ক্ষেত্র তৈরী করবে। জনগণ কোন বিধান দ্বারা শাসিত হতে চায় সে ব্যাপারে জনতার মধ্যে ভোটাভুটি হতে পারে,তবে তার আগে তাদেরকে সকল বিধান সম্পর্কে মোটামুটিভাবে জানতে হবে। এবং যারা তাদের বিধানকে জনতার সামনে উপস্থাপন করতে চায়,তাদেরকে সমানভাবে সুযোগ করে দিতে হবে যাতে সকল জনতা সকল বিধান/ব্যবস্থাপনার বিষয়ে জানতে পারে। এ বিষয়ে আম-জনতার মত প্রকাশের অধিকার গণতন্ত্রের ধারার মধ্যে পড়ে বলে জানি। গুটিকতক নেতা আর টেলিভিশন বুদ্ধিজীবীর চিন্তাকে আম-জনতার চিন্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করনের মধ্যে প্রচলিত কোনো সমস্যার সমাধান বয়ে আনবে বলে মনে করিনা। প্রচলিত কমড়াকামড়ির মধ্যে কোনো আলো দেখতে পাচ্ছিনা।
পরিশেষে ,যারা সেদিন দেশের দূর্দীনে,সময়ের প্রয়োজনে মজলুম জনতাকে বাঁচাতে সাহসীকতার সাথে যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিলেন এবং দেশকে স্বাধীন করেছিলেন,মার্চের এই দিনে তাদের প্রতি স্বশ্রদ্ধ সালাম নিবেদন করছি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জিবিত হয়ে আমরা যেন সত্যকে গ্রহন করি এবং মিথ্যাকে পরিত্যাগ করি। সত্যের জয় হোক ! মিথ্যা ধ্বংস হোক !
লেখাটা মার্চের জন্যে ছিল
বিষয়: বিবিধ
১৪৮৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন