শিক্ষা ও দীক্ষা

লিখেছেন লিখেছেন সাইফুল ঈদগাহ কক্স ২৫ নভেম্বর, ২০১৫, ০৬:৫৬:০৮ সকাল

সুশিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড। নৈতিক ও কর্মমূখী শিক্ষাই সুশিক্ষা। নৈতিকতার উৎস ধর্ম ও পরিবার। ধর্মের সর্বশেষ সংস্করণ ইসলাম। জানার নাম শিক্ষা, মানার নাম দিক্ষা।

নারী-পুরুষের প্রকৃতি ও চরিত্র ভিন্ন। তাই তাদের শিক্ষা-দীক্ষার লক্ষ্য-উদ্দেশ্য এবং কর্মপদ্ধতিও ভিন্ন। ফলে তাদের কারিকোলাম, সিলেবাস, ক্ষেত্র সবই ভিন্ন হওয়া উচিত।

এ দেশে বিয়ের বয়স নারীর জন্য ১৮ ও পুরুষের জন্য ২১ বছর নির্ধারিত। নারী বাবার বাড়ী ত্যাগ করে স্বামীর বাড়ী যায়। নারীই সন্তান ধারন করে। নারীই বেশি নির্যাতিতা হয়।

তাই নারী-শিক্ষার প্রধান লক্ষ্য হবে সুস্থ পরিবার, শান্তিপূর্ণ সংসার, নিরাপদ জীবন ইত্যাদি। পুরুষ-শিক্ষার প্রধান লক্ষ্য হবে স্বনির্ভর পরিবার, সম্মানজনক জীবন, নিরাপদ মৃত্যু ইত্যাদি।

নিজ লক্ষ্য পূরণে যার যখন যা শিখা দরকার তাই শিখতে হবে ও শিখাতে হবে। নতুবা হবে উলু বনে মুক্তা ছড়ানোর মতই পন্ডশ্রম। অপাত্রে সময়, শ্রম, অর্থ ও মেধা নষ্ট করা কাম্য নয়।

বয়সকে সাধারণত আমরা এ ভাবে ভাগ করতে পারি। ১৯ পর্যন্ত শিক্ষা অর্জনের, ৪০ পর্যন্ত অভিজ্ঞতা অর্জনের, ৬৩ পর্যন্ত আসল কাজের এবং এর পর অভিজ্ঞতা বিতরণের বয়স। তাই সাধারণত সরকারী চাকুরীতে ঢুকার বয়স ৪০ এবং অবসরের বয়স ৬৩ করলে অনেক ভাল হয়।

প্রাথমিক শিক্ষার বয়সকেও ভাগ করতে পারি। ছেলে-মেয়েরা শিখে পরিবার হতে ৬-৭ বছর বয়স পর্যন্ত, শিক্ষক হতে ১২-১৪ বছর বয়স পর্যন্ত এবং বন্ধু-বান্ধব হতে ১৮-২১ বছর বয়স পর্যন্ত।

মানুষ পড়ে যা শিখে তার চেয়েও হাজার গুণ বেশি শিখে দেখে। অন্যকে দেখে, চিত্র দেখে, টিভি দেখে যা শিখে তাই বেশি মনে রাখে ও অনুকরণ করে। ফলে দেখাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাই পড়ার সাথে লিখবে। বই-এ থাকবে চিত্র। বার্ষিক হবে শিক্ষাসফর। দেখাতে হবে বিষয় ভিত্তিক ডকুমেন্টারী। এ ক্ষেত্রে বিষয় ভিত্তিক চ্যানেলসমূহ অনেক বেশি প্রভাবশালী।

