দারুল কুরআন টেকনিক্যাল মাদ্রাসা (যেখানে যা আছে তার উপর এ প্রতিষ্ঠান বাস্তবায়নযোগ্য)
লিখেছেন লিখেছেন সাইফুল ঈদগাহ কক্স ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৫, ০৪:৩০:৩০ বিকাল
বিসমিলাহির রাহমানির রাহীম
দারুল কুরআন ঃ
দার অর্থ বাড়ী। দারুল কুরআন অর্থ কুরআনের বাড়ী। প্রথম কুরআনের বাড়ী ছিল রাসূলের মক্কী জীবনে দারে আরকাম এবং মাদানী জীবনে মসজিদে নববী। প্রত্যেক মসজিদকে পরিপূর্ণ রূপে কুরআনের বাড়ীতে পরিণত করার লক্ষ্যেই এ প্রতিষ্ঠান। এটি কুরআনের প্রত্যেকটি দাবী পূরণ ও প্রশিক্ষণের কেন্দ্র হবে ইনশাআলাহ। যথা,
১. দাওয়াতুল কুরআন বা কুরআনের দিকে আহবান।
২. তাজবীদুল কুরআন বা কুরআন পাঠ বিশুদ্ধ করণ।
৩. তাহফীজুল কুরআন বা কুরআন মুখস্থ করণ।
৪. আলফাজুল কুরআন বা কুরআনের শব্দভান্ডার।
৫. তারাকীবুল কারআন বা কুরআনের বাক্যগঠন।
৬. আহকামুল কুরআন বা কুরআনের বিধিবিধান।
৭. তাবলীগুল কুরআন বা কুরআনের প্রচার।
৮. তানফীজুল কুরআন বা কুরআনের বাস্তবায়ন।
টেকনিক্যাল ঃ
ধর্মের সাথে কর্ম না থাকলে ধর্মই উপার্যনের মাধ্যম হয়ে দাড়ায়। চরিত্রের সাথে যোগ্যতা না থাকলে চরিত্র ধরে রাখা মুশকিল। তাই ধর্মশিক্ষার সাথে কর্মশিক্ষার লক্ষ্যেই টেকনিক্যাল যুক্ত করা হয়। কমপক্ষে ষোলটি কর্মের যেকোন একটি প্রত্যেকের শিখা দরকার এবং প্রত্যেকটি সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা থাকা উচিত। যথা,
১. খাদ্য ও কৃষি।
২. বস্ত্র ও শিল্প।
৩. বাসস্থান ও জমি।
৪. চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য।
৫. শিক্ষা ও দীক্ষা।
৬. কর্মসংস্থান ও বিশ্বায়ন।
৭. পরিবার ও পর্যটন।
৮. নিরাপত্তা ও আত্মরক্ষা।
৯. ন্যায়বিচার ও বন্ধীমুক্তি।
১০. ধর্ম ও সংখ্যালঘু।
১১. প্রযুক্তি ও প্রতিভা।
১২. অর্থ ও বাণিজ্য।
১৩. যোগাযোগ ও পরিবহন।
১৪. কেন্দ্র ও পাঠাগার।
১৫. সমন্বয় ও নেতৃত্ব।
১৬. যোগ্যতা ও গ্রহণযোগ্যতা।
মাদ্রাসা ঃ
যে কোন শিক্ষালয়কে আরবীতে মাদরাসা বলে। নিজবাড়ী হল এবতেদায়ী মাদরাসা বা প্রাথমিক বিদ্যালয়। মসজিদ হল জামে বা জামিয়াহ বা বিশ্ববিদ্যালয়। পাঠাগার হল থিওরিক্যাল মাদরাসা এবং দাওয়াত ও তাবলীগী সফর হল প্রেক্টিক্যাল মাদরাসা। মসজিদ ভিত্তিক সুফ্ফা মাদরাসা হলে অতিরিক্ত জমি, ভবন, বেতন-ভাতার টেনশন নেই। যা আছে তা কাজে লাগাতে পারলেই যথেষ্ট। প্রতি আটটি বা ষোলটি মসজিদ মিলেও একটি মাদরাসা হতে পারে। একই ব্যক্তি হবেন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ইমাম ও শিক্ষক। ইমাম-খতীবের বেতন-ভাতা দেবে মাদরাসা। মাদরাসাকে নুসরাত করবে মসজিদের মুসলিগণ। আটজন ইমাম হবেন উক্ত কুরআন বিষয়ের শিক্ষক এবং অপর আটজন ইমাম হবেন হাদীস বিষয়ের শিক্ষক। যথা,
