ধর্ম ও সংখ্যালঘু
লিখেছেন লিখেছেন সাইফুল ঈদগাহ কক্স ২৫ নভেম্বর, ২০১৫, ০৯:০০:৩২ রাত
যেহেতু আমি নিজেকে নিজে সৃষ্টি করিনি, নিজেকে নিজে বৃদ্ধ হওয়া বা মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করতে পারছিনা, তাই নিশ্চয়ই এ সবের পেছনে কারো না কারো হাত আছে এবং সে তিনিই আমার স্রষ্টা। যিনি যা সৃষ্টি করেন একমাত্র তিনিই তার মালিক হতে পারেন, অন্য কেউ নয়। যার সন্তান তাকেই তাদের লালনপালন করতে হয়। যার জিনিস তাকেই তা হেফাজত করতে হয়। অন্যজনের অধিকারও নেই, দায়িত্বও নেই, কর্তৃত্বও নেই। একমাত্র মালিকই ইচ্ছা করলে নিজ পালিত জন্তুকে জবেহ দিতে পারেন, অন্য কেউ তা পারেন না। সেহেতু যিনি আমার স্রষ্টা, তিনিই আমার লালনপালনকারী, তিনিই আমার মৃত্যুদাতা। তাই আমার উপর তিনি ছাড়া অন্য কারো কোন অধিকার নেই। তিনি যদি একাধিক হতেন তবে আমাকে একাধিকের একাধিক নির্দেশ পালন করতে হত। কিন্তু সেরকম কিছুই হচ্ছে না। আমাকে আমার মতই চলার সুযোগ ও স্বাধীনতা দিয়ে ছেড়ে দিয়েছেন তিনি। তিনি অতি দয়ালু না হলে তা কখনো সম্ভব হত না। অতএব আমার উচিত একমাত্র তাকেই খোঁজা।
কিন্তু কিভাবে আমি আমার স্রষ্টাকে খুঁজে পাব। প্রথমে সৃষ্টির মধ্যেই তাকে খুঁজার চেষ্টা করি। যেহেতু মা থেকে জন্ম হয়েছি তাই মা কি আমার স্রষ্টা? যদি তাই হত, তবে অনেক মা কেন নিজ ইচ্ছা মত বাচ্চা নিতে পারেন না? যেহেতু মায়ের দুধের অভাবে গাভীর দুধ পান করে বড় হয়েছি, তাই মনে হয় গাভীই আমার স্রষ্টা। যদি তাই হয় তবে কত শত গাভীর দুধ পান করেছি। তবে তো সব গাভীই আমার স্রষ্টা। তা হলে সেগুলো গেল কৈ? আর যেগুলো নিজেকে নিজে রক্ষা করতে পারে না, সেগুলো কীভাবে আমাকে রক্ষা করতে পারবে? আর যেগুলো আমাকে রক্ষা করতে পারবে না, সেগুলো কীভাবে আমার স্রষ্টা হতে পারে? এখন আমি স্রষ্টাকে কোথায় পাই? মন্দিরে গিয়ে খোঁজ করে দেখি। সেখানে পেলেও পেতে পারি।
বাবা, আমি আমার স্রষ্টাকে খুঁজছি। তাকে কোথায় পাব? “তিনি তো সবকিছুতেই আছেন। তাকে আমরা ঈশ্বর বলি। সর্বেশ্বর।” তাহলে তো সর্বনাশ। আমি পেশাব-পায়খানা করব কোথায়? যেখানেই করিনা কেন ঈশ্বরের গায়ে পড়বে। কিয়াং-এ গিয়ে খোঁজে দেখি। বাবা, স্রষ্টাকে খুঁজতে খুঁজতে আমার খিদা লেগেছে। কী খাব? “খবরদার। কোন জীব মেরে খাবে না। কারণ জীব হত্যা মহাপাপ”। ফলমূল, গাছপালা, শাকশব্জি সবই তো জীব। তা হলে খাব কী? মরা আর বিষ্টা ছাড়া তো খাওয়ার আর কিছুই দেখছি না। দুধ আর পানি কি জীবন্ত না মৃত ? গির্জায় গিয়ে জিজ্ঞেস করে দেখি। সেখানে ডাক্তারও থাকতে পারে। ফাদার, স্রষ্টাকে খুঁজতে মন্দিরে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে আমার পেশাব-পায়খানা বন্ধ। এরপর কিয়াং-এ গিয়েছিলাম। সেখান থেকে খাওয়া-দাওয়া বন্ধ। এখন আমি কী করি? “তুমি যা ইচ্ছা তাই করতে পার। তোমার কোন অপরাধ নেই। কারণ তোমার-আমার-সবার সমস্ত অপরাধ নিজের কাঁধে নিয়ে ঈশ্বরপুত্র যিশু ক্রুশবিদ্ধ হয়ে আমাদেরকে সবকিছু করার লাইসেন্স দিয়ে গেছেন।” ওয়াও, এ রকম সুখবর তো সবাইকে জানানো উচিত। প্রথমে মসজিদে যাই। সেখানে ইমাম সাহেবকে বললে তিনি সবাইকে জানিয়ে দিতে পারবেন।
হুজুর, আমি অনেক ঘুরে আপনার কাছে আসলাম। স্রষ্টার খুঁজে মন্দিরে গিয়ে পেশাব-পায়খানা বন্ধ করতে হয়েছিল। তারঃপর কিয়াং-এ গেলে খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করতে হয়। অতপর গির্জায় গেলে যা ইচ্ছা তাই করার লাইসেন্স পেয়ে যাই। এখন আমি আমার ভাল-মন্দ সব ইচ্ছা পূরণ করব। আমাকে ঠেকায় কে? ইমাম সাহেব বললেন “তোমার কথা শেষ হলে এবার আমার কথা শোন। আমরা স্রষ্টাকে খুজব, কিন্তু খুজে পাব না। এটা স্রষ্টা জানেন। তাই তিনি নিজের খবর জানানোর জন্য প্রত্যেক যুগে প্রত্যেক স্থানে প্রত্যেক জাতির কাছে সংবাদদাতা পাঠিয়েছেন। যেমন মহানূহ, যাকে হিন্দুরা বলে মনু। কপিলাবস্তুতে যুল কিফল, যাকে বৌদ্ধরা বলে গৌতমবুদ্ধ। ফিলিস্তিনে মসীহে ঈসা, যাকে খ্রীষ্টানরা বলে যিশু খ্রিষ্ট। তদ্রƒপ সবার শেষে মাত্র দেড় হাজার বছর পূর্বে হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে সৌদি আরবের মক্কাতে পাঠিয়েছেন, যাকে মুসলিমরা বলে আল্লাহর প্রেরিত শেষ রাসূল ও নবী। কোন সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে তিনি কী সংবাদ নিয়ে এসেছেন তা কি আমাদের শোনা ও জানা উচিত নয়?” তা তো অবশ্যয়ই শোনা ও জানা উচিত। কিন্তু সে জন্য কী করতে পারি? “তিনি স্রষ্টার যে গ্রন্থ নিয়ে এসেছেন তাকে বলা হয় কুরআন এবং তিনি নিজে যা বলেছেন, করেছেন ও সম্মতি দিয়েছেন তাকে বলা হয় হাদীস বা সুন্নাত। সেগুলো পড়ে দেখতে পারেন। মনে কোন প্রশ্ন জাগলে আমাকে জিজ্ঞেস করতে পারেন”। ঠিক আছে। কিন্তু তা কোথায় পাব? “যে কোন লাইব্রেরীতে অনুবাদসহ কুরআন-হাদীস আছে, চায়লেই পাওয়া যাবে”। আচ্ছা, খোঁজে নিয়ে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পুরোটাই পড়ব। কিন্তু আমার মনে একটি প্রশ্ন জেগেছে। আমাদের সবার স্রষ্টা কি এক? এক হলে তার ধর্ম কেন অনেক?
আসলে সবার স্রষ্টা এক ও অভিন্ন। কিন্তু আমরা ভিন্ন হয়ে গেছি আমাদের বিশ্বাস ভিন্ন হয়ে যাওয়ার ফলে। অতীতে স্রষ্টা কোন বার্তাবাহক পাঠানোর পর কেউ তাকে বিশ্বাস করেছে, আবার কেউ করেনি। এভাবে প্রত্যেক যুগে প্রত্যেক ঐশীবার্তাবাহক আসার পর মানুষ তাকে বিশ্বাস করেছে বা করেনি। স্রষ্টা যখন যাকে পাঠিয়েছেন তাকে যারা বিশ্বাস করে অনুসরণ করেছে তারা হলেন বিশ্বাসী বা মুমিন। আর যারা বিশ্বাস নাকরে অনুসরণ করেনি তারা হল অবিশ্বাসী-বেঈমান ও অস্বীকারকারী -কাফির। তন্মধ্যে কেউ নিজেদেরকে হিন্দুস্তানী বা হিন্দু বলে, কেউ গৌতমবুদ্ধের অনুসারী বা বৌদ্ধ বলে, আর কেউ যিশু খ্রীস্টের অনুসারী বা খ্রীস্টান বলে দাবী করে। স্রষ্টার কাছে নিজেকে আত্মসমর্পন করাকে আরবীতে বলে ইসলাম। যারা স্রষ্টার কাছে আত্মসমর্পন করতে ইচ্ছুক তারা নিজেদেরকে আরবীতে মুসলিম বলে। আর যারা স্রষ্টার কাছে আত্মসমর্পন করতে ইচ্ছুক নয় তারা নিজেদেরকে অন্যকোন নামে পরিচয় দেয়। এ ভাবে অনেক ধর্ম হলেও প্রকৃতপক্ষে স্রষ্টার ধর্ম এক, যার সর্বশেষ সংস্করণ পাঠিয়েছেন শেষ বার্তাবাহক মুহাম্মদ (সাঃ)-এর মাধ্যমে, যার সম্পর্কে পূর্বের ধর্মগ্রন্থসমূহে ইঙ্গিত দেয়া হয়। কিন্তু প্রত্যেক ঐশীগ্রন্থ পরিবর্তন হলেও শেষটা পরিবর্তন অসাধ্য।
আচ্ছা, যাদের সাথে বিশ্বাসের মিল নেই তাদের সাথে সম্পর্ক কী রকম হবে? “তাদের সাথে সম্পর্ক হবে বন্ধুত্বের। বন্ধুকে সবসময় নিজ বাড়ীতে আসার দাওয়াত দেব। না আসলেও বন্ধুত্ব ঠিক থাকবে এবং দাওয়াতও চলতে থাকবে, যতদিন জীবন থাকে ততদিন। বিশ্বাসকে বিশ্বাস দ্বারা পরিবর্তন করতে হয়। একমাত্র দাওয়াত দ্বারাই তা সম্ভব। যুদ্ধ বা শত্র“তা দিয়ে কখনো বিশ্বাস পরিবর্তন করা যায় না এবং বন্ধুত্বও সৃষ্টি করা যায় না। অতএব সাবধান। যার সাথে যতটুকু মিল আছে তাকে ততটুকুটেই মিলিয়ে নিতে হবে। বাকীটা মিলানোর চেষ্টা করতে হবে। যতটুকু মিল আছে সেটুকুও যেন গরমিলে পরিণত না হয় বাড়াবাড়ির কারণে।” মান ক্বলা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, দাখালাল জান্নাহ। যে বলল আল্লাহ ছাড়া কোন প্রভু নেই, সে এক সময় অবশ্যই স্বর্গে প্রবেশ করবে।
-----চলবে।
বিষয়: বিবিধ
১৩৭১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন