কর্মসংস্থান ও বিশ্বায়ন
লিখেছেন লিখেছেন সাইফুল ঈদগাহ কক্স ২৫ নভেম্বর, ২০১৫, ১০:৩২:৩১ সকাল
সর্বোত্তম কামাই হচ্ছে নিজ হাতের উপার্জন। তাই কোন কাজ ছোট নয়, কোন পেশা হেয় নয়। প্রত্যেকের টার্গেট থাকা উচিত “সর্বপ্রথম উৎপাদন। তা না পারলে ব্যবসা। তাও না পারলে চাকুরী”। তা হলে আর কেউ বেকার থাকবে না। প্রত্যেকেই স্বুদ্যোগে কর্মক্ষেত্র সৃষ্টি করতে পারবে। এ জন্য যথাযথ উৎসাহ ও সহায়তা প্রদানই যথেষ্ট। সময়ে সময়ে বিষয় ভিত্তিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যায়। এ জন্য মসজিদ ও জুমা এবং ইমাম ও খতীব সাহেবগণই যথেষ্ট, যদি আন্তরিক হয়। তবে বাস্তবায়নে উন্মুক্ত পরামর্শ দরকার আছে।
উৎপাদনের মধ্যে সর্বোত্তম হচ্ছে কৃষি উৎপাদন। অতঃপর শিল্প উৎপাদন। প্রথমে ক্ষুদ্র উৎপাদন। অতঃপর বৃহৎ ও সমবায় উৎপাদন। সর্বপ্রথম কোথায় কী উৎপাদন হতে পারে ও কিভাবে হতে পারে এবং কোথায় কী রপ্তানী হতে পারে ও কিভাবে হতে পারে, তা জেনে নেব। অতঃপর কী কী লাগবে এবং কোথায় কার কাছে কী পাওয়া যেতে পারে তার খবর নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সাথে পরামর্শ করব। প্রয়োজনে কারো জমি, কারো পুঁজি, কারো শ্রম মিলে উৎপাদন হবে। অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ হিসাব করে উৎপাদনে যাব। পচনশীল অবিক্রীত পণ্য কোথায় কিভাবে সংরক্ষণ করা যায়, তাও ভেবে রাখব। যাবতীয় উৎপাদনের উশর বা ১০% স্রষ্টার নির্দেশে সৃষ্টিকে দিয়ে অবশিষ্ট ৯০%-কে জমি, পুঁজি ও শ্রমের বিনিময়ে ভাগ করব। সম্পূর্ণ নষ্ট হলে জমি ও শ্রমদাতা কিছুই পাবেনা এবং পুঁজিদাতা পুঁজি হারাবে। এটাই ঝুঁকি। এটাই সাহস। এটাই হালাল ব্যবসা। এটা অনেকের জন্য চাকুরী বা কর্মসংস্থানও বটে।
ব্যবসার মধ্যে বড় ব্যবসা হল আমদানি-রপ্তানি। আমদানি-রপ্তানিযোগ্য সর্বোত্তম পণ্য হল যা মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ করে। নিজ এলাকায় যা উৎপাদন হয় তা দূরে পাঠাবে এবং নিজ এলাকায় যা প্রয়োজন তা দূর থেকে নিয়ে আসবে। যথাসম্ভব কমমূল্যে সর্বোত্তম পণ্য সরবরাহের চেষ্টা করবে। রাসূলের (সাঃ) বাণী “সত্যবাদী আমানতদার ব্যবসায়ীগণ থাকবেন নবী, ছিদ্দিক, শহীদ ও সালেহগণের সঙ্গে”। কর্মসংস্থান হিসেবে তায়েফে ছাগল চরানো, মক্কায় আমদানি-রপ্তানি ব্যবসা করা এবং মদীনায় কৃষি উৎপাদন করা, প্রত্যেকটাই রাসূলের সুন্নাত। রাসূল ব্যবসার মাধ্যমেই আস্সাদেক এবং আমানত রক্ষার মাধ্যমেই আল আমিন হিসেবে প্রসিদ্ধি লাভ করেন। সে হিসেবে বর্তমান এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট কোম্পানী ও ব্যাংকিং সিস্টেম সর্বপ্রথম তিনিই দেখান এবং তাই করা রাসূলের সুন্নাত। ধর্মীয় দায়িত্ব পালন করে উপার্জন রাসূলের সুন্নাত নয়।
গোটা বিশ্বে দক্ষ কর্মীর অনেক প্রয়োজন। কিন্তু সে তুলনায় সরবরাহ অনেক কম। অদক্ষ কর্মীর অভাব নেই। কিন্তু চাহিদাও নেই। তাই দক্ষতা অর্জনের কোন বিকল্প নেই। যে যা করছি বা করতে চাচ্ছি তাতেই দক্ষতা অর্জন করতে হবে। শুধু দক্ষতা অর্জন করলে হবে না, সাথে তার প্রমাণপত্রও থাকতে হবে। এ জন্য টেকনিক্যাল কোর্স করে সার্টিফিকেট অর্জন করতে হবে। এ লক্ষ্যে প্রতি এলাকায় টেকনিক্যাল প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা আবশ্যক। কর্মের কোন সীমাও নেই, সীমান্তও নেই। যে কাজ জানে তার জন্য গোটা দুনিয়া খোলা। তবে যে অর্থ খরচ করে বিদেশ গিয়ে যে সময়-শ্রম-মেধা প্রয়োগ করা হয় তা যদি দেশে বিনিয়োগ করা হয় তবে দেশেও উপার্জন করা যায় এবং আরো কয়েকজনের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা সম্ভব হয়।
