জনগণের জন্য সংবিধান, সংবিধানের জন্য জনগণ নয় ।

লিখেছেন লিখেছেন তৌহিদ মাহমুদ ২০ মার্চ, ২০১৩, ০৩:০০:০৪ দুপুর

১. ১৮৫৭ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়, ড্রেডস্কট বনাম স্যানড ফোর্ড মামলায় যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিমকোর্ট নিগ্রো (আফ্রিকান-আমেরিকান) যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক নয়, তাদের আইনের আশ্রয় নেয়ার অধিকার নেই বলে রায় প্রদান করায়। প্রধান বিচারপতি রজার বুকটেনির নেতৃত্বে ৭-২ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় ‘ড্রেডস্কট ডিসিশন’ বলে ইতিহাসে ধিকৃত সিদ্ধান্ত বলে বাংলাদেশের সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক ১৬ই সেপ্টেম্বর ২০১২ ত্রয়োদশ সংশোধন বাতিল করে দেয়া বিভক্ত রায়ে উল্লেখ করেছেন।

কিন্তু বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের আশঙ্কা, বিচারপতি খায়রুল হকের বিতর্কিত রায়টি দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে দ্রুত ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। বাতিল করে দেয়া রায়টিতে জনমতকে উপেক্ষা করা হয়েছে। নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, বিশেষজ্ঞ, এমিকাসকিউরি ও উচ্চ আদালতের অধিকাংশ বিচারকের (১২ জনের মধ্যে ৮ জন) নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের পক্ষে দেয়া রায় আপিল বিভাগে উপেক্ষিত হওয়ায়, অন্ধ আইনের দোহাই দিয়ে দলীয় বিচারকও যে অন্ধ হয়ে যাবেন, আর দেশে গৃহযুদ্ধ শুরু হবে, তা কারও কাম্য হতে পারে না। মেধা-যোগ্যতার পরিবর্তে রাজনৈতিক বিবেচনায় বিচারক নিয়োগের প্রতিদানে নিয়োগকারীদের ইচ্ছা পূরণ হয়েছে। রাজনীতির অনুপ্রবেশ বিচার ব্যবস্থাকে আস্থার সঙ্কটে ফেলেছে। আদালতে বিচার কেনাবেচার কথা ইতিপূর্বে সাধারণ্যে এতো আলোচিত হতো না। ক্ষমতাসীন দলের ইচ্ছা পূরণে, আদালত-রাজনৈতিক ইস্যুকে রাজনৈতিকভাবে সমাধানের নির্দেশনার পরিবর্তে, সরকারি দলের বন্দুকের ট্রিগার আদালতের কাঁধে তুলে নিয়ে সমগ্র জাতিকে ব্যথিত করেছে। বিচারপতি খায়রুল হক গংরা নিয়োগদানকারীর প্রতিদান দিতে গিয়ে, মীমাংসিত বিষয়কে ওলট-পালট করে বিতর্কিত রায়ে, দেশে যে অরাজকতা-সংঘাত-গৃহযুদ্ধের সূচনা করলেন, এর দায়ভার বর্তমান ক্ষমতাসীন মহলের সঙ্গে বিচারকদেরও নিতে হবে।

উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগে সংবিধানে নীতিমালা আরও সুনির্দিষ্ট থাকবে, চরম দলীয় অবস্থানে অযোগ্য অদক্ষ বিচারক নিয়োগ, স্বজনপ্রীতি-দুর্নীতি বহুলাংশে হ্রাস পাবে। বর্তমান বিচার বিভাগে মুখ দেখে রায় প্রদানে জনগণের আস্থা তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। একইভাবে নির্বাচন কমিশন, সরকারি কর্মকমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, শিক্ষা কমিশন, মানবাধিকার কমিশন গঠনে সরকার ও বিরোধীদলের সমন্বয়ে সার্চ কমিটির মাধ্যমে সুনির্দিষ্ট নীতিমালায় নিয়োগদান আবশ্যক।

২. ক্ষমতাসীনরা নিজেদের কাজকর্মের ফলাফলের কথা না ভেবেই অহমিকাবোধে সিদ্ধান্ত নেন। ক্ষমতা হাতছাড়া হয়ে যাওয়া রোধ করতে এক ব্যক্তির নিকট কেন্দ্রীভূত ক্ষমতার ভয়ঙ্কর রূপ জাতীয় বিপর্যয় ডেকে আনে। বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার ভারসাম্য না থাকায় ও ৭০ ধারা বিদ্যমান থাকায়, বাংলাদেশে গণতন্ত্রের মোড়কে এক ব্যক্তির রাজকীয় একনায়কতান্ত্রিক শাসন দেশ ও জাতির জন্য বিপর্যয় ডেকে এনেছে।

একটি রাষ্ট্রের আর্থসামাজিক বিকাশে যোগ্য নেতৃত্ব না থাকলে একটি জাতি কিভাবে পিছিয়ে পড়েÑ বাংলাদেশ এর অন্যতম উদাহরণ। ১৯৭০ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের (বাংলাদেশ) চেয়ে মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান, মাথাপিছু আয়ে অনেক পিছনে ছিল। কিন্তু সেসব দেশের নেতৃত্ব জাপান ও পশ্চিমা বিশ্বের সহযোগিতায় শিল্প, কৃষি, শিক্ষা তথা আর্থসামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশকে ৫০ বছর পিছনে ফেলে এসেছে। অন্যদিকে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার স্বাধীনতার পর পরই সব শিল্প-কারখানা জাতীয়করণ করে একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতিতে জনগণের আশা-আকাক্সক্ষাকে ধূলিসাৎ করে দেয়। সাধারণ মানুষ পরিবারতন্ত্রের রাজনীতিতে আর আস্থা রাখতে পারছে না। কারণ, প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির ন্যায় সরকার-বিরোধী দলগুলো উত্তরাধিকার সূত্রে ৩৩ বছর ধরে দলের সর্বোচ্চ পদ আঁকড়ে ধরে আছে।

৩. বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে হলে অবশ্যই চলমান পারিবারিক রাজনীতি চর্চার ধারণা পরিবর্তন করে মেধাবী, যোগ্য নেতৃত্বের সমাগম ঘটাতে হবে। আত্মত্যাগী রাজনীতিকদের এগিয়ে আসতে হবে। দেশকে সঠিক জায়গায় নিতে কাউকে না কাউকে দায়িত্ব নিতে হবে। রাজনীতিতে পরিবর্তন আনতে হলে অবশ্যই সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। যোগ্য ও নৈতিকতা সম্পন্ন নেতৃত্ব না থাকায় একটা অপার সম্ভাবনার দেশ উন্নয়নে পিছিয়ে পড়েছে। পারিবারিক উত্তরাধিকার ভিত্তিক রাজনীতির কারণে কোন রাজনৈতিক দলের অভ্যন্তরে গণতন্ত্রচর্চা নেই। মেধার চরম সঙ্কট থাকায় অসৎ-অযোগ্য চাটুকার তোষামোদকারী লোকদের দৌরাত্ম্য বৃদ্ধিতে ভাল লোকেরা নির্বাসনে চলে যাচ্ছে। এ থেকে মুক্তি পেতে তৃণমূল থেকে উচ্চপর্যায়ে নাগরিক সমাজের চাপ সৃষ্টিতে সক্ষম হলে, কায়েমী স্বার্থবাদীদের উৎখাত করা সম্ভব হবে। দেশকে এগিয়ে নেয়ার স্বার্থে রাজনীতির চিরাচরিত ধারণা পরিবর্তন করলে জনগণ আবার রাজনীতিকে ভাল চোখে দেখবে। বৈরী আবহাওয়ার ন্যায় বাংলাদেশের রাজনীতি কখন কি হয় বলা যায় না। উত্তর কোরিয়া-দক্ষিণ কোরিয়া, ফিলিস্তিন-ইসরাইল অথবা ভারত-পাকিস্তান আঞ্চলিক বা আন্তর্জাতিক বিষয়ে একে অন্যের ওপর আস্থা হয়তো রাখতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো (সরকার-বিরোধী) রাষ্ট্রের নিরাপত্তার স্বার্থেও ঐকমত্যে যেতে পারে না। বরং শাব্দিক অর্থে একে অন্যকে ধ্বংস করতে এমন কোন ব্যবস্থা নেই, যা তারা নেয় না।

৪. ২০০৭ সালে রাজনৈতিক দলগুলোর হানাহানির ফলশ্রুতিতে সামরিক বাহিনী পরোক্ষভাবে দাতাদেশ ও সংস্থার সমর্থনে দেশ শাসন করেছিল। বৃটেনের স্বনামধন্য পত্রিকা ‘ইকোনমিস্ট’ প্রকাশিত সংবাদে দেখা যায়, ভারতের অর্থ ও পরামর্শে বর্তমান সরকার ক্ষমতাসীন হয়ে ভারতের সঙ্গে অনেক গোপন চুক্তি করেছে, যা জনসমক্ষে বা সংসদে প্রকাশ করছে না। বৃহৎ পরাশক্তি ভারতের প্রতিবেশী প্রতিটি দেশই সমতাভিত্তিক বন্ধুত্ব-ভ্রাতৃত্বের পরিবর্তে আগ্রাসনবাদের শিকারÑ বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। বর্তমান বিশ্বে ভারত কূটকৌশলে অদ্বিতীয় বলে চীনের হুমকির আশঙ্কার কথা বলে যুক্তরাষ্ট্রকে ব্যবহার করছে। ইতিপূর্বে যুক্তরাষ্ট্রের হুমকির আশঙ্কায় ৫ দশক সোভিয়েত ইউনিয়নকে (রাশিয়া) ব্যবহার করে তার স্বার্থ শতভাগ আদায় করেছে।

সংবাদপত্রে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্ব বিগত এক যুগ ধরে ইসলামী জঙ্গিবাদ নিয়ে শঙ্কিত থাকায়, বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার কৌশলে জঙ্গিবাদ রোখার কথা বলে ভারত ও পশ্চিমা দেশের সমর্থনে, যে কোনভাবে আবার ক্ষমতায় থাকতে বদ্ধপরিকর। তারই ফলশ্রুতিতে রাজনৈতিক বিষয়কে রাজনৈতিকভাবে সমাধান না করে দলীয় বিচারকদের ব্যবহার করায়, বাংলাদেশ এখন গৃহযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়েছে।

৫. অন্ধ দলীয় আনুগত্যে নিয়োগ-পদোন্নতির পরিণাম: আজ প্রতিটি প্রতিষ্ঠান চরম বিতর্কিত হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশ দুর্নীতি দমন কমিশন যাদেরকে নির্দোষ সার্টিফিকেট দেয়, বিশ্বব্যাংক তাদেরকে দুর্নীতির আধার বলে জনগণের স্বপ্নের পদ্মা সেতুতে ঋণ বাতিল করতে বাধ্য হয়। মন্ত্রীর এপিএসের গাড়ি থেকে বস্তা বস্তা টাকা উদ্ধার হয়, সেই মন্ত্রীকেও নির্দোষ সার্টিফিকেট দেয়। অন্যদিকে বিরোধী দলকে নিশ্চিহ্ন করা দুদকের প্রধান কাজ। সংসদে দায়মুক্তি বিল পাস করে, কোন টেন্ডার ছাড়া কুইক রেন্টাল প্ল্যান্ট প্রতিষ্ঠায় সরকারের ঘনিষ্ঠজনরা বছরে ২০ হাজার কোটি টাকা লোপাট করছে। সরকারি পুরাতন বিদ্যুৎ প্ল্যান্টগুলোতে উন্নত মেশিনারি ও কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি করা সম্ভব হলে ও কয়লাভিত্তিক জ্বালানি হলে জনগণের ওপর এ বোঝা চাপতো না। প্রতিটি ক্ষেত্রে আজ দুর্নীতি-অদক্ষতায় সরকার বিপর্যস্ত।

পৃথিবীর প্রতিটি দেশের পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবস্থা দেখলে বোঝা যায় সে দেশ কতটা উন্নত। সর্বোপরি ট্রাফিক জ্যাম, রাস্তাঘাটের প্রশস্ততা বলে দেয় এ দেশের জনগণের চলাচল কতটুকু আরামদায়ক-পীড়াদায়ক। বাংলাদেশের বন্ধু দাতাদেশ-সংস্থা কেবল রাজধানীকেন্দ্রিক ২ বর্গকিলোমিটারের মধ্যে অবস্থান করায় জনগণের চলাচলের নরক যাত্রা দেখার সুযোগ হয় না। একইভাবে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, যোগাযোগ, আইন-আদালত, প্রশাসনে সুশাসন-স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করলে, জনগণের প্রকৃত অবস্থা জানা যাবে। প্রায়ই হত্যা, গুম, ক্রসফায়ার, বিরোধীদলীয় নেতা, শ্রমিক নেতাসহ অসংখ্য লোক নিখোঁজ হচ্ছে, প্রতিবাদের গণতান্ত্রিক পদ্ধতি মিটিং-মিছিলে, হামলা-মামলায় পুলিশকে দলীয়করণে অসহনীয় পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে দেশে।

৬. ‘জনগণের জন্য সংবিধান’ ‘সংবিধানের জন্য জনগণ নয়’। সংবিধান মেনে বাংলাদেশ পাকিস্তান থেকে পৃথক হয়নি। দলীয় সরকারের অধীনে পুলিশ, সামরিক বাহিনী, প্রশাসন দলীয়করণে কোন জাতীয় নির্বাচনই স্বচ্ছ-নিরপেক্ষ হয়নি বলেই ৯৫% জনগণ ট্রানজিশনাল কাউন্সিল/ নির্বাচনকালীন অস্থায়ী সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন চায়। এটা কোন দলীয় দাবি নয়। দেশে অরাজকতা, সংঘর্ষ, সংঘাত থেকে জনগণ মুক্তি চায়। প্রয়োজনে জনরায় নিতে এখনই গণভোটের আয়োজন করা যায়। বার্মা, সিরিয়া সহ যেসব দেশে জনগণের অধিকার হরণ করা হয়েছে, গণতন্ত্রের নামে একনায়কতন্ত্র চালু করা হয়েছে, তা একটি দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার বলে বিশ্ব মুখ বুজে থাকছে না।

গণতন্ত্রের অর্থ যদি হয় পরমত সহিষ্ণুতা, সমঝোতা, তাহলে বাংলাদেশে তা অনুপস্থিত। বাংলাদেশী গণতন্ত্রের সংজ্ঞা হলো: ১ দিনের গণতন্ত্রচর্চায় জনগণের ভোটে ৫ বছরের জন্য (নিলাম ডাকের মতো) নির্বাচনে জয়লাভকারী দল দেশের সব সম্পদ ও জনগণের প্রভু-মালিক-মুকতার হয়ে যাওয়াকে বোঝায়। সর্বোচ্চ থেকে সর্বনিম্ন পর্যন্ত জবাবদিহির লেশমাত্র না থাকায়, পদ্মা সেতু নির্মাণে কমিশন থেকে সর্বত্রই লুটপাট অহরহ চলছে। রাজনীতি অসৎ চরিত্রের (ব্যতিক্রম বাদে) লোকদের দখলে চলে যাওয়ায়, সৎ যোগ্য ত্যাগী ব্যক্তিরা রাজনীতিবিমুখ হয়ে পড়েছে। বেসরকারি টিভি চ্যানেলের কল্যাণে টকশো অনুষ্ঠানে দেশের প্রকৃত চিত্র অনেকটা পাওয়া যায়। নাগরিক ফোরামের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলোকে সত্যিকার গণতন্ত্র চর্চায় উৎসাহিত করতে সংবিধান সংশোধনসহ বিভিন্ন ইস্যুতে সেমিনার-ওয়ার্কশপ করে প্রস্তাব আকারে সিদ্ধান্ত নিলে, সরকার ও বিরোধী দল বাধ্য হয়ে তা বাস্তবায়নে এগিয়ে আসবে।

৭. বাংলাদেশের নাগরিকরা অত্যন্ত পরিশ্রমী। দান-অনুদান নয়, প্রয়োজন কেবল ‘মাছ ধরার কৌশল’ শিখাতে অর্থাৎ দক্ষ কর্মী সৃষ্টিতে কারিগরি শিক্ষা, মেরিন, নার্সিং, প্রকৌশল বিষয়ে উঁচুমানের প্রতিষ্ঠান গড়ায় আন্তরিক সহযোগিতা প্রদান।

মিডিয়া ও সম্মিলিত নাগরিক ফোরাম-এর উদ্যোগে শুধু অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ব্যবস্থা নয়, প্রধানমন্ত্রী-রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা, ৭০ ধারা সংশোধনসহ সংবিধানের ত্রুটি-বিচ্যুতি সংশোধনে পেশাজীবীর মতামত খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যেহেতু বর্তমানে গণতন্ত্রের মুখোশে রাজকীয় একনায়কতন্ত্র বিদ্যমান, রাবার স্ট্যাম্প সংসদ অকার্যকর, সেহেতু অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ইস্যু, একই সঙ্গে ১৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাধ্যমে গণভোটের রায়-অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনে বিভক্ত জাতিকে সংঘাত থেকে মুক্তি দেবে।

৮. ৭০ ধারা বিদ্যমান থাকায় (দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষা/বিদ্রোহ দমন করা) ৩৫০ জন আইনসভার সদস্য থাকার প্রয়োজন কতটুকু আছে, বিজ্ঞজনেরা সে প্রশ্ন করতেই পারেন। বর্তমান সংসদে তোষামোদি ও প্রতিপক্ষকে গালাগাল ছাড়া জনগণের সমস্যার কথা খুব কম সময়ই আলোচিত হয়। এমতাবস্থায় জনগণের অর্থের আর অপচয় না করে সংসদ নেতা, বিরোধীদল নেতা ও স্পিকারÑ এই ৩ জন মিলেই সংসদের কার্যক্রম পরীক্ষামূলক চালু করতে পারেন। আইন সভার সদস্যদের মূল দায়িত্ব সময়োপযোগী আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগে জনগণের কল্যাণ সাধন। কিন্তু বাস্তবে (ব্যতিক্রম বাদে) নিজ নিজ এলাকায় স্থানীয় সরকার প্রশাসনে হস্তক্ষেপ ছাড়াও কোন মামলায় পুলিশ কাকে ধরবে বা ছাড়বে, এসবই তাদের কর্মের মধ্যে পড়ে। তাদের অপছন্দের কোন আমলা-কর্মচারী, পুলিশ অত্র এলাকায় কোন অবস্থাতেই দায়িত্ব পালন করতে পারেন না। সংসদ চলাকালীন সংসদ নেতা-বিরোধী দল নেতার উপস্থিতিতে প্রতিপক্ষকে কে কত নোংরা ভাষায় গালি দেয়া যায়, সে প্রতিযোগিতা না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন।

৯. প্রতি বছর বাজেটের সময় প্রয়োজনীয়-অপ্রয়োজনীয় উন্নয়ন কর্মসূচি প্রণয়নে জনগণ কতটুকু উপকৃত হচ্ছে, আর বিভিন্ন প্রকল্পে শতকরা কতভাগ অপচয় হচ্ছে তা কি কখনও পর্যালোচনা করা হয়েছে? জানুয়ারির শুষ্ক মওসুমের পরিবর্তে বর্ষাকাল জুলাই মাসে বাজেট প্রণয়নের শেষ ২ মাসে শতকরা ৭০-৮০ ভাগ অর্থ ব্যয় হয়, যার সিংহভাগই অপচয়। অনুন্নত জেলা-অঞ্চলে সরকার দলীয় প্রভাবশালী কেউ না থাকলে স্কুল, হাসপাতাল, রাস্তাঘাটে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগে না। অন্যদিকে প্রভাবশালী মন্ত্রী-এমপি থাকলে উন্নত এলাকায় এক স্কুলের পাশে আরেক স্কুল হয়। জেলা বা অঞ্চলভিত্তিক কোন এলাকার কি প্রয়োজন তা যথাযথ নিরূপণ করে বাজেট বাস্তবায়ন সম্ভব হলে দেশে সব এলাকায় উন্নয়নের ছোঁয়া লাগতো।

সর্বশেষে নির্বাচনকালীন অস্থায়ী সরকার-ট্রানজিশনাল কাউন্সিল গঠন নিয়ে বর্তমানে যে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে, রাজনীতিবিদদেরই এর সমাধান বের করতে হবে ।

রায়হান মুজিব এর সৌজন্যে ।

বিষয়: বিবিধ

১৩৭৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File