১. দাওয়াতুল হাদীস বা হাদীসের দিকে আহবান।
২. তিলাওয়াতুল হাদীস বা হাদীস পাঠ (অর্থসহ)।
৩. তাহফীজুল হাদীস বা হাদীস মুখস্থ করণ।
৪. দিরায়াতুল হাদীস বা হাদীস বিশেষণ।
৫. রিওয়ায়াতুল হাদীস বা হাদীসের বিশুদ্ধতা।
৬. আহকামুল হাদীস বা হাদীসের বিধিবিধান।
৭. তাবলীগুল হাদীস বা হাদীসের প্রচার।
৮. তানফীজুল হাদীস বা হাদীসের বাস্তবায়ন।
ভবন ঃ
মসজিদ সংলগ্ন ওয়াকফ জমি খালি থাকলে সেখানে যথাসম্ভব সর্বাধুনিক বহুতল দ্বিমুখী ভবন নির্মিত হবে ইনশাআলাহ। একমুখ একাডেমিক এবং অন্যমুখ আবাসিক বা বাণিজ্যিক। সমান মধ্যখানে সিড়ি থাকবে পার্টিশনযুক্ত উত্তর-দক্ষিণ দুটি। এক সিড়ি দিয়ে উঠে দুপাশের দুই ক্লাসে ঢুকবে এবং আরেক সিড়ি দিয়ে উঠে দুপাশের দুই বাসা বা দুই অফিসে প্রবেশ করবে। ছাদে একেক সিড়ির দরজা থাকবে পূর্ব-পশ্চিম একেক দিকে। পূর্ব-পশ্চিম ষাট হাত লম্বা এবং উত্তর-দক্ষিণ বিশ হাত চওড়া প্রত্যেকটি টেকনিক্যাল ভবন হবে যথাসম্ভব একই রকম। এরূপ প্রয়োজনে ষোল বিষয়ে ষোলটি হবে। কেউ একটি ফ্লোর ছাদসহ নির্মান করে দিলে তাঁর জন্য সে ছাদের নিছে এক চতুর্থাংশ আবাসন স্পেস বরাদ্দ থাকবে।
কমিটি ঃ
কমিটি গঠন ও প্রত্যেক কমিটির যাবতীয় কাজ হবে পরামর্শ ভিত্তিক, নির্বাচন ভিত্তিক নয়। প্রত্যেক মসজিদ/ বয়স/ পেশা/ জেন্ডার/ মাদরাসা ভিত্তিক ৩১৩ জন নিয়মিত দাতাসদস্য মিলে একটি করে উন্নয়ন কমিটি গঠন করবে। তন্মধ্যে প্রত্যেক দশজন মিলে একজনকে প্রতিনিধি বানাবে পরামর্শ কমিটির জন্য। এ রকম ৩১ জন সদস্যপ্রতিনিধি, ৩ জন সর্বোচ্চ দাতাসদস্য, ৩ জন ইমাম-শিক্ষক-কর্মজীবি প্রতিনিধি, ১ জন অভিভাবক প্রতিনিধি, ১ জন বোর্ড প্রতিনিধি ও প্রতিষ্ঠানপ্রধান মিলে সর্বমোট ৪০ জনের পরামর্শ কমিটি পরামর্শ ভিত্তিক ১৬ বিষয়ে ১৬জন জিম্মাদার ঠিক করবে। বিষয়ভিত্তিক জিম্মাদারগণ মিলে বিষয়ভিত্তিক উপকমিটি গঠন করবে। জিম্মাদরগণ নিজ দায়িত্বে বিষয়ভিত্তিক অস্থায়ী নিয়োগ-বিয়োগ দিতে পারবে। তবে পরামর্শ কমিটির কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকবে। যেকোন পরামর্শ সভায় নির্ধারিত আমিরে ফায়সাল বা সিদ্ধান্তদাতা না থাকলে উপস্থিত সকলে মিলে পরামর্শ করে একজনকে আমীরে ফায়সাল নিযুক্ত করে সভা আরম্ভ করবে এবং তাঁর সিদ্ধান্ত মানতে সবাই বাধ্য থাকবে। এ প্রতিষ্ঠানের আমীরে ফায়সাল নির্ধারিত আছেন।
কর্মসংস্থান ঃ
প্রত্যেকের টার্গেট হওয়া উচিত প্রথমে উৎপাদন। তা না পারলে ব্যবসা। তাও না পারলে চাকুরী। এ প্রতিষ্ঠান কাউকে চাকুরী দিতে বাধ্য নয়। তবে যারা সৎচরিত্র, কর্মদক্ষতা ও বৈদেশিক ভাষায় নিজ যোগ্যতা প্রমান করতে পারবে তারাই হবে দেশ-বিদেশে গ্রহণযোগ্য ও অগ্রাধিকারপ্রাপ্য। কেউ কখনো কর্মক্ষেত্রে অসৎ প্রমান হলে তার সনদ বাতিল করার ক্ষমতা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ সর্বদা সংরক্ষণ করেন। নতুন কর্মসংস্থানও সৃষ্টিযোগ্য।
ভর্তি, ক্লাস, পরীক্ষা ও কতিপয় নীতিমালা ঃ
১. মুসলিম-অমুসলিম যে কেউ যে কোন বয়সে যেকোন বিষয়ে ভর্তিযোগ্য।
২. কুরআন, ভাষা, কর্মসংস্থান ইত্যাদি সর্টকোর্সে প্রতি ৪০ দিন পর ভর্তি।
৩. ক্রমান্বয়ে নার্সারী হতে সর্বোচ্চ স্তর পর্যন্ত ছাত্র-ছাত্রী পৃথক ব্যাচে ভর্তি।
৪. নার্সারী হতে ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত ছাত্র-ছাত্রীর ক্লাস সকালে অথবা বিকালে।
৫. ৬ষ্ট শ্রেণী হতে উপরের ক্লাস হবে ছাত্রীদের সকালে, ছাত্রদের বিকালে।
৬. ছাত্রীরা বিকালে ও ছাত্ররা সকালে প্রেক্টিক্যাল ক্লাস করবে কর্মক্ষেত্রে।
৭. দুপুরে ছাত্ররা এসেম্বেলী ক্লাসে থাকতেই ছাত্রীরা বের হয়ে চলে যাবে।
৮. ছাত্ররা জুহর ও আসর নামায নিকটবর্তী মসজিদে একত্রে পড়তে বাধ্য।
৯. মক্তব, বয়স্কশিক্ষা, ভাষাশিক্ষা ইত্যাদি কোর্স যে কোন নামাজের পর।
১০. ৮ম, ১০ম ও দ্বাদশ শ্রেণী কেন্দ্রীয় বোর্ড পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে।
১১. অন্যান্য শ্রেণীর পরীক্ষা, সিলেবাস, কারিকুলাম সম্পূর্ণ নিজস্ব হবে।
১২. পরীক্ষার নম্বর বরাদ্দ থাকবে থিউরিক্যালে ২৫%, প্রেক্টিক্যালে ৭৫%।
১৩. শিক্ষাবর্ষ হবে প্রয়োজন সাপেক্ষে জানুয়ারী ও রমজান কেন্দ্রীক।
১৪. প্রত্যেকেই মাসিক-বার্ষিক দাওয়াতী সফর করতে বাধ্য থাকবে।
১৫. ধর্মীয় ও রাজনৈতিক বিরোধে জড়ানো প্রত্যেকের জন্য সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
১৬. কর্তৃপক্ষ যে কোন সময় যে কোন ধরনের পরিবর্তনের ক্ষমতা রাখেন।
১৭. কুরআন, হাদীস, ফিকাহশিক্ষা সম্পূর্ণ ফ্রী, অন্যান্য সব বিনিময়যোগ্য।
১৮. প্রাইভেট পড়া ছাত্র-ছাত্রীর জন্য অপ্রয়োজনীয়, শিক্ষকের জন্য নিষিদ্ধ।
১৯. কুরআন পাঠ ও দাওয়াতী বয়ানের বিনিময় গ্রহণ সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ।
২০. সময় দিতে হয়না এ রখম যে কোন ইনকামসোর্স বৃদ্ধি প্রশংসনীয়।
২১. শিক্ষকতার সাথে ইমামতী ও দাওয়াতী কর্মতৎপরতা এক ও অভিন্ন।
যোগাযোগ ঃ মাওঃ সাইফুল ইসলাম, প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক, দারুল কুরআন টেকনিক্যাল মাদরাসা। ০১৮৩৭৫৮৮৯১০।
বিষয়: বিবিধ
১৩৪৪ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন