বিশ্বজিৎ-মিল্কির কাতরানো আর আমাদের নির্লিপ্ততা

লিখেছেন লিখেছেন এলোমেলো ৩১ জুলাই, ২০১৩, ১০:১৬:২৪ রাত

বাংলানিউজ২৪ ডট কম ওয়েবসাইটে ইউটিউবের এম্বেড করা ভিডিওতে দেখলাম কি নৃশংসভাবে খুন করা হল যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াজউদ্দিন খান মিল্কিকে। পিস্তল দিয়ে একদম কাছ থেকে পরপর বেশ ক’টি গুলি চালানো হল, মাটিতে পড়ে মিল্কি যখন কাতরাচ্ছিলেন তারপরেও আরও ক’টি গুলি। গুলশানের শপার্স ওয়ার্ল্ডের ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরায় ধরা পড়ল এই ‘দারুন’ ‘সেনসেশনাল’ ‘এক্সক্লুসিভ’ কিলিং মিশনটি। সাধারণত এ ধরনের ভিডিওগুলো আমরা অপরাধচিত্র সম্বলিত চলচ্চিত্র (বিশেষতঃ ডিপজল-মার্কা ছায়াছবিতে) বা অপরাধ বিষয়ক নির্মিত প্রামান্য চিত্রে দেখতে পাই। কিন্তু বিশ্বজিৎ হত্যার সেই ‘দারুন’ ‘সেনসেশনাল’ ‘এক্সক্লুসিভ’ এনালগ (কিরিচ-রড-চাকু) ভিডিওটির পরে একেবারে পিস্তল দিয়ে গুলি করতে থাকা এই রকম ডিজিটাল ভিডিওর জন্য আমাদের ‘সুপার-সুশীল’ মিডিয়া তো বটেই, জনগণও বোধহয় অপেক্ষা করছিল। রোজার মাসে পায়জামা-পাঞ্জাবী পড়ে মুসল্লির বেশে এই ভিডিওটি চিত্রায়ন করার জন্য যুবলীগ নেতা এইচ এম জাহিদ সিদ্দিকী তারেককে একটা ধন্যবাদ দেয়াই যায় - কি বলেন? আর তারই হাত ধরে অপরাধ জগতে বাংলাদেশের এধরনের ‘এগিয়ে যাওয়া’ নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবী রাখে।

যুগে যুগে হত্যাকাণ্ড হয়েছে, দিনে দুপুরে মানুষকে কুপিয়ে বা গুলি করে মেরে ফেলা হয়েছে – এগুলো কোন নতুন বিষয় নয়। তবে ভিডিওতে মানুষকে কুপিয়ে মারা বা গুলি করার পর কাতরাতে কাতরাতে মরে যাওয়াটা দেখা আমাদের অনেকের জন্য একটা নতুন অভিজ্ঞতা তো বটেই। এই অভিজ্ঞতাটা অর্জন করতে যেয়ে আরেকটা নতুন উপলব্ধি হল - যা অবশ্যই ভীতিকর। ভিডিওটির প্রথম ২৪ সেকেন্ডে মিল্কির আগমন ও হত্যার চিত্রটি আমরা দেখতে পাই। আর বাকী ১ মিনিটে আমরা যে চিত্রটি দেখতে পাই, দুঃখজনক হলেও সত্যি, তা আজ বাংলাদেশের বর্তমান সামাজিক পরিস্থিতি। হত্যা পরবর্তী এই এক মিনিটের ভিডিওতে আমরা দেখলাম, মিল্কি পড়ে আছেন রাস্তায়, হত্যাকারী জাহিদ সিদ্দিকী তারেক ও তার দোসররা ইতিমধ্যেই মোটর সাইকেলে পালিয়ে গেছে। তারপরেও ভিডিওতে দেখা ৫/৬ ব্যক্তির কেউ মিল্কির মৃতদেহের দিকে এগিয়ে গেলেন না। অথচ ঠায় দাঁড়িয়ে থেকে পড়ে থাকা মিল্কিকে তারা দেখলেন। উপরন্তু দেখা গেল, এর কিছু পরেই বাড়তি ‘সতর্কতা’ হিসেবে অনেকক্ষণ ধরে টেনে হিঁচড়ে রাজধানীর অত্যন্ত ব্যয়বহুল এই শপিং মলের প্রধান ফটককে তারা আটকে দিচ্ছেন। এটা তাদের দোষ নয়। মরে থাকা মানুষটির দিকে গেলে পুলিশ-র‍্যাব-ডিবি’র মত নানারকম ঝক্কি-ঝামেলার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। ‘কি দরকার ভাই, আমি কিছু দেখিনি-আমি কিছু জানিনা’ –এটাই এখন আমাদের সামাজিক দায়বদ্ধতার অবস্থা। আমি বা আপনিও যদি আজ দলীয় মদদপুষ্ট চাঁদাবাজ বা সন্ত্রাসীদের কবলে পড়ে এভাবে কাল গুলিবিদ্ধ হই, আমাদের জন্যও আমি নিশ্চিত, এরকম নির্লিপ্ততা অপেক্ষা করছে। কি জানি হয়তো আরও নির্মম কিছু।

বিষয়: বিবিধ

১৩৪৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File