বস্ত্র ও শিল্প
লিখেছেন লিখেছেন সাইফুল ঈদগাহ কক্স ২৪ নভেম্বর, ২০১৫, ০৭:১৫:৪০ সকাল
বস্ত্র অতি প্রয়োজনীয়। সংক্ষিপ্ত, পাতলা ও টাইটফিট পোষাক অস্বাস্থ্যকর, অশ্লীল ও অবৈধ। প্রত্যেক নারী নিজের ও নিজ পরিবারের পোষাক নিজেই তৈরী করলে সম্মান ও স্বনির্ভরতা নিশ্চিত হয়। ব্যবহার করুক বা না করুক প্রত্যেক বাসায় একটি করে সেলাই মেশিন থাকা উচিত। কারণ থাকলেই শিখতে পারবে ও ব্যবহার করতে পারবে। তাই সেলাই মেশিন অতি সহজলভ্য করা জরুরী। প্রত্যেক ঘরে ঘরে সেলাই মেশিন পৌছে দিয়ে হাতে কলমে শিক্ষা দেয়া এবং সাপ্তাহিক বা মাসিক কিস্তিতে তার মূল্য উসূল করা হবে অতীব উপযুক্ত কর্মসূচী। তা হবে নারীদের স্বনির্ভরতা অর্জনের ও হস্তশিল্প বিকাশের প্রথম পদক্ষেপ। নারীরা যে কোন প্রয়োজন যথাসম্ভব বাজারে না গিয়ে সারতে পারলেই ভাল। একান্ত প্রয়োজন হলে সকালে ফজরের পর থেকে জুহরের পূর্ব পর্যন্ত যাবতীয় প্রয়োজন সেরে নেবে, যাতে বিকালে মানবজট ও যানজট সৃষ্টি না হয়।
যে সকল প্রতিষ্ঠানে নারীদের উপস্থিতি নিয়মিত, সেখানে একটি করে কুটিরশিল্প হাউজ থাকা উচিত। সেখানে নারীরা নিজেদের উৎপাদিত পণ্য সর্বনিু মূল্য নির্ধারণপূর্বক বিক্রয়ের জন্য জমা দিয়ে আসবে। পরে তা উর্ধ্বে যে দামেই বিক্রি হোক না কেন, তার ৯০% উৎপাদকের জন্য এবং ১০% বিক্রেতার জন্য নির্ধারিত থাকবে। কমপক্ষে ১% তো অবশ্যই সরকার ট্যাক্স পাবে। তা হলে কেউ ঠকবে না এবং সবাই উপকৃত হবে। তা করা গেলে প্রত্যেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য একটি ইনকামসোর্স বৃদ্ধি পাবে, কিছু লোকের কর্মসংস্থান হবে এবং ক্রেতারা তুলনামূলক কম দামে ভাল পণ্য পাবে। এতে সেবাও হবে, ব্যবসাও হবে।
কোথাও পর্যাপ্ত ভাল তুলা ও কাপড় উৎপাদন হচ্ছে, কিন্তু সে তুলনায় ভাল ক্রেতা পাচ্ছে না। আবার কোথাও অতি উচ্চ মূল্যে কাপড় বিক্রয় হলেও তার আংশিক মূল্যও প্রকৃত উৎপাদকরা পাচ্ছে না। তা থেকে সরকারও উল্লেখযোগ্য তেমন কিছুই পায় না। বরং সরকার যা উসূল করে তাতে পণ্যের মূল্যই শুধু বাড়ে। এ সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে হলে, উৎপাদক থেকে ভুক্তা পর্যন্ত একটি নিজস্ব নেটওয়ার্ক সৃষ্টি হওয়া উচিত। এর উপযুক্ত নেটওয়ার্ক হতে পারে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীক কুটির শিল্প হাউজগুলো। এর রূপরেখা হতে পারে নিুরুপ ঃ