বিদেশ যাওয়া ভাল। তবে তা বিয়ের পূর্বে। বিয়ের পর স্ত্রীকে দেশে রেখে গেলে প্রতি চার মাস অন্তর অন্তর স্ত্রীর কাছে আসতেই হবে। নতুবা স্ত্রীকেও সাথে নিয়ে যেতে হবে। যারা বিয়ে করে স্ত্রীকে দেশে রেখে কয়েক বছরের জন্য বিদেশ যেতে চায় তাদের কাছে মেয়ে বিয়ে দিলে পরবর্তীতে মেয়ে বা স্ত্রীর যে কোন পাপের দায়ভার গার্জিয়ান ও স্বামীকেও বহন করতে হবে। স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই কাজ করতে পারে। স্বামী করবে বাইরে, স্ত্রী করবে ঘরে। তবে পরপুরুষের সাথে কাজ করাটা দেশে-বিদেশে কোথাও নিরাপদ নয় এবং অবশ্যই সবাই পাপের ভাগীদার হবে। মহিলাদের কর্মক্ষেত্র নিজ বাড়ী। নিজ বাড়ীতে বসেই নারীরা সাংসারিক কাজ ছাড়াও অর্থনৈতিক অনেক কাজ করতে পারে। বাগান, সেলাই, বাটিক, বুটিক, কম্পোজ, প্রাইভেট, কোচিং, টুপি, নকশি কাথা, বাঁশ-বেত শিল্প ইত্যাদি অনেক ধরনের কাজ করে নিজ বাসা-বাড়ীকেই কুটির শিল্প হাউজে রূপান্তর করতে পারে। এতে আরো অনেক নারীর কর্মসংস্থান ও কর্মপ্রশিক্ষণের ব্যবস্থা হবে। নিরাপত্তাও নিশ্চিত হবে।
ইসলামে নারীরা পুঁজির মালিক এবং পুরুষরা শ্রমের মালিক। নারীরা উপহার, মুহরানা ও উত্তরাধীকার সূত্রে পিতা-মাতা, ভাই-বোন, স্বামী-সন্তান থেকে যা পাবে এবং নিজে যা উপার্জন করবে সেসব থেকে ১ টাকাও নিজের জন্য বা পিতা-মাতা, ভাই-বোন, স্বামী-সন্তানসহ কারো জন্য ব্যয় করতে হবে না। তবে করো দরকার হলে নারীদের পুঁজি ও পুরুষদের শ্রম যৌথ বিনিয়োগ করে প্রাপ্ত লভ্যাংশ ভাগাভাগী করতে পারে। উত্তরাধীকার আইনে মেয়েরা কম পেলেও বাস্তবে তরা বেশিই পায়। যেমন কেউ ছেলে-মেয়ে দুজন ও তিন লক্ষ টাকা রেখে মারা গেলে, ছেলে পেল দু’লক্ষ টাকা ও মেয়ে পেল এক লক্ষ টাকা। তন্মধ্যে ছেলে বা ভাই এক লক্ষ টাকা খরচ করে বিয়ে করল এবং এক লক্ষ টাকা নিজ স্ত্রীকে মুহরানা দিল। ফলে তার টাকা শেষ। পক্ষান্তরে মেয়ে বা বোন বিয়ের সময় এক লক্ষ টাকা নিজ স্বামীর কাছ থেকে মুহরানা পেল এবং পিতার কাছ থেকে পাওয়া এক লক্ষ টাকাসহ দু’লক্ষ টাকার মালিক হল। এখন ভাই বা স্বামী হল শূণ্যপতি এবং বোন বা স্ত্রী হল লক্ষপতি। ফলে নারী হল পুঁজিপতি এবং পুরুষ হল শ্রমপতি। স্ত্রীর মুহরানা না দেয়া এবং স্ত্রীর কাছ থেকে যৌতুক নেয়া ও বাধ্য করে বৈরাত খাওয়া সম্পূর্ণ অবৈধ।
নবীন ও যুবকদেরকে কর্মপ্রশিক্ষণ দিয়ে বিদেশ পাঠাতে যত টাকা লাগে তা যদি বিনিয়োগ হিসেবে পাওয়া যায়, তবে দেশে কোন বেকার থাকার কথা নয়। চেকের বিনিময়ে পার্সপোর্ট-ভিসা ক্রয় করবে এবং বিদেশ গিয়ে উপার্জন করে বকেয়া পরিশোধ করবে। তা হলে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, দেশ, বিদেশ সবাই উপকৃত হবে এবং জমি বিক্রয় ও দালালচক্র থেকেও অনেকটা রেহাই পাওয়া যাবে। বর্তমানে ব্যাপক হারে রিফুজি আশ্রয়ের ফলে পশ্চিমা বিশ্বে বাইরের শ্রমিকের প্রয়োজনীয়তা কমে গেছে। আগামীতে মুসলিম বিশ্ব শ্রমিক রাখার মত অবস্থায় থাকবে কিনা সন্দেহ। তাই এখন থেকে রিফুজিদেরকে কাজে লাগিয়ে কিভাবে নিজেদের কর্মসংস্থান ও আয় বৃদ্ধি করা যায় সে কৌশল শিখে প্রয়োগ করতে হবে। “প্রতি ইঞ্চি জমিকে আবাদ করব এবং তা এক দিনের জন্যও খালি থাকতে দেব না” এ টার্গেট নিয়ে কাজে আত্মনিয়োগ করলে দেশে কৃষিবিপ্লব হতে বেশি দিন লাগবে না। “আমরা কেউ মাটিতে ঘর রাখবনা। একজনের ছাদে অন্যজন ঘর বানাব।” এ টার্গেট বাস্তবায়ন করতে পারলে দেশে শিল্পবিপ্লব হতেও বেশি সময় লাগবে না। তা হলে দেরী কেন?
---চলবে।
বিষয়: বিবিধ
১১৫৪ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন