বাংলাদেশ টেকনিক্যাল মাদরাসা, প্রতি ইউনিয়নে শাখা চালু করুন
লিখেছেন লিখেছেন সাইফুল ঈদগাহ কক্স ২৪ নভেম্বর, ২০১৩, ০২:১৫:০১ রাত
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
বাংলাদেশের বিপোল জনসংখ্যাকে নৈতিকতা সম্পন্ন দক্ষ স্বনির্ভর জনসম্পদে পরিণত করতে হলে ধর্ম ও কর্ম শিক্ষার কোন বিকল্প নেই। বর্তমানে স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে নৈতিক শিক্ষার প্রবল ঘাটতি এবং সরকারী-বেসরকারী মাদরাসায় কর্ম শিক্ষার যথেষ্ট অভাব লক্ষণীয়। এ অবস্থা রাতারাতি পরিবর্তন করা যাবে না। কিন্তু যা করা যাবে তা হল প্রতিটি জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়নে একটি করে টেকনিক্যাল মাদরাসা করা। বর্তমানে যেহেতু বিভিন্ন নির্বাচন সামনে এবং তাতে শতশত লোক সমাজসেবার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হচ্ছে, তাই তাদের সমাজসেবার পরীক্ষা হতে পারে নির্বাচনী অপচয় কমিয়ে কে কত টাকা সমাজের এ অত্যাবশ্যকীয় খাতে ব্যয় করে তা প্রমান করা। উক্ত কর্মসূচী সহজেই দ্রুত বাস্তাবায়ণ করা যাবে যদি বাংলাদেশ টেকনিক্যাল মাদরাসার একটি করে শাখা নিজ এলাকায় শুরু করা হয়। ১ম বছর নতুন শিক্ষাবর্ষের জানুয়ারীতে নার্সারী/৬ষ্ট/৯ম শ্রেণী দিয়ে শুরু করতে হবে এবং ডিসেম্বর হতে একজন পরিচালক ও একটি অফিস এবং জানুয়ারী হতে দুজন শিক্ষক ও দুটি রুম লাগবে। ভাড়াবাড়ী বা ব্যাবহারহীন ঘরেও শুরু করা যাবে। ক্রমান্বয়ে পাঠাগার, কম্পিউটার ও অন্যান্য ল্যাব গড়ে তুলতে হবে। এ ভাবে এপ্রিল থেকে একাদশ ও ত্রয়োদশ শ্রেণীও চালু করা যাবে। সমাজসেবকগণ দেবেন জমি, ঘর, আসবাবপত্র ও ভর্তুকী। শিক্ষকগণের বেতন-ভাতা আসবে ছাত্র ফি থেকে। দুনিয়াতে শান্তি ও আখেরাতে মুক্তি পেতে হলে অবশ্যই ছাত্র-ছাত্রী পৃথক ব্যাচ করতে হবে। প্রাথমিক স্তরের পর যথাসম্ভব পুরুষদেরকে পুরুষ শিক্ষক ও মহিলাদেরকে মহিলা শিক্ষিকাগণ পড়াবেন। সেক্ষেত্রে সকাল ৮টা হতে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ছাত্রীরা এবং ১২.৩০টা হতে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ছাত্ররা পৃথক ব্যাচে নিরাপদে ও একমনে দৈনিক ৬টি করে ৪০ মিনিটের ক্লাস করতে পারবে। যথা- ১. কুরআন হাদীস ফিকাহ। ২. আরবী ১ম ও ২য় পত্র। ৩. বাংলা ও ইতিহাস। ৪. ইংরেজী ও কম্পিউটার। ৫. অংক ও বিজ্ঞান। ৬. ব্যবহারিক কর্ম প্রশিক্ষণ। সকালে ও রাতে শিশু ও বয়স্ক শিক্ষা চলতে পারে। ব্যবহারিক কর্ম প্রশিক্ষণে যা থাকতে পারে তা হল- ১. খাদ্য ও কৃষি প্রশিক্ষণ। ২. বস্ত্র ও সেলাই প্রশিক্ষণ। ৩. আবাসন ও নির্মান প্রশিক্ষণ। ৪. মোবাইল ও কম্পিউটার প্রশিক্ষণ। ৫. ফার্মেসী ও নার্সিং প্রশিক্ষণ। ৬. বেকারী ও প্যাকেজিং প্রশিক্ষণ। ৭. ফার্ণিচার ও ডেকোরেশান প্রশিক্ষণ। ৮. ইস্পাত ও ওয়েল্ডিং প্রশিক্ষণ। ৯. সালিস ও জমি বন্টন প্রশিক্ষণ। ১০. ধর্মভাষা ও আন্তধর্মীয় সংলাপ প্রশিক্ষণ। ১১. ইলেক্ট্রিক ও ইলেক্ট্রনিক্স প্রশিক্ষণ। ১২. উৎপাদন ও রপ্তানী প্রশিক্ষণ। ১৩. মটর্স ও ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ। ইত্যাদি প্রত্যেকটি ব্যবহারিক কর্ম প্রশিক্ষণের জন্যে এক বা একাধিক সেমিস্টার প্রয়োজন হতে পারে এবং প্রতি চার মাসে এক সেমিস্টার গণ্য হবে। ক্লাসের পূর্বাপর প্রতিষ্ঠানের আশপাশে সংশ্লিষ্ট উপযুক্ত কর্মক্ষেত্রে প্রত্যেক ছাত্র/ছাত্রী খন্ডকালীন সময় দিয়ে বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন করবে। প্রত্যেক কর্ম প্রশিক্ষণের নম্বর বন্টন হবে ক্লাস ভিত্তিক ২৫ ও অভিজ্ঞতা ভিত্তিক ৭৫। এ প্রতিষ্ঠান সরকারী-বেসরকারী বোর্ড পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে। যা প্রাথমিক ভাবে পার্শ্ববর্তী অন্য প্রতিষ্ঠান থেকেও হতে পারে। বই সরাকারী হলেও সিলেবাস হবে সম্পূর্ণ নিজস্ব কেন্দ্র কর্তৃক নিয়ন্ত্রীত।
এ ধরণের প্রতিষ্ঠান যত বেশি হবে তত বেশি দেশ-জাতি-সরকারের লাভ। বর্তমান সরকারের লাভ তো আরো বেশি। বিনা খরচে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। ইসলাম ও মাদরাসা শিক্ষার প্রতি নিজেদের আন্তরিকতা প্রমান করা যাবে। নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা বন্ধের মাধ্যমে ধর্মপ্রাণ মানুষের মন জয় করা যাবে। আরব দেশে আরো বেশি কর্মী প্রেরণ করে বৈদেশিক মুদ্রার আগমন বাড়ানো যাবে। উক্ত কর্মসূচীকে অনেক বেশি কার্যকর ও ফলপ্রসু করা যাবে, যদি এর তদারকী ও ঘাটতি পূরণের দায়িত্ব কোন বেসরকারী বোর্ড বা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর ছেড়ে দেয়া যায়। কারণ কোন সরকারী প্রতিষ্ঠানের উপর দায়িত্ব দিলে তার অন্তর্ভুক্ত সকল প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় ভর্তুকী ও ব্যয়ভার আগেপরে সরকারের ঘাড়েই এসে পড়বে এবং দুর্ণীতি প্রবেশ করবে খোব সহজেই। এ ক্ষেত্রে এক গুলিতে তিন শিকার করা যাবে, যদি এর দায়িত্ব টেকনিক্যাল বোর্ডের পাশাপাশি বেসরকারী মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড ও কোন বেসরকারী ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর দেয়া যায়। তা হলে বেসরকারী মাদরাসাগুলো কারিগরী শিক্ষার প্রতি ঝুকবে, টেকনিক্যাল শিক্ষায় শিক্ষিতদের কর্মক্ষেত্র বৃদ্ধি পাবে এবং বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা বাণিজ্যও বন্ধ হবে, যদি সেখানে উক্ত সব বিষয়ে আন্তরিক এমন কোন ভিসি বা প্রশাসক নিয়োগ দেয়া যায়, যার মাধ্যমে ইউজিসি অনুমোদিত প্রত্যেকটি শাখার উপর ১০ থেকে ১৫টি টেকনিক্যাল শাখার দায়িত্ব দেয়া হলে তা দেশের আলেম সমাজ ও আরব বিশ্বের কাছে অত্যন্ত প্রশংসিত হবে এবং এর মাধ্যমে প্রত্যেকের বহুমূখী সমস্যার সমাধান হবে ইনশাআল্লাহ। সরকার প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানে এককালীন অনুদান দিতে পারে।