উৎপাদক নিজ উৎপাদিত পণ্য নিকটস্থ স্কুল ভিত্তিক কুটির শিল্প হাউজে জমা দিয়ে রশিদ নিয়ে আসবে। সে রশিদ জমা দিয়ে বিনিয়োগ বা কাঁচামাল সংগ্রহ করে পুনরূৎপাদন শুরু করবে। এ দিকে স্কুল ভিত্তিক কুটির শিল্প হাউজ সরাসরি অবিক্রীত পণ্য নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিকটস্থ কলেজ কুটির শিল্প হাউজে জমা দিয়ে রশিদ নেবে। কলেজ কুটির শিল্প হাউজ সরাসরি অবিক্রীত পণ্য নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিকটস্থ বিশ্ববিদ্যালয় কুটির শিল্প হাউজে জমা দিয়ে রশিদ সংগ্রহ করবে। এখান থেকে চাহিদামত কলেজ কুটিরশিল্প হাউজসমূহে বা দেশ-বিদেশে পণ্য সরবরাহ করবে এবং প্রচারণা চালাবে। গোটা সিস্টেমের সাথে কোন একটি ব্যাংক সংশ্লিষ্ট থাকবে। তার জন্য নতুন একটি এডুকেশন ব্যাংকও করা যায়।
নগদ ক্রয়-বিক্রয়ে যেমন দুর্নীতির সুযোগ থাকে তেমনি সরকারের প্রাপ্যও নিশ্চিত হয় না। কিন্তু বাকী বিক্রীতে সে সুযোগ থাকে না। যাবতীয় বিক্রয়ের অংশ যাবে যথাক্রমে ৪% স্কুল কুটির শিল্প হাউজের একাউন্টে, ৩% কলেজ কুটির শিল্প হাউজের একাউন্টে, ২% বিশ্ববিদ্যালয় কুটির শিল্প হাউজের একাউন্টে এবং ১% সরকারের একাউন্টে। মোট ১০%। আর ৯০% যাবে উৎপাদকের একাউন্টে। প্রত্যেক কুটির শিল্প হাউজের আয়ের কমপক্ষে ৫০% যাবে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। অবশিষ্টাংশ যাবে চুক্তি ভিত্তিক কুটির শিল্প হাউজের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একাউন্টে। উক্ত ব্যবস্থার ফলে যে কাপড়ের মূল্য বাবৎ ভুক্তা ১০০ টাকা দেবে, তার থেকে ৯০ টাকা পাবে সরাসরি উৎপাদক। অর্থাৎ উৎপাদক যার মূল্য ৯০ টাকা পেলে সন্তুষ্ট হবে, তা ভুক্তা ১০০ টাকায় কিনতে পারবে। অন্যরাও লাভবান হবে।
চামড়া শিল্পও অনেক বড় শিল্প। কিন্তু তা বর্তমানে ক্রেতা, বিক্রেতা, সরকার সবার জন্যই বড় দুঃখের কারন হয়ে দাড়িয়েছে শুধুমাত্র উপযুক্ত পদ্ধতির অভাবে। বিক্রেতা উপযুক্ত দাম পাচ্ছে না, ক্রেতা উপযুক্ত মান পচ্ছে না, সরকার উপযুক্ত ট্যাক্স পাচ্ছে না। তাই এমন হলে কেমন হয়? বিক্রেতা নির্ধারিত স্থানে দ্রুত জমা দিয়ে রশিদ নেবে। গ্রাহক সেখান থেকে দ্রুত সংরক্ষণ কেন্দ্রে পাঠিয়ে রশিদ নেবে। সেখান থেকে যথা সময়ে চামড়াশিল্প কেন্দ্রে পাঠিয়ে রশিদ নেবে। গোটা ব্যবস্থাপনার সাথে কোন ব্যাংক জড়িত থাকবে। চামড়া শিল্পকেন্দ্রে প্রবেশের সময় নির্ধারিত পণ্যমূল্যের ১% পাবে সরকার। ২% পাবে চামড়াশিল্পে বিনিয়োগকারী। ৩% পাবে সংরক্ষণকারী। ৪% পাবে সংগ্রহকারী। সর্বমোট ১০%। ৯০% পাবে চামড়ার প্রথম মালিক। প্রত্যেকে জমা দেয়ার সময় নগদ অর্থ না পেলেও প্রাপ্ত রশিদ জমা দিয়ে অন্যত্র লেনদেন করতে পারবে। ফলে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কুরবানের ১দিনের জন্য মসজিদ-মাদরাসাকেও সম্পৃক্ত করতে হবে। তখন মসজিদ ৪%, মাদরাসা ৩%, সংরক্ষণকেন্দ্র ২%, সরকার ১% ও ১ম মালিক ৯০% পাবে। অন্যান্য আনুসাঙ্গিক অত্যাবশ্যকীয় খরচ বাদ দিয়ে অবশিষ্টের উপর উক্ত হিসাব প্রযোজ্য হবে।
মানবচামড়ার সাথেও অনেক শিল্প জড়িত আছে। যেহেতু প্রসাধনী পণ্য অতি অত্যাবশ্যকীয় নয়, সেহেতু তা আপন গতিতে ছেড়ে দিলেই বেশি উন্নতি লাভ করবে। তবে প্রত্যেক পণ্যের গায়ে নির্ধারিত খুচরামূল্য এবং উৎপাদন ও মেয়াদ শেষের তারিখ সুষ্পষ্ট ভাবে উল্লেখ থাকতে হবে। কোন ভাবেই গায়ের মুল্যের চেয়ে বেশি দামে বিক্রয় করা যাবে না। মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও কোন জিনিস কতদিন ব্যবহার করা যায় তাও উল্লেখ করলে ভাল। প্রত্যেক পণ্যের গায়ে একটি সিরিয়াল নম্বর থাকা উচিত। এ সেক্টর থেকে সরকার প্রচুর ট্যাক্স পেতে পারে, যার ফলে সাধারণ মানুষের উপর তেমন কোন প্রভাব পড়বে না।
বর্তমানে মানবচামড়া প্রদর্শনী সবচেয়ে বড় শিল্প হয়ে দাড়ানোর পাশাপাশি, সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে দাড়িয়েছে। দেখার ফলে প্রস্তাব। প্রত্যাখ্যানের ফলে প্রতিহিংসা। সুযোগ পেলে আক্রমন। তাই নিরাপত্তা ও আইন শৃংখলা উন্নয়নের স্বার্থে প্রত্যেকেরই নিজেকে রক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণ অতীব জরুরী। তম্মধ্যে প্রথম পদক্ষেপ হচ্ছে অপরের চোখ থেকে নিজেকে রক্ষা করা। এ ক্ষেত্রে পোষাকের ভূমিকা সবচেয়ে বড়। সর্বদা সর্বক্ষেত্রে নিরাপত্তা বাহিনী দিয়ে নিরাপত্তা বিধান সম্ভব নয়। সর্বত্র শরীর প্রদর্শনী সীমিত করলে সামাজিক নিরাপত্তা বৃদ্ধি পাবে। স্রষ্টার দেয়া চামড়া প্রদর্শনকারী মডেল ও চিত্রশিল্পীদের যাবতীয় আয়ের কমপক্ষে ১০% ট্যাক্স দিলে তাদের আয় মোটেও কমবে না। বরং বেশি ট্যাক্স বেশি মর্যাদা নিশ্চিত করবে। এমন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করতে হবে যাতে কপির সাথে সাথে উৎসও চিহ্নিত হবে। তা হলেই কেবল পাইরেসি নিয়ন্ত্রণ অভিযান সফল হবে, নতুবা নয়। প্রযুক্তিকে প্রযুক্তির মাধ্যমে এবং চিত্রকে চিত্রের মাধ্যমে মুকাবিলা করা সহজ।
------চলবে
বিষয়: বিবিধ
৯২৩ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
অসম্ভব ভাল ভাল চিন্তা। ব্যবসার জন্য না হলে চমৎকার চিন্তা ভাবনা ওয়ালা মানুষটার সাথে কথা বলার জন্য ইচ্ছা হচ্ছে - কে জানে আপনার চিন্তাভাবনা গুলো হয়তো অনেকের জীবনে পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে। আপনি আপনার ফোন নাম্বার / স্কাইপ আইডি কি আমাকে দেবেন। একদিন গল্প করি?
মন্তব্য করতে লগইন করুন