যে শিক্ষা অর্জনের পর সার্টিফিকেট বগলদাবা করে চাকুরীর জন্য অন্যের দারে দারে ঘুরতে হয় তা কোন শিক্ষাই নয়। শিক্ষা হতে হবে কর্মমূখী। যার যেদিকে আগ্রহ, তাকে সে বিষয়েই শিখতে হবে, শিখাতে হবে। সবাই ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার বা হাফেজ-আলেম হবে, এমন কোন কথা নেই। যে যা হতে চায় তা হতে পারল কিনা এবং সাথে সাথে একজন সৎ ও চরিত্রবান ভাল মানুষ হল কিনা, তাই দেখার বিষয়। সততাহীন দক্ষতা ক্ষতিকর এবং দক্ষতাহীন সততা অকার্যকর। সততা ও দক্ষতা অর্জনের জন্য জানার ও জানানের ভাষাও শিখতে-শিখাতে হবে গুরুত্ব দিয়ে। সততার উৎস ধর্মের সর্বশেষ সংস্করণ ইসলাম সম্পর্কে জানতে হলে আরবী জানতে হবে। দক্ষতার ক্ষেত্রে আধুনিক বিজ্ঞান সম্পর্কে জানতে হলে এর প্রধান মাধ্যম ইংরেজী জানতে হবে। সততা ও দক্ষতা সম্পর্কে দেশবাসীকে জানাতে হলে বাংলা জানতে হবে। নিজ দেশ-জাতি-ধর্মকে বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরতে হলে বিশ্বের প্রধান প্রধান ভাষা শিখতে হবে। পড়া, বলা ও লিখার জন্য ভাষার কোন বিকল্প নেই। যে ভাষা জানে না সে বোবা। ধর্ম ও বিজ্ঞান, ভাষা ও ঐতিহ্য ইত্যাদি কোনটাকেই অবহেলা করা যাবে না। তবে অপ্রয়োজনীয় বিষয়গুলো খুঁজে খুঁজে বাদ দিতে হবে সর্বত্র।

বর্তমানে সাধারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহে ৩৬৫ দিনের মধ্যে কয়দিন লেখাপড়া হয় তার হিসাব করা দরকার। সাপ্তাহিক ও জাতীয় ছুটি ছাড়াও লম্বা বন্ধ থাকে একবার ডিসেম্বরে আরেকবার রমজানে। সংখ্যাগরিষ্ট মুসলিম দেশে রমজানকে অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে। কিন্তু রমজানে সাধারণত অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে, নতুবা খোলা থাকলেও কার্যক্রম চলে অতি সীমিত। পক্ষান্তরে দশম শ্রেণীর পর সবার শিক্ষাবর্ষ জানুয়ারী থেকে শুরু করা যায় না। তাই ইচ্ছা করলে রমজান ও ডিসেম্বর, এ দু’বন্ধকে এক করে দিয়ে শিক্ষাদিবস আরো বাড়ানো যায়। তবে রমজানকে তো ডিসেম্বরে আনা যাবে না। কিন্তু ডিসেম্বরের ছুটিকে রমজানের ছুটির সাথে যোগ করে দেয়া যাবে, সবার শিক্ষাবর্ষ রমজানের আগে শেষ ও ঈদের পর শুরু হলে। আমাদের দেশের অর্থবছর যেমন জানুয়ারী-ডিসেম্বর নয়, তেমনি শিক্ষাবর্ষও জানুয়ারী-ডিসেম্বর হতেই হবে এমন কোন কথা নেই। এর ফলে একদিকে নভেম্বর ডিসেম্বর জানুয়ারী লাগাতার বিরতিহীন লেখাপড়া চলতে পারবে, অন্যদিকে সকল মুসলিম ছাত্র-শিক্ষক রমজানে লাগাতার বিরতিহীন এবাদত-বন্দেগী, উমরা-তাবলীগ করতে পারবে এবং রমজানে যানজট-লোডশেডিংও কমবে। ফলে সরকারের জনপ্রিয়তা বাড়বে বৈ কমবে না। তবে তা এক বছরেই সম্ভব না। অন্তত দু’বছর পর্যন্ত দশ মাসে শিক্ষাবর্ষ করলেই যথেষ্ট। সরকার যদি চায় ৫ম শ্রেণী পাস করতে না পেরে ছাত্র-ছাত্রীরা লেখাপড়া থেকে ঝরে যাক, তা হলেই ৫ম শ্রেণীর কেন্দ্রীয় পরীক্ষা চালু রাখবে, নতুবা অতিদ্রুত তা উঠিয়ে দেবে।

সরকার পাঠ্যবই ফ্রী দেয়ার পর থেকে গাইডবই ক্রয় বেড়ে গেছে। সৃজনশীল পদ্ধতি চালু করার পর কোচিংও বাধ্যতামূলক হয়ে গেছে। ফলে সরকারের মহৎ উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে। তাই বই ফ্রী না দিয়ে বইমুল্য প্রত্যেক ছাত্র-ছাত্রীর একাউন্ট নম্বরে পাঠিয়ে দিলেই বেশি ভাল হয়। ৫ম শ্রেণী হতেই কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদেরকে পরীক্ষার টেনশনে না ফেলাই উচিত। ৮ম শ্রেণীতে জাতীয় পরীক্ষা ভালভাবে দিয়ে, এর রেজাল্টের ভিত্তিতে উপরের শ্রেণীতে ভর্তি হতে পারলেই অভিভাবকদের বেশি উপকার হয়। ছাত্র-ছাত্রীদের গতি-প্রকৃতি ও আগ্রহ লক্ষ্য করে প্রত্যেকেই নিজ জীবনের টার্গেট নির্ধারণপূর্বক ৯ম শ্রেণীর বিষয়াদি বাছাই করা উচিত। চাকুরীমুখী শিক্ষা সম্পূর্ণ পরিহার করে কর্মমূখী শিক্ষা অর্জন করাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।

ছাত্র-ছাত্রীদের লেখাপড়ার পথে প্রধান অন্তরায় হল রাজনৈতিক সংঘাত, বিশেষ করে ছাত্র রাজনীতি। কারো রাজনীতি করার ইচ্ছা হলে প্রতিষ্ঠানের বাইরে জাতীয় রাজনীতি করতেই পারে। প্রতিষ্ঠানের ভেতর সাংস্কৃতিক কর্মতৎপরতার মাধ্যমেই কেবল ছাত্র-ছাত্রীর যোগ্যতা ও জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায়। ছাত্র-রাজনীতির মাধ্যমে বরং জনপ্রিয়তা হারাতে হয়। তাদেরকে ভয়ে সামনে সালাম করলেও মনে মনে সবাই ঘৃণাই করে বেশি। ছাত্র-রাজনীতির আগের সেই ঐতিহ্য এখন আর বাকী নেই। এখন যা আছে তা হল, চোর-ডাকাত সৃষ্টির উপায়। এ পর্যন্ত রাজনীতি ও ছাত্র রাজনীতির কারণে কতজন হতাহত হয়েছে তার একটি জরিপ করা যেতে পারে। অন্যান্য সকল কারনে মোট হতাহত সংখ্যার সাথেও এর তুলনা করা যায়।

সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে জান নিয়ে টানাটানি, বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে মান নিয়ে টানাটানি, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে সময় ও স্থান নিয়ে টানাটানি। তুলনামূলক সুবিধায় আছে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা। নিজ উপার্জনেই নিজ মানোন্নয়ন করা যায় সেখানে। দীর্ঘদিন আন্দোলনের ফলে ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয় সৃষ্টি হলেও, তা আন্দোলনকারী সকল ধারাকে কতটুকু সম্পৃক্ত করতে পারছে, তাই দেখার বিষয়। শুধুমাত্র সরকারী বেতনভুক্ত মাদরাসাসমূহকে নিয়েই সন্তুষ্ট থাকলে অচিরেই আরেকটি আন্দোলন শুরু হতে পারে সরকারী বেতনভুক্ত নয় এমন মাদরাসাসমূহকে স্বীকৃতি দেয়ার ও অন্তর্ভুক্ত করার দাবীতে। তবে “আন্দোলন ছাড়া কোন কিছু আদায় করা যায় না” এ ধারণাটা পাল্টে দিতে না পারলে নিজেদেরকে যোগ্য ও গ্রহণযোগ্য ভাবার কোন কারণ নেই। দেখা যাক কী হয়।

সম্মান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যে নিজেকে নিজে সম্মান দিতে জানে না, সম্মান দিতে পারে না, তাকে অন্যরা কিভাবে সম্মান দেবে? আত্মসম্মান সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ধর্মীয় নেতাদের। এ জন্য অসম্মানজনক সকল কথা, কাজ ও অভ্যাস পরিহার করা ধর্মের স্বার্থেই জরুরী। আল্লাহ-রাসূল দরিদ্র নন। আল্লাহ-রাসূল কখনো নিজের জন্য যাকাত-ফিৎরা গ্রহণ করেন নি, করেন না। তা দরিদ্রদের হক। দরিদ্রদের হক যথাযথ ভাবে উসূল করে তাদের কাছে সুষ্ঠুভাবে পৌঁছে দেয়ার জন্য একটি “জাকাত ব্যাংক” প্রয়োজন। এ জন্য আলেম-উলামাগণকেই মাঠে নামতে হবে এবং তা কার্যকর করেই ঘরে ফিরতে হবে। আলেম-উলামাগণ জনগণের সেবার মাধ্যমেই নিজেদের অধিকার আদায় করে নিতে পারে। শুধুমাত্র খাদ্য ও কৃষি সমস্যা সমাধানে আত্মনিয়োগ করলেই সকল মুসল্লি-ইমাম-মসজিদ-মাদরাসা-জামিয়া-বোর্ড-ব্যাংক-সরকার প্রত্যেকের যাবতীয় প্রয়োজন পূরণ হয়ে যায়। যার রূপরেখা প্রথমেই দেয়া হয়েছে। কওমের সেবা করেই নিজেকে কওমী দাবী করতে পারি, নতুবা নয়।

এ দেশে যত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে তন্মধ্যে যে সকল প্রতিষ্ঠানের জন্য সরকারকে মোটেই ব্যয় করতে হয় না, সেসব নূরানী ও কওমী মাদরাসাগুলো নিয়েই সরকার ও বিদেশীরা বেশি দুশ্চিন্তায় থাকে। এর কারণ হচ্ছে সন্দেহ, অবিশ্বাস ও আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি। তারা হয়ত মনে করে যে, যারা সরকারের সহযোগিতা ছাড়াই প্রতিষ্ঠান চালাতে পারে, তারা ক্ষমতা পেলে বিদেশের সহযোগিতা ছাড়াই দেশ চালাতে পারবে। তখন বিদেশীদের খবরদারী চলবে না। এ জন্য বিদেশীরা নিজেদের ভয়কে নিজেদের উপকারভোগীদের মনেও ঢুকিয়ে দেয়, বিভিন্ন অবাস্তব কাল্পনিক জুজুর ভয় দেখিয়ে। যে ইমাম সাহেব দৈনিক পাঁচবার মসজিদে নামাজ পড়ান, তাঁর ভালমন্দ সম্পর্কে তাঁর মুসল্লীগন বেশি জানবে, নাকি ব্যারাকে ও বক্সে বসে থাকা ভিন্ন এলাকার চাকুরীজিবীগণ বেশি জানবে? যে প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিমুহূর্তে জনগণের সাথে সম্পৃক্ত, সেসব প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে দেশের জনগণ বেশি জানবে, নাকি সাতসমুদ্র তেরনদী ঐপারের ভিন্নভাষার ভিন্নধর্মের ভিন্নজাতিরা বেশি জানবে ?

দেশে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় যারা মারামারি বা কোন ধরনের দেশ-জাতি-ধর্ম বিরোধী কর্মকান্ডে জড়িত নয়, সেসব কওমী মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষকগণকেই বেশি জঙ্গীবাদের অভিযোগ শুনতে হয়। অথচ অমুসলিমদের কাছে মুুসলিম বলতেই জঙ্গী। মুসলিমদের কাছে দাড়ি-টুপি বলতেই জঙ্গী। কোন কোন দাড়ি-টুপিওয়ালার কাছে মুক্তিযোদ্ধারাও জঙ্গী হতে পারে। সে হিসেবে প্রত্যেকেই জঙ্গী কারো না কারো চোখে। প্রকৃতপক্ষে এটি একটি গালি। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য বা নিজেকে আড়াল করার জন্য অন্যদেরকে জঙ্গী বলে পার পেতে চায়। বর্তমান পৃথীবিতে জঙ্গী আসলে কারা? যারা যুদ্ধ বা জঙ্গ করে তারাই জঙ্গী। তম্মধ্যে যারা যুদ্ধ আগে শুরু করে, তারা হল আগ্রাসী হানাদার এবং যারা আত্মরক্ষা করে, তারা হল আত্মরক্ষাকারী মুক্তিযোদ্ধা। যেমন ১৭৫৭ হতে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত উপমহাদেশে ইংরেজরা ছিল আগ্রাসী হানাদার এবং বাঙ্গালী ও ভারতীয়রা ছিল আত্মরক্ষাকারী মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে পাকিস্তানীরা ছিল আগ্রাসী হানাদার এবং বাঙ্গালীরা ছিল আত্মরক্ষাকারী মুক্তিযোদ্ধা। তদ্রুপ ১৯৭৯ সালে আফগানিস্তানে সোভিয়েত রাশিয়ানরা ছিল আগ্রাসী হানাদার এবং আফগানরা ছিল আত্মরক্ষাকারী মুক্তিযোদ্ধা। ২০০১ সালে আফগানিস্তানে এবং ২০০৩ সালে ইরাকে আমেরিকানরা ছিল আগ্রাসী হানাদার এবং আফগান ও ইরাকীরা ছিল আত্মরক্ষাকারী মুক্তিযোদ্ধা। ২০১৫ সালে সিরিয়ায় রশিয়ানরা হল আগ্রাসী হানাদার এবং সিরিয়ানরা হল আত্মরক্ষাকারী মুক্তিযোদ্ধা। এ ভাবে যে কোন দেশে যে কোন সময় অভ্যন্তরীন গন্ডগোল হতেই পারে, যা সমাধানের দায়িত্ব নিজেদেরই। কিন্তু কেউ যদি এ সুযোগের অসৎ ব্যবহার করতে ভিন্ন দেশে এসে আক্রমন চালায়, তখন তাকে কি অভিনন্দন জানিয়ে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে নিতে হবে? যেমন, আল্লাহ না করুন, বাংলাদেশে যদি লীগ-দলের চিরদ্বন্দ্ব-সংঘাত গৃহযুদ্ধে রূপ নেয়, আর সে সুযোগে যদি ভিন্ন কোন দেশ এসে হামলা শুরু করে, তবে কি তাদেরকে আমরা সুস্বাগতম জানাব ? তখন বিদেশকে যেই আমন্ত্রণ জানাবে সেই হবে গণশত্র“। আসলে জঙ্গীই অন্যকে জঙ্গী বলতে পছন্দ করে।

ইসলামে যুদ্ধনীতি সুস্পষ্ট। যে কেউ যা ইচ্ছা তা করে ইসলামের নাম লাগিয়ে দিলেই তা ইসলামী হয়ে যাবে না। প্রতিপক্ষের সাথে দাওয়াত ও মুশাওয়ারাহ অথবা শর্তসাপেক্ষে যুদ্ধের ঘোষণা দিয়ে যুদ্ধ করা বৈধ হলেও, তা হতে হবে মুসলিম জনসাধারণ কর্তৃক সমর্থিত আমীরের নির্দেশে, যুদ্ধ চলাকালীন শুধুমাত্র যোদ্ধাদের বিরুদ্ধেই। তবে বেসামরিক লোক বা স্থাপনায় অথবা সামরিক লোক বা স্থাপনার উপর বেসামরিক অবস্থায় চোরাগুপ্তা হামলা করা যাবে না। নারী, শিশু, বৃদ্ধ, রোগী ও দুনিয়াত্যাগী সন্যাসীদেরকে কখনো কোন ভাবেই আক্রমন করা বা কষ্ট দেয়া যাবে না। বেসামরিক স্থাপনায় আত্মঘাতী হামলা বৈধ হওয়ার প্রশ্নই আসে না। অযৌক্তিক কথা, কাজ, হামলা ইত্যাদি কোনটাই ইসলাম সমর্থন করে না। যুক্তিকে যুক্তি দিয়ে প্রতিরোধ করতে হয়, গুপ্তহামলা করে নয়।

প্রত্যেকেরই এ দিক্ষা নেয়া উচিত যে, সারা পৃথীবির প্রত্যেকের কাছেই সত্যের দাওয়াত পৌছানোর চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ। নিজে কোন অন্যায় করব না এবং কোন অন্যায়কে সহ্যও করব না। যে কোন সমস্যা সমাধানকল্পে প্রথমে বিবেকবুদ্ধিকে কাজে লাগাব। অতপর মুখ, তারপর হাত, সবার শেষে পা ব্যবহার করব। অর্থাৎ পরিকল্পনা, দাওয়াত ও মুশাওয়ারাহ, কর্ম বা প্রতিরোধ এবং হিজরত। বিপথগামী না হওয়ার লক্ষ্যে প্রত্যেকেরই উচিত একা না থেকে একজন ভাল দ্বীনদার লোকের তত্ত্বাবধানে নিজের পূর্ণ জীবনকে পরিচালনা করা। এটাকেই বলে “বাইয়াত”।

বিনা বা স্বল্পব্যয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা এবং নৈতিক জাতি গঠন নিশ্চিত করতে চাইলে, মসজিদকে শিক্ষাকেন্দ্র করা ছাড়া কোন উত্তম বিকল্প নেই। কারণ সেখানে প্রত্যেক শিশুরা মক্তবে ধর্মশিক্ষা নিতে যায়। বয়স্করাও দৈনিক পাঁচবার যায় নামাজ পড়তে। মসজিদে লেখাপড়া ও থাকা-খাওয়ার নমুনা দেখতে পাই মসজিদে নববীতে আসহাবে সুফ্ফার অবস্থানে। তাই আমরা “মসজিদ ভিত্তিক সুফ্ফা মাদরাসা” কার্যকর করতে পারি। প্রত্যেক মসজিদে কুরআন শিক্ষা চালু করা যায়, যা আট স্তরে ভাগ করে করলে সুবিধা হয়। যথা ঃ

১. দাওয়াতুল কুরআন বা কুরআনের দিকে আহবান।

২. তাজবীদুল কুরআন বা কুরআন পাঠ শুদ্ধ করণ।

৩. তাহফীজুল কুরআন বা কুরআন মুখস্থ করণ।

৪. আলফাজুল কুরআন বা কুরআনের শব্দার্থ মুখস্থ করণ।

৫. তারাকীবুল কুরআন বা কুরআনের বাক্যগঠন অনুধাবন।

৬. আহকামুল কুরআন বা কুরআনের বিধিবিধান অন্বেষণ।

৭. তাবলীগুল কুরআন বা কুরআনের প্রচার।

৮. তানফীজুল কুরআন বা কুরআনের বাস্তবায়ন।

দৈনিক বা সাপ্তাহিক বা মাসিক তালিমের হালকায় উক্ত সকল বিষয়ে ক্রমান্বয়ে শিক্ষা লাভ করতে পারে যে কেউ। বার্ষিক নিয়মিত কোর্সও চালু করা যায়। প্রতি ৪০ দিনের কোর্স শেষে ৪ দিনের বিরতিও থাকতে পারে যাবতীয় প্রস্তুতি ও প্রচারণার জন্য। উক্ত ৮ বিষয়ে প্রশিক্ষণের সুবিধার্থে পাকামসজিদ নির্মানের সময় কমপক্ষে ৮তলার ফাউন্ডেশন দিলে ভাল হয়।

যেহেতু প্রত্যেকের মৃত্যু নিশ্চিত, তাই নিজের ও নিজ পরিবারের মৃত্যুপ্রস্তুতি হিসেবে এমন ব্যবস্থা কায়েম করা দরকার, যার ফলে এতীমদের ভবিষ্যৎ আলোকিত হয়ে উঠে। প্রত্যেক এতীমের বিয়ে পর্যন্ত দায়িত্ব নিতে হবে সমাজকে। এমন এতীমখানা গড়তে হবে যাতে নাবালেগ সকল এতীম ও অনাথ আশ্রয় নিতে পারে নিঃসংকোচে। সার্বজনীন হওয়ার জন্য এবং সকলের সার্বিক সহযোগিতা পাওয়ার লক্ষ্যে এ দেশে কেন্দ্রীয়ভাবে হতে পারে “শেখ-জিয়া এতীমখানা-অনাথাশ্রম”। এর শাখা হিসেবে অন্যান্য সকল এতীমখানা ও অনাথ আশ্রম সার্বিক সুযোগ-সুবিধা পেতে পারে। সরাসরি ঐ নামেও আঞ্চলিক বা এলাকা ভিত্তিক শাখা চালু করা যায়। এতীমদের প্রাপ্য পারিবারিক সম্পদ উদ্ধার, রক্ষণাবেক্ষণ ও তদারক করবে এ এতীমখানা। নিজ নিজ পরিবার থেকে বিয়ে হলেও সার্বিক আয়োজন করতে পারে তা।

যে শিক্ষা মানুষের মন-মানসিকতা, বিশ্বাস ও চরিত্র উন্নয়ন করতে পারেনা, তা কোন শিক্ষাই নয়। আর যে শিক্ষা মানুষকে নীতি-নৈতিকতার ধার না ধরে শুধুমাত্র টাকা উপার্জনের মেশিনে পরিণত করে, তা হল কুশিক্ষা। যে শিক্ষা যে লক্ষ্য-উদ্দেশ্য নিয়ে অর্জন করা হয়, সে লক্ষ্য-উদ্দেশ্য যদি পূরণ না হয়, তবে তা কোন কাজেই আসল না, সম্পূর্ণই বৃথা। যে জিনিস যেখানে উৎপাদন হয় বা যেখানে যা বেশি পাওয়া যায়, সেখানে সে জিনিসের প্রয়োজন ও মূল্যায়ন কম হয়। মুসলিমদেশে মুসলিমের বা ওলামাকেন্দ্রে আলেমের প্রয়োজনীয়তা কম থাকতে পারে, কিন্তু সারাবিশ্বে তাদের প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি, যদি সেভাবে নিজেকে উপস্থাপন করে। মুসলিমের আসল কাজ হল দাওয়াত। কুরআন-হাদীস শিক্ষার প্রধান উদ্দেশ্যও তাই। প্রত্যেক অমুসলিমকে ইসলামের দিকে, প্রত্যেক মুসলিমকে ঈমানের দিকে, প্রত্যেক মুমিনকে ইহসানের দিকে দাওয়াত দেয়া। তবে সে দায়িত্ব কতটুকু পালন করছি ? তাই ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত প্রত্যেকেরই উচিত, লেখাপড়া শেষ হওয়া মাত্র কমপক্ষে এক বছর শুধুমাত্র দাওয়াতী সফর করা। একবছর নিজদেশ, একবছর মুসলিম দেশ ও একবছর অমুসলিম দেশ ভ্রমণ করতে পারলে বহুমূখী শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা অর্জিত হয়।

----চলবে।

বিষয়: বিবিধ

১১৭৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File