দেশে সরকারী ভাবে কোন কিছু করতে হলে অনেক দিন আন্দোলন-তদবীর করতে হয়, আর বেসরকারী ভাবে কিছু করতে হলে অনেকের অনেক প্রকার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হয়, যা অনেক বেশি সময় ও কষ্টসাধ্য ব্যাপার। কিন্তু জাতির জীবনে দেরী করার মত আর কোন সময় নেই। যেহেতু এক দিন পিছালে এক মাস পেছাতে পারে, এক মাস পিছালে এক বছর পিছাতে পারে, এক বছর পিছালে এক যুগ পিছাতে পারে, তাই এক মুহুর্থও দেরী না করে আজই কাজ শুরু করতে হবে। যেখানে যিনিই আগ্রহী হবেন তিনিই উদ্যোগী হয়ে শাখা করার কাজ শুরু করবেন। আপনার সাথে কেউ আসল কিনা বা পকেটে টাকা আছে কিনা বা কোন বাধা আসবে কিনা, ইত্যাদি কোন প্রকার দুঃচিন্তা করবেন না। মহান আল্লাহর উপর ভরসা রেখে কয়েক জনের সাথে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নিয়ে দ্রুত কাজ শুরু করে দিন। যেহেতু নির্বাচন শুরু হচ্ছে তাই সম্ভাব্য প্রত্যেক প্রার্থির পক্ষ থেকেই নগদ ও মাসিক অনুদান গ্রহণ করতে পারেন। প্রত্যেক শাখার উন্নয়নের জন্য ক্রমান্বয়ে ৩১৩জন দাতা সদস্য নিয়ে একটি করে উন্নয়ন কমিটি গঠন করতে পারেন। তখন প্রতি দশজন মিলে একজনকে প্রতিনিধি ঠিক করবে কার্যকরী পরিষদের জন্য। সর্বোচ্চ অনুদানদাতা ৩জন, শাখার শিক্ষক-কর্মচারী-অভিভাবক প্রতিনিধি ৩ জন, কেন্দ্র প্রতিনিধি ৩ জন, দাতাসদস্য প্রতিনিধি ৩১ জন, সর্বমোট ৪০জন নিয়ে কার্যকরী পরিষদ গঠিত হবে। তারা পরামর্শ করে প্রয়োজনীয় দায়িত্বশীল ঠিক করবেন। কমিটি গঠন ও যাবতীয় কাজ হবে পরামর্শ ভিত্তিক, প্রতিদন্দিতা ভিত্তিক নয়। স্বাস্থ্যসেবায় আন্তরিক ডাক্তারগণ মিলে হাসপাতাল করলে যেমন লস হয় না, তেমনি শিক্ষাসেবায় আন্তরিক শিক্ষকগণ মিলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করলে লস হওয়ার কথা নয়। শর্ত হচ্ছে সর্বাবস্থায় শিক্ষার মান ও প্রতিষ্ঠানের সুনাম নিশ্চিত করতে হবে এবং সবধরণের অনুমোদন ও সহযোগিতা পাওয়া ও অব্যাহত থাকার স্বার্থে যাবতীয় আয়ের ১০ শতাংশ নিয়মিত কেন্দ্রে পাঠাতে হবে। যারা কাজ শুরু করতে চান তারা ব্লগ, ফেসবুক, ই-মেইল ও এসএমএস-এর মাধ্যমে নাম ঠিকানা জানান এবং নিজেরা পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নিয়ে স্থানীয় মসজিদে ঘোষণা দিয়ে জনগণের সুপরামর্শ, সহযোগিতা ও দোয়া চান। একটি অস্থায়ী কার্য্যালয় নিয়ে কোরআন খতমের মাধ্যমে শুরু করুন। ভর্তি ফরম বিতরণ ও জমা নেয়া আরম্ব করুন। অভিভাবক ও দাতাদের নিয়ে রাজনীতিমুক্ত সার্বজনীন আলোচনা সভার আয়োজন করুন। আল্লাহর উপর ভরসা করে আসন খালি থাকা সাপেক্ষে ভর্তি করুন। প্রতি ব্যাচে আসন সংখ্যা সর্বোচ্চ ৫০, সর্বনিন্ম ১০। ভর্তি ফিঃ নার্সারীতে ২০০, ৬ষ্ট শ্রেণীতে ৫০০, ৯ম শ্রেণীতে ১০০০ ও একাদশ শ্রেণীতে ১৫০০। মাসিক ফি ৫০ থেকে ৫০০টাকা। সর্বক্ষেত্রে দরিদ্র মেধাবীদেরকে নিজ সামর্থের উপর ছেড়ে দিতে হবে। প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানে “নিজস্ব” ও “অনুদান” নামক দুটি ফান্ড থাকবে। অমুসলিমরাও ভর্তি হতে পারবে, তবে সবার জন্যে একই ইউনিফর্ম ও হেজাব বাধ্যতামূলক থাকবে। ছাত্রদের জন্যে পাঞ্জাবী-পাইজামা-টুপি। ছাত্রীদের জন্যে এপ্রোন-হেজাব/নেকাব। রং-এর ক্ষেত্রে শাখা ভিত্তিক পরামর্শযোগ্য। ছাত্ররা নিয়মিত সাইকেল চালিয়ে এবং ছাত্রীরা নিজ পছন্দ মত বাহনে যাতায়াত করবে। ব্যবহারিক কর্ম প্রশিক্ষণের জন্য অতিরিক্ত খরচ প্রয়োজন হলে সব শিক্ষার্থী মিলে ভাগ করে নেবে। জানুয়ারীর ১ তারিখ সকল ছাত্র-ছাত্রীকে নতুন বই দিয়ে উদ্ভোধনী ক্লাস করুন। দৈনিক, সাপ্তাহিক, মাসিক, পার্বিক, বার্ষিক ও স্থায়ী রিপোর্ট সংরক্ষণ ও নিয়মিত সরবরাহ করতে প্রত্যেকেই বাধ্য থাকবে। হে আল্লাহ, আমাদেরকে বেকারত্ব ও দারিদ্রমুক্ত স্বনির্ভর দেশ-জাতি গড়ার তাওফীক দিন, আমীন।
লেখক- -সাইফুল ইসলাম, আহবায়ক, বাংলাদেশ টেকনিক্যাল মাদরাসা। ০১৮৩৭ ৫৮৮৯১০।
ই-মেইলঃ
বিষয়: বিবিধ
১৩৮১ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এক ব্যক্তি রাসুল (সাঃ) প্রশ্ন করেছিল, 'ইয়া রাসুলুল্লাহ পৃথিবীতে সর্বোচ্চ এহছান কোনটি? রাসুল বললেন এই পৃথিবীতে মানুষের প্রতি সর্বোচ্চ এহছান হল, তুমি কাউকে একটি কাজ শিখিয়ে দিলে এবং সে কাজ দ্বারা সে ব্যক্তির জীবিকা নির্বাহের পথ তৈরী হল, এটাই হল মানুষের প্রতি সর্বোচ্চ এহসান'।
কাজেই আপনার লক্ষ্যটি সে দিকে ধাবিত, জানিনা আপনার প্রকৃত লক্ষ্য কি?
যাক, আমি অটোক্যাডে এক্সপার্ট। আমার যোগ্যতা-দক্ষতা আন্তর্জাতিক মানের। আমি প্রবাসে বহু ব্যক্তিকে ক্যাড শিখিয়েছি এবং তারা সবাই আকর্ষনীয় পদে সমাসীন আছেন। আমি চাই আমার দেশের ছেলেরা ঘরে বসে, কারো দারস্ত না হয়েই প্রফেশনাল ক্যাড শিখে কাজে লেগে পড়ুক।
ইউ টিউব অথবা অন্য কোন ভাবে আমি অন লাইনে ক্লাশ প্রকাশ করতে রাজি আছি।
আমার ক্লাস গুলো হতে পারে,
১। অটোক্যাড আর্কিটেকছারাল প্লানের উপর
২। অটোক্যাড ইলেকট্রিক্যাল প্লান
৩। অটোক্যাড প্লামবিং/পাইপিং প্লান
৫। অটোক্যাড মেকানিক্যাল প্লান (সকল পর্যায়ের সব ধরনের এসি সিষ্টেমের উপরে)
৬। বিল্ডিং কো-অর্ডিনেশন
দুবাই মল সহ পৃথিবীর বহু সেরা কীর্তির সাথে আমি কাজ করেছি, বিগত ২৫ বছর ধরে সব ধরনের ক্যাড পোগ্রামের সাথে আমি জড়িয়ে আছি। হয়ত বা আমার এই বিদ্যা দেশের ছেলেদের কাজে আসতে পারে। আপনি তথ্য জোগাড় করে একটি পোষ্ট দিলে আমি প্রস্তুতি নিব।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন